তাজ ইসলাম
তারুণ্যে থাকে স্বপ্ন, আশা, আবেগ, ভালোবাসা। কবি, শিল্পীমনে, মননে, বয়সে তরুণ হলে তার লেখায় ভাবনার ছাপ ফুটে শব্দে, বাক্যে। জুবায়ের বিন ইয়াছিন বয়সে সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ যুবক। চিন্তায় তার তারুণ্যের উদ্দীপনা। লেখাতে প্রকাশ করেন স্বপ্ন ও আশার কথা। আশা ও আকাঙ্খায় মিশ্রিত তার বিশ্বাস ও আদর্শ। ছড়ার গতিময় বাক্য লিখেন,, ‘ নতুন আশা নতুন ভাষা- সবাই করুক পেশ/ তওবা - তাপে ঝরুক গুনাহ ক্ষমায় সরুক ক্লেশ। ( হাসুক খুশির গান)’।
‘ যে হতে চাও মাটির মানুষ/ শান্ত-শীতল পাটির মানুষ/ যাচ্ছি বলে তাকে,/ খাঁটি মানুষ হওয়ার যদি প্রবল ইচ্ছে থাকে- (মাটির মানুষ)’।
যদি এই কামনা, আকাঙ্খা থাকে, তাহলে ছড়াকারের মতে, ‘ছড়িয়ে পড়ি চলো পৃথিবীর দিক-প্রান্তে-/ জ্ঞানের মুক্তোগুলো খুঁজে খুঁজে / তুলে আনতে। (বলি ইকরা)।
জ্ঞানের বিকল্প নাই। জ্ঞানার্জন করতে হয়। মানুষ জ্ঞানী হলেই গুণী হয়। বোধবুদ্ধি বাড়ে। শব্দ চয়নের দক্ষতা, প্রায়োগিক উপযোগ্যতাও অর্জন হয়। ‘হরিণ শাবক/ হরিণ শাবক/ যত্নে রাখো পালক তোমার/ (হরিণ শাবক)।’ হরিণের পালক বলতে শব্দ জ্ঞান তখন না না করে।
জুবায়ের বিন ইয়াছিনের চাওয়া সুন্দর পৃথিবী। মানুষ ও মানবিক সমাজ। ছড়া তার মতো প্রকাশের মাধ্যম। ছড়ায় নিজের মতো, নিজের বক্তব্য প্রচার করেন সরল, সহজ শব্দে। বাক্য তৈরি করেন সুললিত প্রবাহমান আবহে। ছড়ায় ছড়ায় ছড়িয়ে পড়ে বক্তব্যের প্রাঞ্জলতা।
‘ সুন্দর যা কিছু চিন্তায়- মননে/ ঝরে ঝলমলে ঘ্রাণ,/অবয়ব -গঠনে/ দোল খায় বুকে যার/ পাললিক প্রীতি-প্রেম ( সুন্দর যা কিছু)’।
জুবায়ের বিন ইয়াছিনদের ছড়ায় থাকতে হবে নেতৃত্বে থাকার প্রতিজ্ঞা করে। জুবায়ের প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ, প্রতিভাবান ও পরিশ্রমী মানসিকতার যুবক। নিজের প্রতি যত্নবান হোক। সবার আগে ছাড়িয়ে যাক নিজেকে। এই বইটিতে তিনি তার প্রতিভা আর পরিশ্রমের সাক্ষর রেখেছেন। তবে আরও যত্নবান হলে আখেরে লাভ তারই হত। আশা করা যায় পরের বইটি আরও গুরুত্ববহ হয়ে হাজির হবে।
জুবায়েরের ছড়ায় সাবলীলতা পাঠককে চমকে দেয়। অনর্গল পাঠ করে, ‘ মাথার ভেতর জ্যাম লেগেছে/ জ্যামের তো নেই শেষ/ জ্যামের সাথে বাড়ছে কেবল গুমোট পরিবেশ (মাথার ভেতর জ্যাম)।’
নতুন পথের বিরল রেখায়/ যে খুঁজে যায় সম্ভাবনা/ আবিষ্কারের নেশায় বিভোর/ যে করে দুর্বার সাধনা/( যে গান আনে ভোরের হাসি)।’
ছড়ার অন্তঃমিল একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তরুণদের এ বিষয়গুলো সতর্কতার সাথে পথ পাড়ি দিতে হবে। প্রবীণ বা প্রাজ্ঞজনের ছড়ায় দুর্বল অন্তমিলকে ধরা যায় অসতর্ক প্রয়োগ। আর তারুণ্যের দুর্বলতার সামনে হাজির হয় অজ্ঞতা, অসতর্কতা ও প্রায়োগিক অক্ষমতার নানা কথা। স্বপ্ন আঁকি বিশ্ব জয়ের/... চাই তো এমন দৃশ্য জয়ের। এটাও ছড়াকারের দুর্বলতাকে স্পষ্ট করে তোলে। বলা হবে এখানে জয়ের অন্তমিল হয়নি,হয়েছে আগের শব্দের। বিশ্ব’র সাথে দৃশ্য’র। এই যুক্তিকে গ্রাহ্য করলে এটিকে আমরা বিবেচনা করব সমগ্র ছড়ায় সমন্বয়হীনতা হিসেবে। কারণ এই ছড়ার কোন অন্তমিল দ্বৈত্য শব্দে দেওয়া হয়নি কেবল এটি ছাড়া। এটি খুব বেশি দোষের না, আবার নির্দোষও না। অন্তমিল জোড়া শব্দে দিতে চাইলে সমগ্র ছড়াটিকেই এভাবে সাজানো জরুরি। কোন একটা হয়ে গেলে আর এটি এভাবেই রেখে দিলে এটি ছড়াকারের মুন্সিয়ানার কৃতিত্ব বহন করে না। বরং এটি তার এক ধরণের উদাসীনতা ফুটিয়ে তুলে।
‘আজলা ভরে নিয়ে তখন জোছনা/দেই ছড়িয়ে মিহি - কোমল দ্যোতনা। (কোরাস)। ‘
জোছনা/দ্যোতনা, কথাতে শ্রোতাতে অন্তঃমিলের চেয়ে আরও মজবুত,আরও জোরালো অন্তঃমিলের চর্চা করে নিজের অবস্থানকে জানান দিতে হবে প্রতিনিয়ত।
জুবায়ের বিন ইয়াছিন স্বপ্নবাজ যুবক। স্বাধীনতা,সংগ্রাম,স্বদেশ প্রেম তার মননে বিরাজমান। বয়সের তুলনায় চিন্তায় পরিপক্ব। স্বপ্নবাজ ও দৃঢ় প্রত্যয়ী। দৃঢ় চিত্তেই বলেন,’স্বপ্নকে ধরবোই/দূর থেকে শুধু ছুঁয়ে দেখা নয়/আমি চাই তাকে আমি/ধরবোই।(স্বপ্নকে ধরবোই)’।
আমরা কথা বলছিলাম তরুণ ছড়াকার জুবায়ের বিন ইয়াছিন’র ছড়াবই ‘ রোদ জেগেছে শিরদাঁড়ায়’ নিয়ে।
বইটি প্রকাশ হয়েছে একুশে বইমেলা ২০২৫ এ। প্রকাশ করেছে ‘জাগরণ প্রকাশন। প্রচ্ছদ এঁকেছেন মোজাম্মেল প্রধান। মূল্য নির্ধারণ করেছে ২০০ টাকা। ফ্ল্যাপে দেওয়া লেখকের ছবিটা পাঞ্জাবীর কারুকার্যে ঝাপসা হয়ে গেছে। লেখকের কথা বলে বিশাল বয়ান হাজির করেছেন। এটা অত জরুরি ছিল না। তবে এমন আত্মকথন সাহসীকতার কাজ। তাকে অভিনন্দন। বইটির বহুল প্রচার কামনা করি। বই কিনুন, তারুণ্যকে উৎসাহিত করুন।