বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের অন্যতম বিতর্কিত নাম আজিজ মোহাম্মদ ভাই। তাকে ঘিরে রয়েছে নানা রহস্য, গুঞ্জন ও বিতর্ক— বিশেষ করে নারী, ক্ষমতা ও খুনের ঘটনাকে ঘিরে। ২৯ বছর আগে প্রয়াত নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর মামলায় সম্প্রতি ১১ আসামির একজন হিসেবে আবারও আলোচনায় এসেছে তার নাম। মামলার মূল আসামি সালমানের স্ত্রী সামিরা হক হলেও, আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে ঘিরে তখন থেকেই নানা তত্ত্ব প্রচলিত।
অনেকে মনে করেন “ভাই” উপাধিটি এসেছে তার প্রভাবশালী অবস্থানের কারণে, যেন কোনো গডফাদারের মতো। কিন্তু বাস্তবে “ভাই” তাদের পরিবারের বংশীয় পদবি। পারস্য বংশোদ্ভূত এই পরিবারটি বাহাইয়ান সম্প্রদায়ের, যাদের নামের শেষে “বাহাই” শব্দটি উচ্চারণে “ভাই” হয়ে গেছে। তাদের পরিবারের সবার নামেই এই পদবি রয়েছে— এমনকি নারীদের নামেও।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তারা গুজরাট থেকে ঢাকায় এসে বসবাস শুরু করেন। ১৯৬২ সালে পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় জন্ম আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের। পারিবারিক ব্যবসার হাত ধরেই তিনি যুক্ত হন শিল্প-বাণিজ্যে। সময়ের সঙ্গে গড়ে তোলেন দেশ-বিদেশজুড়ে ব্যবসা সাম্রাজ্য— মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও হংকংয়ে রয়েছে তার হোটেল ও রিসোর্ট। সার্ক চেম্বারের আজীবন সদস্য তিনি। তবে তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগও রয়েছে, এমনকি ভারতের ডন দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে যোগাযোগের কথাও শোনা যায়।
৯০–এর দশকে এমবি ফিল্মস ব্যানারে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় আসেন তিনি। কেউ বলেন, সিনেমার প্রতি ভালোবাসা থেকেই, কেউ বলেন— অর্থ সাদা করা বা নায়িকাদের প্রতি আকর্ষণ থেকেই এই পদক্ষেপ। যে কারণই হোক, প্রযোজনায় এসে দ্রুত প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন তিনি। প্রায় ৫০টি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন, গ্লামারাস বিজ্ঞাপনও করেছেন— অলিম্পিক ব্যাটারির “আলো আলো বেশি আলো” বিজ্ঞাপন তারই প্রযোজনা।
এরশাদ আমলে এক নারীসংক্রান্ত বিরোধের জেরে তাকে একবার গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে একাধিক হত্যাকাণ্ডেও তার নাম জড়ায়— বিশেষ করে সাংবাদিক ও চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যায়। সোহেল চৌধুরীর সঙ্গে ডিশ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল বলে ধারণা করা হয়।
সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ১৯৯৭ সালের সালমান শাহর মৃত্যু। শোনা যায়, এক পার্টিতে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সালমানের স্ত্রীর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়, এবং সেই ঘটনার পরই শুরু হয় হত্যার অভিযোগের নানা তত্ত্ব। যদিও জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়, তবু এখনো সেই রহস্যের অবসান হয়নি।
বর্তমানে আজিজ মোহাম্মদ ভাই সপরিবারে থাইল্যান্ডে অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই পরিচালনা করছেন তার ব্যবসা। দেশে তার স্ত্রী নওরিন মোহাম্মদ ভাই তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম দেখভাল করেন।
চলচ্চিত্র, বিতর্ক ও ক্ষমতার এই মিশেলে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এখনো বাংলাদেশের বিনোদন অঙ্গনের এক রহস্যময় নাম।