মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, যিনি একাধারে বিদ্রোহী ও প্রেমের কবি হিসেবে পরিচিত, তাঁর সাহিত্যকর্মে ইসলামী ভাবধারাকে গভীর গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছেন। তবে তাঁর এই ইসলামী চেতনা কোনো সংকীর্ণ ধর্মীয় গোঁড়ামির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং তিনি ইসলামকে দেখেছেন সাম্য, মানবতা ও ভ্রাতৃত্বের এক উজ্জ্বল আদর্শ হিসেবে। তাঁর অসংখ্য হামদ, নাত, গজল ও ইসলামী গান এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
কাজী নজরুল ইসলামের ইসলাম-বিষয়ক গান ও কবিতাগুলো কেবল ধর্মীয় উপাসনার অংশ ছিল না, বরং সেগুলো ছিল তাঁর গভীর আধ্যাত্মিক উপলব্ধির বহিঃপ্রকাশ। তিনি মহানবী (সা.), হজরত আলী (রা.), হজরত ফাতেমা (রা.), হজরত ইমাম হাসান (রা.) ও ইমাম হোসাইন (রা.)-সহ ইসলামের মহান ব্যক্তিত্বদের নিয়ে অসংখ্য গান ও কবিতা রচনা করেছেন। এসব রচনার মাধ্যমে তিনি ইসলামের মানবিক ও আধ্যাত্মিক দিকগুলো তুলে ধরেছেন। তাঁর এসব কাজ তৎকালীন মুসলিম সমাজে এক নবজাগরণ তৈরি করেছিল। নজরুলের ইসলামী ভাবধারার মূল ভিত্তি ছিল ইসলামের সাম্যবাদী আদর্শ, যা তিনি তাঁর লেখায় বারবার ফুটিয়ে তুলেছেন। এই আদর্শের প্রতিফলন দেখা যায় তাঁর বিখ্যাত ‘সাম্যবাদী’, ‘নারী’ ও ‘কুলি-মজুর’ কবিতার মতো সৃষ্টিতে। এছাড়াও অন্য অনেক কবিতা রয়েছে যেখানে ইসলামী ভাবধারা ফুটে উঠেছে।
নজরুলের ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় তিনি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের সমান অধিকারের কথা বলেছেন। এই দর্শন সরাসরি মহানবী (সা.)-এর বিদায় হজের ভাষণের সঙ্গে সম্পর্কিত। বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে রাসূল (সা.) ঘোষণা করেন,
“হে লোকসকল! তোমাদের রব একজন, তোমাদের পিতা একজন। তোমরা সকলেই আদম থেকে এসেছো, আর আদম মাটি থেকে। আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তিই সবচেয়ে বেশি সম্মানের অধিকারী, যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়াবান। কোনো অনারবের উপর কোনো আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, আরবের উপর অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, কালোর উপর সাদার শ্রেষ্ঠত্ব নেই, সাদার উপর কালোর শ্রেষ্ঠত্ব নেই, শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি শুধু তাকওয়া।” (মুসনাদে আহমাদ)
নজরুল এই হাদিসের মূলভাবকে তাঁর কবিতায় এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন: “গাহি সাম্যের গান—/মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই,/ নহে কিছু মহীয়ান।”
এখানে তিনি ধর্মের বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের চেয়ে মানুষের মানবিক মূল্যবোধ ও সাম্যকে প্রাধান্য দিয়েছেন, যা ছিল ইসলামের সাম্যের মূল বার্তা।
নজরুলের ‘নারী’ কবিতায় তিনি সমাজে নারীর প্রতি অবহেলা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি নারীর অবদানকে পুরুষের সমান বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। ইসলামের ইতিহাসে নারী যে মর্যাদা লাভ করেছে, তার প্রতিফলন নজরুলের এই কবিতায় দেখা যায়। মহানবী (সা.) নারীদের অধিকার রক্ষায় বিভিন্ন হাদিস প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই উত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম।” (তিরমিযী)
ইসলামের পূর্বে নারীদের সমাজে কোনো সম্মান ছিল না। কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো। রাসূল (সা.) এই বর্বর প্রথার অবসান ঘটান এবং নারীকে তার প্রাপ্য সম্মান ফিরিয়ে দেন। তিনি বলেন, “যার তিনটি কন্যাসন্তান আছে এবং সে তাদেরকে ভালোভাবে প্রতিপালন করে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত।” (বুখারী ও মুসলিম)
নজরুল এই হাদিসের মূলভাবকে তাঁর কবিতায় তুলে ধরেছেন: “বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর,/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।” তিনি নারী-পুরুষের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাজ গড়ার কথা বলেছেন, যা ইসলামের মূলনীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
নজরুলের ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় তিনি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার এবং তাদের ওপর শোষণের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, যারা সমাজের ভিত্তি তৈরি করে, তাদেরই সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত করা হয়। এই ভাবধারা মহানবী (সা.)-এর সেই হাদিসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, যেখানে তিনি শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি প্রদানের উপর জোর দিয়েছেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, “শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরি পরিশোধ করে দাও।” (ইবনে মাজাহ)
এই হাদিসটি শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ইসলামে শ্রমিককে সম্মান করার ওপর যে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তা নজরুলের কবিতায়ও প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি শোষকদের তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন: “দেখিনু সেদিন রেলে,/ কুলি ব’লে এক বাবুসাব তারে ঠেলে দিলে নিচে ফেলে।/ চোখ ফেটে এল জল,/ এমনিকরে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল!”
এখানে তিনি কুলি-মজুরদের ওপর অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরেছেন এবং এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এটি রাসূল (সা.)-এর সেই আদর্শের প্রতিফলন, যেখানে তিনি দুর্বল ও মজলুমের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য উৎসাহিত করেছেন।
কাজী নজরুল ইসলামের “উমর ফারুক” কবিতাটি শুধু একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের প্রশস্তিমূলক রচনা নয়, বরং এটি একটি আদর্শের প্রতিচ্ছবি। এই কবিতায় কবি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ফারুক (রাঃ)-এর চরিত্র, শাসনব্যবস্থা এবং জীবনদর্শনকে কেন্দ্র করে ন্যায়বিচার, সাম্য এবং মানবতার এক উজ্জ্বল চিত্র এঁকেছেন।
নজরুল ইসলাম গভীরভাবে কুরআন ও হাদিস দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। তাঁর কবিতায় হযরত উমর (রাঃ)-এর জীবনের প্রতিটি ঘটনাকে তিনি ইসলামী দর্শনের আলোকে চিত্রায়িত করেছেন। কবিতার একটি অংশে উমরের ইসলাম গ্রহণের নাটকীয় ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তরবারি হাতে রাসূল (সাঃ)-কে হত্যা করতে উদ্যত উমর পথিমধ্যে তাঁর বোন ফাতিমার কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াত শুনে থমকে যান। কবির ভাষায়:
উন্মাদ বেগে চলিলে ছুটিয়া! একী এ কী ওঠে গান?
এ কোন লোকের অমৃত মন্ত্র? কার মহা আহ্বান?
“আশহাদু আন-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু” বলি
কহিল ফাতেমা“এই যে কোরান, খোদার কালাম গলি
নেমেছে ভুবনে মহম্মদের অমর কণ্ঠে, ভাই!”
এই অংশে কুরআনের আলোকে অলৌকিক প্রভাব ফুটে উঠেছে। আল্লাহ তা’আলা কুরআনে বলেন: “যদি আমি এই কোরআন পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম, তবে তুমি তাকে আল্লাহর ভয়ে বিনীত এবং বিদীর্ণ দেখতে।” (সূরা হাশর, আয়াত: ২১)।
কবির বর্ণনায়, পাহাড়ের চেয়েও কঠিন হৃদয়ের অধিকারী উমরের অন্তর কুরআনের বাণীর প্রভাবে বিগলিত হয়ে যায়। এটি প্রমাণ করে, কুরআন শুধুমাত্র একটি গ্রন্থ নয়, বরং এটি এক ঐশী শক্তি যা মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ ও পরিবর্তিত করতে সক্ষম।
খলিফা হিসেবে উমর (রাঃ)-এর জীবন ছিল ন্যায়বিচার এবং খোদাভীতির মূর্ত প্রতীক। কবি তাঁর নগর ভ্রমণের একটি বিখ্যাত ঘটনা তুলে ধরেছেন, যেখানে তিনি এক ক্ষুধার্ত মা ও তার সন্তানদের অবস্থা দেখে নিজে খাদ্য বয়ে নিয়ে যান।
নজরুলের ভাষায়:
বলিলে, “বন্ধু, আমার এ ভার আমিই বহিব সোজা!
রোজ-কিয়ামতে কে বহিবে বলো আমার পাপের ভার?” এই পঙক্তিটি ইসলামী শাসনব্যবস্থার মূল ভিত্তিÑশাসকের দায়বদ্ধতারÑপ্রতিধ্বনি করে। শাসকের দায়িত্ব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: “তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।“ (সহীহ বুখারী)।
হযরত উমর (রাঃ) বিশ্বাস করতেন যে, তাঁর শাসনাধীন কোনো নাগরিকের দুঃখ-কষ্টের জন্য রোজ কিয়ামতের দিন তাঁকেই আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। এই গভীর উপলব্ধিই তাঁকে জনগণের সেবকে পরিণত করেছিল।
কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সাম্য ও মানবতার কবি। তিনি হযরত উমর (রাঃ)-এর শাসনামলের মধ্যে এক নিখুঁত সাম্যবাদী সমাজের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পেয়েছিলেন, যেখানে শ্রেণি-বৈষম্য, শাসক-শাসিতের ভেদাভেদ এবং ক্ষমতার দম্ভ ছিল অনুপস্থিত। কবিতার সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সাম্যবাদী চেতনার উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত হলো জেরুজালেম যাত্রার ঘটনাটি। কবি বলেন,
কিছুদূর যেতে উট হতে নামি কহিলে ভৃত্যে, “ভাই
...এইবার আমি যাই
উষ্ট্রের রশি ধরিয়া অগ্রে, তুমি উঠে বসো উটে”
খলিফা হাসিয়া বলে,
“...ইসলাম বলে সকলে সমান, কে বড়ো ক্ষুদ্র কেবা!”
এই দৃশ্যটি পৃথিবীর ইতিহাসে সাম্যের এক বিরল উদাহরণ। অর্ধ পৃথিবীর শাসক পায়ে হেঁটে উটের রশি ধরে চলেছেন আর তাঁর ভৃত্য উটের পিঠে বসে আছে—এই চিত্রটি যেকোনো শ্রেণি-বিভক্ত সমাজের ভিত্তিমূলে আঘাত হানে। নজরুল এখানে দেখিয়েছেন যে, প্রকৃত ইসলামী শাসনব্যবস্থা কোনো রাজতন্ত্র বা অভিজাততন্ত্র নয়, বরং এটি এমন এক সমাজব্যবস্থা যেখানে মানুষ হিসেবে সকলের মর্যাদা সমান। এটি রাসূল (সাঃ)-এর বিদায় হজ্জের ভাষণের সেই মূলনীতিরই প্রতিচ্ছবি, যেখানে তিনি বলেছিলেন, “কোনো আরবের উপর অনারবের এবং কোনো অনারবের উপর আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই।”
নজরুল দেখিয়েছেন, উমর (রাঃ) বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি হয়েও খেজুর পাতার কুঁড়েঘরে বাস করতেন এবং ছেঁড়া জামা পরিধান করতেন। এ প্রসঙ্গে নজরুল বলেন,
অর্ধ পৃথিবী করেছ শাসন ধুলার তখ্তে বসি
খেঁজুর পাতার প্রাসাদ তোমার বারে বারে গেছে খসি।
তুমি খাইয়াছ দুঃখীর সাথে ভিক্ষার খুদ খুঁটি!
এটি সাম্যবাদের মূল কথাÑশাসক জনগণের জীবনযাত্রার অংশীদার হবে, তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। যখন সাধারণ মানুষ দারিদ্রে জীবনযাপন করছে, তখন শাসকের বিলাসিতা করার কোনো অধিকার নেই। উমর (রাঃ)-এর এই জীবনধারা আধুনিক যুগের সেই সব শাসকদের জন্য এক বিরাট প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়, যারা জনগণের সম্পদ ব্যবহার করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করে। নজরুল উমরের মাধ্যমে এক জনদরদী ও সাম্যবাদী শাসকের আদর্শ তুলে ধরেছেন।
কবিতার শেষে নজরুল উমর (রাঃ)-কে শুধুমাত্র একজন ধার্মিক খলিফা হিসেবে দেখেননি, বরং ‘অতি-মানুষ’ হিসেবে দেখেছেন, যিনি মানুষের সম্মানকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন।
পয়গম্বর রবি ও রুসল – এঁরা তো খোদার দান!
তুমি রাখিয়াছ, হে অতি-মানুষ, মানুষের সম্মান!
নজরুলের দৃষ্টিতে, উমর (রাঃ)-এর সবচেয়ে বড় অবদান হলো তিনি প্রমাণ করেছেন যে, মানুষ ঐশী নির্দেশনা অনুসরণ করে পৃথিবীতে এক ও সাম্যভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। তিনি খোদায়ী আইনকে মানুষের কল্যাণে এমনভাবে প্রয়োগ করেছেন, যেখানে প্রতিটি মানুষের অধিকার ও সম্মান সুরক্ষিত হয়েছে। এজন্যই কবি তাঁকে একজন ‘বন্ধু’ এবং ‘প্রিয়’ হিসেবে সম্বোধন করেছেন, যিনি সাধারণ মানুষের হৃদয়ে শ্রদ্ধার আসনে নয়, বরং ভালোবাসার আসনে অধিষ্ঠিত।
সুতরাং, “উমর ফারুক” কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের এক অনবদ্য সৃষ্টি, যেখানে তিনি ইসলামী ইতিহাসকে বর্তমানের প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, ইসলামের মূল শিক্ষা হলো ন্যায়বিচার, সাম্য ও মানবতা। হযরত উমর (রাঃ)-এর চরিত্রকে আশ্রয় করে তিনি এমন এক আদর্শ সমাজের স্বপ্ন দেখেছেন, যা কুরআন ও হাদিসের আলোকে গঠিত এবং যেখানে কোনো শ্রেণি-বৈষম্য বা শোষণ থাকবে না। এই কবিতা তাই শুধু অতীতের গৌরবগাথা নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য এক শাশ্বত আলোকবর্তিকা।
পরিশেষে বলা যায়, এইভাবে নজরুল তাঁর সাহিত্যকর্মে ইসলামের সাম্য, মানবতা ও ন্যায়বিচারের আদর্শকে অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, যা তাঁকে শুধু একজন জাতীয় কবি হিসেবে নয়, বরং একজন মানবতাবাদী শিল্পী হিসেবেও প্রতিষ্ঠা করেছে।