মোবাইলের গ্যালারিতে আপন ভাই-বোনের মতো পাশাপাশি সহাবস্থান করে ইসলামী-অনৈসলামিক, ভালো-মন্দ, শ্লীল-অশ্লীল, শালীন-অশালীন ভিডিও।

এরা প্রতিবেশীর মতো নয় বরং এরা ভাই-বোনের মতো নিবিড়ভাবে অবস্থান করে। এদের নাম দেয়া হয় ফোল্ডার। সুন্দর করে ফোল্ডারে লেখা হয়- ইসলামী সংগীত, গান, নাটক, গল্প, কার্টুন, সিনেমা, তামিল/উর্দু/বাংলা/ হিন্দি/ ইংলিশ/ মালায়লাম ইত্যাদি। আর ওই সব বাজে ভিডিওগুলোর নাম নাহয় আপনারাই ভেবে নিয়েন কারণ আমি জানি আপনারা সকলেই যথেষ্ট বুঝবান।

এ সম্পর্কে আল কুরআনে বলা হয়েছে--

اِنَّ اللّٰهَ يَاْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْاِحْسَانِ وَاِيْتَآىِٕ ذِى الْقُرْبٰى وَيَنْهٰى عَنِ الْفَحْشَآءِ وَالْمُنْكَرِ وَالْبَغْىِ‌ۚ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ

নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্নীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি নিষেধ করেন অশ্লীলতা, অসৎকর্ম ও সীমালংঘন; তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাহাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর। (সূরা নাহল) আয়াত নম্বরঃ ৯০)

এখানে কিন্ত ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ, আত্মীয়স্বজনকে দানের নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে অশ্লীলতা ও অসৎকার্য থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। অথচ দেখুন, আমরা যখন একটানা কোনোকিছু করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি; মন তখন বিনোদন চায়। আর তখনি নজর পড়ে আমাদের হাতে থাকা মোবাইল ফোনের গ্যালারিতে। অটোমেটিক টাস হয়ে যায়, চলে আসে অডিও, ভিডিও, গেমস সহ নানা ধরনের ফাইল। একটানা কিছুক্ষণ ওয়াজ শুনে আর ভালো লাগে না। মন তখন নতুন কিছু চায়।

কি আশ্চর্য তাইনা?

- না, আসলে আমাদের অভিরুচির এই পরিবর্তন লক্ষ্যনীয়ভবে এখন ছড়িয়ে পড়েছে। এট ছড়ানোটাকেও এখম অভিভাবক মহলেরা দোষের কিছু মনে করেন না কারণ পভিভাবকেরাও পশ্চিমা সভ্যতাকে সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছেন। বাড়িতে টেলিভিশন থাকলে ডিশ কালচার নেই এমন পরিবার পাওয়া এখন বিরল। যাহোক, ইসলামী সংগীত শুনতে শুনতে যখন আর ভালো লাগে না। তখন ভাবি এবার একটু বাজনা সহ গান শুনি। এটাও ভাল্লাগে না এবার কিছু ভিডিও দেখি। এরপর টিকটক, লাইকি আরো অনেক কিছু। এভাবে বেহায়ার মতো নিজের মধ্যকার সব ধরনের চরিত্রকে প্রকাশ করতে থাকি আমি/আপনি/আমরা সকলেই। নিজের ভেতরকার খান্নাস শয়তান; রূপ বদল করতে থাকে প্রতি মুহূর্তেই।

এ বিষয়ে সূরা আন-নূরের ১৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

اِنَّ الَّذِیۡنَ یُحِبُّوۡنَ اَنۡ تَشِیۡعَ الۡفَاحِشَۃُ فِی الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَهُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ۙ فِی الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃِ ؕ وَ اللّٰهُ یَعۡلَمُ وَ اَنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۱۹﴾

নিশ্চয় যারা এটা পছন্দ করে যে, মু'মিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক- তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। আর "আল্লাহ যা জানেন তোমরা তা জানো না"।

আল কোরআনে ব্যভিচারকেও অশ্লীলতা হিসেবে গন্য করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ব্যভিচারের একটি মিথ্যা খবর প্রচার করাকেও আল্লাহ অশ্লীলতা বলে অভিহিত করেছেন এবং একে দুনিয়া ও আখেরাতে কঠিন শাস্তির কারণ হিসাবে গণ্য করেছেন। যাতে অশ্লীলতা সম্পর্কে ইসলামের ভূমিকা এবং আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছার অনুমান করা যেতে পারে।

বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে আমরা একটি জিনিস খুব বেশি প্রত্যক্ষ করে থাকি; আর তা হলো- চোগলখোরি। পূর্বে এর প্রবণতা বেশিরভাগ মহিলাদের মধ্যেই বিদ্যমান ছিলো তবে এখন পুরুষেরাও পিছিয়ে নেই। আগে মহিলারা রাস্তায় আসতো না। আসলেও ভুল করে যদি পুরুষের সামনে পড়ে যায় তাহলে সাথে সাথে মাথায় ঘোমটা টেনে দিতো। এমনকি হিন্দু মহিলারাও হুজুর টাইপের মানুষ দেখলে মাথায় কাপড় দিতো কারণ তারা বিশ্বাস করতো যে, হুজুরেরা মহিলাদের দিকে কু-নজর দেন না।

আর এখন?

নারী-পুরুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে গল্প করে। শুধু তাই নয় পুরুষ লোকটিও নিজের ভাই বোনেদের নিয়ে গিবতে লিপ্ত হয় প্রতিবেয়াশি ভাবির সাথে। আমরা কি ভেবে দেখেছি বিষয়টি কতটা লজ্জাজনক?

আপনি কি চাইবেন আপনার স্ত্রী প্রতিবেশি ভাইয়ের সাথে দাঁড়িয়ে গল্প করুক। চাইবেন না, কিন্ত আপনি ঐ একই কাজ করছেন এবং তাতে আনন্দও পাচ্ছেন অতিমাত্রায়। আপনি ভাবলেন কিভাবে যে আপনি অন্যায় করবেন আর পনার পরিবার পরিষ্কার থাকবে?

আল্লাহ অবশ্যই উত্তম পরিকল্পনাকারী। আপনি যা করবেন আল্লাহ তার ফল দুনিয়াতেই দিয়ে দেন কিন্ত আমরা আমাদের পাপের সাথে আল্লাহর দেয়া গজবকে কখনোই মিলিয়ে দেখিনা। আমরা সবাই নিজের কাছে নিজে নিষ্পাপ। খারাপ কিছু হলে আমরা বলি আল্লাহ আমিতো কোনো পাপ করিনি তাহলে আমার সাথেই কেনো এমন হলো?

আসলে আপনি নিজের পাপ চোখে দ্যাখেন না। নিজেকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করান না জীবনে একটি বারের জন্যেও।

গ্রামের একটি মেয়ে যদি কোনো কারণে দেরিতে বাসায় আসে বা একান্তই প্রয়োজনবশত কোনো ছেলের সাথে কথা বলে (পর্দা বজায় রেখে); আর তা গ্রামের কারো চোখে পড়ে, অমনি সে বলে বেড়ায় অমুক ছেলের সাথে ঐ মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক। কোনো দুর্ঘটনাজনিত কারনবশঃত বাসায় ফিরতে দেরি হলে লোকে কানাকানি করতে শুরু করে দেয়, অমুকের মেয়ে মনেহয় কোনো ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়েছে।

এ ব্যাপারে মহাগ্রন্থ কুরআনে বলা হয়েছে,

يَأْتُوا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاء فَاجْلِدُوهُمْ ثَمَانِينَ جَلْدَةً وَلَا تَقْبَلُوا لَهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا وَأُوْلَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ

"যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে অতঃপর স্বপক্ষে চার জন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য কবুল করবে না। এরাই না’ফরমান।" (সূরা নূরঃ ৪)

এবার ভাবুন তো এই যে মেয়েটির সম্পর্কে যে ব্যক্তি ঘটনার সত্যতা না জেনেই মিথ্যা রটালো সে কি তার শাস্তি হতে রেহায় পাবে? এখন যদি তা মিথ্যা হয় এবং অপবাদ রটনাকারীকে আশিটি বেত্রাঘাত করা হতো তাহলে কেমন লাগতো এসব নিন্দুকদের?

আমাদের সমাজে কেউ কলঙ্কমুক্ত হলেও যারা অপবাদ দেয় তাদের শাস্তি দেয়া হয় না আর এজন্যই হয়তো আল্লাহ নিজ হাতে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে থাকেন কিন্ত তারা তা নিজের পাপের সাথে মেলায় না।

এই একটি কাজই আপনার পরকাল ধ্বংস করে দিতে যথেষ্ট। আল্লাহ ক্ষমা না করলে আমাদের কারো পক্ষেই জান্নাত লাভ করা সম্ভব নয়। তাই আপনি অথবা আপনারাও যদি এই ভুলটি করে থাকেন এখনি আল্লাহর কাছে তাওবা করে ক্ষমা চেয়ে নিতে দ্বিধাবোধ করবেন না।

জেনে বা না জেনেই হোক এই ধরনের কাজগুলোই মানুষ এখন সবচেয়ে বেশি করছে। অনেকে অন্যের স্ত্রীকে নিয়েও অপবাদ ছড়াতে দ্বিধাবোধ করেন না। এ ব্যাপারেও আল্লাহ তা'য়ালা মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আয়াত নাজিল করেছেন,

وَالَّذِينَ يَرْمُونَ أَزْوَاجَهُمْ وَلَمْ يَكُن لَّهُمْ شُهَدَاء إِلَّا أَنفُسُهُمْ فَشَهَادَةُ أَحَدِهِمْ أَرْبَعُ شَهَادَاتٍ بِاللَّهِ إِنَّهُ لَمِنَ الصَّادِقِينَ

এবং যারা তাদের স্ত্রীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে এবং তারা নিজেরা ছাড়া তাদের কোন সাক্ষী নেই, এরূপ ব্যক্তির সাক্ষ্য এভাবে হবে যে, সে আল্লাহর কসম খেয়ে চারবার সাক্ষ্য দেবে যে, সে অবশ্যই সত্যবাদী। (সূরা নূরঃ ৬)

وَالْخَامِسَةُ أَنَّ لَعْنَتَ اللَّهِ عَلَيْهِ إِن كَانَ مِنَ الْكَاذِبِينَ وَيَدْرَأُ

এবং পঞ্চমবার বলবে যে, যদি সে মিথ্যাবাদী হয় তবে তার উপর আল্লাহর লানত। (সূরা নূরঃ ৭)

আমাদের সমাজে যদি এই দু'টি আয়াতের সঠিক ব্যবহার করা হতো তাহলে মানুষ কোনো সতি সাধ্যি মেয়েকে অপবাদ দেয়ার আগে ভয় পেতো। আসলে মানুষ বড়ই নাফরমান, তা নাহলে রাসূলে কারীম (সাঃ) এর সম্মানিত স্ত্রীকে মানুষ অপবাদ দিতে পারতো না। যেখানে আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) কে এসব অপবাদের স্বীকার হতে হয়েছে সেখানে আমরা তো কিছুই নয়।

অশ্লীলতার অপবাদ ছড়ানোর ব্যাপারে হযরত আয়েশা (রাঃ) কে নিয়ে একটি কঠিন হাদীস বর্ণিত রয়েছে আর তা হলো--

عَبْدُ الْعَزِيْزِ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيْمُ بْنُ سَعْدٍ عَنْ صَالِحٍ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ قَالَ حَدَّثَنِيْ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ وَسَعِيْدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ وَعَلْقَمَةُ بْنُ وَقَّاصٍ وَعُبَيْدُ اللهِ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُتْبَةَ بْنِ مَسْعُوْدٍ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم حِيْنَ قَالَ لَهَا أَهْلُ الإِفْكِ مَا قَالُوْا وَكُلُّهُمْ حَدَّثَنِيْ طَائِفَةً مِنْ حَدِيْثِهَا وَبَعْضُهُمْ كَانَ أَوْعَى لِحَدِيْثِهَا مِنْ بَعْضٍ وَأَثْبَتَ لَهُ اقْتِصَاصًا وَقَدْ وَعَيْتُ عَنْ كُلِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ الْحَدِيْثَ الَّذِيْ حَدَّثَنِيْ عَنْ عَائِشَةَ وَبَعْضُ حَدِيْثِهِمْ يُصَدِّقُ بَعْضًا وَإِنْ كَانَ بَعْضُهُمْ أَوْعَى لَهُ مِنْ بَعْضٍ قَالُوْا قَالَتْ عَائِشَةُ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ إِذَا أَرَادَ سَفَرًا أَقْرَعَ بَيْنَ أَزْوَاجِهِ فَأَيُّهُنَّ خَرَجَ سَهْمُهَا خَرَجَ بِهَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَعَهُ قَالَتْ عَائِشَةُ فَأَقْرَعَ بَيْنَنَا فِيْ غَزْوَةٍ غَزَاهَا فَخَرَجَ فِيْهَا سَهْمِيْ فَخَرَجْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَعْدَ مَا أُنْزِلَ الْحِجَابُ فَكُنْتُ أُحْمَلُ فِيْ هَوْدَجِيْ وَأُنْزَلُ فِيْهِ فَسِرْنَا حَتَّى إِذَا فَرَغَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ غَزْوَتِهِ تِلْكَ وَقَفَلَ دَنَوْنَا مِنَ الْمَدِيْنَةِ قَافِلِيْنَ آذَنَ لَيْلَةً بِالرَّحِيْلِ فَقُمْتُ حِيْنَ آذَنُوْا بِالرَّحِيْلِ فَمَشَيْتُ حَتَّى جَاوَزْتُ الْجَيْشَ فَلَمَّا قَضَيْتُ شَأْنِيْ أَقْبَلْتُ إِلَى رَحْلِيْ فَلَمَسْتُ صَدْرِيْ فَإِذَا عِقْدٌ لِيْ مِنْ جَزْعِ ظَفَارِ قَدْ انْقَطَعَ فَرَجَعْتُ فَالْتَمَسْتُ عِقْدِيْ فَحَبَسَنِي ابْتِغَاؤُهُ قَالَتْ وَأَقْبَلَ الرَّهْطُ الَّذِيْنَ كَانُوْا يُرَحِّلُوْنِيْ فَاحْتَمَلُوْا هَوْدَجِيْ فَرَحَلُوْهُ عَلَى بَعِيْرِي الَّذِيْ كُنْتُ أَرْكَبُ عَلَيْهِ وَهُمْ يَحْسِبُوْنَ أَنِّيْ فِيْهِ وَكَانَ النِّسَاءُ إِذْ ذَاكَ خِفَافًا لَمْ يَهْبُلْنَ وَلَمْ يَغْشَهُنَّ اللَّحْمُ إِنَّمَا يَأْكُلْنَ الْعُلْقَةَ مِنْ الطَّعَامِ فَلَمْ يَسْتَنْكِرْ الْقَوْمُ خِفَّةَ الْهَوْدَجِ حِيْنَ رَفَعُوْهُ وَحَمَلُوْهُ وَكُنْتُ جَارِيَةً حَدِيْثَةَ السِّنِّ فَبَعَثُوا الْجَمَلَ فَسَارُوْا وَوَجَدْتُ عِقْدِيْ بَعْدَ مَا اسْتَمَرَّ الْجَيْشُ فَجِئْتُ مَنَازِلَهُمْ وَلَيْسَ بِهَا مِنْهُمْ دَاعٍ وَلَا مُجِيْبٌ فَتَيَمَّمْتُ مَنْزِلِي الَّذِيْ كُنْتُ بِهِ وَظَنَنْتُ أَنَّهُمْ سَيَفْقِدُوْنِيْ فَيَرْجِعُوْنَ إِلَيَّ فَبَيْنَا أَنَا جَالِسَةٌ فِيْ مَنْزِلِيْ غَلَبَتْنِيْ عَيْنِيْ فَنِمْتُ وَكَانَ صَفْوَانُ بْنُ الْمُعَطَّلِ السُّلَمِيُّ ثُمَّ الذَّكْوَانِيُّ مِنْ وَرَاءِ الْجَيْشِ فَأَصْبَحَ عِنْدَ مَنْزِلِيْ فَرَأَى سَوَادَ إِنْسَانٍ نَائِمٍ فَعَرَفَنِيْ حِيْنَ رَآنِيْ وَكَانَ رَآنِيْ قَبْلَ الْحِجَابِ فَاسْتَيْقَظْتُ بِاسْتِرْجَاعِهِ حِيْنَ عَرَفَنِيْ فَخَمَّرْتُ وَجْهِيْ بِجِلْبَابِيْ وَ وَاللهِ مَا تَكَلَّمْنَا بِكَلِمَةٍ وَلَا سَمِعْتُ مِنْهُ كَلِمَةً غَيْرَ اسْتِرْجَاعِهِ وَهَوَى حَتَّى أَنَاخَ رَاحِلَتَهُ فَوَطِئَ عَلَى يَدِهَا فَقُمْتُ إِلَيْهَا فَرَكِبْتُهَا فَانْطَلَقَ يَقُوْدُ بِي الرَّاحِلَةَ حَتَّى أَتَيْنَا الْجَيْشَ مُوْغِرِيْنَ فِيْ نَحْرِ الظَّهِيْرَةِ وَهُمْ نُزُوْلٌ قَالَتْ فَهَلَكَ مَنْ هَلَكَ وَكَانَ الَّذِيْ تَوَلَّى كِبْرَ الإِفْكِ عَبْدُ اللهِ بْنُ أُبَيٍّ ابْنُ سَلُوْلَ
قَالَ عُرْوَةُ أُخْبِرْتُ أَنَّهُ كَانَ يُشَاعُ وَيُتَحَدَّثُ بِهِ عِنْدَهُ فَيُقِرُّهُ وَيَسْتَمِعُهُ وَيَسْتَوْشِيْهِ وَقَالَ عُرْوَةُ أَيْضًا لَمْ يُسَمَّ مِنْ أَهْلِ الإِفْكِ أَيْضًا إِلَّا حَسَّانُ بْنُ ثَابِتٍ وَمِسْطَحُ بْنُ أُثَاثَةَ وَحَمْنَةُ بِنْتُ جَحْشٍ فِيْ نَاسٍ آخَرِيْنَ لَا عِلْمَ لِيْ بِهِمْ غَيْرَ أَنَّهُمْ عُصْبَةٌ كَمَا قَالَ اللهُ تَعَالَى وَإِنَّ كِبْرَ ذَلِكَ يُقَالُ لَهُ عَبْدُ اللهِ بْنُ أُبَيٍّ ابْنُ سَلُوْلَ قَالَ عُرْوَةُ كَانَتْ عَائِشَةُ تَكْرَهُ أَنْ يُسَبَّ عِنْدَهَا حَسَّانُ وَتَقُوْلُ إِنَّهُ الَّذِيْ قَالَ :
فَإِنَّ أَبِيْ وَوَالِـدَهُ وَعِـرْضِيْ لِعِـرْضِ مُحَـمّـَدٍ مِنْـكُمْ وِقَـاءُ
قَالَتْ عَائِشَةُ فَقَدِمْنَا الْمَدِيْنَةَ فَاشْتَكَيْتُ حِيْنَ قَدِمْتُ شَهْرًا وَالنَّاسُ يُفِيْضُوْنَ فِيْ قَوْلِ أَصْحَابِ الإِفْكِ لَا أَشْعُرُ بِشَيْءٍ مِنْ ذَلِكَ وَهُوَ يَرِيْبُنِيْ فِيْ وَجَعِيْ أَنِّيْ لَا أَعْرِفُ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم اللُّطْفَ الَّذِيْ كُنْتُ أَرَى مِنْهُ حِيْنَ أَشْتَكِيْ إِنَّمَا يَدْخُلُ عَلَيَّ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَيُسَلِّمُ ثُمَّ يَقُوْلُ كَيْفَ تِيْكُمْ ثُمَّ يَنْصَرِفُ فَذَلِكَ يَرِيْبُنِيْ وَلَا أَشْعُرُ بِالشَّرِّ حَتَّى خَرَجْتُ حِيْنَ نَقَهْتُ فَخَرَجْتُ مَعَ أُمِّ مِسْطَحٍ قِبَلَ الْمَنَاصِعِ وَكَانَ مُتَبَرَّزَنَا وَكُنَّا لَا نَخْرُجُ إِلَّا لَيْلًا إِلَى لَيْلٍ وَذَلِكَ قَبْلَ أَنْ نَتَّخِذَ الْكُنُفَ قَرِيْبًا مِنْ بُيُوْتِنَا قَالَتْ وَأَمْرُنَا أَمْرُ الْعَرَبِ الْأُوَلِ فِي الْبَرِّيَّةِ قِبَلَ الْغَائِطِ وَكُنَّا نَتَأَذَّى بِالْكُنُفِ أَنْ نَتَّخِذَهَا عِنْدَ بُيُوْتِنَا قَالَتْ فَانْطَلَقْتُ أَنَا وَأُمُّ مِسْطَحٍ وَهِيَ ابْنَةُ أَبِيْ رُهْمِ بْنِ الْمُطَّلِبِ بْنِ عَبْدِ مَنَافٍ وَأُمُّهَا بِنْتُ صَخْرِ بْنِ عَامِرٍ خَالَةُ أَبِيْ بَكْرٍ الصِّدِّيْقِ وَابْنُهَا مِسْطَحُ بْنُ أُثَاثَةَ بْنِ عَبَّادِ بْنِ الْمُطَّلِبِ فَأَقْبَلْتُ أَنَا وَأُمُّ مِسْطَحٍ قِبَلَ بَيْتِيْ حِيْنَ فَرَغْنَا مِنْ شَأْنِنَا فَعَثَرَتْ أُمُّ مِسْطَحٍ فِيْ مِرْطِهَا فَقَالَتْ تَعِسَ مِسْطَحٌ فَقُلْتُ لَهَا بِئْسَ مَا قُلْتِ أَتَسُبِّيْنَ رَجُلًا شَهِدَ بَدْرًا فَقَالَتْ أَيْ هَنْتَاهْ وَلَمْ تَسْمَعِيْ مَا قَالَ قَالَتْ وَقُلْتُ مَا قَالَ فَأَخْبَرَتْنِيْ بِقَوْلِ أَهْلِ الإِفْكِ قَالَتْ فَازْدَدْتُ مَرَضًا عَلَى مَرَضِيْ فَلَمَّا رَجَعْتُ إِلَى بَيْتِيْ دَخَلَ عَلَيَّ رَسُوْلُ اللهِ فَسَلَّمَ ثُمَّ قَالَ كَيْفَ تِيْكُمْ فَقُلْتُ لَهُ أَتَأْذَنُ لِيْ أَنْ آتِيَ أَبَوَيَّ قَالَتْ وَأُرِيْدُ أَنْ أَسْتَيْقِنَ الْخَبَرَ مِنْ قِبَلِهِمَا قَالَتْ فَأَذِنَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ لِأُمِّيْ يَا أُمَّتَاهُ مَاذَا يَتَحَدَّثُ النَّاسُ قَالَتْ يَا بُنَيَّةُ هَوِّنِيْ عَلَيْكِ فَوَاللهِ لَقَلَّمَا كَانَتْ امْرَأَةٌ قَطُّ وَضِيئَةً عِنْدَ رَجُلٍ يُحِبُّهَا لَهَا ضَرَائِرُ إِلَّا كَثَّرْنَ عَلَيْهَا قَالَتْ فَقُلْتُ سُبْحَانَ اللهِ أَوَلَقَدْ تَحَدَّثَ النَّاسُ بِهَذَا قَالَتْ فَبَكَيْتُ تِلْكَ اللَّيْلَةَ حَتَّى أَصْبَحْتُ لَا يَرْقَأُ لِيْ دَمْعٌ وَلَا أَكْتَحِلُ بِنَوْمٍ ثُمَّ أَصْبَحْتُ أَبْكِيْ قَالَتْ وَدَعَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلِيَّ بْنَ أَبِيْ طَالِبٍ وَأُسَامَةَ بْنَ زَيْدٍ حِيْنَ اسْتَلْبَثَ الْوَحْيُ يَسْأَلُهُمَا وَيَسْتَشِيْرُهُمَا فِيْ فِرَاقِ أَهْلِهِ
قَالَتْ فَأَمَّا أُسَامَةُ فَأَشَارَ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِالَّذِيْ يَعْلَمُ مِنْ بَرَاءَةِ أَهْلِهِ وَبِالَّذِيْ يَعْلَمُ لَهُمْ فِيْ نَفْسِهِ فَقَالَ أُسَامَةُ أَهْلَكَ وَلَا نَعْلَمُ إِلَّا خَيْرًا وَأَمَّا عَلِيٌّ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ لَمْ يُضَيِّقْ اللهُ عَلَيْكَ وَالنِّسَاءُ سِوَاهَا كَثِيْرٌ وَسَلْ الْجَارِيَةَ تَصْدُقْكَ قَالَتْ فَدَعَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَرِيْرَةَ فَقَالَ أَيْ بَرِيْرَةُ هَلْ رَأَيْتِ مِنْ شَيْءٍ يَرِيْبُكِ قَالَتْ لَهُ بَرِيْرَةُ وَالَّذِيْ بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا رَأَيْتُ عَلَيْهَا أَمْرًا قَطُّ أَغْمِصُهُ غَيْرَ أَنَّهَا جَارِيَةٌ حَدِيْثَةُ السِّنِّ تَنَامُ عَنْ عَجِيْنِ أَهْلِهَا فَتَأْتِي الدَّاجِنُ فَتَأْكُلُهُ
قَالَتْ فَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ يَوْمِهِ فَاسْتَعْذَرَ مِنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أُبَيٍّ وَهُوَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَقَالَ يَا مَعْشَرَ الْمُسْلِمِيْنَ مَنْ يَعْذِرُنِيْ مِنْ رَجُلٍ قَدْ بَلَغَنِيْ عَنْهُ أَذَاهُ فِيْ أَهْلِيْ وَاللهِ مَا عَلِمْتُ عَلَى أَهْلِيْ إِلَّا خَيْرًا وَلَقَدْ ذَكَرُوْا رَجُلًا مَا عَلِمْتُ عَلَيْهِ إِلَّا خَيْرًا وَمَا يَدْخُلُ عَلَى أَهْلِيْ إِلَّا مَعِيْ قَالَتْ فَقَامَ سَعْدُ بْنُ مُعَاذٍ أَخُوْ بَنِيْ عَبْدِ الْأَشْهَلِ فَقَالَ أَنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ أَعْذِرُكَ فَإِنْ كَانَ مِنَ الْأَوْسِ ضَرَبْتُ عُنُقَهُ وَإِنْ كَانَ مِنْ إِخْوَانِنَا مِنَ الْخَزْرَجِ أَمَرْتَنَا فَفَعَلْنَا أَمْرَكَ قَالَتْ فَقَامَ رَجُلٌ مِنَ الْخَزْرَجِ وَكَانَتْ أُمُّ حَسَّانَ بِنْتَ عَمِّهِ مِنْ فَخِذِهِ وَهُوَ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ وَهُوَ سَيِّدُ الْخَزْرَجِ قَالَتْ وَكَانَ قَبْلَ ذَلِكَ رَجُلًا صَالِحًا وَلَكِنْ احْتَمَلَتْهُ الْحَمِيَّةُ فَقَالَ لِسَعْدٍ كَذَبْتَ لَعَمْرُ اللهِ لَا تَقْتُلُهُ وَلَا تَقْدِرُ عَلَى قَتْلِهِ وَلَوْ كَانَ مِنْ رَهْطِكَ مَا أَحْبَبْتَ أَنْ يُقْتَلَ فَقَامَ أُسَيْدُ بْنُ حُضَيْرٍ وَهُوَ ابْنُ عَمِّ سَعْدٍ فَقَالَ لِسَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ كَذَبْتَ لَعَمْرُ اللهِ لَنَقْتُلَنَّهُ فَإِنَّكَ مُنَافِقٌ تُجَادِلُ عَنِ الْمُنَافِقِيْنَ
قَالَتْ فَثَارَ الْحَيَّانِ الْأَوْسُ وَالْخَزْرَجُ حَتَّى هَمُّوْا أَنْ يَقْتَتِلُوْا وَرَسُوْلُ اللهِ قَائِمٌ عَلَى الْمِنْبَرِ قَالَتْ فَلَمْ يَزَلْ رَسُوْلُ اللهِ يُخَفِّضُهُمْ حَتَّى سَكَتُوْا وَسَكَتَ قَالَتْ فَبَكَيْتُ يَوْمِيْ ذَلِكَ كُلَّهُ لَا يَرْقَأُ لِيْ دَمْعٌ وَلَا أَكْتَحِلُ بِنَوْمٍ قَالَتْ وَأَصْبَحَ أَبَوَايَ عِنْدِيْ وَقَدْ بَكَيْتُ لَيْلَتَيْنِ وَيَوْمًا لَا يَرْقَأُ لِيْ دَمْعٌ وَلَا أَكْتَحِلُ بِنَوْمٍ حَتَّى إِنِّيْ لَأَظُنُّ أَنَّ الْبُكَاءَ فَالِقٌ كَبِدِيْ فَبَيْنَا أَبَوَايَ جَالِسَانِ عِنْدِيْ وَأَنَا أَبْكِيْ فَاسْتَأْذَنَتْ عَلَيَّ امْرَأَةٌ مِنَ الْأَنْصَارِ فَأَذِنْتُ لَهَا فَجَلَسَتْ تَبْكِيْ مَعِيْ قَالَتْ فَبَيْنَا نَحْنُ عَلَى ذَلِكَ دَخَلَ رَسُوْلُ اللهِ عَلَيْنَا فَسَلَّمَ ثُمَّ جَلَسَ قَالَتْ وَلَمْ يَجْلِسْ عِنْدِيْ مُنْذُ قِيْلَ مَا قِيْلَ قَبْلَهَا وَقَدْ لَبِثَ شَهْرًا لَا يُوْحَى إِلَيْهِ فِيْ شَأْنِيْ بِشَيْءٍ قَالَتْ فَتَشَهَّدَ رَسُوْلُ اللهِ حِيْنَ جَلَسَ ثُمَّ قَالَ أَمَّا بَعْدُ يَا عَائِشَةُ إِنَّهُ بَلَغَنِيْ عَنْكِ كَذَا وَكَذَا فَإِنْ كُنْتِ بَرِيئَةً فَسَيُبَرِّئُكِ اللهُ وَإِنْ كُنْتِ أَلْمَمْتِ بِذَنْبٍ فَاسْتَغْفِرِي اللهَ وَتُوْبِيْ إِلَيْهِ فَإِنَّ الْعَبْدَ إِذَا اعْتَرَفَ ثُمَّ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ
قَالَتْ فَلَمَّا قَضَى رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَقَالَتَهُ قَلَصَ دَمْعِيْ حَتَّى مَا أُحِسُّ مِنْهُ قَطْرَةً فَقُلْتُ لِأَبِيْ أَجِبْ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنِّيْ فِيْمَا قَالَ فَقَالَ أَبِيْ وَاللهِ مَا أَدْرِيْ مَا أَقُوْلُ لِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ لِأُمِّيْ أَجِيْبِيْ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِيْمَا قَالَ قَالَتْ أُمِّيْ وَاللهِ مَا أَدْرِيْ مَا أَقُوْلُ لِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ وَأَنَا جَارِيَةٌ حَدِيْثَةُ السِّنِّ لَا أَقْرَأُ مِنَ الْقُرْآنِ كَثِيْرًا إِنِّيْ وَاللهِ لَقَدْ عَلِمْتُ لَقَدْ سَمِعْتُمْ هَذَا الْحَدِيْثَ حَتَّى اسْتَقَرَّ فِيْ أَنْفُسِكُمْ وَصَدَّقْتُمْ بِهِ فَلَئِنْ قُلْتُ لَكُمْ إِنِّيْ بَرِيئَةٌ لَا تُصَدِّقُوْنِيْ وَلَئِنْ اعْتَرَفْتُ لَكُمْ بِأَمْرٍ وَاللهُ يَعْلَمُ أَنِّيْ مِنْهُ بَرِيئَةٌ لَتُصَدِّقُنِّيْ فَوَاللهِ لَا أَجِدُ لِيْ وَلَكُمْ مَثَلًا إِلَّا أَبَا يُوْسُفَ حِيْنَ قَالَ {فَصَبْرٌ جَمِيْلٌ وَاللهُ الْمُسْتَعَانُ عَلٰى مَا تَصِفُوْنَ} ثُمَّ تَحَوَّلْتُ وَاضْطَجَعْتُ عَلَى فِرَاشِيْ وَاللهُ يَعْلَمُ أَنِّيْ حِيْنَئِذٍ بَرِيئَةٌ وَأَنَّ اللهَ مُبَرِّئِيْ بِبَرَاءَتِيْ وَلَكِنْ وَاللهِ مَا كُنْتُ أَظُنُّ أَنَّ اللهَ مُنْزِلٌ فِيْ شَأْنِيْ وَحْيًا يُتْلَى لَشَأْنِيْ فِيْ نَفْسِيْ كَانَ أَحْقَرَ مِنْ أَنْ يَتَكَلَّمَ اللهُ فِيَّ بِأَمْرٍ وَلَكِنْ كُنْتُ أَرْجُوْ أَنْ يَرَى رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِي النَّوْمِ رُؤْيَا يُبَرِّئُنِي اللهُ بِهَا فَوَاللهِ مَا رَامَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَجْلِسَهُ وَلَا خَرَجَ أَحَدٌ مِنْ أَهْلِ الْبَيْتِ حَتَّى أُنْزِلَ عَلَيْهِ فَأَخَذَهُ مَا كَانَ يَأْخُذُهُ مِنَ الْبُرَحَاءِ حَتَّى إِنَّهُ لَيَتَحَدَّرُ مِنْهُ مِنَ الْعَرَقِ مِثْلُ الْجُمَانِ وَهُوَ فِيْ يَوْمٍ شَاتٍ مِنْ ثِقَلِ الْقَوْلِ الَّذِيْ أُنْزِلَ عَلَيْهِ قَالَتْ فَسُرِّيَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ يَضْحَكُ فَكَانَتْ أَوَّلَ كَلِمَةٍ تَكَلَّمَ بِهَا أَنْ قَالَ يَا عَائِشَةُ أَمَّا اللهُ فَقَدْ بَرَّأَكِ
قَالَتْ فَقَالَتْ لِيْ أُمِّيْ قُوْمِيْ إِلَيْهِ فَقُلْتُ وَاللهِ لَا أَقُوْمُ إِلَيْهِ فَإِنِّيْ لَا أَحْمَدُ إِلَّا اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَالَتْ وَأَنْزَلَ اللهُ تَعَالَى {إِنَّ الَّذِيْنَ جَآءُوْا بِالإِفْكِ عُصْبَةٌ مِّنْكُمْ}الْعَشْرَ الْآيَاتِ ثُمَّ أَنْزَلَ اللهُ هَذَا فِيْ بَرَاءَتِيْ قَالَ أَبُوْ بَكْرٍ الصِّدِّيْقُ وَكَانَ يُنْفِقُ عَلَى مِسْطَحِ بْنِ أُثَاثَةَ لِقَرَابَتِهِ مِنْهُ وَفَقْرِهِ وَاللهِ لَا أُنْفِقُ عَلَى مِسْطَحٍ شَيْئًا أَبَدًا بَعْدَ الَّذِيْ قَالَ لِعَائِشَةَ مَا قَالَ فَأَنْزَلَ اللهُ {وَلَا يَأْتَلِ أُولُو الْفَضْلِ مِنْكُمْ}إِلَى قَوْلِهِ {غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ} قَالَ أَبُوْ بَكْرٍ الصِّدِّيْقُ بَلَى وَاللهِ إِنِّيْ لَأُحِبُّ أَنْ يَغْفِرَ اللهُ لِيْ فَرَجَعَ إِلَى مِسْطَحٍ النَّفَقَةَ الَّتِيْ كَانَ يُنْفِقُ عَلَيْهِ وَقَالَ وَاللهِ لَا أَنْزِعُهَا مِنْهُ أَبَدًا قَالَتْ عَائِشَةُ وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم سَأَلَ زَيْنَبَ بِنْتَ جَحْشٍ عَنْ أَمْرِيْ فَقَالَ لِزَيْنَبَ مَاذَا عَلِمْتِ أَوْ رَأَيْتِ فَقَالَتْ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَحْمِيْ سَمْعِيْ وَبَصَرِيْ وَاللهِ مَا عَلِمْتُ إِلَّا خَيْرًا قَالَتْ عَائِشَةُ وَهِيَ الَّتِيْ كَانَتْ تُسَامِيْنِيْ مِنْ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَعَصَمَهَا اللهُ بِالْوَرَعِ قَالَتْ وَطَفِقَتْ أُخْتُهَا حَمْنَةُ تُحَارِبُ لَهَا فَهَلَكَتْ فِيْمَنْ هَلَكَ
قَالَ ابْنُ شِهَابٍ فَهَذَا الَّذِيْ بَلَغَنِيْ مِنْ حَدِيْثِ هَؤُلَاءِ الرَّهْطِ ثُمَّ قَالَ عُرْوَةُ قَالَتْ عَائِشَةُ وَاللهِ إِنَّ الرَّجُلَ الَّذِيْ قِيْلَ لَهُ مَا قِيْلَ لَيَقُوْلُ سُبْحَانَ اللهِ فَوَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ مَا كَشَفْتُ مِنْ كَنَفِ أُنْثَى قَطُّ قَالَتْ ثُمَّ قُتِلَ بَعْدَ ذَلِكَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ

নবী কারীম (সাঃ)-এর সহধর্মিণী 'হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

‘উরওয়াহ ইবনু যুবায়র, সা‘ঈদ ইবনু মুসায়্যিব, ‘আলক্বামাহ ইবনু ওয়াক্কাস ও ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উত্বাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) সূত্রে নবী (সাঃ)-এর সহধর্মিণী ‘ হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, যখন অপবাদ রটনাকারীগণ তাঁর প্রতি অপবাদ রটিয়েছিল।

রাবী যুহরী (রহ.) বলেন, তারা প্রত্যেকেই হাদীসটির অংশবিশেষ আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি স্মরণ রাখা ও সঠিকভাবে বর্ণনা করার ব্যাপারে তাদের কেউ কেউ একে অন্যের চেয়ে অধিকতর অগ্রগণ্য ও নির্ভরযোগ্য।

হযরত আয়েশা (রাঃ) সম্পর্কে তারা আমার কাছে যা বর্ণনা করেছেন আমি তাদের প্রত্যেকের কথাই ঠিকঠাকভাবে স্মরণ রেখেছি। তাদের একজনের বর্ণিত হাদীসের অংশ অপরের বর্ণিত হাদীসের সত্যতা প্রমাণ করে। যদিও তাদের একজন অন্যের চেয়ে অধিক স্মৃতিশক্তির অধিকারী।

বর্ণনাকারীগণ বলেন, ‘ হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন সফরে যেতে ইচ্ছে করতেন তখন তিনি তাঁর স্ত্রীগণের (কাকে সাথে নিবেন তা নির্ণয়ের জন্য) কোরা ব্যবহার করতেন। এতে যার নাম উঠত তাকেই তিনি সঙ্গে নিয়ে সফরে যেতেন।

আয়েশা (রাঃ) বলেন, এমনি এক যুদ্ধে তিনি আমাদের মাঝে কোরা ব্যবহার করেন এবং এতে আমার নাম উঠে আসে। তাই আমিই রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সঙ্গে সফরে গেলাম। এই ঘটনাটি পর্দার হুকুম নাযিলের পর ঘটেছিল। তখন আমাকে হাওদা সহ সাওয়ারীতে উঠানো ও নামানো হত। এমনিভাবে আমরা চলতে থাকলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন এ যুদ্ধ থেকে নিষ্ক্রান্ত হলেন, তখন তিনি (গৃহাভিমুখে) প্রত্যাবর্তন করলেন।

ফেরার পথে আমরা মদিনার নিকটবর্তী হলে তিনি একদিন রাতের বেলা রওয়ানা হওয়ার জন্য আদেশ করলেন। রওয়ানা হওয়ার ঘোষণা দেয়া হলে আমি উঠলাম এবং (প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার জন্য) পায়ে হেঁটে সেনাছাউনী পেরিয়ে (সামনে) গেলাম। অতঃপর প্রয়োজন সেরে আমি আমার সাওয়ারীর কাছে ফিরে এসে বুকে হাত দিয়ে দেখলাম যে, (ইয়ামানের অন্তর্গত) যিফার শহরের পুঁথি দ্বারা তৈরি করা আমার গলার হারটি ছিঁড়ে কোথায় পড়ে গিয়েছে। তাই আমি ফিরে গিয়ে আমার হারটি খোঁজ করতে লাগলাম। হার খুঁজতে খুঁজতে আমার আসতে দেরী হয়ে যায়। ‘আয়েশা (রাঃ) বলেন, যে সমস্ত লোক উটের পিঠে আমাকে উঠিয়ে দিতেন তারা এসে আমার হাওদা উঠিয়ে তা আমার উটের পিঠে তুলে দিলেন, যার উপর আমি আরোহণ করতাম। তারা ভেবেছিলেন, আমি ওর মধ্যেই আছি, কারণ খাদ্যাভাবে মহিলারা তখন খুবই হালকা হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের দেহ গোশতবহুল ছিল না। তাঁরা খুবই স্বল্প পরিমাণ খানা খেতে পেত। তাই তারা যখন হাওদা উঠিয়ে উপরে রাখেন তখন তারা হালকা হাওদাটিকে কোন প্রকার অস্বাভাবিক মনে করেননি। অধিকন্তু আমি ছিলাম একজন অল্প বয়স্কা কিশোরী। এরপর তারা উট হাঁকিয়ে নিয়ে চলে যায়। সৈন্যদল চলে যাওয়ার পর আমি আমার হারটি খুঁজে পাই এবং নিজ জায়গায় ফিরে এসে দেখি তাঁদের (সৈন্যদের) কোন আহবানকারী এবং কোন জওয়াব দাতা সেখানে নেই।

তখন আমি আগে যেখানে ছিলাম সেখানে বসে রইলাম। ভাবলাম, তাঁরা আমাকে দেখতে না পেয়ে অবশ্যই আমার কাছে ফিরে আসবে। ঐ স্থানে বসে থাকা অবস্থায় ঘুম চেপে ধরলে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। বানূ সুলামী গোত্রের যাকওয়ান শাখার সাফওয়ান ইবনু মুআত্তাল (রাঃ) [যাকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ফেলে যাওয়া আসবাবপত্র সংগ্রহের জন্য পশ্চাতে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন] সৈন্যদল চলে যাওয়ার পর তিনি সেখানে ছিলেন।

তিনি সকালে আমার অবস্থানস্থলের কাছে এসে একজন ঘুমন্ত মানুষ দেখে আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে চিনে ফেললেন। পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে তিনি আমাকে দেখেছিলেন। তিনি আমাকে চিনতে পেরে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাযিউন’ পড়লে আমি তা শুনে জেগে উঠলাম এবং চাদর টেনে আমার চেহারা ঢেকে ফেললাম। আল্লাহর কসম! আমি কোন কথা বলিনি এবং তাঁর থেকে ইন্না লিল্লাহ........ পাঠ ব্যতীত অন্য কোন কথাই শুনতে পাইনি। এরপর তিনি সওয়ারী থেকে নামলেন এবং সওয়ারীকে বসিয়ে তার সামনের পা নিচু করে দিলে আমি গিয়ে তাতে উঠে পড়লাম। পরে তিনি আমাকে সহ সওয়ারীকে টেনে আগে আগে চললেন, অতঃপর ঠিক দুপুরে প্রচন্ড গরমের সময় আমরা গিয়ে সেনাদলের সঙ্গে মিলিত হলাম। সে সময় তাঁরা একটি জায়গায় অবতরণ করছিলেন। ‘আয়েশা (রাঃ) বলেন, এরপর যাদের ধ্বংস হওয়ার ছিল তারা (আমার উপর অপবাদ দিয়ে) ধ্বংস হয়ে গেল। তাদের মধ্যে এ অপবাদ দেয়ার ব্যাপারে যে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিল সে হচ্ছে ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সুলূল।

বর্ণনাকারী ‘উরওয়াহ (রাঃ) বলেন, আমি জানতে পেরেছি যে, তার (‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সুলূল) সামনে অপবাদের কথাগুলো প্রচার করা হত এবং আলোচনা করা হত আর অমনি সে এগুলোকে বিশ্বাস করত, খুব ভাল করে শুনত আর শোনা কথার ভিত্তিতেই ব্যাপারটিকে প্রমাণ করার চেষ্টা করত।

‘উরওয়াহ (রাঃ) আরো বর্ণনা করেছেন যে, অপবাদ আরোপকারী ব্যক্তিদের মধ্যে হাসসান ইবনু সাবিত, মিসতাহ ইবনু উসাসা এবং হামনা বিনত জাহাশ (রাঃ) ব্যতীত আর কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। তারা কয়েকজন লোকের একটি দল ছিল, এটুকু ব্যতীত তাদের ব্যাপারে আমার আর কিছু জানা নেই। যেমন (আল-কুরআনে) মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন। এ ব্যাপারে যে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিল তাকে ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই বিন সুলূল বলে ডাকা হয়ে থাকে। বর্ণনাকারী ‘উরওয়াহ (রাঃ) বলেন, ‘আয়েশা (রাঃ) এ ব্যাপারে হাস্সান ইবনু সাবিত (রাঃ)-কে গালমন্দ করাকে পছন্দ করতেন না। তিনি বলতেন, হাস্সান ইবনু সাবিত (রাঃ) তো সেই লোক যিনি তার এক কবিতায় বলেছেন,

আমার মান সম্মান এবং আমার বাপ দাদা

,মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর মান সম্মান রক্ষায় নিবেদিত।

‘আয়েশা (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমরা মাদ্বীনায় আসলাম। মদিনায় এসে এক মাস পর্যন্ত আমি অসুস্থ থাকলাম। এদিকে অপবাদ রটনাকারীদের কথা নিয়ে লোকেদের মধ্যে আলোচনা ও চর্চা হতে থাকল। কিন্তু এগুলোর কিছুই আমি জানি না। তবে আমি সন্দেহ করছিলাম এবং তা আরো দৃঢ় হচ্ছিল আমার এ অসুখের সময়। কেননা এর আগে আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে যে রকম স্নেহ-ভালবাসা পেতাম আমার এ অসুখের সময় তা আমি পাচ্ছিলাম না। তিনি আমার কাছে এসে সালাম করে কেবল ‘‘তুমি কেমন আছ’’ জিজ্ঞেস করে চলে যেতেন। তাঁর এ আচরণই আমার মনে ভীষণ সন্দেহ জাগিয়ে তোলে। তবে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাইরে বের হওয়ার আগে পর্যন্ত এ জঘন্য অপবাদের ব্যাপারে আমি কিছুই জানতাম না।

উম্মু মিসতাহ (রাঃ), (মিসতাহর মা) একদা আমার সঙ্গে পায়খানার দিকে বের হন। আর প্রকৃতির ডাকে আমাদের বের হওয়ার অবস্থা এই ছিল যে, এক রাতে বের হলে আমরা আবার পরের রাতে বের হতাম। এটা ছিল আমাদের ঘরের পার্শ্বে পায়খানা তৈরি করার আগের ঘটনা। আমাদের অবস্থা প্রাচীন আরবের লোকদের অবস্থার মতো ছিল। তাদের মতো আমরাও পায়খানা করার জন্য ঝোপঝাড়ে চলে যেতাম। এমনকি (অভ্যাস না থাকায়) বাড়ির পার্শ্বে পায়খানা তৈরি করলে আমরা খুব কষ্ট পেতাম।

‘আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা আমি এবং উম্মু মিসতাহ (‘‘যিনি ছিলেন আবূ রূহম ইবনু মুত্তালিব ইবনু ‘আবদে মুনাফির কন্যা, যার মা সাখার ইবনু ‘আমির-এর কন্যা ও আবূ বাকর সিদ্দীকের খালা এবং মিসতাহ ইবনু উসাসা ইবনু আববাদ ইবনু মুত্তালিব যার পুত্র’’) একত্রে বের হলাম। আমরা আমাদের কাজ থেকে নিস্ক্রান্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পথে উম্মু মিসতাহ তার কাপড়ে জড়িয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে বললেন, মিসতাহ ধ্বংস হোক। আমি তাকে বললাম, আপনি খুব খারাপ কথা বলছেন। আপনি কি বদর যুদ্ধে যোগদানকারী ব্যক্তিকে গালি দিচ্ছেন? তিনি আমাকে বললেন, ওগো অবলা, সে তোমার সম্বন্ধে কী কথা বলে বেড়াচ্ছে তুমি তো তা শোননি।

‘আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, সে আমার সম্পর্কে কী বলছে?

তখন তিনি অপবাদ রটনাকারীদের কথাবার্তা সম্পর্কে আমাকে জানালেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বর্ণনা করেন, এরপর আমার পুরানো রোগ আরো বেড়ে গেল। আমি বাড়ি ফেরার পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমার কাছে আসলেন এবং সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেমন আছ? ‘আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি আমার পিতা-মাতার কাছে গিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক খবর জানতে চাচ্ছিলাম, তাই আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বললাম, আপনি কি আমাকে আমার পিতা-মাতার কাছে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেবেন?

'আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে অনুমতি দিলেন।

তখন আমি আমার আম্মাকে বললাম, আম্মাজান, লোকজন কী আলোচনা করছে? তিনি বললেন, বেটি এ ব্যাপারটিকে হালকা করে ফেল। আল্লাহর কসম! সতীন আছে এমন স্বামীর সোহাগ লাভে ধন্যা সুন্দরী রমণীকে তাঁর সতীনরা বদনাম করবে না, এমন খুব কমই হয়।

‘আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, সুবহানাল্লাহ। লোকজন কি এমন গুজবই রটিয়েছে। ‘আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন, সারারাত আমি কাঁদলাম। কাঁদতে কাঁদতে সকাল হয়ে গেল। এর মধ্যে আমার চোখের পানিও বন্ধ হল না এবং আমি ঘুমাতেও পারলাম না। এরপর ভোরবেলাও আমি কাঁদছিলাম। তিনি আরো বলেন যে, এ সময় ওহী নাযিল হতে দেরি হওয়ায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার স্ত্রীর (আমার) বিচ্ছেদের বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ ও আলোচনা করার নিমিত্তে ‘আলী ইবনু আবূ তালিব এবং উসামাহ ইবনু যায়দ (রাঃ)-কে ডেকে পাঠালেন।

তিনি [‘আয়েশা (রাঃ)] বলেন, উসামাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর স্ত্রীদের পবিত্রতা এবং তাদের প্রতি [নবী (সাঃ)-এর] ভালবাসার কারণে বললেন, তাঁরা আপনার স্ত্রী। তাদের সম্পর্কে আমি 'ভাল' ব্যতীত আর কিছুই জানি না। আর ‘আলী (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তো আপনার জন্য সংকীর্ণতা রাখেননি। তিনি ব্যতীত আরো বহু মহিলা আছে। অবশ্য আপনি এ ব্যাপারে দাসী [বারীরাহ (রাঃ)]-কে জিজ্ঞেস করুন। সে আপনার কাছে সত্য কথাই বলবে। ‘আয়েশা (রাঃ) বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বারীরাহ (রাঃ)-কে ডেকে বললেন, হে বারীরাহ! তুমি তাঁর মধ্যে কোন সন্দেহপূর্ণ আচরণ দেখেছ কি?

বারীরাহ (রাঃ) তাঁকে বললেন, সে আল্লাহর শপথ যিনি আপনাকে সত্য বিধানসহ পাঠিয়েছেন, আমি তার মধ্যে কখনো এমন কিছু দেখিনি যার দ্বারা তাঁকে দোষী বলা যায়। তবে তাঁর সম্পর্কে কেবল এটুকু বলা যায় যে, তিনি হলেন অল্প বয়স্কা কিশোরী, রুটি তৈরী করার জন্য আটা খামির করে রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। আর বাকরী এসে অমনি তা খেয়ে ফেলে।

তিনি [‘আয়েশা (রাঃ)] বলেন, সেদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সঙ্গে সঙ্গে উঠে গিয়ে মিম্বরে বসে ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই-এর ক্ষতি থেকে রক্ষার আহবান জানিয়ে বললেন, হে মুসলিম সম্প্রদায়!

যে আমার স্ত্রীর ব্যাপারে অপবাদ রটিয়ে আমাকে কষ্ট দিয়েছে তার এ অপবাদ থেকে আমাকে মুক্ত করবে। আল্লাহর কসম! আমি আমার স্ত্রী সম্পর্কে ভাল ব্যতীত আর কিছুই জানি না। আর তাঁরা এক ব্যক্তির (সাফওয়ান ইবনু মু‘আত্তাল) নাম উল্লেখ করছে যার ব্যাপারেও আমি ভাল ব্যতীত কিছু জানি না। সে তো আমার সঙ্গেই আমার ঘরে যায়।

'আয়েশা (রাঃ) বলেন, বানী ‘আবদুল আশহাল গোত্রের সা‘দ (ইবনু মু'আয) (রাঃ) উঠে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে এ অপবাদ থেকে মুক্তি দেব। সে যদি আউস গোত্রের লোক হয় তাহলে তার শিরচ্ছেদ করব। আর যদি সে আমাদের ভাই খাযরাজের লোক হয় তাহলে তার ব্যাপারে আপনি যা বলবেন তাই করব। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, এ সময় হাস্সান ইবনু সাবিত (রাঃ)-এর মায়ের চাচাতো ভাই খাযরাজ গোত্রের নেতা সা‘ঈদ ইবনু উবাদা (রাঃ) দাঁড়িয়ে এ কথার প্রতিবাদ করলেন। ‘আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ- এ ঘটনার আগে তিনি একজন সৎ ও নেককার লোক ছিলেন। গোত্রীয় অহঙ্কারে উত্তেজিত হয়ে তিনি সা‘দ ইবনু মু'আয (রাঃ)-কে বললেন, তুমি মিথ্যা কথা বলছ।

আল্লাহর কসম! তুমি তাকে হত্যা করতে পারবে না এবং তাকে হত্যা করার ক্ষমতাও তোমার নেই। সে তোমার গোত্রের লোক হলে তুমি তার নিহত হওয়া কখনো পছন্দ করতে না। তখন সা‘দ ইবনু মু'আয (রাঃ)-এর চাচাতো ভাই উসাইদ ইবনু হুযাইর (রাঃ) সা‘দ ইবনু ‘উবাইদাহ (রাঃ)-কে বললেন, বরং তুমিই মিথ্যা বলছ। আল্লাহর কসম! আমরা অবশ্যই তাকে হত্যা করব। তুমি হলে মুনাফিক। তাই মুনাফিকদের পক্ষ নিয়ে কথাবার্তা বলছ।

তিনি [‘আয়েশা (রাঃ)] বলেন, এ সময় আউস ও খাযরাজ উভয় গোত্র খুব উত্তেজিত হয়ে যায়। এমনকি তারা যুদ্ধের সংকল্প করে বসে। এ সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মিম্বরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ‘আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদের শান্ত করলেন এবং নিজেও চুপ হয়ে গেলেন।

'আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি সেদিন সারাক্ষণ কেঁদে কাটালাম। চোখের ধারা আমার বন্ধ হয়নি এবং একটু ঘুমও হয়নি। তিনি বলেন, আমি কান্না করছিলাম আর আমার পিতা-মাতা আমার পার্শ্বে উপবিষ্ট ছিলেন। এমনি করে একদিন দুই রাত কেঁদে কেঁদে কাটিয়ে দিলাম। এর মধ্যে আমার একটুও ঘুম হয়নি। বরং অনবরত আমার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে। মনে হচ্ছিল যেন, কান্নার কারণে আমার কলিজা ফেটে যাবে। আমি ক্রন্দনরত ছিলাম আর আমার আব্বা-আম্মা আমার পার্শ্বে উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় একজন আনসারী মহিলা আমার কাছে আসার অনুমতি চাইলে আমি তাকে আসার অনুমতি দিলাম। সে এসে বসল এবং আমার সঙ্গে কাঁদতে আরম্ভ করল। তিনি বলেন, আমরা কান্না করছিলাম এই মুহূর্তে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের কাছে এসে সালাম করলেন এবং আমাদের পাশে বসে গেলেন।

'আয়েশা (রাঃ) বলেন, অপবাদ রটানোর পর আমার পার্শ্বে এসে এভাবে তিনি আর বসেননি। এদিকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এক মাস অপেক্ষা করার পরও আমার ব্যাপারে তাঁর নিকট কোন ওহী আসেনি। ‘আয়েশা (রাঃ) বলেন, বসার পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কালিমা শাহাদাত পড়লেন। এরপর বললেন, ‘আয়িশা তোমার ব্যাপারে আমার কাছে অনেক কথাই পৌঁছেছে, যদি তুমি এর থেকে পবিত্র হও তাহলে শীঘ্রই আল্লাহ তোমাকে এ অপবাদ থেকে মুক্ত করবেন। আর যদি তুমি কোন গুনাহ করে থাক তাহলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তওবা কর। কেননা বান্দা গুনাহ স্বীকার করে তওবা করলে আল্লাহ তা‘আলা তওবা কবূল করেন।

তিনি [‘আয়েশা (রাঃ)] বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর কথা শেষ করলে আমার অশ্রুধারা বন্ধ হয়ে যায়। এক ফোঁটা অশ্রুও আমি আর টের করতে পারলাম না। তখন আমি আমার আব্বাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যা বলছেন আমার হয়ে তার জবাব দিন। আমার আব্বা বললেন, আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে কী জবাব দিব তা জানি না। তখন আমি আমার আম্মাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যা বলছেন, আপনি তার উত্তর দিন। আম্মা বললেন, আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে, কী উত্তর দিব তা জানি না।

তখন আমি ছিলাম অল্প বয়স্কা কিশোরী। কুরআনও বেশী পড়তে পারতাম না। তথাপিও এ অবস্থা দেখে আমি নিজেই বললাম, আমি জানি আপনারা এ অপবাদের ঘটনা শুনেছেন, আপনারা তা বিশ্বাস করেছেন এবং বিষয়টি আপনাদের মনে দৃঢ়মূল হয়ে আছে। এখন যদি আমি বলি যে, এর থেকে আমি পবিত্র তাহলে আপনারা আমাকে বিশ্বাস করবেন না। আর যদি আমি এ অপরাধের কথা স্বীকার করে নেই যে সম্পর্কে আল্লাহ জানেন যে, আমি এর থেকে পবিত্র, তাহলে আপনারা তা বিশ্বাস করবেন। আল্লাহর কসম! আমি ও আপনারা যে বিপাকে পড়েছি এর জন্য ইউসুফ (আঃ)-এর পিতার কথা ব্যতীত আমি কোন দৃষ্টান্ত খুঁজে পাচ্ছি না। তিনি বলেছিলেনঃ ‘‘কাজেই পূর্ণ ধৈর্য্যই শ্রেয়, তোমরা যা বলছ এ ব্যাপারে আল্লাহই একমাত্র আমার আশ্রয়স্থল।’’ অতঃপর আমি মুখ ঘুরিয়ে আমার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আল্লাহ তা‘আলা জানেন যে, সে মুহূর্তেও আমি পবিত্র। অবশ্যই আল্লাহ আমার পবিত্রতা প্রকাশ করে দেবেন তবে আল্লাহর কসম, আমি কক্ষণো ভাবিনি যে, আমার সম্পর্কে আল্লাহ ওয়াহী অবতীর্ণ করবেন যা পাঠ করা হবে। আমার সম্পর্কে আল্লাহ কোন কথা বলবেন আমি নিজেকে এতটা উত্তম মনে করিনি বরং আমি নিজেকে এর চেয়ে অনেক অধম বলে ভাবতাম। তবে আমি আশা করতাম যে, হয়তো রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে স্বপ্নযোগে দেখানো হবে যার ফলে আল্লাহ আমার পবিত্রতা প্রকাশ করবেন।

আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তখনো তাঁর বসার জায়গা ছেড়ে যাননি এবং ঘরের লোকজনও কেউ ঘর হতে বেরিয়ে যাননি। এমন সময় তাঁর উপর ওহী অবতরণ শুরু হল। ওহী অবতীর্ণ হওয়ার সময় তাঁর যে বিশেষ ধরনের কষ্ট হত তখনও সে অবস্থা হল। এমনকি ভীষণ শীতের দিনেও তাঁর শরীর হতে মোতির দানার মতো বিন্দু বিন্দু ঘাম গড়িয়ে পড়ল ঐ বাণীর গুরুভারে, যা তাঁর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। হযরত 'আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর এ অবস্থা কেটে গেলে তিনি হাসিমুখে প্রথম যে কথা উচ্চারণ করলেন সেটা হল, হে ‘আয়েশা! আল্লাহ তোমার পবিত্রতা প্রকাশ করে দিয়েছেন।

তিনি [‘আয়েশা (রাঃ)] বলেন, এ কথা শুনে আমার মা আমাকে বললেন, তুমি উঠে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন কর। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি তাঁর দিকে উঠে যাব না। মহান আল্লাহ ব্যতীত কারো প্রশংসা করব না। ‘আয়েশা (রাঃ) বললেন, আল্লাহ (আমার পবিত্রতার ব্যাপারে) যে দশটি আয়াত অবতীর্ণ করেছেন, তা হ’ল, ‘‘যারা এ অপবাদ রটনা করেছে তারা তো তোমাদেরই একটি দল; এ ঘটনাকে তোমরা তোমাদের জন্য অনিষ্টকর মনে করো না; বরং এও তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তাদের প্রত্যেকের জন্য আছে কঠিন শাস্তি। এ কথা শোনার পর মু’মিন পুরুষ এবং নারীগণ কেন নিজেদের বিষয়ে সৎ ধারণা করেনি এবং বলেনি যে, এটা তো সুস্পষ্ট অপবাদ। তারা কেন এ ব্যাপারে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করেনি? যেহেতু তারা সাক্ষী উপস্থিত করেনি, সেহেতু তারা আল্লাহর বিধানে মিথ্যাচারী।

দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমরা যাতে লিপ্ত ছিলে তার জন্য কঠিন শাস্তি তোমাদেরকে স্পর্শ করত। যখন তোমরা মুখে মুখে এ মিথ্যা ছড়াচ্ছিলে এবং এমন বিষয় মুখে উচ্চারণ করছিলে যার কোন জ্ঞান তোমাদের ছিল না এবং একে তোমরা তুচ্ছ ব্যাপারে বলে ভাবছিলে, অথচ আল্লাহর কাছে তা ছিল খুবই গুরুতর ব্যাপার। এবং এ কথা শোনামাত্র তোমরা কেন বললে না যে, এ বিষয়ে বলাবলি করা আমাদের জন্য উচিত নয়। আল্লাহ পবিত্র মহান! এ তো এক গুরুতর অপবাদ। আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন, যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাক তাহলে কখনো অনুরূপ আচরণের পুনরাবৃত্তি করবে না; আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বিবৃত করেন এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

যারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে মর্মন্তুদ শাস্তি। আল্লাহ যা জানেন, তোমরা তা জান না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউই অব্যাহতি পেত না। আল্লাহ দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু- (সূরাহ আন-নূর (২৪/১১, ২০)

وَالسَّعَةِ أَن يُؤْتُوا أُوْلِي الْقُرْبَى وَالْمَسَاكِينَ وَالْمُهَاجِرِينَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلْيَعْفُوا وَلْيَصْفَحُوا أَلَا تُحِبُّونَ أَن يَغْفِرَ اللَّهُ لَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

তোমাদের মধ্যে যারা উচ্চমর্যাদা ও আর্থিক প্রাচুর্যের অধিকারী, তারা যেন কসম না খায় যে, তারা আত্নীয়-স্বজনকে, অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহর পথে হিজরতকারীদেরকে কিছুই দেবে না। তাদের ক্ষমা করা উচিত এবং দোষক্রটি উপেক্ষা করা উচিত। তোমরা কি কামনা কর না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়। (সূরা নূর-২২)

يَوْمَ تَشْهَدُ عَلَيْهِمْ أَلْسِنَتُهُمْ وَأَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

যেদিন প্রকাশ করে দেবে তাদের জিহবা, তাদের হাত ও তাদের পা, যা কিছু তারা করত। (সুরা নূর- ২৪)

আমার পবিত্রতার ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা এ সমস্ত আয়াত অবতীর্ণ করলেন। আত্মীয়তা এবং দারিদ্রের কারণে আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) মিসতাহ ইবনু উসাসাকে আর্থিক ও বৈষয়িক সাহায্য করতেন। কিন্তু ‘আয়েশা (রাঃ) সম্পর্কে তিনি যে অপবাদ রটিয়েছিলেন এ কারণে আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) কসম করে বললেন, আমি আর কখনো মিসতাহকে আর্থিক সাহায্য করব না। তখন আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করলেন -

"তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন শপথ গ্রহণ না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহর রাস্তায় যারা গৃহত্যাগ করেছে তাদেরকে কিছুই দিবে না। তারা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে এবং তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে। শোন! তোমরা কি পছন্দ কর না যে, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল; পরম দয়ালু"- (সূরাহ আন-নূর ২৪/২২)।

আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বলে উঠলেন, হ্যাঁ, আল্লাহর কসম! অবশ্যই আমি পছন্দ করি যে, আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিন। এরপর তিনি মিসতাহ (রাঃ)-এর জন্য যে অর্থ খরচ করতেন তা পুনঃ দিতে শুরু করলেন এবং বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তাঁকে এ অর্থ দেয়া আর কখনো বন্ধ করব না। ‘আয়েশা (রাঃ) বললেন, আমার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যায়নাব বিনত জাহাশ (রাঃ)-কেও জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনি যায়নাব (রাঃ)-কে বলেছিলেন, তুমি ‘আয়েশা (রাঃ) সম্পর্কে কী জান অথবা বলেছিলেন তুমি কী দেখেছ?

তখন তিনি বলেছিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার চোখ ও কানকে হিফাযত করেছি। আল্লাহর কসম! আমি তাঁর ব্যাপারে ভাল ব্যতীত আর কিছুই জানি না। ‘আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ)-এর স্ত্রীগণের মধ্যে তিনি আমার প্রতিদ্বনদ্বী ছিলেন। আল্লাহ তাঁর তাকওয়ার কারণে তাঁকে রক্ষা করেছেন। ‘আয়েশা (রাঃ) বলেন, অথচ তাঁর বোন হামনা (রাঃ) তাঁর পক্ষ নিয়ে অপবাদ রটনাকারীদের মতো অপবাদ ছড়াচ্ছিল। ফলে তিনি ধ্বংসপ্রাপ্তদের সঙ্গে ধ্বংস হয়ে গেলেন।

বর্ণনাকারী ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, ঐ সমস্ত লোকের ঘটনা আমার কাছে যা পৌঁছেছে তা হলো এইঃ ‘উরওয়াহ (রহ.) বলেন, ‘আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর কসম! যে ব্যক্তি সম্পর্কে অপবাদ দেয়া হয়েছিল, তিনি এসব কথা শুনে বলতেন, আল্লাহ মহান, ঐ সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ। আমি কোন রমণীর বস্ত্র অনাবৃত করে কোনদিন দেখিনি। ‘আয়েশা (রাঃ) বলেন, পরে তিনি আল্লাহর পথে শহীদ হন।

(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪১৪১

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস)

অপবাদ রটানো সম্পর্কে আরো একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

حَدَّثَنِي هَارُونُ بْنُ سَعِيدٍ الأَيْلِيُّ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، قَالَ حَدَّثَنِي سُلَيْمَانُ بْنُ بِلاَلٍ، عَنْ ثَوْرِ بْنِ زَيْدٍ، عَنْ أَبِي الْغَيْثِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ ‏"‏ ‏.‏ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا هُنَّ قَالَ ‏"‏ الشِّرْكُ بِاللَّهِ وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ وَأَكْلُ الرِّبَا وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْغَافِلاَتِ الْمُؤْمِنَاتِ ‏"‏ ‏.‏

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ধ্বংসকারী সাতটি কাজ থেকে তোমরা বেঁচে থেকো। প্রশ্ন করা হলো-হে আল্লাহর রসূল সে গুলো কি?

তিনি বললেনঃ

  • আল্লাহর সাথে শরীক করা
  • যাদু করা
  • আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করা।
  • ইয়াতীমের মাল অন্যায়ভাবে আত্নসাৎ করা।
  • সুদ খাওয়া,
  • যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে পলায়ন করা এবং (৭) সাধ্বী, সরলমনা ও ইমানদার নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করা।

(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৬৩

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস।)

এ থেকে বোঝা যায় যে, কারো প্রতি ব্যভিচারের ধারণাকারীও আল্লাহর ক্রোধ থেকে ক্ষমা পাবে না; যদি সেই ব্যক্তি পবিত্র হয়। অতএব কারো ব্যাপারে কোনোকিছু না জেনে মন্তব্য করাও ইসলামম্মত নয়। আর যদি ভুল হয়েও যায় আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। নিশ্চয়ই আল্লাহ দয়ালু ও মেহেরবান। আল্লাহ সব সময় তার বান্দার অপেক্ষায় থাকেন।

অনুরূপভাবে অশ্লীলতা ও ইসলাম-বিরোধী কথায় পরিপূর্ণ সংবাদপত্র বা পত্র-পত্রিকা বাড়ির ভিতর প্রবেশ করাও অশ্লীলতা প্রসারের একটি কারণ। যেসকল পত্র-পত্রিকায় নিয়ম করে বড় বড় নাস্তিকদের লেখা ছাপানো হয় সেসব পত্রিকার মালিক, সম্পাদক, চাকুরিরত প্রত্যেক্যেই কি এই অপরাধের থেকে মুক্তি পাবে?

আর কেউ যদি এটা মিথ্যাকে সত্য বানানোর জন্য বলে থাকে তবে সে অবশ্যই আল্লাহর ক্রোধ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না। কেবলমাত্র অশ্লীলতার একটি মিথ্যা খবর প্রচার করা যদি আল্লাহর নিকট এত বড় অপরাধ হয়। তাহলে ভাবুন তো যারা দিবারাত্রি এগুলো করছে তাদের কি অবস্থা হবে?

আপন মৃত ভাইয়ের গোশত তো খাবেই সেই সাথে আল্লাহর লা'নত পতিত হবার জন্যেও সাজাপ্রাপ্ত হবে।

আল্লাহ কতইনা দয়ালু ও ক্ষমাশীল যে, নবিজী (সাঃ) এর স্ত্রী এবং মা আয়েশা (রাঃ) এর নামে কলঙ্ক রটানোর পরেও আল্লাহ তায়ালা হযরত আবু বকর (রাঃ) কে বললেন, তোমার আত্মীয়-স্বজনকে দান করো; যদি সে অপরাধীও হয়। কারণ যে ব্যক্তি অপবাদ রটিয়েছিল তাকে হযরত আবু বকর (রাঃ) আর্থিক সহযোগীতা না করার সিদ্দ্বান্ত নিয়েছিলেন।

এখন ভাবুন তো! মুসলিম সমাজে সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন, ভিডিও, সিডি, ইন্টারনেট, প্রেস, মিডিয়া, বিভিন্ন ধরনের ভিডিও গেমস ইত্যাদির মাধ্যমে অশ্লীলতার বীজ বপন করা হচ্ছে আর সেই সাথে গেমসে তো এখন হযরত আদম (আঃ) এ্যডাম সাজিয়ে বাচ্চাদের নিষ্পাপ মস্তিষ্ককে বিকৃত করে দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও নারীদের ছোট পোশাক পরিয়ে ফাইটার বানিয়ে গেমসে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। দিনে দিনে বাচ্চাদের মনে এই ধরনের অশ্লীল পোশাক বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এর ফলে বাচ্চারা যৌনতায় পরিপূর্ণ ভিডিওগুলো খুঁজে নিচ্ছে ইন্টারনেট থেকে অথচ তারা এখনো বয়সে পরিপূর্ণ নয়। এসবের মাধ্যমে যে অশ্লীলতা ও ধর্মীয় অবমাননা ছড়াচ্ছে তারা আল্লাহর নিকট কত বড় অপরাধী বলে গণ্য হবে এবং এই সমস্ত কর্মক্ষেত্রের কর্মচারিগণ কিভাবে অশ্লীলতা প্রসারের অপরাধ হতে ক্ষমা পাবে? তারা কিভাবে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করবে?

না, কখনোই তারা ক্ষমা পাবে না; যদি না তারা আল্লাহর কাছে তাওবা করে এবং অশ্লীল পথ থেকে সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে ফিরে আসে। আমাদের মহান আল্লাহ কতইনা করুণাময়, যে তিনি সকল গুনাহের জন্য ক্ষমা করতে সব সময় প্রস্তুত থাকেন অথচ আমরা দুনিয়ার মোহে এতোই ব্যস্ত যে আমাদের মা'বুদের কৃতজ্ঞতায় একটিবার তাকে সেজদা করারও সময় পাইনা। আমরা যারা আজীবন সেজদা করিনা তারাই আবার মানুষকে বলে বেড়ায়, জীবনে খুব ইচ্ছা মৃত্যুর আগে হলেও অন্তত একবার হজ্জ্ব করবো।

পক্ষান্তরেই- এমনিভাবে আমরা যারা নিজেদের বাড়িতে টি-ভি, মনিটর, সি,ডি, ডিশ এন্টিনা রেখে নিজের পরিবার ও ভবিষ্যৎ বংশধরদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়াচ্ছি। অন্যদের (আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের) এই কাজে শামিল হবার সুযোগ করে দিচ্ছে, তারাই-বা অশ্লীলতা প্রচার ও প্রসারের দায়ে অপরাধী হবে না কেনো?

এখন তো এফ,এম রেডিওতেও শীনানো হয় অশ্লীল অবৈধ প্রেমের কবিতা ও গাণ। গ্রাম হোক বা শহর, এখন কোনো পরিবারেই তো শালীনতা বলতে কিছুই নেই। বিয়ের অনুষ্ঠানে বক্স ভাড়া করে এনে সাত দিন ধরে গান বাজনা করা হয় অথচ মাত্র দুই দশক আগেও মানুষ এগুলো করাতো দূরে থাক ঠিকমতো বক্স কি তাও জানতো না। আর এখন বক্সের তালে তালে বুড়ো, বুড়িরা নাচও করে। অনেকে সেই ভিডিও অনলাইনে পাবলিশ করে আর সেখানে কমেন্টের ধুম পড়ে যায়। আহা, কি সরলমনা মানুষ। আসলে এরা সরল নয় বরং এরা শয়তানের কাছে অশ্লীলতাকে প্রকাশ করার একটা মাধ্যম। এতোদিন সুযোগ পাইনি তাই প্রকাশ করেনি এখন সুযোগ পাবার সাথে সাথেই নিনের বয়স ও মান সম্মানমে জলাঞ্জলি দিয়ে নেমে এসেছে নাচের মঞ্চে। এখন তো ঘরে ঘরে বাবা-মা, ভাই-বোন, মুরুব্বীরা সবাই একত্রে বাচ্চাদের নিয়ে সব ধরনের অনুষ্ঠান উপভোগ করেন অথচ তারা বেমালুম ভুলে যান যে সংবাদ পাঠ করা মহিলাটিও আসলে কতটা বেপর্দা ও বেহায়া পোশাকে সংবাদ উপস্থাপন করে!

আমি আশ্চর্য হই। সত্যিই অনেক আশ্চর্য হই! যেখানে আমার দাদি, নানিরা টিভি কি তাই জানতেন না। দশ গ্রাম খুঁজে একটা টি,ভি পাওয়া যেতো না আর যার বাড়ি থাকতো মুরুব্বীরা ওই বাড়িতে বাচ্চাদের যেতে বারণ করতেন। পর পুরুষের নাম নিলেও লজ্জায় নাক-মুখ ঢাকতেন আর সেখানে আজ দাদুরা নাতনিকে নিয়ে সিনেমা হলে ঢুকেন হাজার টাকা মূল্যে টিকেট কিনে। এসি টিকেটও থাকে বড়লোক দাদুর বড়লোক নাতনীদের জন্য এটাও এক ধরনের অশ্লীলতা ছড়ানোর আশ্রয়স্থল বলা যেতে পারে।

যারা ইসলাম ও নবিজী পাক (সাঃ) এর নামে কটুক্তি করে। আমাদের কলিজার টুকরা রাসূলকে (সাঃ) গালিগালাজ করে, আল্লাহকে গালি দেয় এবং অস্বীকার করে। তারাই এই দেশে প্রশাসনের নিরাপত্তার ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠে। অপরদিকে কোরআনের খাদেমগণ জেলের বদ্ধ প্রকোষ্ঠে বছরের পর বছর পড়ে থাকে আর আল্লাহ তা'য়ালার কাছে নিজের এই পাপী কওমের জন্য দু'য়া করেন। এদিকে আল্লাহ দেশে বিভিন্ন বিপর্যয়কে গজব হিসেবে নিক্ষেপ করতে থাকেন আর আমাদের দেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা সেসবের মোকাবেলায় মাযায় গামছা বেধে নেমে পড়েন তবুও নিজেদের ভুল স্বীকার করতে তারা নারাজ।

যদিও দুনিয়া মু'মিনের জন্য জেলখানা কিন্ত মানুষ তা মানতে চায় না। মানুষ তার কর্মের সাথে কত্রমফলকে মিলিয়ে দ্যাখে না। এ সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে,

وَعَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم الدُّنْيَا سِجْنُ الْمُؤْمِنِ وَجَنَّةُ الكَافِرِ رواه مسلم

উক্ত রাবী থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “দুনিয়া মু'মিনের জন্য জেলখানা এবং কাফেরের জন্য জান্নাত।” (সহীহ মুসলিমঃ ৭৬০৬)

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস)

এবার ফিরে আসি পত্র-পত্রিকার কথায়। ছোট বেলায় দেখতাম, আমার প্রতিবেশী এক হুজুরের বাড়িতে প্রতিনিয়ত সংবাদপত্র আসতো। আর উনি সংবাদপত্রে হাত দিতেন বিকালবেলায়। ততোক্ষণে বাড়ির মহিলাদের পড়া শেষ হয়ে যেতো এবং তারা পত্রিকার অশ্লীল মহিলা ও ফালতু মডেলের ছবিগুলো কেটে পুড়িয়ে ফেলতেন যাতে হুজুরের চোখে এগুলো না পড়ে। তখন অবশ্য লোকে হুজুরকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপও করতো কিন্ত তিনি কোনো কিছুতে কখনোই কর্ণপাত করতেন না। তিনি এসব অশ্লীলতার প্রতিবাদ এভাবেই করতেন।

এ সম্পর্কে উল্লিখিত হাদিসে বলা হয়েছে,

حَدَّثَنَا هَنَّادٌ، حَدَّثَنَا أَبُو الأَحْوَصِ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ، عَنْ مُرَّةَ الْهَمْدَانِيِّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ إِنَّ لِلشَّيْطَانِ لَمَّةً بِابْنِ آدَمَ وَلِلْمَلَكِ لَمَّةً فَأَمَّا لَمَّةُ الشَّيْطَانِ فَإِيعَادٌ بِالشَّرِّ وَتَكْذِيبٌ بِالْحَقِّ وَأَمَّا لَمَّةُ الْمَلَكِ فَإِيعَادٌ بِالْخَيْرِ وَتَصْدِيقٌ بِالْحَقِّ فَمَنْ وَجَدَ ذَلِكَ فَلْيَعْلَمْ أَنَّهُ مِنَ اللَّهِ فَلْيَحْمَدِ اللَّهَ وَمَنْ وَجَدَ الأُخْرَى فَلْيَتَعَوَّذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ ثُمَّ قَرَأ ‏:‏ ‏(‏الشََّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَاءِ ‏)‏ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ وَهُوَ حَدِيثُ أَبِي الأَحْوَصِ لاَ نَعْلَمُهُ مَرْفُوعًا إِلاَّ مِنْ حَدِيثِ أَبِي الأَحْوَصِ ‏.‏

আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আদম সন্তানের প্রতি শয়তানের এক স্পর্শ রয়েছে এবং ফেরেশতারও এক স্পর্শ রয়েছে। শয়তানের স্পর্শ হচ্ছে মন্দ কাজের প্ররোচনা দান ও সত্যকে অস্বীকার করা। ফেরেশতার স্পর্শ হচ্ছে কল্যাণের কাজে উৎসাহিত করা এবং সত্যকে স্বীকার করা। কাজেই যে ব্যক্তি নিজের মধ্যে এরূপ নেকীর স্পর্শ অনুভব করে সে যেন জ্ঞাত হয় যে, এটা আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে এবং এজন্য সে যেন আল্লাহ তা’আলার প্রতি শুকরিয়া আদায় করে। আর কেউ নিজের মধ্যে এর বিপরীত স্পর্শ উপলব্ধি করলে সে যেন তখন শয়তান হতে আল্লাহ তা’আলার নিকট আশ্রয় চায়।

তারপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিম্নোক্ত আয়াত তিলাওয়াত করেন,

اَلشَّیۡطٰنُ یَعِدُکُمُ الۡفَقۡرَ وَ یَاۡمُرُکُمۡ بِالۡفَحۡشَآءِ ۚ وَ اللّٰہُ یَعِدُکُمۡ مَّغۡفِرَۃً مِّنۡہُ وَ فَضۡلًا ؕ وَ اللّٰہُ وَاسِعٌ عَلِیۡمٌ ﴿۲۶۸﴾ۖۙ

শয়তান তোমাদেরকে দরিদ্রতার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং অশ্লীল কাজের আদেশ করে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তার পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ"। – (সূরা আল –বাক্বারাহ ২৬৮)।

(জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৯৮৮

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস)

এ থেকেই এই বোঝা যায় যে, আমরা খারাপ কাজের জন্য যতটা পারি নিজের সর্বশিক্তি দিয়ে তা থামানোর চেষ্টা করবো। অনেকেই আপনাকে কু-বুদ্ধি দিবে। তারা বলবে, জীবনে গরীব থেকে কি পেয়েছ?

মানুষের অবহেলা, লাথি, ঝাটা ছাড়া তো কিছুই পাওনি। একটা অনৈতিক কাজ তোমার অবস্থা বদলে দিবে। একবার সুদের টাকা নিয়ে নিজেকে দাঁড় করাও প্রয়োজনে তাওবা করে নিও। আর আমরা সেই ফাঁদে পা দিয়ে চলে যাই বিভিন্ন সুদ ভিত্তিক এনজিওর কাছে। শুরু হয়ে যায় শতানের শয়তানি কাজের সাকসেস।

খারাপ কাজ দেখে যদি কোনোভাবেই থামানো সম্ভব না হয় অন্তত মন থেকে সেই কাজকে ঘৃণা করবো। আর যদি খারাপ কাজ করেও থাকি সেজন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আল্লাহ নিশ্চয়ই ক্ষমাশীল।

ঐ হুজুর এজন্যই মূলতঃ পত্রিকার অশ্লীল জায়গাগুলো স্ত্রী-কন্যাদেরকে দিয়ে কেটে পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিতেন। এটাও এক ধরনের প্রতিবাদ ও ঈমানদারের পরিচয়।

অবশ্য কোনো পত্র পত্রিকা এবং বইও এখন এসব থেকে মুক্ত নয়। সেই হিসেবে বলতে গেলে এখন তো পত্র-পত্রিকা পড়াই চলে না। কিন্ত না পড়লেও নাই তাই মানুষ এখন নিরুপায় হয়ে পড়ে। হোক তা দৈনিক, মাসিক কিংবা সাপ্তাহিক পত্রিকা। এখানেই শেষ নয়। ম্যাগাজিনগুলোও এখন কুরুচিপূর্ণ অ-সাহিত্য, কু-সাহিত্যে ভরপুর। আজকাল তো সাহিত্য হয়ে গিয়েছে নারীর শরীরের বর্ণনা বৈ কিছুই নয়! যে যত অশ্লীল লেখে সে ততো বেশি সমাদৃত হয় সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে। যে মহিলা যতো ভালোভাবে তার লেখায় ও কথায়, শরীর প্রদশর্ন করতে পারে সে ততোই সফলতার উচ্চ শিখরে পৌঁছে যায়। আজকাল বাচ্চাদের পাঠ্যসূচিতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবিনে মুছে দেয়া হয়। আর যদি জীবনী থেকেও সেখানে নবিজীর (সাঃ) প্রতিকী ছবি দিয়ে উপস্থাপন করা হয়। আস্তাগফিরুল্লাহ্।আদৌ কি আল্লাহর কাছে এসবের কোনো মূল্য আছে?

একটি পত্রিকা সব বয়সের মানুষ পড়ে। বলতে পারেন নারী-পুরুষ, বাচ্চা-বুড়ো সহ সবাই। যখন পত্রিকা পড়ার সময় যৌবনে টয়টুম্বুর আলগা নারী মডেলের ছবি চোখের সামনে আসে তখন কোনো ষাটোর্ধ পৌড় পুরুষটিও ভুলে যায় তার বয়সের ব্যাপারে। তার ভেতরে শয়তান ঢুকে পড়ে এবং তাকে ওয়াসওয়াসা দিতে থাকে। সেই ব্যক্তি ভূলে যায় তার আত্মমর্যাদার কথা, সন্তানদের সম্মানের কথা। আর এজন্য কি শুধুই পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি দায়ী নাকি আমাদের সমাজব্যবস্থা ও পত্র-পত্রিকার দায়িত্বরত মানুষেরাও সমানভাবে দায়ী?

যখন কোনো ষাটোর্ধ্ব পৌড় ব্যক্তি বাচ্চা মেয়েকে ধর্ষণ করে তখন মানুষ শুধু দোষারোপ করে বিপথগামী পুরুষের কিন্ত সমাজে নোংরামি ছড়ানোর মূল হোতারা রয়ে যায় ধরা ছোঁয়ার বাহিরেই। কেউ খতিয়ে দেখার চেষ্টা করে না যে এই ভুল সে কিসের প্ররোচনায় করল!

সেটাকে খুওওজে বের করে সমাজ থেকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে এবং সেই সাথে অপরাধীকেও শাস্তি প্রদান করতে হবে।

একজন পুরুষ কি একদিনেই বিপথগামী হয়ে যায়? এর পিছনে মদদ দিচ্ছে কারা?

এন্ড্রোয়েড মোবাইলে পর্ন সাইটগুলো আলগাভাবে রাখা হয়েছে যাতে যে কেউ সেগুলো ইচ্ছেমতো উপভোগ করতে পারে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই কেবল উদ্ভট পোশাকধারী উগ্র নারীর চলাফেরা। ফেইসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, মেসেঞ্জার, ইমো, বাকী রেখেছে কি কোনোকিছু??

একইভাবে এখন সুন্দর সুন্দর পুরুষের ছবি দিয়ে পাঞ্জাবি, শার্টের বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। তা দেখে যে কোনো নারীর চোখ আটকে যায় না সে গ্যারান্টি কি কেউ দিতে পারবেন?

-- কু-নজর যে শুধু পুরুষদের থাকে এমন কিন্ত নয়। আর তাই এটিও আল্লাহর নিকট অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে। এ ব্যাপারে হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে যে,

عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدٍ الْجُعْفِيُّ حَدَّثَنَا وَهْبُ بْنُ جَرِيرٍ حَدَّثَنَا أَبِي قَالَ سَمِعْتُ يَعْلَى بْنَ حَكِيمٍ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ لَمَّا أَتَى مَاعِزُ بْنُ مَالِكٍ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَهُ لَعَلَّكَ قَبَّلْتَ أَوْ غَمَزْتَ أَوْ نَظَرْتَ قَالَ لاَ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ أَنِكْتَهَا لاَ يَكْنِي قَالَ فَعِنْدَ ذَلِكَ أَمَرَ بِرَجْمِهِ

ইব্‌নু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, যখন মায়িয ইব্‌নু মালিক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর কাছে এল তখন তাকে বললেন সম্ভবত তুমি চুম্বন করেছ অথবা ইশারা করেছ অথবা (খারাপ দৃষ্টিতে) তাকিয়েছ? সে বলল, না, হে আল্লাহ্‌র রসূল! তিনি বললেনঃ তাহলে কি তার সঙ্গে তুমি সঙ্গম করেছ? কথাটি তিনি তাকে অস্পষ্টভাবে জিজ্ঞেস করেননি, (বরং স্পষ্টভাবে জিজ্ঞেস করেছেন)। সে বলল, হ্যাঁ। তখন তাকে রজম করার নির্দেশ দিলেন।

(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৮২৪

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস।)

এখানে খারাপ দৃষ্টিতে তাকানোকেও রাসূল (সাঃ) বৃহত্তম অপরাধ বলে গন্য করেছেন। হায়! যদি মুসলিমরা নিজেদের কর্তব্য অনুভব করত এবং অশ্লীলতার বন্যাকে বাঁধা দেওয়ার সাধ্যমত চেষ্টা করতো তাহলে কতইনা সুন্দর হতো আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবার, পরিবেশ এবং স্বদেশ।

অশ্লীলতার বহিঃপ্রকাশ করতে গিয়ে অপর এক হাদীসে বলা হয়েছে,

حَدَّثَنَا أَبُوْ الْيَمَانِ أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ قَالَ حَدَّثَنِيْ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ أَنَّ زَيْنَبَ بِنْتَ أَبِيْ سَلَمَةَ حَدَّثَتْهُ أَنَّ أُمَّ حَبِيْبَةَ بِنْتَ أَبِيْ سُفْيَانَ حَدَّثَتْهَا عَنْ زَيْنَبَ بِنْتِ جَحْشٍ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ عَلَيْهَا فَزِعًا يَقُوْلُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَيْلٌ لِلْعَرَبِ مِنْ شَرٍّ قَدْ اقْتَرَبَ فُتِحَ الْيَوْمَ مِنْ رَدْمِ يَأْجُوْجَ وَمأْجُوْجَ مِثْلُ هَذَا وَحَلَّقَ بِإِصْبَعِهِ وَبِالَّتِيْ تَلِيْهَا فَقَالَتْ زَيْنَبُ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَنَهْلِكُ وَفِيْنَا الصَّالِحُوْنَ قَالَ نَعَمْ إِذَا كَثُرَ الْخَبَثُ

যায়নাব বিনতু জাহশ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ-

একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় "লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ" পড়তে পড়তে তাঁর গৃহে প্রবেশ করলেন এবং বলতে লাগলেন, শীঘ্রই একটি দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি হবে। এতে আরবের ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী। ইয়াজুজ ও মাজুজের দেয়ালে এতটুকু পরিমাণ ছিদ্র হয়ে গিয়েছে, একথা বলে দু’টি আঙ্গুল গোলাকার করে দেখালেন।

যায়নাব (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, “হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমরা কি ধ্বংস হয়ে যাব, অথচ আমাদের মধ্যে বহু নেক ব্যক্তি আছেন?” নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,

-- হ্যাঁ, যখন অশ্লীলতা বেড়ে যাবে। (সহিহ বোখারী, হাদিস নং ৩৫৯৮)

তার মানে হলো যখন অশ্লীলতা বেড়ে যাবে এবং সমাজের ধার্মিক ব্যক্তিরা তা প্রতিরোধ করতে অক্ষম হয়ে পড়বে। অশ্লীলতার অবাধ প্রচার ও প্রসার ঘটবে তখন আল্লাহ কোনো পরহেযগার ব্যক্তিকেও ছাড় দিবেন না। তখনই মানুষ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে।

এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,

وَ لَا تَقْرَبُوا الزِّنٰۤی اِنَّهٗ كَانَ فَاحِشَةً ؕ وَ سَآءَ سَبِیْلًا.

"তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় তা অশ্লীলতা ও বিপথগামিতা।" (--সূরা বনী ইসরাইল (১৭) : ৩২)

আল্লাহ শুধু ব্যভিচার করতে নিষেধই করেন নি বরং তিনি বলেছেন, ব্যভিচারের কাছেও যেওনা। তাহলে এটা কত বড় অপরাধ তা আমরা বুঝতে পারছি নিশ্চয়ই!

আমরা একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান করা, তার জন্য কল্যাণ-কামনা করা, সৎ কাজে সাহায্য করা, মন্দ কাজে নিষেধ করা এবং বিশেষত কাউকে কোনো ধরনের কষ্ট না দেওয়া সকলের ক্ষেত্রে কামনা করি। আর অবশ্যই নারীর ক্ষেত্রে তা বিশেষভাবে কাম্য।

নারী মানবজীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ; বরং নারীকে ছাড়া মানবজীবন অপূর্ণ। একই সাথে সে দুর্বল ও সংবেদনশীলও। কাজেই তার সম্মানহানি করা, ইজ্জত-সম্মান লুণ্ঠন করা সহজ এবং তা কত বড় অন্যায়?

-- এসব কথা আমরা কখনো ভাবি না। আমরা শুধু কথায়-লেখায়, বিজ্ঞাপনে নারীকে পন্য হিসেবে উপস্থাপন করতে পারলেই খুশি হই। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, সাবানের প্যাকেটে নারীর ছবি না থাকলে যেনো সেই সাবান-ই পরিপূর্ণতা লাভ করে না।

রাসূল (সাঃ) এর কাছে তো শুধু সৎকাজেরই অনুমতি চাওয়া যায় আর অসৎ কাজের অনুমতি চাওয়ার কল্পনাও করা যায় না। কিন্তু একবার এক যুবক এসে তাই করে বসলো। সেই যুবকটি সরাসরি রাসূল (সাঃ)- এর কাছে এসে ব্যভিচারের মত জঘন্য অপরাধের অনুমতি চেয়ে বসল।

আর জনাবে রাসূল (সাঃ) তার অন্তর থেকে চিরতরে ব্যভিচারের মূলোৎপাটন করে দিলেন।

একদা এক যুবক এসে বলল, হে আল্লাহর নবী (সাঃ) আপনি আমাকে যিনা করার অনুমতি দিন। একথা শুনে অন্যরা সেই যুবককে ধমকাতে লাগলো এই বলে যে-- এই তুমি কার সামনে কী বলছ?

চুপ কর! কিন্ত রাসূল (সাঃ) তাকে ধমক দিলেন না বরং তাকে কাছে ডেকে নিলেন।

বললেন-- ও যুবক, তোমার মায়ের সাথে কারো ব্যভিচার করা কি তুমি পছন্দ কর?

-- আল্লাহর কসম, আপনার উপর আমার জান কোরবান হোক! কখনোই আমি এটা পছন্দ করব না, এটা হতে দিব না। কোনো মানুষই তার মায়ের সাথে কারো ব্যভিচার করাকে পছন্দ করবে না।

তোমার মেয়ের সাথে কারো ব্যভিচার করা কি তুমি পছন্দ কর?

-- আল্লাহর কসম, আপনার উপর আমার জান কোরবান হোক! কখনোই আমি এটা পছন্দ করব না, এটা হতে দিব না। কোনো মানুষই তার মেয়ের সাথে কারো ব্যভিচার করাকে পছন্দ করবে না।

তোমার বোনের সাথে কারো ব্যভিচার করা কি তুমি পছন্দ কর?

-- আল্লাহর কসম, আপনার উপর আমার জান কোরবান হোক! কখনোই আমি এটা পছন্দ করব না, এটা হতে দিব না। কোনো মানুষই তার বোনের সাথে কারো ব্যভিচার করাকে পছন্দ করবে না।

-- তোমার ফুফুর সাথে কারো ব্যভিচার করা কি তুমি পছন্দ কর?

-- আল্লাহর কসম, আপনার উপর আমার জান কোরবান হোক! কখনোই আমি এটা পছন্দ করব না, এটা হতে দিব না। কোনো মানুষই তার ফুফুর সাথে কারো ব্যভিচার করাকে পছন্দ করবে না।

-- তোমার খালার সাথে কারো ব্যভিচার করা কি তুমি পছন্দ কর?

-- আল্লাহর কসম, আপনার উপর জান কোরবান হোক! কখনোই আমি এটা পছন্দ করব না, এটা হতে দিব না। কোনো মানুষই তার খালার সাথে কারো ব্যভিচার করাকে পছন্দ করবে না।

নবীজী তাকে নিজের আরো কাছে টানলেন এবং তার গায়ে হাত রেখে দু'আ করে দিলেন-

اللهُمّ اغْفِرْ ذَنْبَهُ وَطَهِّرْ قَلْبَهُ، وَحَصِّنْ فَرْجَهُ.

আল্লাহ! আপনি তার গুনাহ ক্ষমা করে দিন। হৃদয়টা পবিত্র করে দিন। লজ্জাস্থানকে (অন্যায় কাজ থেকে) হেফাজতে রাখুন।

বর্ণনাকারী আবু উমামা রা. বলেন, এরপর সে আর কোনোদিন ব্যভিচারের দিকে ফিরেও তাকায়নি।

(-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস -২২২১১)

অর্থাৎ, নবীজী (সাঃ) তার মন-মানসিকতার পরিশোধন করালেন- নিজের মা-বোন, মেয়ে, খালা-ফুফুর জন্য যা তোমার পছন্দ নয়, অন্যের মা-বোন, মেয়ে, খালা-ফুফুর সাথে তা কীভাবে করবে?

এই অনুভূতি যদি যুবক-বৃদ্ধ সকলের অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে যায়, তাহলে কি কোনো নারী যৌন হয়রানি বা যৌন নির্যাতন, কলেজের মোড়ে লাঞ্চিত, ইভটিজিং কিংবা ধর্ষণের শিকার হতে পারে?

-- পারে না। কিন্তু বর্তমান যুবক সমাজ এসব কথা ভুলেও ভাবে না। আর মহিলারাও পর্দার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছে।

উপরোক্ত হাদীসে রাসূল (সাঃ) যুবকটির মানসিকতার পরিবর্তন করালেন এবং তা সুন্দরভাবে তার নিজের রক্তের সম্পর্কের নারীদের উদাহরণ টেনে বুঝালেন; যাদের সামান্য ক্ষতিও কেউ চায় না।

রাসূল (সাঃ) চিরতরে যুবকটির অন্তর্দৃষ্টি খুলে দিলেন। বোঝালেন যে, তোমার আপনজনদের যে ক্ষতি তুমি চাও না; সকলেই নিজ নিজ আপনজনের এমন ক্ষতি চায় না। নিজের মা-মেয়ে, বোন, খালা, ফুফুর সামান্য ক্ষতি চায় না। আর প্রতিটি নারীই কারো না কারো মা-মেয়ে, বোন, খালা-ফুফু। "আর যখন তোমার লজ্জা নেই, তখন তুমি যা ইচ্ছা তাই কর"।

(বোখারি শরীফ, হাদিস-- ৫৭৬৯)

যিনা ও ধর্ষণের উল্লেখযোগ্য একটি ক্ষেত্র হল, প্রতিবেশী নারী, মামাতো, খালাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোন, দেবর ভাবির সম্পর্ক ইত্যাদি। এ অপরাধের পাপবোধ ও ভয়াবহতা যেন পুরুষের অন্তরে থাকে তাই একটি হাদীসে নবীজী (সাঃ) প্রতিবেশীর সাথে ব্যভিচারকে জঘন্য অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।

এ বিষয়ে হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন,

عَمْرُو بْنُ عَلِيٍّ حَدَّثَنَا يَحْيَى حَدَّثَنَا سُفْيَانُ قَالَ حَدَّثَنِي مَنْصُورٌ وَسُلَيْمَانُ عَنْ أَبِي وَائِلٍ عَنْ أَبِي مَيْسَرَةَ عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ أَيُّ الذَّنْبِ أَعْظَمُ قَالَ أَنْ تَجْعَلَ لِلَّهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ قُلْتُ ثُمَّ أَيٌّ قَالَ أَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ مِنْ أَجْلِ أَنْ يَطْعَمَ مَعَكَ قُلْتُ ثُمَّ أَيٌّ قَالَ أَنْ تُزَانِيَ حَلِيلَةَ جَارِكَ قَالَ يَحْيَى وَحَدَّثَنَا سُفْيَانُ حَدَّثَنِي وَاصِلٌ عَنْ أَبِي وَائِلٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ...مِثْلَهُ قَالَ عَمْرٌو فَذَكَرْتُهُ لِعَبْدِ الرَّحْمٰنِ وَكَانَ حَدَّثَنَا عَنْ سُفْيَانَ عَنْ الأَعْمَشِ وَمَنْصُورٍ وَوَاصِلٍ عَنْ أَبِي وَائِلٍ عَنْ أَبِي مَيْسَرَةَ قَالَ دَعْهُ دَعْهُ.

আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! কোন পাপটি সব থেকে বড়?

তিনি বললেনঃ আল্লাহর সাথে কাউকে সমকক্ষ মনে করা (শরীক করা)। অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম, তারপর কোন্‌টি?

তিনি বললেনঃ তোমার সঙ্গে আহার করবে এ ভয়ে তোমার সন্তানকে হত্যা করা।

আমি বললাম, তারপর কোনটি?

তিনি বললেনঃ তোমার প্রতিবেশির স্ত্রীর সাথে যিনা করা।

‘ইয়াহ্‌ইয়া (রহঃ) - ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল!......এরকম বর্ণনা করেছেন। আমর (রহঃ) - আবূ মায়সারা (রহঃ) বলেন, ছাড় এটাকে, ছাড় এটাকে।

(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৮১১

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস।)

উপোরক্ত হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রতিবেশীর স্ত্রী'দের থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এবং প্রতিবেশীর সাথে যিনা করাকে আল্লাহর সাথে কাউকে সমকক্ষ করার পর পরই কঠিন গুনাহ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।

এখন আমাদের সমাজে এমন পুরুষ অহরহ পাওয়া যায় যাদের কাছে নিজের স্ত্রীকে পছন্দ না হলেও প্রতিবেশী ভাবিকে খুব ভালো লাগে। সব সময় অন্যের স্ত্রী-র সৌন্দর্যের কথা চিন্তা করে এবং দশজন বন্ধু একত্র হলে এইসব গল্পে মেতে ওঠে। আমার বউ এরকম, সেরকম। এই ভালো লাগে না, ওই ভালো লাগে না অথচ তারা ভাবেওনা যে নিজের স্ত্রীর সাথে সময় কাটানোর কথা কোনো বন্ধুর সাথে বলা ইসলাম সমর্থিত নয়।

লেখিকা-তাসলিমা পাটোয়ারী