ওমর বিশ্বাস

ভূ-পৃষ্ঠের দুই হাজার ফিট উপরে এসে উপগ্রহটি থেমে যায়। এখান থেকে এখন আর নিচের দিকে নামছে না। স্থির হয়ে আছে যেখানে তা একটা মাঠের ঠিক মাঝ বরাবর। শুধু উপরের পাখা ঘুরছে শব্দহীন। এতো বড় বিশাল আকারের কোনো বস্তু এর আগে পৃথিবীতে আসেনি। প্রথমে দেখলে ওটাকে একটা বেঢপ সাইজের অচেনা বস্তু মনে হয়। একবার মনে হবে প্রেসার কুকারের মতো। উপর থেকে ওতো ভালো বোঝা যায় না বলে সেটা এর আগে পাতিলের মতো মনে হয়েছিল।

বেশ কিছুক্ষণ সময় ধরে ওটা স্থির হয়েছিল। ভিতরে চলছিল আনন্দের জোয়ার।

নির্দিষ্ট সময় বিরতি দিয়ে উপগ্রহ আবার নড়েচড়ে উঠলো। হালকা।

ভিতরের সবাই যে যার মতো আবার কাজে মন দিয়েছে।

ভিতর থেকে এখনো পর্যন্ত নতুন কোনো সংকেত দেওয়া হয়নি। স্থিরবেগের সাথে বাতাসের ঘর্ষণের ফলে চারপাশে একধরনের ভারী শাঁ শাঁ শব্দ হচ্ছে। এক সময় শব্দটা আরো জোরে হতে লাগলো। ভিতরে অসংখ্য সুইচ একসাথে জ্বলে উঠলো। একটা একটা করে লাইট জ্বলতে জ্বলতে সবগুলো জ্বলে ভিতরটা আলোতে ঝকঝক করছে। এদিকে গোলাকার উপগ্রহের চারদিক থেকে চারটা সবুজবাতি জ্বলে উঠলো একসাথে।

এতক্ষণ নিরাপদ অবতরণের জন্য সবাই সংকেতের অপেক্ষায় ছিল। ভিতরে কাজ চলছিল। তারা নিশ্চিত হলো তাদের অবস্থান সম্পর্কে। চারটা সবুজবাতি আটোমেটিক জ্বলে ওঠার মানে হলো তারা নিরাপদ জোনে আছে। কোথাও থেকে তাদের কোনো হুমকি নাই। প্রথম জ্বলতে দেখা লালবাতিটাও অটোমেটিক সবুজ হয়ে গেছে।

এখন বাতি জ্বলছে কেন্দ্রের প্রথম সবুজবাতিসহ মোট পাঁচটা। পাঁচটাই সবুজ। কিছুক্ষণ পর পুরোপুরি ল্যান্ড করার পর পাঁচটা লাইটই বন্ধ হয়ে গেছে। উপগ্রহটার বাইরের দিকে এখন কোনোপ্রকার আলোর চিহ্ন নাই। একই সময়ে দূর মহাকাশে যেখান থেকে এটাকে পাঠানো হয়েছিল সেখানকার নিয়ন্ত্রণকক্ষের সবগুলো সবুজ সংকেত জ্বলে ওঠে। সেখানেও অনেক আনন্দ করা হয়। তারাও চিৎকার করে হুররে দিচ্ছিলো।

প্রথম সফলতা! স্বাভাবিকভাবেই তারা খুব খুশি।

উপগ্রহটি মাটি স্পর্শ করেছে পুরোপুরি। এমন সিস্টেম করা হয়েছে যে, দূর থেকে কেউ যেন এটাকে আলাদা কিছু মনে করতে না পারে। চাকা বা খুঁটির মতো কিছু থাকলে তার উপর দাঁড়াতে হবে। তাহলে নিচের দিক দিয়ে এপাশ ওপাশ দেখা যাবে। এতে পৃথিবীবাসীর মানুষের সন্দেহ হতে পারে। সে জন্য সে রকম কোনোকিছুর উপর উপগ্রহকে রাখা হয়নি। এখন দেখলে মনে হয় এই জায়গাটাও ঘন গাছপালায় ভরা। মাঠ বলে কিছু ছিল না এখানে।

একে তো রাত তারপর জায়গাটা নির্জন। বনজঙ্গলে ভরা অনেকখানি। এই ব্যবস্থা করার ফলে গাঢ় সবুজ আকৃতির উপগ্রহটি মাঠে অবতরণ করার পর গাঢ় সবুজ বনের সাথে মিশে একাকার হয়ে আছে।

বিশ মিনিট পর সেখান থেকে একটা দরজা খুলে গেলো। গোলাকৃতির হওয়ায় এর সামনে কোনটা পিছনে কোনটা তার কোনো ধারণা পাওয়ার উপায় নাই। দরজা খুলল পিছন দিকে অর্থাৎ মেইন রাস্তার দিক থেকে কোনো দরজা-টরজা খোলা হয়নি। পিছন দিকে এখান থেকে আরও কিছু দূর পরে একটা নদী চলে গেছে। দরজা খোলার সাথে সাথে একটা সিঁড়ি মতো কিছু নেমে গেল। নেমে গেল বিশ পঁচিশজন মানুষ। আসলে মানুষ না অবিকল মানুষের মতো দেখতে ভিনগ্রহের লোকজন। চমকে ওঠার মতো ব্যাপারটা। এরা মানুষ না চট করে কেউ এরকম কথা চিন্তাই করবে না। এরা এলিয়েন হবে, কিন্তু এদেরকে মানুষ বলা হয় কিনা ভাবার বিষয়। এরা নেমে পাঁচজন পাঁচজন করে পাঁচটা গ্রুপে ভাগ হয়ে পাঁচদিকে চলে গেল। এছাড়া আরো অনেকে নেমে চারপাশে কাজ শুরু করে দিয়েছে।

সবকিছু হলো নিঃশব্দে। ভিতরে বাইরে চারপাশে কোথাও কোনো সাড়া শব্দ নাই। তাদের সবকিছুই খুব হেভি ধরনের। দরজার যেভাবে খুলল তাতেও কোনো শব্দ নাই। মনে হবে প্লাস্টিকের কিছু উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। অথচ খুব মজবুত। সবকিছু এমনভাবে বানানো যে তাতে কোনো ঝনঝন ঢংঢং ঠংঠং শব্দ নাই। শব্দহীন রাখতে যেখানে যতটুকু করা সম্ভব হয়েছে চেষ্টা করেছে।

এখনো ওদের কেউ দেখেনি। কেউ জানে না অবিকল মানুষের মতো ওরা কারা। (চলবে)