DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

উপন্যাস

ধা রা বা হি ক উ প ন্যা স

পিঁপড়া কলোনি

পরদিন আকাশে রোদ উঠলো। ঝড় থেমে গেছে শেষ রাতের দিকে। আকাশে মেঘ নেই আর। কয়েকদিন আবহাওয়া ভালো থাকবে। দুজন পিঁপড়াকে নিয়ে ক্যাড বেরিয়ে পড়লো কলোনির পিঁপড়েদের সাথে যোগাযোগ করতে।

Printed Edition
dsa

খন্দকার নূর হোসাইন

পরদিন আকাশে রোদ উঠলো। ঝড় থেমে গেছে শেষ রাতের দিকে। আকাশে মেঘ নেই আর। কয়েকদিন আবহাওয়া ভালো থাকবে। দুজন পিঁপড়াকে নিয়ে ক্যাড বেরিয়ে পড়লো কলোনির পিঁপড়েদের সাথে যোগাযোগ করতে। অ্যান্ডি মেগারসহ আরো দশজন পিঁপড়াকে সাথে নিয়ে চললো মাকড়সা কলোনিতে।

দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দিলো ওরা। রাস্তায় দু’বার জিরিয়েও নিলো। পরদিন সকালে পৌঁছে গেল মাকড়সাদের অঞ্চলে। পৃথিবীতে ৫০ হাজার প্রজাতির মাকড়সা আছে। এরমধ্যে আবার সবাই জাল বুনতে পারে না। জাল বোনা মাকড়সাদের একটি নাম দিয়েছে অ্যান্ডিÑ শিল্পী। এটা হাইপটিওটস ক্যাভাটাস প্রজাতির মাকড়সাদের অঞ্চল। এদের জাল বোনার গতি অবিশ্বাস্য!

জাল বুনে মধ্যখানে বসে আছে একেকটি মাকড়সা। শিকার এলেই ধরে ফেলবে। এরা বেশি দূরের জিনিস দেখতে পায় না। কাছাকাছি যেতে হবে। বড়ো একটি সাদা পতাকা সাথে নিয়ে এসেছে অ্যান্ডি। প্রথমে অ্যান্ডির দু’জন প্রতিনিধি সাদা পতাকা হাতে মাকড়সাদের কাছে গেল। এদিকে অ্যান্ডিরা প্রস্তুত হয়ে রইলো। কোনো খারাপ আচরণ করলে সাথে সাথে যেন প্রতিনিধিদের মুক্ত করে আনতে পারে।

দু’মিনিট পার হয়ে গেল। খারাপ কিছু ঘটলো না। গ্রিন সিগন্যাল পাওয়া গেল প্রতিনিধি দলের কাছ থেকে।

মাকড়সা প্রধানের সাথে কথা বলার সুযোগ পেল ওরা। বিরাট একটি জালের পাশের ডালে একত্রিত হলো ওরা। ওদের সামনে বসলো মাকড়সা প্রধান রিসেল। বেশ অবাক হলো সে। এখানে আসার কারণ খুঁজে পেল না। জিজ্ঞেস করলো, ‘কেন এসেছো?’

কোনো ভূমিকায় গেল না অ্যান্ডি। মূল কথায় চলে এলো, ‘ফগের বিষয়ে কথা বলতে। সে নিশ্চয়ই তোমাদের বিপদের কারণ হয়ে উঠবে।’

‘কী বলতে চাও সোজাসুজি বলে ফেলো। অত ভনিতা আমার ভালো লাগে না।’

‘ফগ আমাদের শত্রু। খবর পেলাম তোমাদের একজনকে সে খেয়ে ফেলেছে। নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছো কেন এসেছি?’

‘আমাদের সাহায্য চাও। এই তো?’

‘একে অপরকে সাহায্য করবো আমারা।’

‘তোমরা করবে সাহায্য?’ চোখ দুটো গোল হয়ে গেল মাকড়সা প্রধানের, ‘আমরা নিজেরাই নিজেদের সমস্যার সমাধান করি।’

রিসেলের অহংকার বুঝতে পারলো অ্যান্ডি। তবুও দমলো না। ‘তোমরা কী করতে চাও? একটু শুনি?’

জবাবে চিন্তিত মনে হলো রিসেলকে। সন্তোষজনক কোনো উত্তর দিতে পারলো না।

নীরবতা ভাঙলো অ্যান্ডি, ‘আমরা তোমাদের সাহায্য করবো। এতে উভয়েরই উপকার হবে। ভেবে দেখতে পারো। তুমি রাজি থাকলে আমি পরিকল্পনার কথা বলবো।’

‘আমাদের পূর্ব পুরুষদের লাশ খেয়ে ফেলার মতো বিভৎস ঘটনার কথাগুলো আমি ভুলে যাইনি। তোমাদের কেন সাহায্য করবো আমরা? কেন তোমাদের বিশ্বাস করবো?’

অবস্থা বেগতিক। রেগে যাচ্ছে রিসেল। সেটা বুঝতে পারলো অ্যান্ডি। উঠে দাঁড়ালো। সঙ্গীরা তাকে অনুসরণ করলো। কিছু দূর গিয়ে আবার ফিরে এলো। সরাসরি রিসেলের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘শত্রুর শত্রু বন্ধু। এটা মনে রেখো। আর ফগ তোমাদেরও শত্রু। একসময় তোমাদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। আমি চেয়েছিলাম একসাথে কাজ করে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে। কিন্তু মনে হচ্ছে তোমার কাছে অতীতের বিছিন্ন ঘটনাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আসি, আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করবো।’

হাঁটতে শুরু করলো অ্যান্ডি। ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো রিসেল। ভাবছে সে। ডাক দিলো অ্যান্ডিকে, ‘দাঁড়াও!’ নিজেই এগিয়ে এলো অ্যান্ডির দিকে, ‘তোমার পরিকল্পনা কী?’

হাসি দেখা গেল অ্যান্ডির মুখে। বোঝা গেল সমস্যাটা নিয়ে রিসেলও ভাবছিল। কিন্তু কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিল না। আবার আগের জায়গায় গিয়ে বসলো ওরা। রিসেলের সহকারী ওদের জন্য নাশতা দিয়ে গেল। পাতার টুকরো প্লেটে শিকার করা মাছির দেহের খণ্ডাংশ।

অ্যান্ডি তার পুরো পরিকল্পনার কথা রিসেলকে খুলে বললো। সবকিছু শুনে রিসেলকে সন্তুষ্ট মনে হলো। দীর্ঘ আলোচনার পর ঠিক হলো, আজ থেকেই কাজ শুরু হবে। হাসিমুখে ওখান থেকে বেরিয়ে এলো অ্যান্ডিরা। সূর্য তখন মাথার ওপর।

আকাশে উড়ছে এক ঝাঁক বাজ। ডেঁকে উঠলো একটি বাজপাখি। রহস্যময় হাসি দেখা গেল অ্যান্ডির মুখে। (চলবে)