আসাদুজ্জমান আসাদ

ভোরের আকাশে যখন আলোর আভা ফুটে ওঠে, ঠিক তখনি উত্তর দিকে ধীরে ধীরে ভেসে ওঠে হিমালয়ের অপার সৌন্দর্য কাঞ্চনজঙ্ঘা। সূর্যের প্রথম আলো পড়তেই শুভ্র বরফে আচ্ছাদিত এই পর্বতের চূড়াগুলো সোনালি, কমলা, হলুদ, লাল আর সাদ রঙের দ্যুতিতে ঝলমল করে ওঠে। মুহূর্তেই সৃষ্টি হয় এক অন্যরকম পরিবেশ। যা দেখলে পর্যটকদের হৃদয় ভরে ওঠে আনন্দে।

কাঞ্চনজঙ্ঘার পশ্চিমে তামুর নদী, উত্তরে লহনাক চু নদী। এছাড়া জংসং লা শৃঙ্গ এবং পুর্ব দিকে তিস্তা নদী প্রবাহিত। যারা মেঘের নানা রং দেখে আনন্দ-উল্লাসে আগ্রহী তারা যেতে পারো কাঞ্চনজঙ্ঘায়। এটি মনোমুগ্ধকর, দৃষ্টিনন্দন। পৃথিবীর অন্যতম দুর্গম এবং ভয়ংকর পর্ব্বত শৃঙ্গ। কাঞ্চনজঙ্ঘা ভারতের সিকিম রাজ্যের সাথে নেপালের পুর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে অবস্থিত। হিমালয় পর্বতের এই অংশটিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা বলা হয়। কথা হয় আহসান হাবিব জিনান, ইমরান, সাকিব, পলক, আল মাহমুদ তনু, নুর নবীন এবং ফাহিম আদনানের সাথে। তারা ডেফোডিল আর্ন্তজাতিক বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রকৌশলী বিভাগের ছাত্র। জিনান বলেন, ‘প্রভুর সৃষ্টি অপরূপ। যা অতি সুন্দর ভাবে সাজানো। কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোমুগ্ধর, মনোরম দৃশ্য দেখতে পেরেছি। আমরা ভীষণ মুগ্ধ। হৃদয় প্রাণ ভরে উঠেছে’।

পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়া ডাকবাংলো বাংলাদেশ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থান। তেতুঁলিয়া ডাক বাংলোটি মহানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত। এ ঐতিহ্যবাহী ডাকবাংলো থেকে পর্বতের হাসির ঝিলিক যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে। যা সমতল ভূমি থেকে প্রায় ২০ মিটার উঁচু। এই স্থানটি ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এক আর্কষণীয় স্পট।

শেরপা তেনজিংয়ের লেখা বই ‘ম্যান অভ এভারেস্ট’ অনুযায়ী কাঞ্চনজঙ্ঘা নামের অর্থ বরফের পঞ্চরত। এই পাচটি চূড়া থেকেই এই নামকরণ করা হয়েছে। প্রতিটি চূড়ার উচ্চতা ৮ হাজার ৪৫০ মিটার। দুটি নেপালে আর বাকি তিনটি ভারতের উত্তর সিকিম ও নেপাল সীমান্তে অবস্থিত। ভারতের দার্জিলিং, কালিস্পং কিংবা টাইগার হিল থেকে পর্যটকটরা এই দৃশ্য দেখতে ভিড় জমায়। তবে বাংলার মাটিতে বসে তেতুঁলিয়া থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘার সবচেয়ে স্বচ্ছ রূপ ধরা দেয়। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে এ সৌন্দর্য উপভোগের সেরা সময়। কেবল কাঞ্চনজঙ্ঘাই নয়, পঞ্চগড় রয়েছে বৈচিত্র্যময়, সাস্কৃতিক ঐতিহ্য। এখানে করতোয়া, মহানন্দা, ডাহুক সহ প্রায় ৩৩ট নদী প্রবাহিত । নদী থেকে সংগৃহীত নুড়ি পাথরের স্তব যেন ছোট পাহাড়ের মতো দৃশ্য তৈরি করে। জেলাটির সমতল ভূমি সবুজ চা পাতার চাদরে ঢাকা। যা কৃষি ও অর্থনীতির জন্য উজ্জ্বল সম্ভাবনার ইঙ্গিত বহন করছে। পঞ্চগড়ের ভিতর গড়ে রয়েছে কামরুপ রাজার ধ্বংস প্রাপ্ত প্রাসাদ, মোগল আমলের দুর্গ ও দীঘি। রয়েছে আটোয়ারী কেল্লা, বারো আউলিয়ার মাজার, মির্জাপুর শাহী মসজিদ, গোলকধাম এবং এশিয়া মহাদেশে একমাত্র পাথরের তৈরি ‘পঞ্চগড় রক্স মিউজিয়াম’। এসব ঐতিহাসিক স্থাপনা ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে বাড়তি আকর্ষণ যোগ করছে। তেতুঁলিয়া উপজেলার জিরো পয়েন্টে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরটি ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত। আন্তর্জাতিক যোগাযোগের পাশাপাশি পর্যটকের প্রাণ সঞ্চার করেছে। ফলে পঞ্চগড়ের পর্যটন খাত দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে। নতুন ভাবে পিকনিক স্পট, আবাসিক হোটেল, মোটেল,পুরাতন স্থাপনা সংস্কারের কাজ চলছে নিয়মিত। কাঞ্চনজঙ্ঘার ঝলমলে হাসি আর পঞ্চগড়ের ঐতিহ্য মিলিয়ে এ জেলা আজ দেশের অন্যতম পযটন কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। ইতিহাস অনুসন্ধানী যে কারো জন্য পঞ্চগড় হতে পারে অন্যন্য গন্তব্য।