সুখের বাগিচা

তমসুর হোসেন

বুকে কান্না চেপে দিগন্তের আঁধারে

উড়ে যায় যে শোকার্ত পাখি

তার নাম কেউ লিখে রাখে না হৃদয়ের ডায়রিতে।

কেউ পরিমাপ করে না নিরন্নের কষ্টের প্রখরতা।

প্রতিটি দিবস অগণিত ক্ষুধার্তের ক্রন্দন

গ্রহাণুর পাঁজরে লিখে যায় মহাকাল

প্রাণের অব্যক্ত যন্ত্রণা নিবারণের কেউ নেই ধরাধামে।

প্রতিকণা উচ্ছিষ্টের কাছে প্রাণপণে ছুটে যায় পতঙ্গের ঝাঁক।

হে মানুষ শিখে নাও এবার মানবতার শুদ্ধ ধারাপাত

বোমা ফেলে যারা উজাড় করছে মানব বসতি

ওদের শক্ত হাতে প্রতিরোধ করো।

আহত পাখি আর অনাথ শিশুর মুখে তুলে দাও খাবারের লোকমা।

জগত হয়ে উঠুক সুখের বাগিচা।

কতোটা পারো

হাফিজুর রহমান

হাসি মুখ দেখেছ

রাগ তো দেখনি,

ভালো তাই - বাসতেই পারো।

রাগ দেখে কাছে ঘেঁষলে

পরিমাপ হতো ভালোবাসার,

কতোটা পারো দিতে।

দায় নেয়ার দায়িত্ব

নিতে পারলে এসো,

নষ্টকে কষ্ট না দিয়ে সারাতে -

বানাতে সুস্থ সমাজের।

বীভৎস ভালোবাসা

মমতা মজুমদার

বিবর্ণ সন্ধ্যা,

খানিকটা আলসেমি আর কিছু রংচটা ভাবনা!

হৃদয়ে প্রজ্জ্বলিত নিরাশার প্রদীপ হাতে নিয়ে

বসে আছে এক আঁজলা স্মৃতি।

ক্ষয়িত যৌবনের বাসন্তী ফুলগুলো ঝরে

গেছে আজ অবেলায়।

মায়াহীন পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় কত

জীবনের পাতা।

ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়ে রয় কেবল ছিন্ন কায়া।

দেওয়ালে হেলান দিয়ে নির্ঘুম রাত কেটে যায়

অযত্নে বিষ ঢালে বীভৎস ভালোবাসার ছোঁয়া!

কেউ হয় নিঃসঙ্গ কেউ রয়ে যায় স্মৃতির পাতায়।

সে কথা জানে এক রাতের নির্জনতা।

জীবনের নির্মম শোক ঘুচিয়ে নেয় কেউ কেউ

বুকে দিয়ে পাথর চাপা!

নিয়তি চলেছে তবুও এক অনিশ্চিত যাত্রায়।

মেঘলা আকাশ ও সুর্যাস্ত

সুমন সাহা

মেঘলা আকাশ কোনদিন বলেনি,

তোমারে তুমি কার হাতে তুলে দিবা?

তুমিও বলনি। তোমার মনে মেঘ

জমলে ফর্সা তোমার মুখ সুর্যাস্ত হয়!

সুর্যাস্ত জানে―

আমাদের আর দেখা হবে না।

কবিতাডিঙি

মতিউর রহমান

দিনভর হৈচৈ শেষে

সূর্যাস্ত পাঁচিলে যখন নামে কালো পর্দা

ফিরে আসি নিজের কাছে

বিষাদরং জীবনের কথকতা

দিনভর যা ছিল মৃতপ্রায়

অক্ষরে প্রাণ জাগে

সাদা পাতায় জ্বলে ওঠে কান্না কুসুম

নৈঃশব্দ্য পেরিয়ে মুখরতা

সোনালী দুঃখী চাঁদ প্রোজ্জ্বল

বুকের গহীন আকাশে

কবিতাডিঙিতে চেপে

ভেসে যাই অলৌকিক স্বপ্নভুমির দিকে।

আলোর ফেরিওয়ালা

সাজ্জাদ সাদিক

সঞ্চিত আলো ম্লান হয়ে যায় শেষ প্রহরে

ক্লান্ত হয়ে অবসন্ন এক ঘুমন্ত পাখির ডানার ভেতর

আশ্রয় নেয় অন্ধত্বমিস্র রাতের জোনাকিরা

নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখে ঘুমের ভেতর বিভোর পাখি

পাখির স্বপ্নলোক থেকে পূর্বাহ্নের সাদা আলো ধারণ করে শূন্য বুক

লুমিনেসেন্ট অর্গানে জ্বলে ওঠে লুসিফারেজের ঠান্ডা আলো

পুনরায় ফেরি করতে বের হয়

পথে প্রান্তরে মাঠে-ঘাটে

কখনো কাঁটাতার পেরিয়ে যায়

পার হয় মৃতনদী

সোনালি ধানের মাঠ।

ঘোর অন্ধকার বনের ভেতর, রাতের নিস্তব্ধ দুপুরে।

এভাবেই রাতের প্রহর শেষ হয়ে আসে

আরেকটি নতুন ভোরের অপেক্ষায়।

মধ্যরাতের পথিক

মুহাম্মদ রেজাউল করিম

মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়

কী আর করবো বলো

আরাধনায় মগ্ন হই আমি

অন্তর কাঁপে

ছুটে চলে চোখের জলধারা

সুখের জন্য প্রার্থনা করি।

হে প্রভু!

তবে সুখ দাও

শান্তি দাও,

আমার প্রার্থনা কবুল করো

আমিতো মধ্যরাতের পথিক

হে প্রভু!

আমাকে পথ চলার সুযোগ দাও

পথ চলায় সুখ

পথ চলায় শান্তি

আমি তো ভালোবাসার পথ খুঁজি

হে প্রভু!

তবে ভালোবাসা দাও

ভালোবাসায় সুখ

ভালোবাসায় শান্তি

আমিতো মধ্যরাতের পথিক

হে প্রভু!

আমার প্রার্থনা কবুল করো

খুলে যাক সুখের দরজা।

অনন্য আশ্রয়

আল মামুন রিটন

চোখের ভেতরে যে সমুদ্র রেখেছ-

সে সমুদ্র ডাকে দারুচিনি দীপের আহ্বান

ভালোবাসার চিকচিক ঢেউয়ে ভেসে যেতে চাই

আমি যদি নাবিক হতাম পাল তুলে বাতাস মেখে

ঠিকানার খোঁজে ছুটে যেতাম দূরের দ্বীপে

যেখানে নির্জনতাও চিরন্তন গল্প বলে।

স্বচ্ছ মেঘেরা ছুটে চলে আকাশজুড়ে

কোনো কোলাহল নাই, জীবনের জটিলতা নাই

শুধু অবিরাম ঢেউয়ের বুকে জেগে থাকার স্বপ্ন

এক নীরব অথচ শান্তির আশ্রয়

যেখানে বালির বুকে লেখা থাকে

এখানে স্থির হও, আর কোনো অভ্যুত্থান নয়।

সবুজের বুক জড়িয়ে সমুদ্র ডাক দেয়

নির্মল জলে ভিজে ওঠে শরীর

ফুল ও পাখির স্বাধীনতা গায়

ভৈরবের মতো গম্ভীর অথচ মুক্তির গান।

ডিজিটাল ভালোবাসা

শিমুল হোসেন

ইনবক্সে জমে থাকে অজস্র স্মৃতির মায়া

ভিডিও কলে দেখা, তবু যেন লাগছে ছায়া,

স্টোরিতে প্রেম, আবার ব্রেকআপের পোস্ট

ডিলিটেড ছবিতে কেবল রয়ে গেছে হোস্ট।

অ্যাপে হলো কফি-ডেট, সময় ছিলো কম

সেলফির আড়ালে লুকোনো কষ্টের যম,

স্ট্যাটাস চেঞ্জে হলো সম্পর্কের ভাঙন

ফলো-আনফলোয় শুরু নতুন জীবন।

হোয়াটসঅ্যাপও শেষ, রিপ্লাই আসে না

ডিজিটাল ভালোবাসা এভাবেই টেকে না।

সমর্পণ

শাহীন সুলতানা

মানুষের কাছে ভালোবাসা চাইতে চাইতে নেড়ি-

কুত্তার মতো ঝুলে গেছে জিভ; ভিখিরির মতো

দরজায় দাঁড়াতে-দাঁড়াতে পা ফুলে গেছে পাকা

ফোঁড়ার মতোন। জল চাইতে গিয়ে অপেক্ষার রাস্তা

মাপতে নাভিশ্বাস উঠেছে। বুঝে গেছি- মানুষ কখনো

দেওয়ার নিয়ামক নয়।

আজ তাই মানুষের কাছে কিচ্ছু চাওয়ার নেই।

যা কিছু চাওয়ার- ঐ দৃশ্যমান আকাশের দিকে

তাকিয়ে অদৃশ্য মহাত্মার কাছে চেয়েছি;

জেনেছি তিনি দয়ালু আর দাতা দুটোই।

সব জানার পর তিনি আমাকে দোযখ আর

বেহেশতের দরজা দেখালেন। দেখালেন ইল্লিইন

আর সিজ্জিনের স্থান; জানিয়ে দিলেন কেয়ামতের

মাঠের সকল বৃত্তান্ত।

অতঃপর আমি সমস্ত চাওয়া বেমালুম ভুলে গিয়ে

প্রেমিকে পরিণত হলাম। আর খাঁটি প্রেমিক তো

শুধু নিজেকে উৎসর্গ করতেই পছন্দ করে,

কোনো কিছু পাওয়ার জন্য লালায়িত থাকে না!

ব্লাকলিষ্ট

শাহীন খান

বুকের পাটতন ভেঙে গেছে সহসা।

এ ভাবে পরাজিত হতে হবে ভাবেনি কখনো।

ঝড়ো হাওয়ার অন্ধ নিবিড় রাতে

মাঝে মধ্যে চমকে উঠি একটা অশরীরী আত্মার আগমনে,

নিজেকে প্রশ্ন করি কি ভুল ছিলো তোমাকে ভালোবেসে?

আমি ঘুমোতে চাই, ঘুমোতে চাই, ঘুমোতে চাই,

ঘুম যে আমার আসে না!

চশমাটা হাতে নিয়ে মুঠোফোন তন্ন তন্ন করে খুঁজি

কোথায় রাখলাম মনে পড়ছে না!

ইদানিং কেন জানি সব কিছু গুলিয়ে ফেলি,

এই তো পেয়ে গেছি

বড্ড বেশি আশা নিয়ে ফোন করি কিন্তু

তোমার নাম্বারটা বিজি।

চোখের জল

রিহিল শাহিদ

চোখের জল আজ

পাতায় পাতায় ভরা

এ যেন এক অক্লান্ত মেরুদণ্ড

মনে হয় কবিতা নয়

সত্যিকারের ঘটনা

চোখের যে জল

কাউকে বলে না কিছু

শুধু চাপিয়ে রাখে

যে কথা লজ্জার

হাসি ঠাট্টার

অভিমানের

চোখের সে জলই আমাদের স্বপ্ন দেখায়

স্বপ্ন শেখায়

নিয়ে যায় অনেক দূর।

মা নেই অনেকদিন

স্বপন আখন্দ

মা নেই অনেকদিন,

তবু মনে হয় তিনি আছেন চারপাশে।

ভোরের আজানের ধ্বনি শুনলেই

মনে পড়ে যায় তার ডাক

“ওঠো, নামাজ পড়ো।”

ঘরের এক কোণে শাড়ির গন্ধে

এখনো আমি থমকে যাই,

মনে হয় মা হেঁটে আসবেন,

হাসিমুখে বলবেন “খেয়েছিস তো?

মাকে হারানো মানে

শুধু একজন মানুষকে হারানো নয়,

এ যেন পৃথিবীর অর্ধেক আলো নিভে যাওয়া।

তবু তার দোয়ার ছায়া

এখনো আমাকে আগলে রাখে,

নীরবে, অদৃশ্য ভালোবাসায়।