বিদ্রোহের পতাকা ওড়াও

জয়নুল আবেদীন আজাদ

আর নয়-

নয় আকাক্সক্ষার পরাজয়,

মজলুমের আকাক্সক্ষাতো প্রকৃতির মতো

অমোঘ অনাবিল এবং প্রবল।

সময়টা এখন দ্রোহের এবং মননের

ঝড়ো হাওয়ার এবং রুদ্র-প্লাবনের,

ছড়িয়ে পড়ছে ওরা বিশ্বময়Ñ

কে আছে যে রোখে?

সব সিংহাসন এখন অক্ষম, অসহায়।

সূর্যালোকের মতো ওদের দ্রুতি

জলরাশির মতো উত্তাল, সফেদ

ওরাই আশার প্রতীক

বিধ্বস্ত এই বিবর্ণ গ্রহে।

আসবে দিন-

সব অপমান আর বঞ্চনা থেকে

মুক্তির দিন।

আসবে দিন

মানবিক মর্যাদায় বিজয় পতাকা

উড্ডীনের দিন।

ওড়াও-

ওড়াও হৃদয়গহীনে এবার

বিদ্রোহের পতাকা ওড়াও,

উড়বে ঘরে-ঘরে অচিরেই

বিজয়ের পতাকা উড়বেই।

একটু ডানে-বামে দেখা

সুমন সাহা

নাক ফুল হারানো মেয়েটির চিৎকার

গিলে ফেললে পথ; অনেক পথ ভুল

দিকেই যায়। বারবার মনে হয়,

কি এক ঝড় দেখল অবুঝ আর্তনাদ

ভেজা চোখ সে এখনো দেখে নাই

কুরিয়ার সার্ভিসও ঠিকানা দেয় নাই!

পৌরাণিক নথি

হেলাল আনওয়ার

পৌরাণিক কর্দমাক্ত অতিবিশ্বাসের

ধারণা

আলোর আঙ্গিনা হতে ঠেলে দিতে পারে।

ঘষতে ঘষতে পাথরও ক্ষয়ে যায়,

নিঃশেষ হয়ে যায় বাউলার চুম্বক ইতিহাস

আমাদের পৌরাণিক নথিতে

যা লেখা তাতো তামাদি হবার কথা-

কিভাবে যে আজো রয়ে গেছে তা জানার বাইরে।

সমাজের ঝুটাগুলো আজো

পুরোনো নথি বোগল দাবায় করে

বেহুদা কুত্তার মতো দ্বারে দ্বারে ঘোরে।

ওদের পদস্পর্শ বড় ভয়ানক,

ওরা সভ্যতার বিপরীতে নির্লজ্জ হায়েনার মতো।

ওদের রক্ত পিপাসা যুগের পর যুগ

বনী আদমকে দিয়েছে লাশের স্তূপ।

আমরা আজ আর যুদ্ধ চাই না,

সংঘাত চাই না, চাইনা অহিত রক্ত প্রবাহ।

পৌরাণিক যুগের আধিপত্যবাদের

লাশের খামার হতে বেরিয়ে আসতে চাই-

এবং বপন করতে চাই মানবিক ছায়াদার বৃক্ষ।

যা ছিল অবশেষ

মুহাম্মদ রফিক ইসলাম

যে নদী গিয়েছে বয়ে গন্তব্য দূরত্বে

বাঁধ তোলে দিলেই স্রোত আটকানো যায়?

জলের পিছনেই ছুটে গেছে ধ্যান-সাধনা

সুদীর্ঘ তীর্থযাপন, শেষ অবশিষ্ট...

যে পাখি উঁকি দিয়ে থাকে পাতার ফাঁকে

মুক্ত আকাশে মেঘ দেখে উড়াল শিখে

সে পাখির চোখে ঘরবন্দি স্বপ্ন বাসা বাঁধে?

তার কাছে হয়তো মোহ এক নিয়মের শৃঙ্খল

ডানার নিচে ঝুলে থাকা অবাঞ্ছিত দন্ড পালক।

যে জোছনা খসে যায় জোনাক পোকার মতো

মুক্ত-অবাধ গল্পে মেতে ওঠে নিঝুম ডালিমের বন,

চাঁদ ফিরিয়ে নিতে পারে তার কৈশোর-যৌবন?

নক্ষত্রের পাশে বিরহী শুকতারা ঝিমিয়ে পড়ে

জেগে থাকে যেন শুধু রাত্রির ব্যথিত আকাশ!

যে চলে যায় সময়ের স্রোতে ভেসে

উজানে ফিরে আসে না সে,

ভাটির গাঙে জোয়ার টেকানো সাধ্য থাকে কার?

পাখিচোখ তবু নদীতীরে বালুঘর বাঁধে

যা ছিল অবশেষ, অবশিষ্ট সম্বল...

গন্তব্য নেই

জাকির আজাদ

সময় আমাকে ফেলে চলে যায় দ্রুত,

মিথ্যা বানোয়াট কিংবা ছলনায় করে আপ্লুত

কোথাও না রেখে যতিচিহ্ন

এক জীবনের বেঁচে থাকাকে করে ছিন্ন-বিছিন্ন।

স্বপ্ন আশার জমাট বরফ গলে গড়িয়ে যায় জল,

সঙ্গে মিলেমিশে যায় কান্না অবিরল

সচল সব কিছু হয়ে যায় অচল আচন্বিতে যায় থেমে

জীবন শৈলীর পরতে পরতে প্রগাঢ় অন্ধকার আসে নেমে।

বিষাদগুলো জড়ো হয়ে বেঁচে থাকায় ভারি করে তোলে,

লক্ষগুলো পন্থাসমূহ অনিশ্চয়তা দোলে

কষ্টেরা আচরণ তুমূল করে আপাদমস্তকে

বাড়িয়ে দেয় বেদনার দৈর্ঘ্য প্রস্তকে।

বুকের ভেতর অহর্নিষ কাঠঠোকরার মতো দুঃখবোধ,

ঠুকতে থাকে নিতে অজ্ঞাত শোধ

কঠিন আরো কঠিনতম হয়ে দন্ডায়মান চলার পথে

অসংলগ্ন সব ভাবনা সিদ্ধান্ত ছুটে আসে অসফলতা হতে।

ঘিরে ধরে আমার অবাধ বিচরণক্ষেত্র,

ক্ষণিকে ক্ষণিকে অনালোকিত করে আলোকিত নেত্র

আমার দুঃখে দুঃখ দুঃখিত থাকে লাগাতার

সৌন্দর্যগুলো ভেংচি কাটে অনুবার।

ধ্রপদ সময় বিদ্রুপের কলহাস্যে মুখরিত,

যেনো ধ্বংসের শেষ প্রান্তে এসে উপনীত

চেয়ে না পাওয়ার সামগ্রিকতা হয়ে ওঠে প্রাণের চেয়ে চড়া

তথাকথিত যাপিত জীবনের পাঠ থেকে যায় অপড়া।

যেমন মৃত্যু জীবনকে

উবায়দুল্লাহ বিন সাঈদ

যদি কখনো

পরিহিত মানবরূপী মুখোশটা

দৈব বাতাসে খসে পড়ে,

প্রকাশিত হয় কলুষিত, কুৎসিত চেহারা

শামুকের ন্যায়

বদ্ধ আবরণে আত্মগোপনই

হবে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়।

তাই মুখোশ উন্মোচনের ভয়

সর্বদা আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়,

যেমন মৃত্যু জীবনকে।