বুকের রক্তে নদি হবো

রানা হোসেন

নির্ভয় বিজয়ের প্রত্যয়ে আমি উত্তাল জনস্রোতে,

এই আমি ধিক্কার জানাই গণহত্যাকারীকে।

নাম না জানা, কত শত ভাই বোন, শিশু-কিশোর, বৃদ্ধকে

যার নির্দেশে পুলিশ বুলেট চালিয়েছিল, হত্যা করেছে

আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে ধিক্কার জানাই

সেই সব হত্যাকারীকে।

স্বৈরাচারী শাসকের চোখের মুখোমুখি

মিছিলে চমকে ওঠেনি আমার পা, প্রতিবাদের হাত উঠাতে ভয় পাইনি

ঘাতকের গুলী, ট্যাংক কিংবা গ্রেনেট বোমার।

রাজপথে জনস্্েরাতে প্রতিবাদ, ফেটে পড়লো বিস্ফোরিত কন্ঠস্বর সেই সাথে

পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে।

প্রতিধ্বনিতে স্বৈরাচারীর সকল দেয়াল ভেঙ্গে পড়ে সারি সারি

ভিত ভেঙে পড়ছে, চুড়ো ভেঙে পড়ছে।

আমার পায়ের নিচে শক্তিশালী মৃত্তিকা, যে মৃত্তিকায় দাঁড়ালে,

আল্লাহ আমার শক্তি বাড়িয়ে দেন, আমি রাজপথে,

আমি মিছিলে, আমার বুক কাঁপছে না,

আমি এক বিপ্লবী! বিদায় নিয়েছি স্বজনের, নেই স্নাইপারের ভয় নেই

প্রতিবাদী মিছিল থেকে পিছু ডাকে না কেউ,

আমাকে ডাকে না মা, বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রী, প্রিয় সন্তান

তারা প্রেরণা দিয়েছে সাহস দিয়েছে যুদ্ধে যাবার।

এখন থেকে হবে জীবনের সাথে, সাম্যের কথা

বৈষম্য ভেঙে জীবনের কথা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্যের প্রতিবাদ।

সমগ্র দেশ এখন এক কাতারে, শুধু স্বৈরাচার শাসক ছাড়া

বুকের রক্তে এক নদী হবো, হে ফ্যাসিবাদী চালাও গুলী।

এখনও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি ভয় নেই বুলেটের

রক্তে ভেজাবো বুক, দুঃখ নেই তাতে, মুক্তির জন্য,স্বাধীনতার জন্য

এক নির্ভয় বিজয়ের প্রত্যাশায় বুক পেতে দাঁড়িয়ে আছি।

জুলাই বিল্পব

শেখ মনিরুল ইসলাম

গুমোট অন্ধকারময় পনের বছর

জনপদে হিংস্র হায়েনারা ফেলে বিষাক্ত নিঃশ্বাস!

বহেনি শুদ্ধ বাতাস, ফোটেনি রক্তগোলাপ !

সবুজ পত্রপল্পবে সবুজের হাহাকার

পাখ-পাখালির কিচির মিচির নীরব নিস্তব্ধ

দস্যু-দানবের সীমাহীন নিপীড়নে বন্যেরাও ক্লান্ত

ভরা পূর্ণিমায় রুপসা করতোয়ার নিষ্প্রভ জলরাশিতে

ছিল না জীবনের ছোঁয়া।

শহরে বন্দরে প্রতিটি ধুলিকণায় বারুদের গন্ধ

তাবৎ উদ্ভিদ- প্রাণীকুল প্রহর গোনে মুক্তির !

অবাক বিস্ময়ে পৃথিবী দ্যাখে নব্য ফ্যাসিস্টের ক্রুর হাসি !

মুক্তিযুদ্ধের শহীদের রক্তে ভেজা স্বাধীনতা বিপন্ন !

সার্বভৌম-মালিকানা বিক্রির দুঃসহ পাঁয়তারা

বিডিআর নিধনের অবর্ণনীয় নাটকের মঞ্চায়ন!

নির্বিচারে গুম, আয়নাঘরের বর্বর আদিম নির্যাতন।

অসংখ্য অলীক মামলার ভারে ন্যুজ জনপদ

লক্ষ লক্ষ বনী আদম বাড়ি ছাড়া ভিটে হারা বছর বছর ।

খুনের মহড়া চলে পাড়ায়, মহল্লায়, গ্রাম কি শহরে

সর্বত্র কালনাগিনীর বিষাক্ত নিঃশ্বাস,

মুক্তির প্রতিক্ষায় দিন কাটে মজলুমের দীর্ঘশ্বাস !

এলো সেই শুভক্ষণ !

বুকটান করে দাঁড়ালো নাহিদ, সারজিস,

হাসনাত, সাদেক কাইয়্যুম আর ফরহাদরা Ñ

বুকচাপা আগুনের লেলিহান দ্রোহে ।

কোটি কিশোর- মধ্যবয়সী, বৃদ্ধ, ছাত্র-জনতা

ফুঁসে ওঠে বিদ্রোহী দাবানলে।

বন্দুকের সামনে বুকটান করে দাঁড়ায় আবু সাঈদ,

অসংখ্য বুলেট ঝাঁজরা করে সাঈদের নিষ্পাপ বুক,

ঝাজরা করা হয় পানির ফেরিওয়ালা মুগ্ধকে ঢাকার রাজপথে।

শহীদের মিছিল বাড়তে বাড়তে দু’হাজার ছুঁই ছুঁই

শ্রাবণের অঝোর ধারায় মিশে যায়

সহস্র শহীদের গলগলে পবিত্র রক্ত-স্রোত!

লাখো আবাবিল যেন নামে আসমান হতে

বিধ্বস্ত ভূমির পথে পথে বেজে ওঠে মুক্তির শ্লোগান

ভয়ে লেজ গুটিয়ে পালায় লেডি ফেরাউন,

ইতিহাসে লেখা হয় জুলাই বিপ্লবের বিস্ময়কর মহাকাব্য।