প্রিয় কবি
নয়ন আহমেদ
[মোশাররফ হোসেন খান-এর জন্মদিনে]
পুকুরে যেমন ফোটে পদ্মের ফুল
তেমন করেই যেনো কবিতা-বাগানে
দৃশ্যময় অপরূপ ফুটেছে বকুল-
রূপজ ও মনজ- দুই ব্যাপ্ত শ্রাবণে।
কবিতার চাষি তিনি- মোশাররফ খান-
ক্লান্তিহীন, পরিশ্রমী বোধের আধার;
কী এক সোনালি ধান শুধু বুনে যান-
দূর করে যান এক অতল আঁধার।
সূর্যের হাসি তিনি- সাহসী পুরুষ;
অবাক বিস্ময়ে দেখি সাহসের ডানা-
এখানেই ভালোবাসা সুহৃদ পৌরুষ-
এখানে আরাধ্য শুধু প্রেমধান ভানা।
মোশাররফ হোসেন খান, ভালোবাসা নিন।
আসুক আসুক ফিরে সূর্যের দিন।
ক্ষুধার দেশে নিঃশব্দ ফুলেরা
জাকির সেতু
গাজার পথে পথে চিৎকার ভেসে আসে,
ক্ষুধার তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করা শিশুর
করুণ চাহনি- নিষ্পেষিত করে।
আজ মানবতার জন্য কতো স্লোগান দেই;
সেই স্লোগানে সামিল হবে তো এই শিশুরা?
তাদের আলিঙ্গন করবে মৃত্যু-আমরা শুধু দেখছি!
আমাদের কি ঘুমন্ত বিবেক জাগ্রত হবে?
এই ছোট্ট শিশুরা ফুলের কলি হয়ে বাঁচতে চেয়েছে-
কিন্তু নির্মমতা!
ঘরে খাদ্য নেই, মায়ের স্তন শুকিয়ে গেছে;
মরুভূমির মতো রুক্ষ মনে মা দেখছে সন্তানের মৃত্যু।
অনাহারে, গুলি লেগে পড়ে থাকা দেহ!
ক্ষুধার যন্ত্রণায় পৃথিবীকে দিয়েছে বিদায়।
মনুষ্যত্বের উপত্যকায় এবার আলো জ্বলবে তো?
এই বিভীষিকা কতদিন?
গাজার শিশুদের ক্ষুধা নিবরণ হোক-
প্রত্যাশায় কোটি মানুষের মন।
তারুণ্যময় পৃথিবী
সোহেল আব্দুল্লাহ
সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গমালা
শুভ্র ফেনিল হয়ে
সৈকতে আছড়ে পড়ে
মহাগর্জনে।
জীবনের মোক্ষ সময় যার
যৌবন যখনি আসে
অসম্ভব হলেও তার
হয়ে যায় সবই আনমনে।
রোদের প্রচণ্ড তাপে গৃষ্মের দুপুরে
ওষ্ঠাগত প্রাণ চায়
প্রকৃতির শীত আবেশ।
তাপের তীব্রতায় সাগরের লোনাজল
নিলাকাশে নিয়ে যায়
স্রষ্টার নিখুঁত আদেশ।
হঠাৎ একদিন, কালো মেঘে ছেয়ে যায়
পৃথিবীর চারদিক।
চলে প্রস্তুতি,
প্রকৃতির মাঝে,
নীরব নিস্তব্ধ হয়ে আছে যেন
কোনো এক মহাবীর।
আসে রুদ্ররোষে মহাগর্জনে
বিশাল মূর্তি ধরে
লণ্ডভণ্ড করে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে,
ধুয়ে যায় মাঠঘাট,
তারুণ্যময় পৃথিবীর।
আহত ডানার পাখি
তাসনীম মাহমুদ
আহত পাখির ডানার ক্ষত’ নতুন পালকে
কোনো এক নরম জোছনায় সেরে উঠবে জেনো-
কিন্তু তোমার হিংস্র তীর ধনুকের বিষাক্ত ফলা; যা
খোলস ছেড়ে বেরিয়ে গেছে জ্ঞানে কি’বা অজ্ঞানে
তাকে কি আর কখনো ফিরিয়ে নিতে পারবে বন্ধু?
আঁখি মুদে বলোÑ
কী এমন চাওয়া-পাওয়া পৃথিবীর পরে!
কী এমন সফলতা-ব্যর্থতা ক্ষণিক ভ্রমে!
আস্থা বিশ্বাস সৌজন্যতা যদি না থাকে
হৃদ মাজারে- ভালোবাসাবাসি উবে যায়;
ফিঁকে হয় রঙিন বাসর...।
কর্পূর যেভাবে মিলায় শূন্যে হাওয়ায়; সেভাবে
পথচলা বহুদূর- ক্লান্ত হয়; ফিরে আসে বৃত্তে।
বিন্দু থেকে সিন্ধু দেখেছো কি বন্ধু?
যে কৃষক পতিত জমির আবাদে-
নিঃশেষ করে ঘাম; ফুলে ফলে সাজায় বাগান
সে জানে- মৌসুমে, পেঁচার উপদ্রব কেমন হয়!
তুমি জানো না; তুমি জানো না-
বাড়ন্ত ফসলের মাঠ অচিরেই এনে দিতে পারে
নবান্ন; নবীনের ঘরে ঘরে- অথচ অধৈর্যের
লিকলিকে ইঁদুর কেটে দেয় সম্ভাবনার শীষ!
আহত ডানায়-
জেগে থাকা রক্ত শুকিয়ে যায়
ঝরে পড়ে পালক;
অতঃপর একে একে বিন্যস্ত হয়
পাললিক সময়...।
উন্মোচন
আল মামুন রিটন
একটি শব্দহীন রাত পেলে কিছু করার ছিল
চাঁদটা দেখার ছিল, ছিল কল্পনার ডানা মেলার
এরপর ধীরে ধীরে কলম হাতে নিয়ে ঝুঁকে পড়ে
লেখার ছিল একটি অলিখিত ইতিহাস
যে ইতিহাস খুলে দিত তাদের ভিন্ন চোখ
যাঁরা দীর্ঘদিন অন্ধের মতো পথ হেঁটেছে
যাঁরা সঠিক পথ ছেড়ে খুঁজেছে ভিন্ন পথ
যে পথে লেখা ছিল- এখানে নির্লজ্জের বসবাস
শব্দহীন রাত পেলে লিখে দেওয়া যেত
একটি কবিতা অথবা গান, যার সমস্ত শরীর জুড়ে
ঝলমল করে উঠতো সত্য, উন্মোচিত হত ঘটনা
যে ঘটনার সমস্তটা তারা ঢেকে রেখেছিল দীর্ঘদিন।