যুগান্তরের চিঠি
তাসনীম মাহমুদ
ক্যালেন্ডারের পাতায় চব্বিশের রক্ত মাখা
জুলাই-, একসমুদ্র বিশ্বাস নিয়ে তাকিয়ে
আছে শহীদের চোখ; বাঙলার পথে...।
বাটোয়ারা, দরকষাকষির উৎসব শুরু হয়েছে
রাজ পাঠাদের দরবারে। মগডালে বনশকুন...।
সমবেত সভ্যগণ; প্রিয় ভূমির বন্ধুগণ!
দেয়ালে সেঁটে দিয়েছি যুগান্তরের চিঠি-
ফ্যাসিবাদ খতমের সংগ্রামী সময়ের সার্কিটে
নামে-বেনামের যুবক দীর্ঘজীবী হও...।
শ্বেত পতাকার মিছিল টিএসসি, শাহবাগ,
পল্টন হয়ে পৌঁছে যাক- শনিরআখড়া,
উত্তরা, মোহাম্মদপুর আর পৌঁছে যাক-
আন্দরকিল্লা, মতিহার, গল্লামারি, পার্কের মোড়,
কর্ণকাঠী, কুমারগাঁও, ময়মনসিংহ। প্রতিরোধ গড়ে
জ্বালিয়ে দাও, পালানোর সবকটি দরজা।
মৃত্যু অথবা অফুরান্ত জীবনের হাতছানি;
ডাকে ওই! কুহেলী রাতের অন্ধকারে
ওঁৎ পেতে আছে শ্বাপদ, কালনাগিনী...।
সালাহউদ্দিন! উঠে দাঁড়াও; ঝাড়লণ্ঠন জ্বেলে
লুসিফেরিনের বাহিনী নিয়ে সিনা টানটান;
এগিয়ে যাও হয়তো এবার অথবা
আর কখনো নয় ইতিহাস তোমার...।
মৃত্যু একটা শিল্প
মোহাম্মদ ইসমাইল
মৃত্যু জীবনের একটা শিল্প।
যেখানে কিনা লুকায়িত থাকে শুধু জীবনের অনেক না বলা গল্প!
মৃত্যু সবসময় তাই তার চিরহরিৎ একটা সৌন্দর্যের ভিতরে
একান্ত আলোআঁধারি ভাবে নিজেকে গোপন করে
কাকে যেন শুধু তার পিছুটান দিয়ে অন্য একটা অনুভূতির হৃদয়ে -
জীবনটাকে তার নেপথ্যের আড়ালে রাখতে চায় বুঝি শুধু রাঙ্গিয়ে!
মৃত্যু প্রলম্বিত এই জীবনের তাই যা-কিছু আছে -
তার সব কিছু যেন শুধু কথা বলে মানুষ তোমারই সেই জন্মের কাছে!
আমি কেবলি আমি
উম্মে কুলসুম
আমি কেবলি আমি-
নির্বাক এক সত্তা, নামহীন আলো
নিজের ছায়ায় হেঁটে চলি প্রতিদিন
তবুও নিজেকে ছুঁয়ে দেখি না কখনও!
আমি কেবলি আমি-
একটি অর্ধভাঙা, অস্পষ্ট প্রতিধ্বনি
কোথাও উচ্চারিত হয় নি-
তবুও প্রতিটি নিশ্বাসে তার ব্যাপ্তি বহমান,
আমার সংজ্ঞা নেই, সংজ্ঞার ধারণা ও ত্রুটিপূর্ণ!
আমি কেবলি আমি-
স্বীয় অধিকারের লব্ধ বর্ণহীন কবিতা
প্রতিটি প্রশ্নে আমি নিজেই একেকটি উত্তর
অথচ প্রশ্নেরা ফুরোয় না!
উত্তরেও জন্মায় নতুন আরেক অজানা আমি।
আমার সত্তা একাধিক
প্রতিবার ভাবি ‘এটাই আমি’-
পরক্ষণেই সেই আমি ভেঙে পড়ি আরেক আমি তে।
কত রুপে, কত ছায়ায়,
আমি কেবল আমার অস্তিত্বকে চিনে নিই নতুন করে!
আলো ও অন্ধকার -
দুয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে আমি জিজ্ঞাসা করি,
আমি কি সত্যিই আছি
নাকি কেবলি তা অনুভবের ভ্রম!
আমি কেবলি আমি-
না রক্তে, না হাড়ে, না নামের পরিচয়ে
আমি এক অন্তর্জাগতিক নীরবতা,
যেখানে জন্ম হয় চিন্তার,
আর মৃত্যু হয় সংজ্ঞার।
অথচ
আল মামুন রিটন
উত্তাপ কমে গেলেই কলম তুলে নেব
কবিতার খাতায় লিখব শান্তির কবিতা
বিকেল থেকে সন্ধ্যার আগমনী আভায়
নির্ভেজাল সহনীয় তাপের নরম কবিতা-
অথচ দেখ- এখনও কালো ধোঁয়ার মেঘ
বারুদের শ্বাসরুদ্ধকর তীব্র দুর্গন্ধ
মানুষের ছোটাছুটি, শিশুদের চিৎকার
বোমার আলোয় এখনও নিদারুণ উত্তাপ।