কবিতা
কবিতা
কখনো কখনো শোকের বাতাস ছড়িয়ে পড়ে জমিন থেকে আসমান অবধি, চোখের জল জমতে জমতে বরফের হিমালয় হয়ে দাঁড়িয়ে যায় দেশ থেকে দেশান্তরে।
Printed Edition
শোকের ভাষা
এ কে আজাদ
কখনো কখনো শোকের বাতাস ছড়িয়ে পড়ে
জমিন থেকে আসমান অবধি,
চোখের জল জমতে জমতে বরফের হিমালয় হয়ে
দাঁড়িয়ে যায় দেশ থেকে দেশান্তরে।
স্বপ্নময়ী পাখিদের চোখ থেকে ঝরে পড়ে প্রশান্ত মহাসাগর,
ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে দেশ থেকে মহাদেশ।
শোকের সেই মিছিলে দ্রোহের কোন স্লোগান থাকে না,
কেবল দীর্ঘশ্বাসের সাইক্লোন থাকে,
নির্বাক কবিদের কলমে তখন কোন ভাষা থাকে না,
চিত্রশিল্পীরা সমস্ত মানচিত্র জুড়ে কেবল
লক্ষ লক্ষ অশ্রুসজল চোখ আঁকে।
কৃষকের লাঙল থেমে যায় আমন ধানের জমিতে,
হালের বলদ অলস হয়ে শুয়ে থাকে কিষাণীর গোয়ালে,
ঘরণীর হাতের থালাবাসন থমকে দাঁড়ায় পুকুরের ঘাটে,
তারাও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে চোখের জলে পথ খোঁজে,
যারা বিকিকিনি করে হাটে;
আচ্ছা, শোকের কি কোন ভাষা থাকে?
নাকি বুকের ভেতরে হাই রিকটার স্কেলের
ভূমিকম্পই শোকের সব থেকে বড় ভাষা?
সাত আসমান থেকে অবিরাম ঝরে পড়া বৃষ্টির ফোঁটাই
কি শোকের একমাত্র ভাষা?
নাকি নির্ঘুম রাতের প্রতিটি তারাই একেকটি শোকের পিরামিড?
নাকি শোকের কোন ভাষা থাকে না?
কলমের ডগায় কোন শব্দ থাকে না?
কেবল অসীম আকাশের দিকে তাকিয়ে
থাকাই বুঝি শোকের একমাত্র ভাষা!
সীমাহীন সাগরের পাশে দাঁড়িয়ে
সমস্ত লোনাজল বুকের ভেতরে ধরে রাখাই বুঝি
শোকের একমাত্র ভাষা!
দীর্ঘশ্বাস
হাফিজুর রহমান
বাধা মানবে না, শোনে না সে নিষেধ!
নিজের অজান্তেই বেরিয়ে আসায়,
টর্নেডোর পূর্বাভাসে থমথমে মস্তিষ্ক;
বুকের ভিতরের উত্তাল জলোচ্ছ্বাসে
দীর্ঘশ্বাসের, অপ্রতিরোধ্য বিস্ফোরণ।
আশ্বাসে-বিশ্বাস করে না দীর্ঘশ্বাস!
সম্ভব নয় এর পরিমাপ করা
নির্ধারণ করা মুশকিল, কতটা দৈর্ঘ্য?
বিশাল পৃথিবীটাকে ছেয়ে দেয়ার;
বড়োই বটে, দীর্ঘশ্বাসের বিস্তৃত পরিধি।
শুধুই বেদনা ঝরে পড়ে
এবি ছিদ্দিক
কি দুরাশার কথা! শুধুই বেদনা ঝরে পড়ে!
তবু এটাই জীবনের গল্প!
ফিরে পাওয়া যায় না ফেলে আশা অতীত।
কেবল হাহুতাশ আর আফসোস থেকে যায়।
এতটুকু সুখ দৈবাৎ ফেরারি হলে দাগ রেখে যায়
স্পর্শ করা যায় না, বলা যায় না সংক্ষুব্ধ মন!
প্রচণ্ড বিশ্বাসে পাখি ওড়ে, নিখাদ বিশ্বাস
কেবল চতুর শিকারি বুঝে না কতোটা ক্ষতি!
তবু এইভাবে বেঁচে থাকে ওই আহত দীঘল রাত!
রাতের পরতে পরতে থাকে ডুবসাঁতারের গল্প!
একহালি লেবু
হৃদয় পান্ডে
বাজারের এক কোণে দাঁড়িয়ে বাবা
লেবুগুলো হাতে নিয়ে দেখলেন,
তুলে রাখলেন, আবার দেখলেন,
দোকানদার বলল,
"এক হালি লেবু নব্বই টাকা কাকা!"
বাবা একটু হেসে বললেন,
"নব্বই টাকা!"
দোকানদার হাসল না,
মাথা নিচু করে অন্য ক্রেতার দিকে ফিরল,
বাবা হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন কিছুক্ষণ,
তারপর ফিরে এলেন খালি হাতে।
বাড়ি ফিরে মা বললেন,
"লেবু আনোনি?"
বাবা বললেন,
"দাম শুনে মুখটা টক হয়ে গেছে,
আর লেবুর দরকার হলো না।"
সব কিছু মিশে গ্যাছে
দেলওয়ার হোসেন
খুব করে বলেছিলে, এ জীবনে কী আর পাবো
সবকিছু মিশে গ্যাছে নীলকষ্টের সৈকতে
এক ঝলক চাহনি বিম্বিত দূর সবুজের গাঢ় প্রান্তরে
ঝাঁক ঝাঁক পাখি ঠোঁটে বহন করে তৃপ্তিদায়ক অন্ন
সোনালি ভোরে ভাবনার একাকিত্বে ডুবে থেকে
হতাশার মাঝেও খুঁজে তো পেলে শেষে
একরাশ আশার আলো।