ফিলিস্তিন আমার, আমারই

মোশাররফ হোসেন খান

বিশ্বাস করুন, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

আমার ঘর থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে আমার শিশু কিশোর সন্তান।

আমার চোখের সামনেই তাদের হত্যা করা হচ্ছে।

বিশ্বাস করুন, বেড়ে যাচ্ছে আমার হৃদস্পন্দন।

আমার মা, বোন, স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে তারা।

অতঃপর....!

বিশ্বাস করুন, আমার ভাইদের হত্যা করছে আমার চোখের সামনে।

বিশ্বাস করুন,

বোমার বিস্ফোরণে আমার শিশুরা বিদ্যুৎবেগে আকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছে।

এবং কীভাবে ডানা কাটা পাখির মতো মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে।

বিশ্বাস করুন,

আমার হৃদয়ের প্রথম কিবলা বায়তুল মাকদিস

কীভাবে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে তারা।

তারা কি জানে না---

বায়তুল মাকদিস আমার।

গাজা, রাফাহ সহ গোটা ফিলিস্তিন আমার ।

এই পবিত্র ভূমির মালিক কেবল আমি, আমিই।

ইহুদিরা চাইছে, মানব বংশ নির্মূল করে

ফিলিস্তিনে তাদের মতো শূকরের চারণভূমি তৈরি করতে।

কিন্তু না!

সেটা কখনোই সম্ভব হবে না।

বিশ্বাস করুন,

আমার চোখের অশ্রু আজ দাবানলে পরিণত হয়েছে।

হৃদয় জুড়ে যুদ্ধের হাহাকার। শাহাদাতের তামান্না নিয়েই তো

মায়ের উদর থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছি।

সুতরাং হে ইহুদি, সাবধান!

তোমাদের পতন অতি আসন্ন। তোমাদের ধ্বংস অনিবার্য।

শূকরের গর্ভে আশ্রয় নিলেও আর

শেষ রক্ষা হবে না তোমাদের।

হে প্রভু!

বিশ্ব মানচিত্র থেকে ইহুদিদের নাম- নিশানা মুছে দাও।

মানব-শত্রু ইহুদি সমূলে ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত

মৃত্যু যেন আমাকে স্পর্শ না করে...!

০৮.০৪.২০২৫

নিপীড়ন নিপাত যাক

এ কে আজাদ

ইসরাইলের বোমা যেন আমার গায়ে ফোটে,

গাজার রক্ত আমার বুকে ফিনকি দিয়ে ওঠে।

রক্তমাখা শিশুর ছবি যখন দেখি চোখে,

বুকের ভেতর হাজার যুগের কষ্ট এসে ঢোকে।

হায়না-চোখে মানব-শিশু ক্ষুধার অন্ন বটে,

পশুর চোখে সবই সমান, যাহাই কিছু ঘটে!

রক্তে রাঙা মানুষ আমি, আমিই ফিলিস্তিনী,

স্বাধীনতার মন্ত্র মুখে রক্তে বিজয় কিনি।

স্বপ্নে দেখি মুক্ত আকাশ, স্বাধীন জন্মভূমি,

এসো পশুর নিপাত লিখি আমি এবং তুমি।

শক্তিনীতি

মহিবুর রহিম

তিনটি শতাব্দী জুড়ে সাম্রাজ্যবাদের নীতিহীন শক্তিনীতি

মুসলমানের রক্তে শুধু খুঁজে ফেরে পরিতৃপ্তি

ডিভাইড এন্ড রুলে বিভক্ত বিন্নি করে চতুর্মুখী আগ্রাসনে

রক্তাক্ত করেছে তার প্রাণশক্তি সকল্যাণ দ্বীপ্তি

ঠান্ডামাথার নিষ্ঠুরতায় সমন্বিত স্থির পদক্ষেপে

শুভ্র সাদা চেতনায় ছড়িয়ে দিয়েছে কালি বিভ্রান্তির

তারপর হত্যা ও জঘন্নতায় ছিন্ন ভিন্ন করছে তার স্থিতি

মানুষের দাঁড়াবার অন্তিম আশ্রয়টুকু ভরিয়ে দিয়েছে বিষে

স্থির শান্ত জনপদে কৌশলে জ্বালিয়ে অগ্নি কিংবা বিদ্বেষ

অলক্ষ্যে বপন করে মতভেদ বিপন্ন করছে সব মানুষের মন

তারপর বহুমুখী প্রোপাগান্ডায় চলছে আগ্রাসন

ঘৃণ্য শয়তানী নীতি নিষ্ঠুরতা আজ এই বিশ্বের নিয়তি

কতো আর সহা যায় রক্তের বন্যায় মুসলমানের দুর্ভাগ্য দুর্গতি!!!

গাজাবাসীর জন্য

আবুল খায়ের নাঈমুদ্দীন

ফিলিস্তিনের মাটি আজ

উদ্বাস্তুদের মরুভূমি

ওখানে জালিম নরপিশাচের লাল চোখ পড়েছে

সুদৃশ্যের নীল আকাশের নিচে

রক্তাক্ত নারী পুরুষ ও শিশুর

লাশ দেখা যাচ্ছে

পশুর মতো গলে গলে পড়ছে মানুষের মাংস।

গাঁজা শহরে বোমা বারুদের গন্ধের সাথে মিশে আছে

তাদের দ্বীপ্ত ঈমান আর আর্ত চিৎকার।

মধ্যরাতের আতংকিত অতর্কিত হামলা

ভূকম্পনের মতো গর্জনে হুঁ হুঁ করে কাঁদে মানবতা,

কোনো চিহ্ন নেই অট্রালিকা সভ্যতা আর ইতিহাসের।

ক্ষত বিক্ষত নিরস্ত্র মানুষের স্রোত দৌড়াচ্ছে দিকবিদিক

প্রতিটি মুহূর্তের আর্তনাদ প্রকম্পিত করে আকাশ বাতাস

কোথায় বিশ্বমানবতা কোথায় বিশ্ব বিবেক।

ওরা আমাদের ভাই, বোন, সন্তান,

আল্লাহ! তোমার অদৃশ্য শক্তি পাঠাও

মুক্ত করো জালিমের হাত থেকে প্রিয় ফিলিস্তন।

আর্তনাদ

আলতাফ হোসাইন রানা

আমার ভীষণ কষ্ট হয় ওই ছোট্ট কোমল নিষ্পাপ শিশুদের জন্য

কষ্ট হয় তাদের আত্মচিৎকার শুনে,

কেন এই অশ্রু?

তাকিয়ে দেখো তাদের পেলব কোমল মুখে ছড়ায়েছে কতো স্নিগ্ধতা,

ধরণীর বুকে জন্মেই যে শিশুর জীবন যুদ্ধ।

সে-কি জানে

কষ্টের রং কি?

লাল, কালো, না আকাশী !

কোন রং-ই বা ফোটাবে তাদের জীবনের হাসি।

হে পৃথিবীর

সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তানেরা,

তোমাদের দেখে আমার হৃদয় কষ্টে নীল হয়

কারণ, অনাথ শিশুর পবিত্র হাসিমুখে

সেখানে ছায়া ফেলে মারণাস্ত্র।

যদিও তুমি স্বাধীন!

তবুও

বীর যোদ্ধার মতো বেড়ে ওঠা

তোমার ডানা দুটো নাকি ঘটাতে পারে কোন অঘটন,

চোখে তোমার স্বপ্ন ছিল এক নবরাজ্য গড়ার

যার ফলাফল তোমার এ জীবন।

হে বিশ্ববাসী,

তোমরা দেখো,

দেখে যাও

নিঃসঙ্গ এ শিশুদের জীবন,

তোমরা দেখে নাও মানুষ ও প্রকৃতি।

বিষাক্ত ঘাতক

হেলাল আনওয়ার

লাশের মিছিল থেকে

আবার উঠবে ঝড়, ভূমিকম্প, সুনামি

চাপা পড়ে যাবে আকসার আযান ধ্বনিতে।

নরপশুদের ঔদ্ধত্য সাইরেন-

জেট বিমানের নিক্ষিপ্ত গোলা-

স্বর্গীয় সৈন্যের ফুঁৎকারে ভষ্ম হবে-

আসবে আবাবিল ফের গাজার আকাশে।

“অলা তাহিনু অলা তাহযিনু অ আনতুমুল আলাওনা ইনকুনতুম মুমেনিন।”

যতই শহীদ করো-

বোমা-বারুদের মহোরণ করো

তোমাদের ধ্বংস অনিবার্য।

যারা গাজা, রাফাকে বিরান ভূমিতে পরিণত করেছো

আপাতত ভয়াবহ পরিণতির কথা ভাবতে থাকো।

ইতিহাস থেকে শিক্ষা নাও, দেখো- প্রতিটা শহীদ এক একটি ফুলের কানন হয়ে,

আকাশের নীল জোসনায় আলিঙ্গন করে।

আর প্রতিটা গাজী-যেন মুক্তা আহরণে অতিশয় ব্যস্ত তারা।

গাজার প্রতিটা পাথর স্বাক্ষী আছে,

স্বাক্ষী বায়তুল মাকদাসের প্রতিটা ইট

নপুংসক কাফেরদের কলংকিত রক্তস্নাত হাতও

কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে।

মনে রেখো,আবার ফুটবে গোলাপ

আবার আলোকিত হবে ফিলিস্তিন

আমি যেন দিক্বিদিকে বিজয়ের গন্ধ পাই

প্রতিটি রক্ত ফোঁটায় তখন উঠবে ঢেউ

নরপিশাচেরা শোনো-

হায়েনারা শোনো-

তোমাদের জন্মহীন ইতিহাস

আমাদের জানা আছে।

হে গাজাবাসী,ভয় পেয়ো না।

আমরা লক্ষ কোটি মুসলিম তোমাদের ভাই,

কলিজার স্পন্দন।

তাই বাতাসের কাছে পাঠিয়ে দিলাম

শান্তনা আর সহমর্মিতা।

আমাদের চোখের পানি কি বৃথা হতে পারে?

আর নরাধম কাফেরের জন্যে পাঠালাম -

দিলখোলা অভিশাপ এবং ঘৃণার

পেন্ডুলাম।

কোনো একদিন তোমাদের প্রতিটা কর্মের হিসেব হবে-

মানুষ হিসেবে নয়, পশুর চেয়েও

নিকৃষ্ট কোনো জীব হিসেবে।

“উলাইকা কাল আনআম, বাল হুম আদাল।”

হে আরশের মালিক,

তুমিতো তোমার দুশমনকে জানো,

জানো, কারা নমরুদ আর ফেরাউনের

উত্তরসূরি-,

কারা দাজ্জালের সহোদর-,

সুতরাং,তোমার গায়েবী মদদে রক্ষা করো ফিলিস্তিন আর

আমার হৃৎপিণ্ড, কলিজার গাজাকে

নিরাপত্তা দাও বিষাক্ত ঘাতকের হাত হতে।

হে মুসলিম তুমি মৌন কেন

স্বপন আখন্দ

হে মুসলিম, তুমি মৌন কেন ?

কিসে তোমাকে নীরব রেখেছে?

কোন সে মোহের জঞ্জালে তুমি আবদ্ধ?

কোন সে লালসায় তুমি নিমজ্জিত জাহেলিয়াতের আঁধারে ?

নিঝুম ঘুমে আচ্ছন্ন হে মুসলিম, তুমি জেগে ওঠো!

তুমি না ছিলে, খালিদ-ওমর-আলী?

তুমি না জয় করেছিলে সহস্র যুদ্ধ?

তুমি না রাজত্ব করেছিলে সমগ্র পৃথিবী!

তুমি ছিলে বীর, উন্মুক্ত অধীর, জাগ্রত ।

কোন সে অলসতায় তোমাকে আজ করেছে পঙ্গুত্ব?

কোন সে ভোগের বস্তু তোমাকে করেছে বাক-প্রতিবন্ধী?

আমি জবাব জানতে চাই?

তুমি কি দেখনা ফিলিস্তিনে কিভাবে মুসলিম মরছে?

ছোট ছোট কোমলমতি শিশু,

নিষ্পাপ নারী, বিদ্রোহী চেতনার পুরুষ কেউ নেই আর সেখানে?

যেখানে আল্লাহর ধ্বনি উচ্চারণের আগেই শহীদ হয়ে যায় মুয়াজ্জীন,

সেখানে তুমি এখনো কিভাবে শান্ত, ঘুমন্ত?

তুমি কিভাবে তোমার বিবেক হারা হলে?

যদি তোমার বিবেক থাকতো, তুমি বিদ্রোহী না হও

অন্তত একটি সমবেদনা তো জানাতে পারতে?

নক্ষত্রের নিচে লাশ: নীরব মহাবিশ্ব

জসীম উদ্দীন মুহম্মদ

রাতের আকাশে হাজারো নক্ষত্র জ্বলে

তারা জানে না নিচে কী ঘটে।

তারা চুপ থাকে হয়তো ঘুমিয়ে গেছে

হয়তো কেবল ব্যস্ত নিজেদের জ্যোতিষ্কে।

নক্ষত্রদের দিকে তাকিয়ে এক বালক বলে

“তোমরা যদি সত্যিই আলোর দূত হও

তবে আমার নিখোঁজ মাকে ফেরত দাও?

কেন আমার বোনকে বাঁচাতে পারলে না?”

কেউ উত্তর দেয় না, ধ্রুবতারা, লুব্দক, প্রক্সিমা

শুধু সাঁই করে এক ঝলক মিসাইল চলে যায়

তার নিচতলা দিয়ে লাশ সারি রেখে যায়

তার উপর দিয়ে ইতিহাস হাঁটে চোখ বুঁজে।

ফিলিস্তিনে মৃত্যুদিন

হাসান নাজমুল

কী হবে কবিতা লিখে?

যখন কোথাও মানবতা নেই টিকে,

ফিলিস্তিন আজ ধ্বংসস্তূপ;

তবুও বিশ্ববিবেক নীরব নিশ্চুপ,

বোমার আঘাতে উড়ছে মানুষ ও শিশু

পৃথিবীর বুকে আর নেই কোনো যীশু;

আছে কেবল মানুষ নামের কলঙ্ক

হৃদয়ে যাদের জমে আছে পাপ আর পঙ্ক,

কী হবে কবিতা লিখে?

চারদিকে

কেবলি শূন্যতা কেবলি পাথর,

নির্দয় হৃদয়; হৃদয় নিথর;

ফিলিস্তিন

জ্বলছে পুড়ছে প্রতিদিন;

ঘুমোচ্ছে পৃথিবীবাসী

যেন তারা সভ্যতা ভব্যতা চাষি;

কী হবে কবিতা লিখে?

জীবনের স্কুলে ভুলপাঠ শিখে?

ফিলিস্তিনে মানুষের মৃত্যুদিন,

বিশ্ব থেকে সমস্ত দরদ হয়ে গেছে লীন;

কী হবে কবিতা লিখে?

পৃথিবীর বুকে জীবনের মানে আজ ফিকে,

বেঁচে থেকেও আমরা আজ মৃত

যুদ্ধদিনে নই ব্যবহৃত;

ফিলিস্তিনে মৃত্যুদিন

জীবনের কাছে আমাদের জমে আছে বহু ঋণ।

আমরা কি লজ্জিত হবো না?

মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন

গাজার ছিন্নভিন্ন লাশগুলো হাশরে যদি সামনে দাঁড়ায়,

আমরা কি লজ্জিত হবো না?

মহাবীর খালিদ-বিন-ওয়ালিদ যদি সামনে দাঁড়ায়,

আমরা কি লজ্জিত হবো না?

বদর যুদ্ধের তিনশত তেরো সাহাবী (রাঃ)

আমাদের সংখ্যা নিয়ে যদি প্রশ্ন করে,

আমরা কি লজ্জিত হবো না?

“এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই।”

ভাইয়ের মৃত্যুতে নীরবতার জন্য,

আমরা কি লজ্জিত হবো না?

গাজার একষট্টি হাজার লাশ যদি সামনে দাঁড়ায়

দুইশত কোটি মুসলিম কি লজ্জিত হবে না?

দুইশত কোটি মুসলিম এখনো আবাবিল পাখির আশায়,

আমাদের ঈমানের দৃঢ়তা ও লজ্জাবোধ কোথায়?