ঘরে আসলে বুকটা খালি হয়ে যায়

হাসান আলীম

ঘরে আসলে বুকটা খালি হয়ে যায়

মাকে দেখি না -

মা’র মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি না।

মা তুমি এভাবে চলে গেলে আমাদের ছেড়ে।

সবাই ঘরে আসলে মাকে দেখতে পায়

মায়ের হাতের পরশে মাথার চুলগুলো ঘাসফুল হয়ে যায়,

মায়ের আঁচল মুছে দেয় মুখের ঘাম!

আমার মাকে দেখি না অনেক দিন –

আমার মনে থাকে না মা আছে কি না,

ঘরে ঢুকলে বুকটা ছ্যাত করে পুড়ে ওঠে

আহা আমার মা কোথায় গেলো!

মা জানি তুমি আর আসবে না,

তবুও তোমার চাঁদমুখ কল্পনা করে বেদনায়

মুষড়ে পড়ি, ককিয়ে ওঠে বুকের ভেতর।

বিধ্বস্ত নগরীর পুষ্প কুঁড়ি

মাসুম মীকাঈল

আমি বিধ্বস্ত নগরীর জেগে ওঠা পুষ্প কুঁড়ি

পল্লব ছড়াতে ছড়াতে মুড়িয়ে যাই

গুপ্ত ইচ্ছার আকাক্সক্ষা অপূর্ণ রেখে

পল্লব ছড়াতে ছড়াতে মুড়িয়ে যাই!!

আমার শাখাতে ধনেশটা বাসা বাঁধে না

মগডালে ধানক্ষেতের পাতি বকটা বসে না

ফটিকের খাবার জোটে না আমার পল্লবে

ধোঁয়ার আঁধারে নগরে বুড়িয়ে যাই!!

উঁকি মেরে বুক উঁচিয়ে সূর্যটা ধরা হয় না

আকাশটা ঠেলে দেয় কেউ সহস্র-অযুত দূরত্বে

আর আমি পল্লব ছড়াতে ছড়াতে মুড়িয়ে যাই

বিধ্বস্ত নগরে।

ইতিহাস চাপা পরে আছে নগরের ইটে

তারই ফাঁকে আমি জেগে উঠি পল্লব কুঁড়ি

বুড়িয়ে যাই পল্লব ছড়াতে ছড়াতে!!

নদী

আয়াজ আহমদ বাঙালি

নদী জলের সাথে স্মৃতির ঢেউও নিয়ে আসে।

ছোট্টকালে কাগজের নাও ভাসাতাম যে ঘাটে,

সে ঘাটে এখন শুকনো বালু ও কাঁটা ঘাস।

নদী শুকিয়ে গেলেও তার জলরাশি;

আজও চিত্তে কলকল করে বাজে!

সাদাকালো ভাবনা

সারমিন চৌধুরী

জীবনের খাতা কত সহজেই

নৈমিত্তিক কত আঁকিবুঁকিতে ভরে যায়,

দিনের চঞ্চলতার সমাপ্তিতে গোধূলির আবির

ছড়িয়ে দিয়ে যায় কিছু প্রশান্তি নির্মল হৃদয়ে!

পৃষ্ঠা ফুরিয়ে যায়, অলিখিত থাকে কতকিছুই

অব্যক্ত কথারা নক্ষত্রের ন্যায় জ্বলে ওঠে;

নিস্তব্ধ চারপাশটাকে যেন ভুতুড়ে লাগে

সখের কামিনী গাছে অদৃশ্য কিসের ছায়া?

সাদাকালো ভাবনার আদলে ভীতির সঞ্চার

কিছু লেখা আর কভুও হয়ে উঠেনি পাতাতে,

এমন দিনে ছেড়ে গিয়েছিলে তুমি হাত;

সেটা লেখা আছে শুধু হৃদয়ের খাতাতে

বুকের ক্ষত হয়তো শুকিয়ে কাঠ হয়েছে,

কিন্তু দাগগুলো আজও রয়ে গেছে স্পষ্ট।

মাটির গন্ধ

শিমুল হোসেন

মাটি ভিজে আছে গত রাতের বৃষ্টিতে

গন্ধে ভরে গেছে গোটা উঠোন

মা হাঁটছেন নরম ধানতলায়।

শব্দ করে একগোছা জাল হাতে

বাবা হেঁটে যাচ্ছেন নদীর ঘাটে,

জাল ফেলে কিছু মাছের আশায়।

আমি জানালার ফাঁক দিয়ে দেখি-

মাটির গন্ধে ভরে যাচ্ছে বুক,

যেন এই গন্ধেই আমি জন্মেছিলাম

পৃথিবীকে দেখিয়েছিলাম নতুন মুখ।

সবাই কবিতা লিখুক

হাসনা হেনা

অনেকেই বলে, কবিতা লিখতে লিখতে আমি কি যেন হয়ে গেছি!

আমার এখন আকাশের তারা গুণতে ভালো লাগে।

আমি চাই পরীদের সাথেই আমার সখ্যতা হোক।

আমার পাশ কেটে অনেকে চলে যায়,

বলে, আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।

আমি তখন ঘরের চাল দিয়ে পানি পড়া দেখি, মুগ্ধ হই।

কবিতারা আমাকে ঘিরে ধরে।

সৃষ্টি সুখের উল্লাসে আমি ভেসে বেড়াই।

ভাবি, এত নিঃস্ব হতে হয় একটা কবিতা লিখতে?

তখন আমি ভুলে যাই কবে মানুষ হয়ে জন্মে ছিলাম।

আটপৌরে সুখ খুঁজতে বেরিয়ে পরি।

মুগ্ধ হই ভোরের সূর্য দেখে, পড়ন্ত বিকাল দেখে,

খোলা আকাশে উড়ন্ত বলাকা দেখে,

শিশুর হাসি দেখে।

যদি আমি পাগল হই তবে কিছু বলার নাই।

আর যদি আমি মানুষ হই তবে আমি চাই সবাই কবিতা লিখুক।

অদৃশ্য জলের অনুরণন

জহিরুল হক বিদ্যুৎ

ভিজে যাই আমি,

যেভাবে আলো ভিজে যায় ছায়ার সংস্পর্শে।

এক অদ্ভুত ভারসাম্যে,

যেখানে আলো নিভে না, ছায়াও হারায় না।

আমি ভিজে যাই

তোমার দৃষ্টির ভেতর মেঘলা দুপুরে,

নৈবেদ্য জ্যোৎস্নাময় রাতে

তোমার উপস্থিতির অনুপস্থিতিতে,

যেভাবে পাথর ভিজে ওঠে শিশিরে।

তোমার প্রতিটি অনুচ্চারিত অনুভব

আমার ভিতরে বহে একেকটি মৌসুমি নদী।

ভালোবাসা আসলে বৃষ্টির মতো নয়,

যা নামে, থামে, তারপর শুকিয়ে যায়।

ভালোবাসা যেন সময়ের মতো,

যা ভিজিয়ে যায় আমাদের স্মৃতি, নীরবতা

আর চিরকালীন প্রতীক্ষার ভিতর দিয়ে।