অলৌকিক বৃষ্টি
জয়নুল আবেদীন আজাদ
বৃষ্টির ফোঁটাগুলো উদার আকাশ থেকে
ঝরে ঝরে পড়ছিল অবিরত
পত্র-পল্লবে মৃত্তিকায়।
আমিও বাড়ালাম হাত আকাশের দিকে-
মুহূর্তেই বারিধারায়
শিহরিত হলো শিরা-উপশিরা,
অদৃশ্য ইশারায় শীর্ণ হাত দু’টি
স্পর্শ করলো আমার উষ্ণ-কপাল
সহসাই হলাম সচকিত=
এ কোন্ আমি?
আমার অস্তিত্ব এখন রহস্যঘেরা
শরীরের তাপমাত্রা-
রক্তের প্রবাহ-
মস্তিষ্কের ক্রিয়া-
কিংবা হৃদয়ের স্পন্দন
সবই অপূর্ব এবং সুষম।
অস্তিত্বে এমন আনন্দ
এই প্রথম পেলাম জীবনে।
শুধু বৃষ্টির কারণেই কি এমন আনন্দ?
নাকি সেদিন আকাশ থেকে
ঝরেছিল অন্যকিছু-
হয়তোবা বৃষ্টির অলৌকিক কোনো ধারা।
বেদনাময় জীবন
নুশরাত রুমু
অভিমানের বেষ্টনী ভেঙে খুঁজিনি তাকে দিগন্তব্যাপী...
উন্মাতাল হাওয়ায়, গোধূলি বেলায় কিংবা সাগর তটে;
কোথাও মেলেনি খোঁজ।
হিরোশিমা হৃদয় আজও ক্ষতের চিহ্ন বয়ে এগিয়ে চলে।
অসমাপ্ত সেই উপাখ্যান আগামীর পথ আটকায় পূর্ণিমার জোয়ারে,
নিরুদ্দেশ স্বপ্নরা চোরাবালির অতলে ডুবেছে বিরহ ব্যথায়।
বিযুত দূরত্ব মগজের রন্ধ্রে বাড়িয়েছে দুঃখের ঐশ্বর্য!
শূন্যতার পরিসীমায় দাঁড়িয়ে দেখি;
জীবন কেবলই বেদনাময়..
অভ্যন্তরীণ ভাঙন
এম সোলায়মান জয়
ভালো বাসতে বাসতে কখন যে
অভ্যন্তরীণ ঘৃণার জন্ম হয়েছে তা বুঝতেই পারিনি
মায়ার গভীরে স্বার্থের আস্ফালন কখন যে
প্রতিফলিত হয়েছে-
দৃষ্টির সৃষ্ট পথ কাঁটাযুক্ত বৃক্ষে ছায়ানট হয়েছে
মরুর মতো শুকিয়ে গেলো আদর
আকাক্সক্ষার সিঁড়ি বেয়ে দেয়াল টপকাতে পারল না স্নেহ
পরম দুর্ভিক্ষে প্রহর কাটছে স্মৃতির।
গভীর অন্ধকারের সারাৎসারে তন্দ্রার আগমন ঘটলে
হিংস্র চিতার মতো ভয় ডেকে বলে-
এই বুঝি বাঁধন ছিঁড়ে গেলো
পাগলা ঘোড়ার মতো অনিয়ন্ত্রিত মমতা
চোখ বাঁধা ষাড়ের মতো হৃদয়
নদীর পারের মতো গভীর নীরবে ভাঙা শুরু হয়েছে
পরম্পরায় টানা অভ্যন্তরীণ বন্ধন।
অভিশাপ
হাফিজুর রহমান
অভিশাপ তোমাকে না দিলেও তুমি
আটকাতে পারবে না দীর্ঘশ্বাস;
দমাতে পারবে না পরবর্তী বংশধরের
বুড়োআঙুল দেখানো তিরস্কার,
নিয়তি রাখবে না - অসম্পূর্ণ হিসাব।
আসলেই কাউকে ঠকানো যায় না
নিজে না ঠকে - নষ্ট না করে ভবিষ্যত
হতে পারে না বাটপার, খুব সহজে।
তুষ্টি কেড়ে নিয়ে - পুষ্টিহীন মনের সুখ
ভাবনায়, বাস্তবে একাকিত্বকে ডাকা;
স্বস্তি যায় চলে নির্বাসনে, চিরতরে।
বড়ো ভয়ংকর হতে পারে দীর্ঘশ্বাস
হার মানতেও পারে হয়ত অভিশাপ।
সময়ঘটিকা: গ্রীষ্মের দুপুর
সুমন সাহা
গ্রীষ্মের দুপুরে খাঁ খাঁ শূন্যতার মুখ
গ্রাম থেকে শহর ঘুরে আড়ালে এলে,
সবুজের সরলতা খুঁজে পাওয়া গেলে
উত্তাপ ছড়িয়ে যায়; কাঁচাপাকা কথাও!
যদিও আমরা আগন্তুক এই শহরে
বেড়ানো শেষে ফেরত যাব
দূরপাল্লার আসন খালি বাসে
হৃদপিণ্ড
মোহাম্মদ আলীম-আল-রাজী
ধক ধক করে বাজে যে গান,
জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি প্রাণ,
সেই তো হৃদয়, ছন্দের নদী,
রক্তে লেখা জীবনের ধ্বনি।
চারটি কুঠুরি, ছায়ার মতন,
ভালোবাসা জমে, ঘৃণাও গহন।
একটা টান, একটাই পথ,
প্রতিটি ধাপে সময়ের রথ।
ভালোবাসা জমে লাল রক্তে,
হৃদয় ব’লে তারে, থাকে যে তক্তে।
কাঁদে সে চুপে, হাসে সে চিতে,
অভিমান রাখে নিঃশব্দ নীড়ে।
না থেমে চলে, না চায় বিশ্রাম,
একটি ভুলেই ঘটে ভীষণ ক্ষাম।
তবু সে চায় একটু মায়া,
ভালোবাসার একফোঁটা ছায়া।
একদিন কবিতারাও বুলেট ছুড়বে
নাজমুশ শাবাব
আমি আর কবিতা লিখি না,
লিখতে গেলে কলমে রক্ত জমে যায়।
আমি শুধু অপেক্ষা করি
একটা গর্জনের,
একটা ন্যায়ের বজ্রধ্বনির,
যা কাঁপিয়ে দেবে এই ছদ্মবেশী সভ্যতাকে।
আমার কাগজে আজকাল
শহীদের মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে
রক্তমাখা চোখ, ছিন্ন শরীর,
আরও এক নিঃশব্দ প্রশ্ন
“তোমার কলম কোথায় কবি?”
আমি চুপ থাকি, কারণ
আমি জানি
একদিন শব্দরা ফিরবে,
কিন্তু তখন তারা কবিতা হবে না
তারা হবে গর্জন।
একদিন কবিতারা থেমে থাকবে না আর
তারা জেগে উঠবে ধ্বংসের ধুলোমাটি থেকে।
তারা ছিঁড়ে ফেলবে অলঙ্কারিক ছন্দ,
ছুড়ে দেবে গুলির মতো শব্দ,
আঘাত হানবে জালিমের বুকেÍ
একদিন কবিতারাও বুলেট ছুড়বে।