আমি হতে চাচ্ছিলাম আমার

আবদুল হালীম খাঁ

আমি কতকাল যাবৎ হতে চাচ্ছি

শুধু আমার, শুধু আমার। অথচ আমার ঘরবাড়ি

এই যে আমার শরীরের রক্ত মাংস হাড়

রগরেশা রঙ কিছুই চালাতে পারছি না আমার ইচ্ছে মতো।

কী নিয় বড়াই করি আমি আমার।

আমার ঘুম জাগরণ

ভেতরে লুকিয়ে থাকা প্রাণমন

হৃদয় অন্তর

কেউ কথা মানে না আমার

কখন কে কোথায় যায় আসে

রাখতে পারি না খবর।

তাহলে তা হলে

কাকে নিয়ে বড়াই করি

আমার আমার আমার...।

অপেক্ষায় আছি

শশো ব্যাপারী

আমাকে শেষ বিদায় দিতে তুমি এসো

এই ভাবে দৌড়াতে দৌড়াতে।

যেভাবে দৌড়ে বেরুতে ঘর থেকে

উড়োজাহাজের শব্দে!

অবুঝ শিশুর মতো

তুমি এসো চোখ মুছতে মুছতে

পরীক্ষায় ফেইল করা শিক্ষার্থীর মতো।

তোমার অপেক্ষায় আছি!

ক্লান্ত চোখে মলিন কাপড়ে এসো

দাঁড়িও আমার পাশে

টিফিন পিরিয়ডের এলোচুল

হাওয়ায় উড়া ক্ষুধার্ত কিশোরীর মতো।

জীবন সুন্দর

মুহাম্মদ রফিক ইসলাম

পাখি চাইলে থেকে যেতে পারে

উড়েও যেতে পারে

বাধা নেই।

অধিকারের প্রশ্নে জোর খাটাতে গেলে

ভালোবাসা সম্পর্কিত সংকট জানাজানি হয়,

দাম্পত্য জীবনে ছাড়সংক্রান্ত ব্যাপারগুলোকে

উভয় দিকেই বসতে দিতে হয়,

মান-অভিমানগুলো মানিয়ে নিলেই জীবন সুন্দর।

একটি নিরীহ শব্দ সেদিন বারুদ হয়েছিল

মুহাম্মদ আবুল হুসাইন

নিরীহ শব্দ সব সময় যে নিরীহই থাকবে এমন কোন কথা নেই;

কখনও কখনও তা ভয়ঙ্কর বারুদ হয়ে ফুটতে পারে।

যেমন আবাবিল পাখির ঠোঁটে বয়ে আনা

সামান্য নুড়ি পাথরও পরিণত হয়েছিল

ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্রে!

আল্লাহ চাইলে এমনই হয়।

সামান্য একটি শব্দও যে টর্নেডো হতে পারে

জুলাইতে ঢাবি ক্যাম্পাস ও শাহবাগ সেদিন দেখেছিল।

যেন মুসার লাঠির আঘাতে উত্তাল সমুদ্রের ভিতরে খুলে যায় মুক্তির রাজপথৃ

‘তুমি কে’ ‘আমি কে’ বলে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো সেদিন

মিথ্যার কপাট ভেঙ্গে মুক্তির পথ দেখেছিল তারুণ্যের শক্তি...

অথচ এক সময় শব্দটি কত নিরীহই না ছিল!

এই শব্দটি দিয়ে কত সুকৌশলে মানুষকে ঠেলে দেয়া হত মৃত্যুমুখে;

যেমন মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়া হতো গ্লাডিয়েটরদের

আর মানুষের মৃত্যুদৃশ্য দেখার মধ্যেই

পৈশাচিক আনন্দ পেত দাজ্জালের নাতি পুতিরা...

বরষায়, ভরসায়

মীর্জা আবু হেনা কায়সার

শাপলা বলেছিলো-

কোন এক বরষায় আমাকে পাশে নেবে টেনে

সে কথা রাখেনি!

আমি কতো কতো বরষায়, তার ভরসায়

অপেক্ষায় কাটালাম।

শাপলা- কোন এক শীতে

চলে গেলো দূরে,

আমি এখনও বরষায় ভরসায় থাকি

জানি শাপলারা বরষাতেই ফোটে।

আগামীর দিনগুলো

আর. কে. শাব্বীর আহমদ

জাহেলি আঁধার কেটে আগামীর দিনগুলো

হোক আলোদৃপ্ত

কুরআনি বিধান মেনে সুজনের সুশাসনে

হোক পরিশুদ্ধ

জালিমের বিষদাঁত শোষণের হাতিয়ার ভেঙে

হোক বিধ্বস্ত

বঞ্চিতরা বেঁচে যাক পেয়ে যাক অধিকার

হোক পরিতৃপ্ত

আগামীর দিনগুলো হোক আলো ঝলমল

সুখী সমৃদ্ধ

জুলাই বিপ্লবের চেতনারা জেগে থাক

অনিরুদ্ধ

আধিপত্যবাদ রুখতে ছাত্র জনতার মিছিল

হোক দুর্ভেদ্য।

পাওয়া হয়নি

ফারহানা খান

কত কিছুই তো পাওয়া হয়নি জীবনে-

ছোটবেলায় লাল রঙের হাওয়াই মিঠাই,

মেলা থেকে কেনা ডুগডুগি,

ক্লাস টু এ প্রিয় বন্ধু,

ঈদে টকটকে লাল জামা আর

একটা ছোট সাইকেল।

পাওয়া হয়নি-

স্কুলে যেতে পকেটমানি,

নীল খামে প্রেমের চিঠি,

মায়ের শাড়ির গন্ধ,

মাধ্যমিকে লেটার,

দুপুরবেলা না ঘুমিয়ে ডাংগুলি খেলা আর

লাল নীল ঘুড়ি উড়ানো।

স্ট্রিট লাইটের আরো কতকাল পাইনি-

একমুঠো শিউলি, তাজা খেজুর রস,

হুতুমপেঁচার ডাক, ক্রিং ক্রিং আওয়াজে

বাবার সাইকেলে ফেরা,

সন্ধ্যায় জ্বলে উঠা হারিকেন,

গাছপাকা কদবেল আর

একটা ভালো চাকরি।

আজও খুঁজে পাইনি অনেক কিছু-

একজন মানুষ সাহসী ও শক্তিমান।

তাই ছাড়তে হয়েছে প্রিয় শহর, ঘর

আর অবিচ্ছেদ্য বর্তমান।

মতিভ্রম

বারী সুমন

তুমি নীল আকাশের ঘুড়ি হতে পারো

কিন্তু আকাশ ছুঁতে পারোনি

আমি আকাশ হতে চাইনি, কিন্তু

তোমার আকাশ ছোঁয়ার মতিভ্রম দেখে

কেবলই বিস্মিত হয়েছি।

উপসংহারে বলা যায় তুমি কেবল

আমার দুঃখটাই দেখেছো

তাইতো তুমি

প্রেমিকা হতে পারোনি।