এভাবেই এসেছিল চব্বিশের জুলাই
মোশাররফ হোসেন খান
অধিকার
- মিছিলে এসেছিলি কেন?
কথা বলতে পারছে না।
মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে ক্রমাগত।
- কি রে কথা বল্।
মিছিলে এসেছিলি কেন?
খুব কষ্ট করে কেবল উচ্চারণ করলো---
- অধিকার আদায়ের জন্য।
আরেকটি গুলির শব্দ।
- এই নে তোর অধিকার।
দশ হাত মাটির নিচে শুয়ে শুয়ে
অধিকারের আঙুল চোষ।
শান্তি
- আজ কতজন?
- দশজন।
- কি জন্য এসেছিল?
- শান্তির জন্য।
- এখন কোথায় আছে তারা?
- ভ্যানে।
দশজনের রক্তে প্লাবিত হয়ে গেছে চারপাশ।
হুকুম হলো---
- তাদের পুড়িয়ে ছাই করে শূন্যে ভাসিয়ে দাও।
বাতাসে ভাসতে ভাসতে ওরা শান্তির ঘরে পৌঁছে যাবে একসময়।
মূলত এভাবেই এসেছিল চব্বিশের
ছত্রিশে জুলাই...!
আহা মাইলস্টোন
এ কে আজাদ
[মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে]
কে এমন আকাশ ভেঙে ফেলে আমার মাথার ওপরে?
কে এমন সমস্ত পৃথিবীকে আগ্নেয়গিরির ভীষণ
আগুনে পুড়িয়ে অগ্নিশিখা বানিয়ে প্রক্ষেপণ
করে আমার বুকের ভেতরে?
আহা মাইলস্টোন! দেখো দেখো কিভাবে
আগুনের লেলিহান শিখা জ্বলে ওঠে
তোমার আঙিনাতলে?
কী নির্দয়ভাবে পুড়িয়ে দেয় তোমার বাগানের ফুলগুলো সব!
দেখো- কিভাবে তোমার অশ্রুসিক্ত নয়নের সামনে
জ্বলে-পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে স্বপ্নের চারাগাছগুলো!
দেখো কী নির্মমভাবে ভস্মীভূত হচ্ছে আমার
কলিজার টুকরার স্কুল ড্রেস, জুতো,
আইডি কার্ড ও নামের ব্যাচ!
না, ওগুলো জামা, জুতো কিংবা কোন নামের ব্যাচ নয়,
ঝলসে যাওয়া নিষ্পাপ ফুলগুলো প্রকৃতপক্ষে
কোন ফুল নয়, ওরা বাংলাদেশের একেকটি হৃদয়!
আহা মাইলস্টোন! কেমন করে ফুলের পরিবর্তে
আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতকে এমন বুকে ধরি?
ওরা তো কেবল ফুলের শিশু ছিল না,
ওরা ছিল একেকটি অশ্বত্থের চারাগাছ,
একদিন ওরাই দাঁড়িয়ে যেত বাংলাদেশের
সমস্ত মানচিত্র জুড়ে,
শত ঝড় ঝঞ্ঝা ও ভুমিধসে ওরাই তো রক্ষা করতো
বাংলাদেশের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল;
২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের মতো ওরাই তো শিসাঢালা প্রাচীর
হয়ে রুখে দিতো বাংলাদেশের ওপরে
ঝাঁপিয়ে পড়া আবার কোন আবরাহার হস্তিবাহিনী!
আহা মাইলস্টোন! কেমন করে সহ্য করি
এমন অপঘাতে হাজারও স্বপ্নের অপমৃত্যু?
এই দেখো বাংলার সবুজ জমিনে কেমন
জ্বলে উঠেছে নির্মম ভিসুভিয়াস?
এই দেখো আমার সমস্ত নয়ন জুড়ে আজ
কেবলই উথলে ওঠে বঙ্গোপসাগর!
জানি- আমাদের বুকের রক্তেই বারবার
রঞ্জিত হয়ে গড়ে উঠেছে গাঢ় সবুজের মাঝে
গাঢ় লাল বৃত্ত।
তবুও মেনে নিতে পারি না - বৃত্ত থেকে বেরিয়ে
সমস্ত সবুজ বদ্বীপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়া রক্তের দাগ!
আমার স্বপ্নের ডালপালাসহ পুড়ে যাওয়া
চারাগাছের ঘ্রাণ আমার যামিনী থেকে
ছিনিয়ে নেয় আয়েশী নিদ্রার চন্দ্র-কিরণ।
আহা মাইলস্টোন! কিভাবে নিঃশ্বাস নেবো
আমার কলিজা পোড়া ঘ্রাণে ভরা
আগামীকাল ভোরের বাতাসে!
আহা মাইলস্টোন! আহা মাইলস্টোন!
এই নগরী এখন
আহসান হাবিব বুলবুল
এই নগরী এখন গ্রাফিতির
রংতুলির আঁকিবুঁকি শব্দ কথা
নিঃশব্দে বলে যায় আমরা হারবো না।
পথিকের চোখ আটকে যায়
দেওয়ালে গাছে সড়কে
নৈশব্দ ধ্যানে বলে ওঠে তোমরা পেরেছো।
দুর্বৃত্তরা পালিয়েছে।
বাংলার দামাল ছেলেরা
আজ অতন্দ্র প্রহরী।
ছত্রিশ জুলাই’ রক্তের আখরে লেখা রবে চিরদিন।
অনেক মৃত্যুর ধ্বংসস্তূপে আবার
জেগে উঠবে জীবন,
হাসবে লাল-সবুজের বাংলাদেশ
অনিঃশেষ।।
রক্তাক্ত জুলাই
আমিন আফসারী
রক্তে ভেজা...
চব্বিশের জুলাই!
প্রজন্মের প্রতিবাদ...
ভবিষ্যতের ঘোর!
পিচঢালা রাস্তায় রক্তের বন্যা...
শব্দহীন চিৎকারে-
আবদ্ধ বাংলাদেশ!
চোখের মণিতে আগুন,
মুখে প্রতিবাদ!
বুক ভেঙে গড়ার
নতুন স্বপ্ন-স্বাদ!
সোনালী আলোর উদ্ভাসে আসবে মুক্তি!
এই প্রত্যাশায়-
পোক্ত ঐক্য,
মিছিলের যুক্তি!
স্বৈরাচারীর ইশারায় লাল হয়
আকাশের রঙ...
ঘসেটির বিষে
নীলাভ বাংলার সবুজ প্রান্তর!
হায়েনার সামনে বুক পেতে দেয়
আবু সাঈদ!
মুগ্ধ!
শ্রাবণ!
আরও নাম না জানা
হাজার হাজার শহীদ...
ইতিহাস রেখেছে চিহ্ন-
থেকে যাবে মহাকাল!
সন্তানহারা মায়ের চোখে
এখনো সেই শোক...
প্রতি নিঃশ্বাসে বয়ে চলে
লাল জুলাইয়ের ঢোক!
চব্বিশের রক্তাক্ত জুলাই...
ভুলিনি... ভুলবো না!
জুলাইকে ভুলাতে
আর কোনও রঙ
মানি না! মানবো না!
দূর হোক পরাজয়
মুহাম্মদ রেজাউল করিম
তবে ফিরে এসো এইখানে
এইখানে যুদ্ধ নেই
এইখানে মানুষ ভালোবাসে মানুষকে
এইখানে নেই বিষণœ কলরব
এইখানে সুখ
এইখানে শান্তি
এইখানে ছড়ায় না কেউ বিভ্রান্তি
এইখানে জেগে ওঠে প্রেমের তরঙ্গমালা
এইখানে জেগে ওঠে সুখ
এইখানে নেই বিষণœ সুখ
তবে এইখানে এসো
এইখানে ভালোবাসার স্বর্গ গড়ি।
ভুলে যাও হিংসা বিদ্বেষ
এসো তবে গড়ে তুলি প্রেমের লোকালয়
উড়ে যাক ডর-ভয়
দূর হোক পরাজয়॥
অভিমানের সিঁড়ি
শারমিন নাহার ঝর্ণা
আমার শহর জুড়ে যখন মেঘপুঞ্জের ঘনঘটা
জানি তোমার শহর জুড়ে তখন-
প্রখর রোদ্দুর ঢেউ খেলে,
দুজনার দুটি অচেনা শহরে
সীমান্ত হয়ে দাঁড়ায় অভিমানের সিঁড়ি।
তুমি সীমান্তপথ পাড়ি দিয়ে যখন
আমার শহরে করো পদার্পণ-
প্রচ- বৃষ্টিতে বিদ্যুৎ চমকায় বারবার,
ভেজা শহরে বয় শীতল সমীরণ,
উড়ে যায় মেঘপুঞ্জ রাঙিয়ে ধোঁয়াশার শহর॥