স্থিতি
মুসা আল হাফিজ
স্রোতে ভাসছে ভাঙা নৌকা, নিত্যদিনের গল্প।
তালগাছের নিচে প্রহরের মন নিয়ে খেলছে কবি
গাছের ছায়ারা লম্বা হচ্ছে আর-
খুলে যাচ্ছে সময়ের গোপন কপাট
কবি হাসে, নৌকায় চড়বে এখন
এক জগৎ থেকে আরেক জগতের পথ ।
কবি চড়লো নায়ে। মেঘ তখন আকাশে ভাসে।
সে নিচে জমে থাকা পলির মাঝে
এক অন্তহীন প্রশ্ন ফেলে দিলো
কী দিয়ে ছোবে সেই আকাশ, যেখানে সবাই ছিলো একদিন ?
কবি আর নায়ে চড়লো না। পলিতে থেমে গেলো।
সে কোনো জগতের নায়ে চড়বে না।
এখানে, এই পললের যাপনে ডেকে আনবে জগত!
আতরের গন্ধে কবিতা লিখি
মঈন মুরসালিন
মৃত্যু আজ পরেছে জাফরানি পাঞ্জাবি,
ঘাড়ে সুগন্ধি আতরের নরম চুম্বন।
হাঁটে সে শহরের ব্যস্ততম মোড়ে
তুমি তাকে চিনতে পারো না।
সে বলে- ‘বাঁচো, যতটা পারো,
তবে ভেতরটা ফাঁকা রেখো
আমিই পূর্ণ করব চুপিচুপি,
যেদিন তুমি হাসবে সবচেয়ে বেশি।’
তার পকেটে থাকে এক ফোঁটা নরম বিষাদ,
মেঘের নিচে রাখা পুরনো চিঠির মতো।
তবু সে প্রেমিক,
তার আতরে লুকায় বিষণ্নতার ছায়াচিত্র।
একদিন সে তোমার দরজায়
নামহীন এক ফুল নিয়ে দাঁড়াবে,
তুমি বলবে,
‘এসো, বসো আতরের গন্ধে আজ কবিতা লিখি।’
হৃদয়খন্ডের অগ্নিশিখা
ফজিলা ফয়েজ
গোলাপের পাপড়ির মতো দুগাল বেয়ে একেবেকে নামছে স্রোতস্বিনী।
দজলার ঢেউয়ের মতো রহস্যময়।
কবিদের উপমা কালো হরিণী চোখ কাম্পিয়ান সাগরের মতন অতলান্ত।
আমার অর্থহীন চাহনী আর ঠোঁটে চেপে ধরা চিৎকার শিথিল হয়ে যায়।
এক ঝলক হতাশা সমস্ত সত্তা নড়বড়ে করে দেয়।
মাংস পেশী জড়িত অন্তরস্থ হৃদয়ক্ষণ্ডে আছে অগ্নি
ঘোর অন্ধকারে অসংখ্য অগ্নিশিখা সহস্য প্রকারে ধুম উদিগরণ করে।
নিটোল সৌরভ
হারুন আল রাশিদ
যদি আগুনের কাছে হাত বাড়াও
তোমাকে দগ্ধ করবে
যদি গোলাপের কাছে হাত বাড়াও
সুরভি ঢেলে দিবে
স্বভাবের ভিন্নতায় নির্বাচিত করো বন্ধু
কেবল বাইরের চাকচিক্যতায় আহলাদি হয় কাপুরুষ
ফরজ সালাত সমাপ্তিতে
মুমিন করে রিজিকের তালাশ
মুনাফেকি অন্তরে দোল খায় রাতের নিস্তব্ধতা
ছোপ ছোপ অন্ধকার
যাকে বিমুগ্ধ করে মসজিদের আজান
সে চায় গোলাপের সান্নিধ্য
নিটোল সৌরভ
দুর্ভাগা মন উড়ায় হতাশায় ফানুস
অহেতুক কাকলিতে ফুরায় জিন্দেগানি
অস্তিত্ব বিলীন করে কুফরি আগুনে।
আত্মত্যাগের মহাকাব্য
সৌরভ দুর্জয়
হে শংসপ্তক! বিপ্লবী বীর,
তোমাদের প্রতিবাদী গ্রাফিতি আর
রক্তাক্ত আল্পনা মুছে ফেলতে দিবো না
কোনো মানুষখেকো জানোয়ারকে।
জ্বলন্ত মাশালের শিখা নিভাতে দিবো না
বেহায়া চাটুকার কোন শাসককে।
জুলাই’র রক্তমেশা বহমান স্রোত
থামাতে পারবে না দুষ্ট বজ্জাত বেনিয়া তালুকদার।
তোমাদের সীমাহীন আত্মত্যাগের
নামফলকের উপর বসতে পারবে না কোন
পরিযায়ী পঙ্গপালের দল।
হে আত্মত্যাগী! বিপ্লবী বীর
তোমাদের উত্তরসূরী অতন্দ্রপ্রহরীরা
রাত জেগে পাহারা দিবে প্রতিটি পরগণার ঘাটি
মানচিত্রের দাগ খতিয়ান কড়া ক্রান্তি তিল।
তোমাদের ত্যাগের নহর ভিজিয়ে দিয়েছে
ডাকিনী ডাইনীর অপবিত্র পায়ের ছাপ
পবিত্র করেছে পঙ্কিল পুকুরের বিষাক্ত দাঁত।
মায়ের বিলাপ বোনের বোবাকান্না হয়তো থামবে না
তবুও তোমাদের পবিত্র বাগানে পুস্পরাজির
কোনো দুর্ভিক্ষ পরিলক্ষিত হবে না।
নিশ্বাসের অণু পরমাণুতে নক্ষত্রের বিকিরণে
জুলাই বিপ্লবের গাঁথা ভাসতে থাকবে অনন্তকাল।
আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ওয়াসিম, ইয়ামিনদের আত্মত্যাগের রক্তাক্ত মহাকাব্য
জাতি পড়তে থাকবে ক্লান্তিহীন চিরদিন
যে কাব্যের চরণের চলনের পরিধি হবে সীমাহীন।