মা: স্বপ্নচিত্রের রক্ত-নির্ঝর

হাসান আলীম

জোহরের নামাজের আগে কিছুক্ষণ ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গিয়েছিলাম-

সেই পঞ্চাশ বছর আগেকার এক হৃদয়স্পর্শ ঘটনা

শ্রাবণ বৃষ্টির মতো সতেজ হয়ে উঠলো -

আমি মেট্রোরেল থেকে নেমেই আমার গায়ের বাড়িতে

এক্কেবারে রান্নাঘরের চুলোর পিঠে হাজির হলাম -

আমার মমতাময়ী মা’কে দেখলাম

হেঁসেলের পাশে পিড়িতে বসে তার শিশুকন্যাকে

পরমানন্দে দুধপান করাচ্ছেন আর

হেঁসেলের চুল্লীতে নানাবিধ ব্যঞ্জন রাঁধতে ব্যতিব্যস্ত--

গায়ের অবস্থাপন্ন রমণীরা যে ভাবে রান্নায় ব্যস্ত থাকেন

আর গল্প করেন ঠিক তেমনই!

আমার মমতাময়ী মরহুম মাতা তাঁর মরহুম শিশুকন্যাকে

কেমন জীবন্ত উচ্ছ্বাসে প্রতিপালন করছেন -

আহা আমার মৃত শিশু বোনকে কেমন উচ্ছল প্রাণময়তাময় দেখলাম,

সেখানে এক মওলানা ভাইকে দেখে আনন্দ চমকে কদমবুসি করলাম,

আর ওপাশে সালমা ভাবীকে দেখলাম খোশগল্পে মুগ্ধ মন্ময়।

আমার মা কখনো প্রকাশ্যে তাঁর সন্তান সন্ততিদের

দুগ্ধ পান করাতে অভ্যস্ত ছিলেন না, অথচ স্বপ্নেরা এমনই হয়ে থাকে।

এই রমজানে তোমাকে, শিশুবোন রাশিদাকে দেখবো তা ভাবতে পারেনি মা

কিন্তু তোমাকে দেখার একটা প্রবল আকাক্সক্ষা হৃদয়ে ভর করেছিল দীর্ঘদিন!

স্বপ্নের সমুদ্রে মেট্রোরেল থেকে নেমে এলাম রক্তকরবীর সৌগন্ধে!

ঈদের ভোরে

শওকত আলম

ঈদের ভোরে জোনাক ফোটে ফেরেস্তাতারা নামে,

ফুলের কলি পাপড়ি খোলে শিশির কুসুম জামে।

জ্যোৎস্না মাখা সূর্য জাগে মধুর সুবাস ছড়ায়,

কিচিরমিচির সোনার পাখি ছেপারা খান পড়ায়।

ফিরনি পায়েস নানান সাজে হাসনাহেনা খুশি,

মিষ্টি ঠোঁটে স্বর্গ অশেষ বকুল জবার হাসি।

উঠোন জোড়ে বাগবাগিচা ইষ্টি কুটুম দিদার,

শিশু কিশোর ময়মুরুব্বি সালাম জানায় সবার।

খোশমেজাজে কোলাকুলি রাজা প্রজা সমান,

ভেদভেদাভেদ নেইকো কাহার শপথ করে জবান।

খোশআমদেদে ঈদের বাণী মিলেমিশে আপন,

সাদা কালো উঁচুনিচু সবাই বিশ্ব স্বজন।

সুবেহ সাদিকের ধ্বনি

খুরশীদ আলম বাবু

থামছে না রাত্রির বর্ষণ। একাকী বাগানের ফুটন্ত গোলাপে এখনো

থামছে রাতের কলস্বর,

ক্রমশ হচ্ছে সব রহস্যময়ী নারী, আলাপে প্রলাপে কারা যেন পরস্পর

ঘনীভূত হয়ে সরে এলো কাছে, খুব কাছে রাস্তা নির্বাক নুলো ভিখারির মতো করি

স্মৃতিময় প্রেমের তীব্র বেদনার মতো সেই সব দিনগুলো এখনো যায়নি মরে।

অবাক হলাম। বিস্ময় জীবন অব্দি মনে হয় ঘুরে ফিরে

রাত্রেই রহস্যময়ী হয়ে ওঠে।

নিসর্গ নারী আর কবিতার শেষ উপমার জনশূন্যতার গভীরে

গোলাপের মতো ফোটে।

বর্ষণ শেষ। এখন ক্লান্ত রাত্রি। হঠাৎ স্মৃতি মন্দ্রিত সুরে

আস-সালাতু খায়রুম... মিনারের ডাক।

সুবেহ সাদিকের ধ্বনি সমস্ত স্বপ্ন, হ্যাঁ স্বপ্নকে দিলো তাড়িয়ে দূরে বহুদূরে।

আমার মতো সংসার সন্ন্যাসীও হলো নির্বাক।

কূলের আশায়

মজনু মিয়া

দুঃখ নদীর কূলে বসে কাটাই বারোমাস

সবাই হলো নদী পার, আমার সর্বনাশ!

জীবন ভরে সয়ে গেলাম অভাব নামের জ্বালা

সইলাম শত কষ্ট বুকে গলে দুঃখের মালা।

ভাঙ্গা তরী জল ওঠে তার নিরবধি ভাবি

কেমনে কবে দেবো পাড়ি মনের আপন দাবি।

সবাই যদি সবার কর্মে পার পেয়ে যায় নদী

আমি হলাম সেই অভাগা মুক্তি পেতাম যদি।

জানি আমি পাবো না কূল সারা জনম ভুলে

কাটিয়েছি জীবন আমার ঘুরে মায়াকুলে।

আশায় আমার জনম যাবে চোখের জলে ভেসে

দেখবো চেয়ে অন্যরা যায় পার হয়ে যে হেসে।

চেয়ে রবো রবের পানে দয়া যদি হয়

তবেই জীবন তরে যাবে হবে মধুময়।

অনন্তকাল দহন

আকিব শিকদার

ঝিঝির মতো ফিসফিসিয়ে বলছি কথা আমরা দুজন

নিজেকে এই গোপন রাখা আর কতোকাল?

ঃ অনন্তকাল।

বাঁশের শুকনো পাতার মতো ঘুরছি কেবল চরকী ভীষণ

আমাদের এই ঘুরে ঘুরে উড়ে বেড়ানো আর কতোকাল?

ঃ অনন্তকাল।

তপ্ত-খরায় নামবে কবে প্রথম বাদল, ভিজবে কানন

তোমার জন্য প্রতিক্ষীত থাকবো আমি আর কতোকাল?

ঃ অনন্তকাল।

তোমার হাসির বিজলীরেখা ঝলসে দিলো আমার ভুবন

এই যে আগুন দহন দেবে আর কতোকাল?

ঃ অনন্তকাল।

মুখোশ

আল মামুন রিটন

মুখোশ আছে বলেই নিশ্চিত বেঁচে আছি

বেচাকেনার বাজারে একটা মুখোশ

নেহাত ছোটখাট ব্যাপার না-

বিক্রি হতে গেলে পণ্যের মুখোশ

ক্রেতার মুখোশ সেও তো রাখি।

মুখোশে মুখ ঢেকে আমাকে লুকাই

উন্মোচন করি মধ্যস্বত্বভোগী যখন সাজি।

এই মুখোশ রেখেই পথ হাঁটি

দেখা হলে পরে যার সাথে তেমন

রোজ রোজ চলে মুখোশ পরিবর্তন।

তবুও মুখোশ আছে বলেই-

নিশ্চিন্তে আমাকেও দিই রোজ ফাঁকি

যে ফাঁকিতে লটকে থাকে জীবন এবং

জীবনের নিত্য নতুন কাঙ্ক্ষিত গ্যারান্টি।

মা

জসিম উদ্দিন মনছুরি

দেখেছি সুন্দর এ জগত তোমারই মমতায়

ছায়া ঘেরা মায়ায় বাঁধনে

তোমারি কোলে নিশ্চিন্ত মনে

দেখেছি সুখের স্বর্গ

অকূল পাথারেও স্বপ্নের ভুবনে।

তুমি স্বর্গ সুখের দিলে পয়গাম

শীত গ্রীষ্ম বর্ষায়

যত্নে রাখলে মনি মাণিক্যের মতো

নাহি লাগে যেন ধূলিকণা হিমশীতল বায়ু

মায়ার বাঁধনে হৃদয়ের মণিকোঠায়।

তুমি বিহনে পৃথিবী আঁধার

শত তারার মেলায় জ্যোতিহীন চন্দ্র যেন

আলোকরশ্মিহীন তপন

সভ্যতার কলঙ্ক মিশে

সহস্র তিমিরের ঘোর অমানিশায়।

তুমি সভ্যতা সংস্কৃতি সংস্কারের মাতৃভাষা

আমার মুখের আধো আধো বুলি

তুমি শেখালে জ্বলন্ত দহনে খইয়ের মতো

তুমি ভাষা বিজ্ঞানী

জগত ভরা ভাষার উল্লাসে।

তুমিও জানো না

মাহমুদা টুম্পা

ফুল জানে না

কতটা সুন্দর হয়ে ফোটে সে,

প্রজাপতি জানে না

কতটা সুন্দর তার রংবেরঙের পাখা।

কোকিলও জানে না

তার সুরের মহা মন্ত্রধ্বনি।

শামুকও জানে না

কতটা আশ্চর্য সমাধি গড়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

আর তুমিও জানো না

কতটা ভালবাসি তোমাকে।