ভালোবাসা বিচ্ছেদ
মাহমুদুল হাসান নিজামী
একজনে যদি করে জেদ-অভিমান
বেড়ে যায় ভালোবাসা চঞ্চলা প্রাণ
দুই জনই করে যদি অভিমান জেদ
তাইতে ভালোবাসা হবে বিচ্ছেদ।
শরতের নিঃসঙ্গতা
আসাদুজ্জামান খান মুকুল
শরতের আকাশ গভীর নীল,
তার স্বচ্ছতায় ভেসে ওঠে তোমার চোখ।
কাশফুল দোলে হাওয়ার তালে,
তার সাদা ঢেউ মনে করায় তোমার হাসি।
হঠাৎ দূরে বাঁশির সুর বাজে,
কে বাজাচ্ছে জানি না,
তবু মনে হয় সেই সুর
তোমার অনুপস্থিতির ভাষা।
সন্ধ্যা নামছে ধীরে,
শিউলির গন্ধে ভরে উঠছে চারপাশ,
আর আমি হাঁটছি একা,
প্রতিটি পা পড়ে ফাঁকা নীরবতায়।
চাঁদের জ্যোৎস্নায় স্নাত হয় প্রান্তর,
তোমার ছায়া এসে দাঁড়ায় পাশে,
কিছুক্ষণ থাকে, আবার মিলিয়ে যায়।
শরতের দীর্ঘ রাত
শুধু তোমার নামের প্রতিধ্বনিতে ভরে।
শূন্যতা
সুমন সাহা
যদি চলে যেতে চাওÑ
চলে যেও
তবে তোমার শূন্যতা
আর শূন্যতার স্মৃতি সময় দিবে,
পাশে থাকবে। তবুও;
আমি হয়তো কোন অপরাহ্ণে
নাম না জানা একটা পাখির
উড়াল দেখে মুগ্ধ হওয়া
শিখে যাব।
যেভাবে ছোট্ট শিশুরা
পাঠ্যবইয়ের ছবি দেখে দেখে শিখে
আর অবাক হয়।
একান্নবর্তী
জাকির আজাদ
আমাদের আর দেখা হবে না পরস্পর,
আমরা বড়ো লায়েক হয়ে গেছি জনে জনে
কেউ কারো অপেক্ষায় বিন্দু মুহূর্ত দাঁড়াবে না
রক্তের সর্ম্পক গৌণ হয়ে সবাই মৌন
কেউ কারো কাছে কৈফিয়ৎ চাইবো না
স্নেহের দাবি হাবিজাবি হয়ে হাস্যকর হয়ে ওঠে
মমতার বন্ধন ছিন্ন হয়ে সবাই এখন ভিন্ন।
বড়ো ছোটের ভেদবিভেদে সংকীর্শ পরিস্থিতি,
আপন স্বজনের কোনো মৃত্যু একত্রিত করতে পারেনি
কেউ কাউকে মানতে চাই না
কেউ কাউকে জানতে চাই না
বিপদে আপদে কাছে টানতে চাই না
দয়ামায়া দরদ বাৎসল্য আপত্য স্ন্নেহগুলো
পোশাক বদলের মতো বদল করে নিয়েছি
সর্বত্র বেজে ওঠে হীনম্মন্যতার বিউগল।
একই জননীর গর্ভে আমরা ঔরশজাত,
তবু গ্রহণ করেছি বিচ্ছিন্নতার স্থায়ী বন্দোবস্ত
আমাদের স্বার্থপরতা আকাশে ঠেকে গেছে
নিষ্ঠুরতা মাটি ভেদ করে পাতালের গভীরে চলে গেছে
ভার্চুয়াল জগত আমাদের ধারণ করতে অক্ষম
নির্দয়তার চরমে আমাদের অধিবাস
নির্লজ্জের মমতায় আমরা বিহ্বল
যার যার নিজস্বতায় আমরা গুটিয়ে আছি
নিজস্ব বলয়ে তৈরি করে নিয়েছি স্বার্থের সিষ্ট
আমরা পৃথিবী গ্রহের সবচেয়ে নির্মম দুর্লভ মানব।
দাঁড়িচিহ্ন
শারমিন নাহার ঝর্ণা
বাক্যের সমাপ্তিতে দাঁড়িচিহ্ন বসে,
জীবনের সমাপ্তি চিরন্তন মৃত্যু।
তবু জীবন বহমান উত্তাল সমুদ্রের মতো
কোথাও দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন নেই।
স্বার্থের মোহ দু’চোখের রেটিনায় পাল্লা দিয়ে ছুটছে
ঘোড়াদৌড় প্রতিযোগিতার মতো,
স্নেহ মায়া, ন্যায়-নীতি, মানবিক মূল্যবোধ
হারিয়ে মানুষ হচ্ছে যান্ত্রিক রোবট।
অশ্লীলতা, বর্বরতার, হিংস্রতার সমাপ্তিতে
প্রয়োজন প্রশান্তির যতিচিহ্ন- দাঁড়ি।
আমরা মানুষ ইচ্ছা করলে বর্বরতাকে
মানবতার শক্তিতে বদলাতে পারি।
অন্ধকার নির্জন কুটিরে
হাসান নাজমুল
লাশের মতো নিঃসঙ্গ আমি শুয়ে আছি নির্জন কুটিরে,
এখানে আপন কেউ নেই, একটি অপরিচিত দেশে
যেভাবে মানুষ রাতদিন খোঁজে পরিচিত কোনো মুখ
চেনাজানা অতীত সান্নিধ্য সেভাবে চলেছি খুঁজে একা;
পেয়েছি কেবল অন্ধকার, সীমাহীন শূন্যতার ছোঁয়া।
চারদিকে মানুষের ভিড় থইথই জলের মতন
জীবনের নীরব নদীতে সযত্নে চলছে বয়ে শুধু,
তাকাচ্ছে না কেউ কারো দিকে, যেন ফিকে অগণন মন!
পৃথিবীটা হয়ে গেছে গোর; কবরের মতো অন্ধকার
নির্জন কুটিরে আছি শুয়ে। হায়! মানুষ থেকেও নেই।
রাতের উপমা
বিচিত্র কুমার
রাত যত গভীর হয়, তত স্পষ্ট হয় দূরের তারা।
মানুষও তেমনি— যত দুঃখ গভীর হয়,
ততই জেগে ওঠে তার সত্যিকার শিক্ষা।
আমরা শিখি— সুখ নয়, দুঃখই সত্যিকারের শিক্ষক।
যেমন অন্ধকার না এলে সূর্যের আলোকে চিনতাম না।
মানুষের আসল শিক্ষা তাই—
অন্ধকারকে এড়িয়ে নয়,
বুকে টেনে নিয়েই আলো খুঁজে নিতে হয়।
দেখা হবে
আতাউর রহমান
ডাকবাক্সের অবহেলা
অথবা ডাকপিয়নের ভুল দরোজার ভূগোল
কিম্বা শেষরাতের মখমল স্বপ্ন যে-কেবল চাঁদ দেখায় আয়নায়
এই সবকিছুই মিথ্যে করে দিয়ে
একদিন দিন ফিরে এলে
পুরোনো দিন নিয়ে চোখে আবার দেখা হবে,
যেহেতু পৃথিবী গোল
যেহেতু সব জল এক হয়ে যায় শেষে
যেহেতু একই বাতাস পৃথিবীকে শীতল করে রাখে
কেননা ভালোবাসা নিউটনের মধ্যাকর্ষণ শক্তির মতো
যে কেবল নিজের জন্মের দিকেই ফিরে আসে।
পরোনো দিন চোখে নিয়ে আবার দেখা হবে
হাতের উঠোনে ফিরে আসবে আমাদের বিষাদমাখা রুমাল।
সময়ের প্রহরী
ইসমাঈল মুফিজী
তোমার পথে আমিও আসবো
দীর্ঘ হচ্ছে লাশের লড়ি
আমি তো ভাই না মরেই পাই
অপরিচিত মৃত্যুর স্বাদ;
কষ্টে কাশবো। তবু চাই না-
এতো তাড়াতাড়ি মরি।
কচ্ছপের মতো সাবধানী
খুব সন্তর্পণে রাখি পা
কদ্দনির কালো তাগায় টোল
গলায় তামার তাবিজ বাঁধি
বালা-মসিবতে দিনেই বসাই-
মুন্সি মামার মোমের মাহফিল
রাস্তার দু’পাশে গোরস্তান
দেখে দেখে ভীষণ কাঁদি।
সবই অকেজো, মৃত্যু কোপ
তলে যাওয়া সহজ ব্যাপার
বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সাথে
নিভে যায় ডিজিটাল ঘড়ি;
কিছু কিছু ঘড়ি আবার
ব্যাটারিবিহীন সূর্যের হার
সঠিক সময়ের প্রহরী।
অস্থিরতার প্রহর
এম সোলায়মান জয়
যেদিকে তাকাই; এক অজানা ঘূর্ণি
নিষ্প্রভ আলো, অস্থির বাতাস
মানুষের মুখে মুখে উদ্বেগের ছায়া
কেউ হাসছে, যে হাসিতে নেই হাসির রঙ
কেউ নিশ্চুপ, তবু নীরবতা চিৎকার করে ওঠে।
হৃদয়ের পথে পথে হর্ণ; অন্তরে ধ্বংসের ধ্বনি
সংবাদপত্রের ফ্রন্টপেজে অগণিত সংখ্যা
হারানোর কথা শুধু; পাওয়ার কথা নেই
ক্লান্ত সময় ছুটছে অনিশ্চিত শেষপ্রান্তরের দিকে।
ইচ্ছেরা দাঁড়িয়ে আছে জানালার ধারে,
বাইরে তাকালে শুধুই অস্পষ্ট শূন্যতা
কুয়াশার মতো দেখতে অস্থিরতার পর্দা
মন যেন হারিয়ে ফেলছে ধৈর্য, বিশ্বাস, স্বপ্ন
তবু অদম্য জীবন ছন্দহীন ছুটছে।
হতাশার অন্ধকারে আলো কোথায়?
চতুর্দিকে অস্থিরতার ঘনবসতি
তবুও হেঁটে চলি প্রত্যাশার ধুলো জমা হৃদয় নিয়ে।
তোমার জন্য লজ্জা
স্বপন আখন্দ
তুমি যখন সুখের প্রহর গুনছো দিবা-রাতি,
তখন গাজায় শত প্রাণের নিভছে জীবন বাতি ।
তোমার যখন রং তামাশায় কেটে মধুর লগ্ন
তখন জালিম মুসলমানের খুন ঝরাতে মগ্ন ।
তোমার জীবন ঈদের মতন মনে সুখের ভেলা,
তাদের জীবন দুর্বিষহ মৃত্যু মৃত্যু খেলা ।
তোমার দারুণ ঘুমটা ভাঙ্গে পাখির কলতানে,
তাদের ঘুমটা ভাঙ্গে হাজার বুলেট বোমার গানে ।
তোমার ঈমান খুবই ক্ষীণ, তোমার জন্য লজ্জা,
তুমি কভু পাবে নাকো, শাহাদাতের সজ্জা ।
তুমি থাকো দ্বীন-দুনিয়া মোহের পিছে পড়ে,
নীরব থাকার জবাব দিও ওইনা কাল হাশরে ।