এইসব উচ্চারিত হবে

জানে আলম

কতো কতো চোখে অশ্রু ঝরার পর

শতো শতো মুখে হাসি ফোটে।

চব্বিশের বিপ্লব তা বুঝিয়ে গেলো।

কতো কতো দেহ পঙ্গুত্ব বরণ করার পর একটি জাতি

বিকলাঙ্গতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়

চব্বিশের বিপ্লব তা বুঝিয়ে গেলো।

হে কবি,

তুমি কি জানো কতো প্রাণ স্তব্ধ হয়ে

তোমাকে শব্দ এনে দিয়েছে?

হে নেতা

তুমি কি জানো কতো রক্তক্ষরণের পর

ফুলে ফুলে তোমাকে বরণ করা হচ্ছে?

কতো কতো মা তার সন্তান হারানোর পর

একটি মায়ের সাথে তার সন্তানের সাক্ষাৎ হয়

চব্বিশের এই ইতিহাস যুগে যুগে পঠিত হবে।

গণমাধ্যমগুলো হয়তো নতুন কিছু খুঁজে নেবে

কিন্তু

কোকিলের কুহু কুহু কান্নার মতো

নরম রোদে ডালিমের শাখায় দোয়েলের শিসের মতো

এই সব উচ্চারিত হবে যুগে যুগে ব্যথিত মানুষের অন্তরে।

মৃত্যু-গান

হাসান নাজমুল

মাঝরাতে ভুল কোরে বেদনার খাতা খুলে

পড়ি না এখন আর কোনো কষ্টের কবিতা,

কষ্টের গানও আর শুনি না কখনো ভুলে

মাথার উপরে আছে বসে শত্রুর সবিতা;

বৃষ্টিহীন রুক্ষ দিনে কিংবা কোনো বৃষ্টিরাতে

লিখি না এখন আর কোনো কষ্ট-ক্লিষ্ট গল্প;

সুখের গল্পও আমি আর পাড়ি না প্রভাতে

এখন প্রত্যহ লিখি মৃত্যু-গান অল্প অল্প;

এখন লিখি না আমি কোনো প্রকৃষ্ট প্রবন্ধ;

জীবনের কাজে আজ নেই কোনো মনোযোগ,

আমি পারি না ভুলতে অতীতের সেই দ্বন্দ্ব

প্রেম-ভালোবাসা-ছন্দ কখনো করি না ভোগ;

এখন কেবলি ওঠে কেঁপে কেঁপে এই প্রাণ

ভয়াবহ কথা-সুরে শুধু লিখি মৃত্যু-গান।

কী উত্তর দিবে

মান্নান নূর

কী উত্তর দিবে?

যে তোমাকে বলেছিলো-

ফুটন্ত গোলাপের মতো সূর্যোদয়গুলো নষ্ট করো না

যে হাওড়-বিলে, নদী-সাগরে বাতাস হেলান দিয়ে প্রকৃতি গায় গান

তাদের মুমূর্ষু ও কারারুদ্ধ করে এ কীসের প্রতীক্ষা?

কী উত্তর দিবে?

যে তোমাকে বলেছিলো-

কান্নার চেয়ে শিশুর হাসিটাই ভালো লাগে

এ-ফুলগুলো আজ বিপন্ন পৃথিবীর আশ্রিত যাযাবর।

যে তোমাকে বলেছিলো-

চাঁদ ও আকাশকে করো পাঠ

সাথে সূর্যের তেজ ও উদ্দীপনাগুলোও কণ্ঠস্থ করো

তার বদলে দিলে কী কারুকার্য মণ্ডিত বন্ধ্যা মেঘের উপহার

কী উত্তর দিবে বলো?

তুমি যদি ভাবো-

তার সামনে তোমাকে যেতে হবে না

কিংবা যাবে না কোনো দিন অথবা প্রয়োজনই নেই

তবে সূর্যটাকে ঘুরিয়ে তোমার অধীন¯’ করো

আঙুলের ইশারায় করো চাঁদ দ্বি-খণ্ডিত

কিংবা একটা ভৌগলিক সীমারেখায় বেঁধে ফেলো পৃথিবীর বায়ু

হেঁটে যাও দেখি সাত সমুদ্র তেরো নদী!

কী উত্তর দিবে?

অথচ তার কাছে ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো গতন্তর নেই তোমার।

জাগ্রত হোক নজরুল

নূরুন্নাহার নীরু

ঝাঁকড়া চুলে বাবরী কাটা দ্রোহের কবি নজরুল,

বেঁচে ছিলেন সুরের মাঝে ফুটিয়ে গানের ফুল৷

ভেঙেছিলেন জাতির ঘুম স্বপ্নে কুসুম-কুল,

জাগিয়ে দিলেন সমাজ গাথা মিথ্যে যত ভুল৷

এই জাতি এই দেশ মাটি গড়লো নতুন ইতিহাস,

গানের সুরে রক্তজাগা নয়তো ছিল পরিহাস৷

বাকঝরা নজরুলে নেই কস্টেপ আঁটা ভাষা,

হারাবো কি স্বাধীনতা নবীন যত আশা?

কন্ঠে জাগুক গানের কলি সৃষ্টি সুখের উল্লাসে,

জাগ্রত হোক নজরুল আবার সমাজ গড়ার সোল্লাসে৷