অনন্ত পথের যাত্রাপথিক
এ কে আজাদ
দূরত্বের রশিতে বাঁধা সম্পর্কের জরিন ফিতা।
ওখানে পৃথিবী হেঁটে যায় মানুষের মতোই,
কেবল বেঁচে থাকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন,
ছাদ খোলা আকাশ থেকে নেমে আসে রোদ,
মানুষ মানুষ বলে ছেয়ে দেয় সব ধর্ম ও
জাতের বেড়াজাল।
মানবাত্মার কাছে কোন দেশ নেই,
কোন ধর্ম নেই, কোন জাতি নেই তার,
তার কণ্ঠে কেবলই একটাই উচ্চারণ -
মানুষ, আর মানুষ।
কে বলে সীমানার ওপারে ঝুলে আছে দূরত্ব?
না, কোথাও তো দূরত্ব নেই, কোথাও তো ছেদ নেই,
মাতৃত্বের কোন ভেদ নেই,
কেবলই মানুষ হয়ে মানুষের পাশে থাকা,
মানুষ হয়ে গেয়ে ওঠা মনুষ্যত্বের গান।
এভাবেই এগিয়ে যাক মানুষের পৃথিবী।
দেশ ভাগ হয়, পৃথিবী হয় খ-বিখ-,
কিন্তু মনুষ্যত্বের কোন ভাগ নেই,
বিবেকের দহলিজে ফুটে থাকা প্রতিটি ফুলের
চেহারা এবং বর্ণ হয় একই রকম।
মানুষের রক্তের কোন ভিন্নতা নেই,
ভিন্নতা নেই মমত্ববোধের।
মায়াবী পথ ধরে মানুষের হেঁটে যাওয়া কেবল
সীমাহীন পথের দিকে,
মানুষের কোন ভয় নেই, মনুষ্যত্বের কোন ক্ষয় নেই,
মানুষ মূলত অনন্তকালের পথে
নির্ভীক এক যাত্রাপথিক।
হারনামা
হাফিজুর রহমান
হেরে গেলে, রেগেমেগে গালিগালাজ করে !
ঠিক যতটা উত্তপ্ত হয়ে জ্বলছিলে
ফুঁসে উঠেছিলে - চরমভাবে অপমান করতে
গিলে খেয়ে ফেলতে চেয়েছিলে সম্মান।
গালিগালাজের প্রতিত্তোরও পেলে একসময়
অপেক্ষাকৃত বেশিই - শীতল স্বভাবের
দেয়া হলো সম্মান, মর্যাদা পেলে মানুষের;
আবারও দ্বিতীয়বারের মতো হেরে গেলে!
তৃতীয়বার হারতে না চাইলে চুপ করে থাকো
জিতেও যেতে পার - মন্দের ভালো হতে।
নইলে তোমার, ‘চরম বিপর্যয়ের হবে এই হার।’
জলের দ্রবণ
মিয়া ইব্রাহিম
জলের কোনো রঙ নেই
ইচ্ছে হলেই-
নিয়মের তোয়াক্কা না করে নদীগর্ভে
ভাসিয়ে দেয় সৌম্য জনপদ
বিস্তৃত নগরীর মায়া
আবার ভালোবাসায় পুষ্পিত করে
সবুজাভ পৃথিবী, প্রেমিকার খোঁপাবাঁধা চুল
ফসলের মাঠ ভরে যায় আবাদীর হাসিতে
জলই পৃথিবীর গহিন তৃষ্ণা মেটায়
চৈত্র কিংবা শুধু বৈশাখে নয়
যুগ যুগ অনন্তকাল;
জলের কী কখনো তৃষ্ণা পায়
মানুষ কিংবা অন্য প্রাণীকুলের মতো?
মানুষ রাখে না তার খোঁজ
অথচ
জলের দ্রবণেই লুকিয়ে থাকে
জলের সুখ-দুঃখ ভরা নিঃশব্দ দীর্ঘশ্বাস ।
হিরণখন্ড
আবুল খায়ের নাঈমুদ্দীন
এক টুকরো হিরণখন্ড তেমন
মৃত্তিকা যেমন জমে জমে পর্বত গড়ে
তেমনি জমেছিলো তোমার কবিতা
কতগুলো হারিয়ে ফেলেছো ডায়েরিসহ
কতগুলো যুগের আবর্তে হারিয়েছো মন থেকে
স্তম্ভের মতো দাঁড় করিয়েছি পান্ডুলিপি
বলেছিলে মাড়া দেয়ার মতো চষে বের করেছি
হয়তো তাই কবিতা শির উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে
ভেবেছিলাম নাম দেবো আলো আশা
পরে ভাবলাম নাম হোক ভালোবাসা
নাহ কোনটাই নয়, নাম হোক হিরণখন্ড
তোমার বইটি গুরুত্ব পাক হিরণখন্ডের মতো।
শূন্যের নীরবতা
আল মামুন রিটন
যে শূন্যতা নিজেকে চেনায়,
আমি সেই শূন্যের প্রতিচ্ছবি —
যেখানে আলো জন্ম নেবার আগেই
নীরবতার শব্দ ছিল,
যেখানে সময় নিজেকে ভাঁজ করে
এক বিন্দুতে স্থির হয়ে থাকে।
আমি সেই অদৃশ্য কম্পন,
যার বুক থেকে
মহাবিশ্বের প্রথম নিশ্বাস বেরিয়েছিল।
আমি সেই অন্ধকার,
যেখানে প্রতিটি তারা একদিন ঘুমিয়ে পড়বে,
আর প্রতিটি জীবন?
ফিরে যাবে তার আদিম উৎসে।
আমার ভেতরেই সব উত্তর,
শুরু ও শেষের সব প্রশ্নও আমিই-
আমি সৃষ্টির আগে থাকা এক নিস্তব্ধ প্রতীক্ষা,
আমি অনন্তের প্রতিধ্বনি
যে শূন্যতা নিজেকে চেনে,
সে-ই তো প্রিয়জন, সে-ই তো আমার প্রতিধ্বনি।
ভালো আছি
আনজানা ডালিয়া
মুখোমুখি হলেই একে অপরকে জিজ্ঞেস করে
কেমন আছো?
যেমনই থাকুক বলবে ভালো আছি,
আসলে কি ভালো আছে সবাই?
কারো মনে ঝড়ের তান্ডব চলছে,
তবু বলতে হয় ভালো আছি।
কারো নুন আনতে তেল ফুরোয়
চড়া বাজারে পকেট খালি,
তবু বলতে হয় ভালো আছি।
কারো জীবনটা তেজপাতা ভাজা ভাজা
কাউকে বলা যায়না,বলে লাভও নেই
তবু বলতে হয় ভালো আছি।