অভীক্ষা
নয়ন আহমেদ
অনুতাপ-দগ্ধ ক’টা হাহাকার আরক্তিম
হাসছে আজ ভোরে।
এখনই জানবে-জীবন কেমন।
তার জন্য আছে অপেক্ষমাণ করুণা-বিগলিত ক্ষমা।
এসব কি ভালোবাসার পূর্ণরূপ নয়?
ব্যাধিমুক্ত স্বতঃসিদ্ধ নয়?
এখনই দেখবে -সে বয়োজ্যেষ্ঠা একটা পাতার মতোন
বিবেচনা মেলে ধরছে সানন্দে।
বরণ করছে বর্ণালি প্রতীতি।
আমি এভাবেই শুরু করতে বলি।
আমি এভাবেই প্রস্তুতি নিতে বলি।
আজ তার দেখবো পরিবেশপরিচিতি।
আজ তার অমোঘ সান্ত্বনা পৌঁছে যাবে
সুসম্পন্না ইকোলোজি হয়ে।
আমি, তার জন্য প্রতীক স্বরূপ ডানহাত উপরে তুলেছি।
এবার আমি, জীবনকে কিছুটা বোধগম্য করবো।
পকেটের তরল
মুহাম্মদ রফিক ইসলাম
চায়ের সাথে কফি যায় না
তার সাথে আমিও
অসংগতির পথ ধরে হেঁটে চলা যেন
আমাদের সংসার যাপিত জীবনে
মনের অসুখ বিসুখে দাম্পত্য কলহ বাড়ে
দীর্ঘশ্বাসে নিঃসৃত হয় অসংযত ধোঁয়া
অথচ অভাবের ঘরে আবেগের স্থায়ী বসতি
কথার হজম-বদহজমে ভালোবাসা যেন
গলা বেয়ে উপচে ওঠা গ্যাসীয় বুদবুদ
অথবা সবাই জানে মানে না কেউ
প্রয়োজনের কাছে নিরর্থক পুঁথি শাস্ত্রের পাঠ
যেন যত্নে খচিত গচ্ছিত কাহিনী ও সংলাপ
বস্তুত সম্পর্কের মাপকাঠি পকেটের তরল।
সতর্কীকরণ
হাসান নাজমুল
যে-হাত তুলছ ক্রোধে অন্যের উপর,
চরম আক্রোশে বসে ঘুরাচ্ছ যে-লাঠি
অকস্মাৎ যদি আসে জীবনের ঝড়,
পায়ের তলায় থেকে সরে যাবে মাটি;
নির্নিমেষ ভেঙে যাবে সে-লাঠি সে-হাত,
দুমড়ে মুচড়ে যাবে সব কলকাঠি;
এ জীবন থাকবে না আর পরিপাটি
সমস্ত সঞ্চিত ঈর্ষা হবে ধূলিসাৎ;
যে-চোখ রাঙাচ্ছ রোষে সকাল-বিকাল,
অবিরাম প্রদর্শন করছ যে-জোর,
হঠাৎ কখনো যদি উল্টে যায় কাল
তোমারও একদিন কেটে যাবে ঘোর;
পুরোপুরি নষ্ট হবে সে-জোর সে-চোখ
কেবলি সইতে হবে সদ্যোজাত শোক।
তোমার নিখুঁত ছলনায়
আনোয়ার আল ফারুক
আগুন ফুলে উল্কি ছড়ায় সংগোপনে
চোখ পলকে বিরাণ করে হৃদয় ভূমি
নীরব তুষের আগুন ধ্বংস আয়োজনে
জ্বেলেপুড়ে ছারখার যজ্ঞ কর তুমি!
তোমার নিখুঁত ছলনায় সোনা হয় মাটি
সাবাশ সাবাশ অভিনয়ে তুমি খাঁটি !
অপেক্ষায় আছি
সৌরভ দুর্জয়
যে আকাশে রাতে শিশিরের মুক্তো ঝরতো
তারার সব বংশধর উঠতো ফুটে
সাদা জোছনার রাজহাঁস ডানা ঝাঁপটাতো সুরগঙ্গায়।
সেই আকাশে আজ উল্কাপিণ্ডের রক্ত পড়ে
এসিড বৃষ্টির উৎপাতের শিলা ঝরে
যুদ্ধ বিমান থেকে হিংস্র হুংকার আসে
যার প্রভাবে গাছের সবুজ পাতার ক্লোরোফিল
বিধবা কিংবা এতিম হয়ে ঝরে পড়ে
ফুলের পাপড়ির মায়াবী সৌন্দর্য শুকায় যায়
ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইয়েমেন, আরকান, কাশ্মীরের
শান্ত জমিনের নান্দনিক ভূমি কেঁপে উঠে
শিশুরা ভয়ে কাঁদে রাতের নীরবতা ভেঙে
শহীদের রক্তের বাণ ডেকে যায় শুকনো বালুচরে।
আশায় আছি ওই আকাশ থেকে আবার
শিশিরের মুক্তো ঝরবে
শ্রান্ত তারারা জেগে উঠবে নন্দনকাননে
জোছনারা সাঁতার কাটবে ছায়াপথের শান্ত জলে
গাছে গাছে সতেজ পাপড়ির ফুলেরা হাসবে
ক্লান্ত পাতায় গজায় উঠবে যুবতী ক্লোরোফিল
প্রশান্তির ঝর্ণা ঝরবে শোকের আল্পনা মুছে দিতে।
অপেক্ষায় আছি ওই আকশে কবে
শান্তির পতাকারা হাসাহাসি করবে
মানুষগুলো স্বাধীন ভাবে তাকাতে পারবে আকাশের পানে
নাগরিক অধিকারের সকল নির্যাস তারা ভোগ করবে আনমনে।
বৃক্ষের মতো জীবন
শারমিন নাহার ঝর্ণা
এই জীবনটা যেন বৃক্ষের মতো
কখনো বৈরী পবনে হেলেদুলে চলে,
আবার শীতল পবনের ঢেউ খেলে যায়।
শুকনো পাতার মতো মাঝে মাঝে
বিষাদগুলো ঝরে পড়ে মনের অজান্তে।
আবার কখনো সবুজ পাতার মতো সুখগুলো
সজীবতা ফিরে আনে জীবনের অর্ধ প্রান্তে।
মায়ার ছায়া দিয়ে আগলে রাখি নতুন প্রজন্মকে,
হঠাৎ করেই একদিন নিঃশব্দে হয় রদবদল।
এভাবেই এই ধারা অব্যাহত আছে এবং ছিল,
থাকবেই যুগে যুগে শুধু স্মৃতিচিহ্ন থেকে যায়।