ডানপিটে

শামীম শাহাবুদ্দীন

গাছের ডালে একটি শালিক একটানা যায় ডেকে

তারই পাশে টুনটুনি আর সাথে আছে কে কে?

ওই দেখা যায় বুলবুলিটা লেজ উঁচিয়ে নাচে

আজ পাখিদের হাট বসেছে কদম কেয়ার গাছে।

জানলা দিয়ে সেই পাখিদের গান শুনে রোজ তানি

কখনও বা ফুলের সাথে করে কানাকানি

আনমনে সে নদীর ধারে ঘুরতে যদি আসে

তাকে দেখে সোনালি রোদ মিটমিটিয়ে হাসে।

ধানের ক্ষেতের আলটি ধরে একটু গেলে বায়ে

দেখবে রাখাল বাঁশি বাজায় বিরাট বটের ছা’য়ে

বাঁশির সুরে দস্যি মেয়ের মন বসে না ঘরে

এক নিমিষেই হারায় রাখাল দূরের তেপান্তরে।

নদীর ধারে খোলা মাঠে গাঁয়ের কিশোর দল

খেলার ছলে সারাটিদিন করে কোলাহল

দিন কেটে যায় দুষ্টুমিতে সাহস ভরা প্রাণে

কোন পাখি কোন গাছে থাকে ভালো করেই জানে।

বকে কোথায় ডিম পেড়েছে কোন সে কাঁশের বনে

সব খবরই দুষ্টুগুলো জানে জনে জনে

কার গাছেতে আম পেকেছে কোন গাছেতে ডাব

ওরা নাকি জানে না তা পুরাই হাজী সাব!

ভাঁজা মাছটি উল্টে খেতে ওদের নাকি ভয়

সব ক’টা যে বদের হাড্ডি এটা সুনিশ্চয়।

সকাল

সরকার জাহিদুল ইসলাম

সূর্যি মামা উঠি উঠি

আকাশ হল লাল

কিচির মিচির পাখির গানে

হল যে সকাল।

ফুলের বনে ফুলেরা সব

ওই উঠেছে জেগে

মৌমাছিটার ঘুম ভেঙেছে

সেই সুবাসটা লেগে।

নামাজ শেষে কুরআন পড়ে

সুরে সুরে দাদু

মনটা আহা ভরে ওঠে

কন্ঠে এমন জাদু।

হিরণ মাঝি তড়িঘড়ি

নাও ছেড়েছে ঘাটে

বাজার সদাই আনতে বাবা,

চলে গেছেন হাটে।

লাঙল জোয়াল কাঁধে নিয়ে

মাঠে ছোটেন চাষি

রাখাল ছেলে গরু চড়ায়

হাতে বাঁশের বাঁশি।

ঘটি বাটি ধুয়ে-মুছে

মা তুলেছে রান্না

পেঁয়াজ বাটার ঝাজ লেগে যে

আমার চোখে কান্না।

অচিনপুরে রাজা

জাকির সেতু

পরীর দেশে রাজার বেশে

ছুটছে খোকা ঘোড়ায় চড়ে

জাদুর ঘোড়া হাওয়ায় মিশে

দিচ্ছে পাড়ি ভেসে ভেসে

কলমি বনের তেপান্তরে

যাবে খোকা অচিনপুরে ।

খোকার সাথে প্রজাপতি

বলবে কথা কানে কানে

নীল পরীরা ছুটছে যেন

খোকার সাথে আকাশ পানে।

বর্ষা ফুলের সুবাস

শাহানাজ শিউলী

আয়রে কদম, দোলনচাপা

মন মাতানো সৌরভে,

লাল মেখেছে কৃষ্ণচূড়া

বর্ষা ঋতুর গৌরবে।

মাধবী তার মায়ার জালে

রাখছে বেঁধে টগর ফুল,

মেঘবালিকা পরছে দেখো

গন্ধরাজের কানের দুল।

দোপাটিটা মেলছে পরাগ

টাপুর টুপুর বৃষ্টিতে,

বেলি ফুলে সুবাস ছড়ায়

নতুন দিনের সৃষ্টিতে।

জুঁই, বকুল আর শাপলা নাচে

বৃষ্টিধারার ছন্দতে,

বিশ্ব নিখিল পুলকিত

বর্ষাফুলের গন্ধতে।

জুলাই মানে

জাকারিয়া আল হোসাইন

জুলাই মানে দু’হাত তুলে

শপথ নেয়ার ক্ষণ

শক্ত হাতে শত্রু রুখে

স্বদেশ গড়ার পণ।

জুলাই মানে বুকের তাজা

রক্ত দেয়ার মাস

জালিমদের জানান দেয়া

আমরা নই কো দাস।

জুলাই মানে বজ্র কণ্ঠে

শক্ত প্রতিবাদ

দেশ বাঁচাতে আমরা সবাই

বিদ্রোহী নিনাদ।

জুলাই মানে স্বৈরশাসন

মুক্ত হওয়ার দিন

হাজার হাজার শহিদ গাজীর

স্মৃতি অমলিন।

জুলাই মানে আঁধার নিপাত

স্বাধীন পরিবেশ

জুলাই মানে রক্তে পাওয়া

নতুন বাংলাদেশ।

বর্ষার সময়

কনক কুমার প্রামানিক

পদ্মফুলে শোভা বাড়ায়

বিলের কাজল জল,

সাদা হাঁসের জলের খেলা

করে যে টলমল।

কচু পাতায় বৃষ্টি ফোঁটা

যেন মুক্তোবিন্দু,

কদম কেয়ায় দোলা লাগে

মেঘের দেশে ইন্দু।

কলাপাতা মাথায় দিয়ে

রাখালী যায় মাঠে

হঠাৎ করেই বিজলী চমক

আগুন ধরে কাঠে।

হীরক

মাকসুদা খানম ফাতিমা

চলতে গিয়ে ফুটপাতে হোঁচট খেলো সাকি ,

আরে! ওটা কি দেখলাম হিরক খন্ড নাকি ?

হিরক পাবার লোভে সে হুমড়ি খেলো যেই,

হিরক তো দূরের কথা, বালির কণাও নেই ।

হীরক সে খোঁজে , বন-বাদাড়ে কিংবা ফুটপাতে ,

মিছে হীরক খুঁজে আর লাভ কি হবে তাতে !

হীরক না খুঁজে খুঁজবো সত্য ন্যায়ের দিশা ,

যেটা হবে শান্তি সুখের, শক্ত প্রাচীর সিসা।

আমার বাংলাদেশে

গাজী আবু হানিফ

কোন দেশেতে সূর্য ওঠে

ফুলের গন্ধ সুখে,

হাজার তারা পূর্ণিমাচাঁদ

আগলে রাখে বুকে।

বটের তলে মেঠোপথে

রাখাল বাজায় বাঁশি,

পুকুর দীঘির জলে ডাকে

কতো হাঁসাহাঁসি।

খুব সকালে পাখি ডাকে

সূর্য উঠে হেসে,

মেঘবালিকা ভেসে চলে

ঐ যে পাহাড় কেশে।

হাজার নদী জাল ছড়িয়ে

চলে ঢেউয়ে ভেসে,

দেখতে পাবে ঘুরতে এলে

আমার বাংলাদেশে।