যে যাদু ফিরে আসেনি
তমসুর হোসেন
জনতার সাথে রণে গিয়ে ফিরে আসেনি যে যাদু
তার পরিচয় তোমরা জানো না সে ছিল লড়াকু জানবাজ
বুলেটের হুংকারেও শিথিল করেনি পথচলা।
সে চলেছে আঁধারের অতল থেকে
বিজয়ের সূর্য উদ্ধার করার অভিপ্রায়ে।
তোমাদের ডানে অথবা বামে সে ছিল
হয়তো মিছিলের সামান্য পেছনে
না হয় সুমুখের অগ্নিঝরা উত্তাল সারিতে
তাক করার কামানের অগ্নিগর্ভ নলা বরাবর।
বৈষম্যের দাউদাউ আগুনে জ্বলন্ত স্বপ্নগুলো
অযুত শক্তি হয়ে তাকে টেনে নিয়েছিলো
শহীদি মৃত্যুর কোলে।
শরাহত পক্ষিছানার মতো গুলির বৃষ্টিতে
সে লুটিয়ে পড়েছিলো পিচকালো রাজপথে।
তোমরা তাকে একটুও চিনে নিতে পারোনি
ক্ষুধা দৈন্য বঞ্চনার অনলে পুড়ে
সে এত নাজুক হয়ে গেছিলো যে নজরে পড়েনি কারো।
মৃত্যুকে সে মোটেই পরোয়া করেনি। তার বেঁচে থাকা
ছিল মৃত্যুর চেয়েও দারুণ মর্মান্তিক! তাই উপড়ে ফেলতে গেছে
বৈষম্যের ঘৃণ্য অস্তিত্বকে।
হয়তো তার লাশ পথেই পড়ে ছিল অনাদরে...
চিনতে পাওনি তাকে তোমরা। কারণ চোখে পড়বার মতো
দেহাবয়ব তার ছিল না।
হে ইতিহাস, আর কতো
জাকির আজাদ
হে ইতিহাস,
আর কতো রক্ত চাও টাটকা উষ্ণ রক্ত
আর কতো শুনতে চাও মানুষের আর্তনাদ
আর কতো দেখতে চাও ক্ষত বিক্ষত মানুষের দেহাবায়ব
আর কতো ধ¦ংসস্তূপের তলে চাপা পড়া থেতলানো শিশু।
আর কতো শুনতে চাও গগনবিদারী চিৎকার,
আর কতো জানতে চাও মানুষ্য বিনাশের তথ্যলাপ
আর কতো অভিজ্ঞ হতে চাও বোমায় বোমায় ধংস্বযজ্ঞ
আর কতো মানতে চাও নির্বিচারই সঠিক বিচার
আর কতো লাশের সারি অবলোকন করতে চাও।
হে ইতিহাস,
আর কতো কান্নার জল চাও
আর কতো নিষ্ঠুরতার শিক্ষায় শিক্ষিত ক্সু হতে চাও
আর কতো ক্ষুধার্ত হাহাকার রোদন শ্রবণে রাখতে চাও
আর কতো মা হারানো বেদনাক্ত মুখ দেখতে চাও।
আর কতো পিতার নিখোঁজ সংবাদের খবর জানতে চাও,
আর কতো দুধের শিশুদের কংকাল দৃকপাত করতে চাও
আর কতো গণকবর দৃষ্টিতে রাখতে চাও
আর কতো মানুষের হত্যাযজ্ঞে সামিল হতো চাও
আর কতো বীভৎস্য ছবি সংগ্রহে নিতে চাও।
হে ইতিহাস,
আর কতো সাক্ষী হয়ে থাকতে চাও বিচারহীন গণহত্যার
আর কতো সপক্ষে বিবরণ লিখবে জঘণ্য অত্যাচারের
আর কতো বঞ্চনার কথা লিখবে জন্মভূমি হারা নাগরিকের
আর কতো ন্যায্য পাওয়ার শূন্যতার হিসার কষবে।
আর কতো স্মরণে রাখবে সুগভীর অতীত,
আর কতো টেনে আনবে নিকটে প্রাক ভবিষ্যৎ
আর কতো প্রোজ্জ্বলিত করবে ধ্বংসমান বিধৃত বর্তমান
আর কতো তাপিত সময়ের সঙ্গী হয়ে থাকতে চাও
আর কতো মুক্তিকামী মানুষের বিভীষিকা রূপ আকঁতে চাও
আর কতো প্রশ্নের জিজ্ঞাসা হয়ে অনঢ় হতে চাও।
ধ্বংসস্তূপ
ইমন হোসেন
জেগেছে আবার ঘৃণ্য হায়না, জেগেছে ইহুদি খুনি,
গগনে-পবনে ভুবন কাঁপানো আহাজারি তাই শুনি!
রক্তের ঢলে ভেসে যায় ফের মৃত্যুমুখর গাজা,
মাতে উল্লাসে হিংস্র ঘাতক,পৃষ্ঠপোষক রাজা।
জাতিসংঘের কর্তারা সব কুলুপ এঁটেছে মুখে,
মানবতা আজ বড় লজ্জিত পরাজয়ে মরে ধুঁকে।
ফিলিস্তিনের সহস্র ফুল ঝরে যায় লহমায়,
ধরণীরে দেয় লাখো অভিশাপ সীমাহীন ঘেন্নায়।
ব্যথিত হিয়ায় করে চিৎকার স্বজন হারানো শিশু,
গুনছে প্রহর আসবে কখন শান্তির বাহক, যিশু!
বিধ্বস্ত এ উপত্যকায় নিভেছে সকল বাতি,
যেন কখনোই আসবে না ভোর, কাটবেনা এই রাতি।
ভেঙে চুরমার বাড়িঘর আর হাসপাতালের ছাদ,
বিদ্যালয়ের আঙিনায় জ্বলে দাবানল উন্মাদ।
বুলেট-বোমায় হলো ছারখার জীবনের আয়োজন,
নির্বাক চোখে চেয়ে দেখে শুধু চলে যায় প্রিয়জন।
মৃত্যুতে ওরা লিখে যায় জানি মুক্তির পয়গাম,
একটিও প্রাণ বেঁচে থাকে যদি,থামবে না সংগ্রাম!
ব্যথিত হিয়ায় আগ্নেয়গিরি জ্বলে লেলিহান ক্রোধে,
এই রক্তের শোধ নেবে ওরা রক্তিম প্রতিশোধে।
পার হয়ে ওরা রক্তের নদী পোঁছাবে বিজয় তটে,
মুক্তির ফুল আঁকবেই জানি ধ্বংসস্তূপের পটে!
সরীসৃপ
শারমিন নাহার ঝর্ণা
পৃথিবীর শরীর জুড়ে ভয়াবহ ক্রোধ
বাতাসে বিষাক্ত স্রোতের ঢেউ,
মানুষের শরীর ছিঁড়ে মানুষ খুঁজছে সুখ
সম্প্রীতি মায়া মমতায় কাঁপে না আজ বুক।
স্বার্থের মোহ দুচোখের রেটিনায়,
সরলতার মলাট জড়িয়ে চলছে ভয়াবহ হিংস্রতা
মানুষের মনুষ্যত্ব জলীয় বাষ্প হয়ে উড়ছে
মানুষ পঙ্গপালের মতো স্বার্থের পিছে ছুটছে।
মানুষের শরীর ছিঁড়ে ছিঁড়ে সমাধান খুঁজছে
রক্তের স্রোতে ভেসে নিজ নিজ স্বার্থ লুটছে।
জাহিলিয়াতের প্রতিচ্ছবি উঠছে ফুটে,
যে যার মতো মুখোশ পরে যাচ্ছে ছুটে।
পুরোনো ক্যালেন্ডার
আনজানা ডালিয়া
মানুষকে তুমি উইপোকা, ছারপোকা ভাবো।
নিজেকে অসাধারণ করে রেখেছো,
সবার চোখে একটা আবরণ টেনে দিয়েছো,
সত্যিই কি অসাধারণ?
গড়িয়ে একদিন পথের ধুলোয় মিশে যাবে।
খুব মামুলি হয়ে ল্যাম্পপোস্টে হেলান দিয়ে চঞ্চল শহর দেখবে।
পুরোনো ক্যালেন্ডার হবে একদিন
ভাবনাটা বদলাবে হয়তো সেদিন।
কাগজওয়ালার কাছে বেঁচে দিবো পুরো তুমিকে।