হাওড়া জংসনের একটি পাগল
সায়ীদ আবুবকর
হাওড়া জংসনের ডাস্টবিন থেকে খাদ্য তুলে
যে-লোকটা নেভাচ্ছে উন্মত্ত পেটের আগুন,
তার দুটি কিডনির দাম কত? কত দাম
তার দুটি উজ্জ্বল চোখের?
তল্পিতল্পা নিয়ে ছুটছে মানুষ লেন থেকে লেনে,
খুঁজতেছে ট্রেন, যাবে তারা দূর কোনো স্বপ্নের শহরে;
পেট ভরা, গোপন পকেটও ভরা তাদের নতুন চকচকে নোটে;
ছোটে তারা সভ্যতার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সমস্ত জীবন।
শুধু এ-লোকটা বারবার ফিরে আসে স্টেশনের
ডাস্টবিনগুলোর নিকট, খোঁজে খাদ্য শকুনের মতো চোখে,
লোকে দেখলো কি দেখলো না, কিবা আসে যায় তার!
পেটের আগুন নিভে গেলে বের হয়ে আসে রাস্তায়। রাস্তার
মোড়ে বসে পিটপিট করে তাকায় সে ব্যস্ত সভ্যতার দিকে।
নিয়ন আলোয় হাওড়া জংসনের গায়ে সাঁটা
রঙিন পোস্টারগুলো দেখে হেসে ওঠে সে হঠাৎ
প্রচণ্ড আওয়াজে। সে-আওয়াজ চিত্তহীন সভ্যতার
তীব্র শোরগোলের সাথে ধাক্কা খেয়ে দুমড়ে মুচড়ে
হয়ে যায় স্থি’র, যেন এঁদো পুকুরের পচা পানি।
তোমাতে বিলীন
মেজু আহমেদ খান
অশরীরি হরফের নিঃশ্বাসে
অশ্রু জলে ভেসে ওঠেছিলো কথাগুলো
কী সে কথা-
আমার বলিতে কিছু নেই;
না সুখ না দুঃখ
না কবিতা না উপমা।
জলের কোন নিজস্ব রঙ নেই তাই
হরফের কোন লৌকিকতা ছিলো না তাতে।
অশ্রুজলে ভেসে ওঠেছিলো কথাগুলো
অশরীরি হরফের নিঃশ্বাসে।
হৃদয়ের আগাগোড়া
জীবনের কোন খোয়ানো কালপত্রেও
আমি বা আমার শব্দের কোন উপস্থিতি পাইনি খোঁজে।
সব কিছু দেখি তোমাতে বিলীন,
প্রেম-ভালোবাসা, আশা-দূরাশা, মান-সম্মান
পাওয়া না পাওয়ার খেলা, মাঠ ধুলোময়
সবি তোমাতে বিলীন।
এখন সময়
মুন্সি বোরহান মাহমুদ
এখন সময় হাতে হাত রেখে, সম্মুখে এগিয়ে চলার
সময় এখন চোখে চোখ রেখে পষ্ট বয়ান বলার।।
যে কথা সত্য, চির শাশ্বত দ্বীপ্রহরের দ্যুতি
যে পথের বাঁকে অযুত-লক্ষ, প্রাণের আত্মাহুতি
রক্তিম ঐ আফতাবে দ্যাখো তরুণ আলোকছটা
তীর্যক সেই রশ্মির তেজে, কেটে যায় ঘনঘটা
পঙ্গপালের পাখনায় চড়ে পালিয়েছে আজাজিল
আজাদির ক্ষেতে নবীন কিশান চাষ করো তাজা দিল।
এখন সময় সিনা টান করে ঊর্ধ্বে নিশান ধরার
সময় এখন সীসাগালা এক দৃঢ় বুনিয়াদ গড়ার।।
আজো দেখি ঐ পিশাচের চোখে জ্বলে আগুন
দুপাটি দাঁতের দেয়ালে শুকনো জমাট খুন
ভ্লাদ ড্রাকুলার ডেরায় বেঁধেছে জলসাঘর
কাশিম বাজার কুটিরে ঘষেটি, মীর জাফর
আঁধার গর্তে লুকিয়েছে যতো কালো শেয়াল
উঁকি মারে ফের সুযোগের খোঁজে, খুব খেয়াল।
এখন সময় চিরুনী পাখায় শাহীন চোখে ওড়ার
সময় এখন ফুল্কি ছড়ানো বখতিয়ারের ঘোড়ার।।
দিকে দিকে আজ শুনি নবিনের কুচকাওয়াজ
বিজয় পতাকা বুকে বেঁধে ঐ তোলে আওয়াজ
জাগরণে আজ জেগেছে আশার নতুন দ্বীপ
ভেঙে চুরমার সব মিথ্যার যতো জরিপ
অটল হৃদয়ে অবিচল যতো স্বপ্নবাজ
গড়বে ন্যায়ের, নৈতিকতার নয়ালী রাজ।
এখন সময় কাঁধে কাঁধ রেখে শপথের বীজ বোনার
সময় এখন কদমে কদম, আহাদের ডাক শোনার।।
মনুষ্যত্ব বোধ
নাজীর হুসাইন খান
যখন খেয়ায় বসে নদী পার হচ্ছিলাম
তখন ঠিক সন্ধ্যার লগনে,
মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসে কানে ,
আর কাকেরা কা কা করে উড়ে যায় গন্তব্যের দিকে
হয়তো পরম শান্তিতে ঘুমাবে সারা রাত ।
আফসোস আমি যদি কাক হতাম !
তাহলে আমার মাঝে থাকতো না -
হিংসা অহংকার মারামারি - হানাহানি কিংবা শত্রুতা ,
সত্যি বলতে কি কাকেরা কাকেরা কখনোই হিংসা করে না ।
অথচ শ্রেষ্ঠ জাতি মানুষ
আমরা আমাদের কৃত্যকর্মের জন্য হারিয়ে ফেলি
মানুষের মনুষ্যত্ব বোধ ।