আমাদের জালালি কবুতরগুলো
জানে আলম
কিছু হাত আমাদের উপর কর্তৃত্ব করতো।
সে সব হাত এখন আবু লাহাবের হাতের মতো ধ্বংস হয়ে গেছে।
কিছু কিছু পা আমাদের ফুটবল মনে করতো
সে সব পায়ে এখন পচন ধরেছে
পঁচা শামুকে কেটে।
কিছু কিছু চোখ আমাদের রক্তচক্ষু দেখাতো রোজ।
সে সব চোখে এখন ঠুলি। যেন কলুর বলদ।
কিছু কিছু মুখ কথার করাতে
আমাদের সুস্হতার সবুজের বিনাশ ঘটাতো।
সে সব মুখে এখন ঘা।
কিছু কিছু পিশাচ মিলে আমাদের মানচিত্রকে
এক প্রেতগহ্বরে আবদ্ধ করে রেখেছিল।
আমরা তা থেকে আমাদের মানচিত্রকে মুক্ত করলাম।
আমরা এখন মুক্ত হাওয়ায়।
দেখো দেখো কি সুন্দর উড়ছে আমাদের জালালি কবুতরগুলো!
আমাদের জালালি কবুতরগুলোর
জালালিয়ত ও জামালিয়ত দেখে বিশ্ব এখন বিস্মিত।
ঘুমে জাগা জীবন
ফজিলা ফয়েজ
আমরা কি বেঁচে আছি?
নাকি টিকে আছি?
নাকি শুধু অভ্যস্ত এক প্রজাতির মতো
ঘুমাতে শিখে গেছি জেগে থেকেও?
মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্যের মতো চলে যাচ্ছি অজানা কোন গন্তব্যের দিকে।
জীবনের নামে চলতে থাকা এক দৌড় প্রতিযোগিতায়
আমরা ভুলে যাই- কেন বাঁচি? কাদের জন্য?
অন্ধকার ঘনিয়ে আসে সূর্যটা যেন ক্লান্ত, আলো ফুরিয়ে ফেলে।
নীল আকাশে নেই পাখির ডানা,
গাছের পাতায় নেই সুর,
মাটিতে ফাটল, সাগর গিলে খাচ্ছে কূল।
ঘড়ির কাঁটায় সময় চলে, কিন্তু সময় কি আর আগের মতো?
এই পৃথিবী কি বাসযোগ্য?
নাকি শুধু ধ্বংসের আগে শেষ এক নাট্যমঞ্চ?
শূন্যতার নিঃশব্দ আগুনে চুপচাপ পুড়ে যায় কত স্বপ্ন।
পুরনো বইয়ের পাতায় হঠাৎ কবিতা কেঁদে ওঠে,
কোনো অচেনা রাস্তায় বাতাসে মিলিয়ে যায় এক চেনা গন্ধ-
সেখানে হয়তো জীবন আজও লুকিয়ে আছে,
আমাদের ঘুম ভাঙার অপেক্ষায়।
পথ দেখাও হে আরশের মালিক
মুহাম্মদ রফিক ইসলাম
গাছগুলোকে পথচারী ভেবে
সড়কের সাইডে গিয়ে দাঁড়াই,
ছায়াগুলোকে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর মনে হয়
চোখের ভেতর যেন ঢলে পড়ে বিকেলের সূর্য।
ব্যস্ত সড়কে নেমে আসে গোধূলি
হুইসেল বাজে,
স্টেশন ছেড়ে চলে যায় দূরপাল্লার পরিবহন।
একে একে বন্ধ হয়ে আসে টিকিটের কাউন্টার,
ছায়ার ভেতর উধাও হয়ে যায় অচিন কেরানি!
বাধা পড়ে গেছি তবে ভবের ঘাটে?
নিরুপায় হয়ে অবেলায় কাঁদি...
পথ দেখাও হে আরশের মালিক!
আয়না গমন
ওলি মুন্সী
আমার কথা বলা আয়নাটি থেকে
দূরে সরে এসেছি অনেক
মিষ্ট শাসনের লিস্ট নেই বললেই চলে
নাকে হাত দেওয়ার সময়
আয়নাটির চোখ বড় হয়ে যেত
আমি নিমজ্জিত হয়ে আয়নাটিকে জড়িয়ে
চুমু খেতে খেতে
অনেকটা শহরমুখী হয়ে গেছি।
এখন কাগজের ইলেস্ট্রেশন আর শপিংয়ের ডিসপ্লেতে
খুঁজি হারানো আয়না গমন
কই কিছুই নেই
কেবল লিফটের আয়নায় দেখি
থুতনিতে জড়িয়ে আছে কয়েকটি শফেদ চুল।
মানুষের নদী
বিচিত্র কুমার
মানুষ নদীর মতো-
একই জলে কখনো শান্ত, কখনো উত্তাল।
প্রতিটি বাঁক শেখায়-
যেখানে ভেসে যাই, সেখানেই আমাদের সীমা।
জীবনের আসল শিক্ষা হলো-
বাঁক বদলাতে শিখো,
কিন্তু স্রোতকে লড়াইয়ের মতো গ্রহণ করো না।
যেমন নদী শেষ পর্যন্ত সমুদ্রের বুকেই মিশে যায়,
কিন্তু পথে হাজারো শিলাকে বয়ে নিয়ে যায়।