ঐহিক

নয়ন আহমেদ

এই যে কথা ও অভ্যাস কুলায় তুলে ঝাড়ছো—

ধানকাটার প্রতিশব্দে-

প্রতিনিয়ত ঘরে নিয়ে যাচ্ছো অনেক চিনিযুক্ত তামাশা,

নিচ্ছো প্রণয়ের পানসুপারি

আর ঘরেফেরা মানুষের মতো কিছু ফিসফাস

চুপচাপ রূপকথা

বর্ষাকালীন নদীর উচ্চাঙ্গ ঢেউ

কিছু গৃহমুখী বায়ুপ্রবাহ

কিছু সকাতর আবেগ

ভোরপ্রত্যাশী রোদ

আর ছোটো মেয়েটির চিরুনির রূপকল্পে সামান্য কয়েকটা বিকেল-

এসবই তোমার কলরবমুখর ইহকাল।

জেনে রাখো, এটাই পৃথিবী

অনেক ধন্যবাদের মতো এই ফুল ফোটে।

হতাশার ছায়া

মোহাম্মদ আলীম-আল-রাজী

রাতের নিঃশব্দে কাঁদে নিঃসঙ্গ মন।

স্বপ্নগুলো ভাঙে, ছড়িয়ে পড়ে জনম-জন।

বাতাসে হারায় সব রঙিন আশা।

ঢেউয়ের মতো ঘেঁষে আসে ব্যথার ভাষা।

প্রতিটি দিন যেন খেলে দুঃখের খেলা।

হৃদয় ক্লান্ত, দম বন্ধ, চলে নিঃশেষের বেলা।

হাসির রং মুছে যায় নীরব আঁধারে।

নিঃশ্বাস ভরা দুঃখ বাজে হৃদয়ের তারে।

তবু মন বলে, “হাল ছাড়ো না, ওগো।”

অন্ধকার যতই গভীর, রোদ উঠবে আবার।

কোথাও কিছু বাকি নেই

সাদিয়া আনজুম

আদৌ কি আমাদের সব শেষ?

কোথাও কিছু বাকি নেই?

কোন কথপোকথন?

কোন নিরব আলাপন?

শেষবারের মতো তোমাকে দেখা?

অশ্রুসিক্ত চোখে ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া?

কথার কাটাকুটিতে ভুলগুলো শুধরে নেওয়া?

আবারো মায়ায় পড়ে কিছুপথ থেমে যাওয়া?

সত্যিই কি আর কিছু অবশেষ নেই?

তুমি কি আমায় খোঁজো না আর?

যদি সামনে যেয়ে দাঁড়াই আবার,

তুমি কি মুখ ফিরিয়ে পিছু হাঁটবে?

ফিরে তাকাবে না একবার?

ভুলে যাবে অপ্রয়োজনীয় ভেবে?

যদি একবার সেদিন থমকে যাও,

আমার কাছে জানতেও না চাও,

তবুও সেদিন অপ্রকাশিত ভাষাগুলো জানবে।

তোমাকে বলবো সব কিছু,

যা বাকি রয়ে গিয়েছিলো।

প্রচ্ছদ ও ভিতরের পৃষ্ঠা

মিঠুন দত্ত

এক কলম লিখবার ক্ষমতা না থাকলেও

মুছবার জন্য অনেকেই পাগল।

ক্ষমতা, টাকা ও মূর্খতার মিশ্রণের

পাঁচ-ছয় লিটার তরল

বড় বিষাক্ত অমিয় প্রসাদ।

কিছু অসুখ প্রকৃত রোগের চেয়েও ভয়ংকর;

অস্ত্রোপচার চলে না।

ওয়ারেন্টিও চলে না, সরাসরি জীবন গ্যারান্টি।

আদর্শিক জ্বরের কোন থার্মোমিটার নেই

যেন একরোখা সংস্কৃতি চর্চা।

কাক এখন ডিম দুধ খায়

অথচ কাকের প্রিয় ছিল মাকাল ফল।

প্রেম নাই, প্রেম কোথায়; প্রেম লেবাসে,

পরকীয়ায় আসক্ত!

ডায়ালাইসিস হচ্ছে রক্ত,

ভক্তের কারখানা নেই অথচ প্রোডাকশন হচ্ছে,

আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের সুযোগে।

লালসা

শামীম খান যুবরাজ

আধেক জীবন পার করেও

কাটে না লোভের নেশা!

আরও চাই-

অর্থবিত্ত; বিছানার সুখ

মায়ামুখের হাসি

জীবনের অলিন্দে সুখের দোলা

গোছালো আঙিনা

আবেগের প্রশ্রয়।

শত পাওয়ার মাঝেও

না পাওয়ার ব্যথায় কুঁকড়ে মরি

হায়রে লোভের জিন্দেগি!

কবরের মাটিতেই মিটবে

অবিরাম তৃষ্ণা।

গাজার পথে পথে

আল মামুন রিটন

আমরা তবুও বেঁচে আছি,

গোলাবারুদ আর পেটে ইট বেঁধে,

সভ্যতার, মানবতার ফেরিওয়ালাদের সামনে।

তোমাদের যত গোলাবারুদ আছে, ছুড়ে দাও,

আর চিৎকার করো যত পারো,

আমরা শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকব।

মৃত্যুর ওপারেও, গাজার পথে পথে।

পৃথিবী দেখুক সোফায় বসে এই তামাশা,

কীভাবে টোপ ফেলে মারতে হয়!

বুক ফুলিয়ে কীভাবে বলতে হয়—

‘আমরাই সভ্যতার হাফপ্যান্ট পরা সভ্যতা,

আমরাই মানবতার ফেরিওয়ালা।’