ইফতারি
তাজ ইসলাম
একটা লোভকে এখানে বসিয়ে রেখেছি।
যথেচ্ছাচারকে
পিঠমোড়া করে বেঁধে রেখে
হিংসা জিঘাংসাকে জবাই করতে শান দিচ্ছি
তওবার ছুরি।
আর আযানের আগে
চোখের আড়ালের চোখকে কান্নার জলে
ডুবিয়ে বলছি
হে রব আমাকে ত্বাকওয়াবান করো।
ক্ষুধা ও তৃষ্ণা কাতর চোখ তাকিয়ে আছে
সুলভ আহার ও পানীয়ের দিকে।
সবর আদেশ পালনের জিকিরে ধ্যানমগ্ন ।
বৈধ স্পর্শগুলো পরস্পর ঢেকে রেখেছি
সংযমের আঁচলে।
সামনে থরে থরে সাজানো পৃথিবী
আমরা তখন পরকালের হিসাবের ভয়ে ভিত।
হুকুম না হলে আমরা কিচ্ছু স্পর্শ করব না।
আমরা এখন ইফতার মজলিসে বসে আছি
দুনিয়ার সব রোজাদার
নিজ নিজ জলসায়।
লাবণ্য চাঁদ তবু ঝুলে থাকে
মান্নান নূর
আকাশ থেকে ছেকে নিচ্ছে লাবণ্য চাঁদ
পাতার আড়াল থেকে কেঁদে ওঠে কাদার বালিশ
আছিয়ারা মন ভালোর জন্য চিঠি লিখে
আঙুল প্রজাপতি হয়-লাবণ্য চাঁদ ঝুলে থাকে তবু
আকাশের কপালে টিপ হয়ে-মন ভালো হওয়া
চিঠির উত্তর আর আসে না-আসে না-
লাবণ্য চাঁদ তবু ঝুলে থাকে।
কবিতার বিষয়াবলি
সাজ্জাদ সাদিক
অন্তর্নিহিত নৈমিত্তিক বেদন,
নৈঃশব্দ্যে যা প্রতিবাদ করে হৃদ প্রকোষ্ঠসমূহে
তা-ই আমার কবিতা।
যা আমি শ্রোতা সম্মুখে পাঠ করে শুনাতে পারি না
লেখনীর পিছুটানে কেবল থেমে যাই, তা-ই।
তা-ই আমি ভাষান্তর করি, নিগূঢ় এই মনোভাষা
কবিতার ছন্দময়তায় ।
প্রতিবাদে-বিক্ষোভে তোমরা যে স্লোগান দাও
মিছিলে মিছিলে প্ল্যাকার্ড উঁচাও
তা-ই আমার কবিতা।
মিছিলের উত্তাল পথ থেকে অলংকার ওঠে আসে
যা তোমাদের দীপ্ত কণ্ঠে উচ্চারিত হয়, তা-ই।
তা-ই আমি সংকলন করি, দ্রোহের রোজনামচা
ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায়।
স্টেশনের প্লাটফর্মে রাতজাগা যে দুঃখগুলো,
ঝরা ফুলগুলো অকালে অনাদরে পড়ে থাকে
তা-ই আমার কবিতা।
তৃষ্ণার্ত। অনাহারী। ভাসমান। জীর্ণ কাপড় ।
যা আমার মনের দেয়ালে ব্যবচ্ছেদ আঁকে,তা-ই।
তা-ই আমি ধারণ করি ব্যথিত বুকে, ডায়রিতে,
পাণ্ডুলিপির নকশিকাঁথায় ।
নিসর্গের চিরচেনা চিরহরিৎ যে অবিনশ্বর রূপ
জ্যোৎস্নার রুপালি পর্দায় চোখ মেলিলেই ভাসে
তা-ই আমার কবিতা।
কৃষ্ণচূড়া। ডুমুর। পর্বত। দেবদারু। সমুদ্র। পাখি।
যা আমার মাতৃভূমিকে মহিমান্বিত করেছে, তা-ই।
তা-ই আমি রূপান্তর করি, প্রকৃতির অপার নিবেদন
পাঠকের বোধগম্য ভাষায়।
এক টুকরো অগ্নিরাশিতে
ফজিলা ফয়েজ
পৃথিবীর ভয়ংকর রূপ তোমার চোখেই দেখছি
বাকরুদ্ধ হয়েছি, চক্ষুতারা বিবর্ণ হয়েছে।
গগনে মেঘের আমেজ নেই
অকস্মাৎ হৃদয়কম্পন, বজ্র ধ্বনি,
বালুকণাতে আলোর ঝিলিক সঞ্চার হল
আকাশ ফেটে ছাই চাপা আগুনের মত।
মনের আনন্দে পা বাড়িয়ে হাঁটতে থাকি প্রান্তরেণু জগতের বুকে।
আধা নিভু জীবন প্রদীপ টলমল করে ভাগ্যের রেখাচিত্তে।
সুখের বুক ফুঁড়ে চিরন্তর কান্নার ফোয়ারা
এক টুকরো অগ্নিরাশিতে ফিরে পাই নতুন জীবন।
ঘুম
মুহাম্মদ রেজাউল করিম
ঘুম আসে ধেয়ে
চোখ বুজে বহুদূর বলো আকাশে ঘন মেঘ
ঝড়ের আভাস
কীভাবে আর সামনে যাই বলো
প্রচণ্ড শীতের হাওয়া
শরীর কাঁপে থরথর
তবে কীভাবে আর সামনে যাই বলো।
হে প্রভু
তবে অলৌকিক মদদ দাও
দাও অদম্য সাহস
পথ চলি তোমার ঠিকানায়
বেহেশতের গল্পে মাতাল হোক আকাশ বাতাস॥
নির্বোধ
মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন
নির্বোধ ঘাতক কখনো জানে না বিপ্লবীর মৃত্যু নেই।
বিডিআর বিদ্রোহে সেনা হত্যা,
শাপলা চত্বর ম্যাসাকার করেও ঘাতকের চোখে ঘুম নেই।
মিথ্যা অপবাদে ফাঁসির দড়িতে যারা দিয়েছে প্রাণ,
কোটি কোটি তরুণ তাদেরই তরে গাইছে জয়গান।
নির্বোধ ঘাতক ছাড়ল না তবু কুরআনের পাখিটারে,
জেলের প্রকোষ্ঠে বন্দি করে ধুঁকে ধুঁকে মারে।
তবুও ভয়ে ঘুমায় না ঘাতক, অবিরাম খুনের নেশা,
শিশু মারে, মারে গৃহিণী ছাত্র-জনতা
খুন হয়ে যায় তার পেশা।
একটাই মারি একটাই সরে শুনে বুকে কাঁপন ধরে ঘাতকের,
নিষ্ঠুর ঘাতক আকাশ থেকে করে গুলি হিসাব করে লাশের।
তবুও ডরে না বিপ্লবীরা বুক পেতে দেয় বুলেটের তরে,
নির্বোধ ঘাতক পালিয়ে গিয়েও খুনের হিসাব করে।