আমার অক্ষমতায়
আ. শ. ম. বাবর আলী
তোমাকে দুঃখ দেবো না ভাবি,
অথচ দুঃখরা কেমন করে যেন
বাসা বাঁধে
তোমার বসতি ঘরে।
নিজকে অপরাধী ভাবি
তোমার দুঃখ তাড়াতে পারি না বলে।
তোমাকে কষ্ট দেবো না ভাবি,
অথচ কষ্টের পাথর পাহাড়
যখন তোমার বুকের সুউচ্চ
আকাশটাকে
স্পর্শ করে,
ভীষণ অসহায় ভাবি আমি নিজকে
তোমার সে কষ্টের পাহাড়কে আমি
গুঁড়িয়ে দিতে পারি না বলে।
তাই নীরবে সয়ে যাই আমি
আমার অক্ষমতা নিয়ে তোমার
অসংখ্য অভিযোগ।
চাঁদ ও মোমবাতি
নবী হোসেন নবীন
মেঘে ঢাকা চাঁদ দেখে মোমবাতি বলে
অন্ধকারে আলো দেই আমি নিজে জ্বলে।
অতিশয় অকৃতজ্ঞ এ মানব জাতি
আমাকেই বলে কিনা তুচ্ছ মোমবাতি।
যারে আলো করে দান কৃপা করে রবি
তার মুখে দেখে তারা প্রেয়সীর ছবি।
বায়ু যবে মেঘ ঠেলে নিয়ে যায় দূরে
চাঁদ ফের আলো দেয় এ মেদিনিপুরে।
বায়ুর আঘাতে নিভে ক্ষুদ্র মোমবাতি
চাঁদের আলোতে হাসে ফের কালো রাতি।
মানবের মাঝে আছে হেন ক্ষুদ্রমনা
উপকার করে যদি কভু এককণা।
কথায় কথায় শুধু গেয়ে সেই গান
কথার কালিতে কৃতি করে দেয় ম্লান।
পুষ্পের ভাষা
শারমিন নাহার ঝর্ণা
পুষ্পের ভাষা বোঝে ক’জন
পুষ্প কি বলতে চায়?
সবাই তার সুবাস নিতেই
ছিঁড়তে ব্যাকুল হয়।
নীল প্রজাপতি চুপি চুপি
এসে ভাবের কথা কয়।
পুষ্পের ভাষা বুঝতে হলে বুঝি সমীরণ হতে হয়?
হাওয়ায় হাওয়ায় দুলে দেখো কত যে কথা কয়।
সেই আলাপন শুনতে
বনের পাখি কান পেতে রয়।
ভ্রমর এসে গুনগুনিয়ে পুষ্পের কানে
প্রণয়ের কথা কয়।
পুষ্পের ভাষা আসলে
কেউ কি বুঝতে চায়?
অভিমানে তাইতো সে
নিজেই ঝরে যায়।
পুষ্পের খোঁজে আসে না তো দরদী দুটি চোখ,
প্রতীক্ষায় পুষ্পের হৃদে জাগে গভীর শোক।
ভাগ
আহসান হাবিব বুলবুল
সেই ছোটবেলা থেকেই দেখছি-ভাগাভাগি।
আলপথ জমি ভাগ করে রেখেছে,
কখনো আল ঠেলাঠেলি।
পাড়া-মহল্লায় ভাগ
তুচ্ছ কারণে দলাদলি।
বড় হয়ে দেখলাম, বাপ-চাচাদের ভাগাভাগি ;
কখনো নৈঃশব্দে আনন্দে
কখনো ছন্দপতন।
দেখলাম-
চিন্তার জগতেও ভাগ।
ডান-বাম পক্ষ-বিপক্ষ সাদা-কালো
উঁচু-নিচু জাত-পাত।
বৃক্ষরাজির মধ্যে তো ভাগ দেখি না,
পশুপাখির মধ্যেও কোনো বিরোধ নেই,
কত ভিন্ন প্রজাতি এক বনে বাস করে।
সমুদ্রের দুটি স্রোতধারা পাশাপাশি বয়ে যায়,
সেখানে তো শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয় না।
শুধু আমরা মানুষেরা প্রকৃত মানুষ হয়ে
উঠতে পারি না।
অনির্বাণ আশা
মোর্শেদা মৌ
সম্বৃত পথ পেরিয়ে...
মনে জেগেছে অনির্বাণ আশা,
তোমাকে আজও শোনাতে চাই
হৃদয়ের পৌরাণিক কালজয়ী ভাষা।
আমার আকাশে দীপ্তিমান
অসংখ্য নক্ষত্রের কণ্ঠধ্বনি,
আন্দোলিত করে থামিয়ে দেয়
কষ্টের রণধ্বনি।
ভালোবাসার সেতারে-
এখনো বন্দী তুমি,
নতুন করে সুর সাজাই
বেখেয়ালি তোমায় যদি
এতটুকুও ছুঁতে পারি।
স্রোতে ভাসছে হৃদয়
বিপুল চন্দ্র রায়
স্রোতে ভাসছে হৃদয় আমার,
কূলভাঙা এক নদীর ধারে।
জানছি না তার গন্তব্য কী,
ভেসে যাচ্ছি তেপান্তরে।
হাজারো ঢেউয়ের দোলায় দুলে,
ভেঙেছে বাঁধ স্মৃতির কূলে;
যন্ত্রণা আর ভালোবাসা
সবই আজ সেই স্রোতে ভাসে।
অজানা বাঁকে, অচেনা গন্তব্যে,
ভেসে চলেছি আমি কার বা আহ্বানে!
কূলের ঠিকানা নাই বা পেলাম, তবুও
শ্যাওলা ধরা স্মৃতি যত ভেসে যাক জলস্রোতে।
পড়ে নিও
মোঃ শরিফুল ইসলাম
জানি না, তুমি কে
কখনো দেখেছি কিনা তাও জানি না
আবার কখনো দেখা হবে কিনা তাও অজানা।
তবে বেঁচে থাকলে তোমাকে নিয়ে-
একসাথে নিজেদের জীবন গুছাবো।
আর যদি ওপারের যাত্রী যাই-হয়ে
তাহলে তোমার জীবন তুমি নিও গুছিয়ে।
বেঁচে থাকার ইচ্ছা আমারো আছে
তবে হয়তো সময় নেই, আমার হাতে।
বেঁচে থাকলে শুরু হবে একসাথে পথচলা
আর বেঁচে না থাকলে ভেবে নিও,
এটা ছিল নিয়তির খেলা।...
খোলা চিঠি উড়িয়ে দিলাম, মনের হরষে
খোলা আকাশে, মুক্ত বাতাসে;
তুমি পড়ে নিও মুচকি হেসে!