ব্যর্থতাগুলো মোহর হলে
মুজতাহিদ ফারুকী
ব্যর্থতার দায় জমে মূল্যবান মোহর হয়েছে
মোহরের বিনিময়ে কিনে নিই দীর্ঘশ্বাস সোনালী রূপালী
নিধুয়া পাথারে শুধু এতটুকু নিজের সঞ্চয়।
সঞ্চয় ভাঙিয়ে অসময়ে, কেউ যা জানে না,
কিনে ফেলি ঘেমো দ্বিপ্রহর, ঘুমহীন শঙ্খে পোরা রাত,
একাকী হাঁটার কালো পিছল আকাশ
কিনে ফেলি চশমার ঘোলা কাচে দুলে ওঠা মধুর আড়াল
বৃষ্টির প্রথম জলে উদ্গত পম্পেই, আলেক্সান্দ্রিয়ার ধূলো থেকে
যে ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে, দৃষ্টির দূরবীনে কিনে ফেলি তারও প্রত্নপ্রাণ।
তোমাকে একান্তে বলি, আমাকে ভেবো না দুঃখী, দুঃস্থ, হতমান
ইদানীং পরিধেয় বিষয়ে রুচি কিছুটা পাল্টেছে,
এইসব নিজস্ব রাত, নিরালম্ব হাঁটাপথ, কুড়মুড়ে তারার বিষাদ
এখন আমার খুব প্রিয় পরিচ্ছদ
স্যুট টাই, শেরোয়ানি তুলে রেখে বেছে নিই
এ আমার অধুনার পোশাক বিলাস
জনারণ্যে হেঁটে যাই বুকটান, নগরীর যেন সেলিব্রিটি
হঠাৎ দাঁড়াই কোনও রাস্তার মোড়ে তর্জনী উঁচিয়ে সটান
নৃত্যপর ত্রিভঙ্গ মুরারি;
তারিয়ে তারিয়ে চাখি নতুন গেলাসে লাল মদের উল্লাস
মানুষের কৌতূহলী চোখ।
ভেবো না সুজন, এখনও পাগল নই, ভুগছি না ঘোর ডিপ্রেশনে-
এই তো সেদিন মনোবিদ মোহিত কামাল
সব শুনে বললেন,
মানসিক স্বাস্থ্যে কোনও জটিলতা নেই
একটা বয়সে এসে রুচি শুধু নয়, বদলায় দেখার ভঙ্গিও।
আমি দেখি,
কপোতের ডানার আশ্বাস ভেঙে ভেঙে পড়ে
বেদনার রক্ত পুঁজে, নয়নাভিরাম শ্বেত তুষারের ঘামে।
আমি হেরে হেরে জিতে যাই
আবুল খায়ের নাঈমুদ্দীন
আমার খুব ভালো লাগে যখন অনুভব করি
আমি হেরে যাচ্ছি হেরে যাচ্ছি কত সুবচন
কত সুন্দর ঘটনার বর্ণন
কত মিষ্টি কথোপকথন!
কত চেষ্টা উপহার উপঢৌকন কত যাওয়া কত আসা
কত সাক্ষাৎ কত প্রচেষ্টা সবগুলির পর হাতে
পেয়ে গেছি পেয়ে গেছি ভাব
ভেবে ভেবেই অনেক সময়
তারপর দেখি মরিচিকা আর মায়া
তিক্ত অনুভূতি আর ছলচাতুরি ছাড়া কিছু নেই।
এখন ভাবি যা আমার তা থেকে যাবে
যা আমার না তা ঝরে যাবে
আমি হারতে চাই
সবাই জিততে চায়
আমি জিতে জিতে হেরে যেতে চাই না
হেরে হেরেই জিততে চাই।
আমি ধৈর্য ধরতে চাই ধৈর্যে মেওয়া ফলে
ধৈর্যের ফল মিষ্টি।
আমি ধীরে ধীরে এগুতে চাই
পেছাতে চাই না
হেরে হেরে জিততে চাই।
কারণ এই হেরে হেরে জিতে যাওয়ার মধ্যে রয়েছে কল্যাণ।
জেগে আছি আজো
হেলাল আনওয়ার
চব্বিশের অকুতোভয় শহীদ জাবের স্মরণে
এইতো আমি এখানে-
সবুজ পল্লবে, মুকুলিত শাখা
ঝিঝিদের গানে তাবৎ রাত্রি কাটে
ভোরের শিউলিতে চুবিয়ে শরীর।
সহন সময়ে শুনি তোমার পদভার
একবার, এখানে এসো-
কথা বোলো কানে কানে-
স্বাপ্নিক গল্প কথা।
এইতো আমি এখানে -
সোমত্ত ইতিহাস বুকে নিয়ে -
সময়ের সিঁড়ি বেয়ে-
অপেক্ষায় রাত্রিদিন।
রক্তাক্ত বিপ্লবের বহ্নিশিখা
রেখে দিলাম তোমাদের মাঝে।
সব দেখি তোমাদের-
প্রজ্জ্বলিত চোখের ভাষা,
সবুজ স্বদেশে শ্রীহীন নির্লজ্জতা,
চেতনার বিবর্তন, পোশাকি আয়োজন
চব্বিশ ভুলানোর নানা কৌশল
সবই জানি আমি।
মনে রেখো, আমি শহীদ, মরিনি
জেগে আছি আজো-।
ঐতো, চব্বিশের পাহারায় দেখো
সহস্র জাবেরের উত্তরসূরি।
যাই হারিয়ে
জেসমিন সুলতানা চৌধুরী
অনেক দিনের ইচ্ছে আমার দেখতে যাব
সাগর ,পাহাড় , ঝরনাধারা
নরম কোমল দূর্বাঘাসে পা মাড়িয়ে
হেমন্তেরই ভোরের শিশির অঙ্গে মেখে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে
সাগরবেলায় পড়ে থাকা শামুক-ঝিনুক নিই কুড়িয়ে
যাই হারিয়ে ছেলেবেলায় পাগলপারা।
গোধূলির ওই লালচে আভা
আকাশ জুড়ে অপার শোভা-
মুগ্ধতাতে ঝড় তোলে যায় তনু মনে ,
বিস্ময়য়ে চোখ আটকে থাকে সঙ্গোপনে ।
স্বচ্ছ জলের নীল সাগরে দীপ্তি ছড়ায় রুপালি চাঁদ,
একটু ছোঁয়ায় ঢেউ খেলে জানায় কত সাধ-আহ্লাদ!
ইচ্ছে করে; ছুঁয়ে আসি দিগন্তের ঐ আকাশখানি
রয় একাকার আলিঙ্গনে রূপসাগরের অথৈ জলে
রাত্রি জেগে মিতালি আর গভীর কানাকানি।
পূর্ণিমা চাঁদ, সেই মায়াবী জোছনা আলো
তারার ঝিলিক, ঢেউখেলানো নীলাভ জল
সব মিলে এক স্বর্গীয় রূপ, অন্য ভূবন!
নিবিড় মায়া এক নিমিষে জড়ায় বাঁধন;
কাব্যিকতা যায় ছড়িয়ে কবি হৃদয়
সেই ব্যঞ্জনা , সুর মূর্ছনা কল্লোলিত হয় রন্ধ্রে রন্ধ্রে
যাই হারিয়ে কল্পলোকে আর আনন্দে আত্মহারা।