কবিতা
কবিতা
(যারা গণতন্ত্র আনার জন্য সংগ্রামে রয়েছেন) এ স্বর্ণালি মধুর সকালে যখন মেলেছি চোখ স্বদেশের মায়ালোক- ভুলালো আমার দীপ্র দুরাশা-হৃদয়ের শত শোক।
Printed Edition
বাংলাদেশ
খুরশীদ আলম বাবু
(যারা গণতন্ত্র আনার জন্য সংগ্রামে রয়েছেন)
এ স্বর্ণালি মধুর সকালে যখন মেলেছি চোখ
স্বদেশের মায়ালোক-
ভুলালো আমার দীপ্র দুরাশা-হৃদয়ের শত শোক।
মধুর কণ্ঠি শ্যামল কোকিলা গান গেয়ে যেন বলে-
পদ্মা মেঘনা যমুনার কালো জলে
ডুব দিয়ে বল সালাম তোমাকে বিশ্ব-বিধাতা-
সবুজ শ্যামলে স্বদেশ আমার তোমারই জয় হোক।
মায়াবী স্বদেশ তোমার তুলনা নেই
দুঃখ বিষাদে শান্তি পেয়েছি শেষে
স্বদেশের কাছে এসে-
জড়ালে আমাকে মায়াবী স্নেহে অফুরান ভালোবেসে।
মাঠে মাঠে ধান সবুজের সমারোহ
বাতাসের সাথে দুলিয়েছে তার মাথা
আহারে স্বদেশ সয়েছ কত না করুণ অত্যাচার-
তবুও থামেনি তোমার সাহসী দ্রোহ-
দ্রোহ সংগ্রামে হারাওনি খেই-
ছিন্ন করেছ শোষণের কারাগার।
ছড়ালে অপার মমতার মোহ-
তোমার বুকেই তাই মাথা রেখে বলি
তুমিই ফোটালে প্রত্যাশার সাদা কলি
আনন্দে কলস্বরে-
আমরা চিনেছি স্বদেশ তোমাকে কালবৈশাখী ঝড়ে।
স্বদেশ হেসেছে শত শহীদান চেহেল গাজীর ঘরে-
শোন হে স্বদেশ তোমার হৃদয়ে ছড়িয়েছে যারা পীড়নের নীল ঝড়-
তাদের তাড়াতে বুকে দাও আজ-
- তাজা দ্রোহের স্বর।
বুকে গেঁথে আছে ঈসা মুসা খার সংগ্রামী ইতিহাস
রক্তে যাদের উর্বর হলো স্বদেশের কচি ঘাস।
উড়ে যাবে সব জগত শেঠের স্বার্থপরের উদ্ধত শেষ হাসি
ভয় কি স্বদেশ আমরা রয়েছি-
সিরাজের মতো জনতার পাশাপাশি।
একজোড়া ছবি
মুহাম্মদ রফিক ইসলাম
দেয়ালে টাঙানো ফ্রেমে ছবিযুগলের মতো
একজোড়া ছবি আমার বুকের দেয়ালে
বাঁধাই করা থাকে
সাদা-কালো ওই ছবিজোড়া
রাত-বিরেতের অন্ধকারে রঙিন হয়ে ওঠে
বুকের কপাট খুলে দিয়ে দরজার পাশে দাঁড়াই
প্রথমে বাবা বেরিয়ে আসেন তারপর মা
মা ধীরস্থির নরম পায়ে এগিয়ে চলেন আলনার দিকে
যেখানে বাবার রক্তভেজা জামাটি এখনো সাজানো
সেখানে গিয়ে মা আমার দিকে তাকিয়ে কেঁদে ওঠেন
আমি কাঁদার আগেই বাবা এগিয়ে এসে বললেন,
‘তোর মা হয়তো জানেন না, আমি মরিনি
বীরেরা মরেন না, ফিরে আসেন বারবার।’
দেয়ালে টাঙানো ফ্রেমের দিকে তাকিয়ে
মায়ের কান্নাগুলো মুছে দিতে চাই
বুকের ভেতর একাত্তরকে জীবিত রেখে।
মোকাম
ওলি মুন্সী
ঘুমের আগে মৃত দাদার মুখটা ভেবে
কিছু কল্পনা করি তোমার
ঘুমের ঘোরে পৃথিবীর বাস্তবতা দেখে
ভোর হলে জেগে ভাবছি
আহ্ ফিরে আসা প্রাণের মতো
দাদা ফিরে আসলে হাত ধরে মোকামে যেতাম
মানুষ চেনার মোকাম।
মাহে রমাদান
আবুল খায়ের বুলবুল
রমাদান এলো বলে ধরার মাঝে
গোনাহের লৌহ ডাঁট যায় ভেঙে ভেঙে
অবারিত খুশবু ছড়ায়ে-
বেদনার বুক হাসে সুখের বাতাসে
চারদিকে হই চই আনন্দ আহ্লাদ নেমে
আলোয়ে আঁধার সরে বিশ্বাসে নিঃশ্বাসে
পুণ্যের ভয়ে কাঁপে পাপ তাপ সব
মুমিনের হৃদ আগলে লা গে রঙের বাহার
সিজদায় অবনত করে থাকে শির
মুখে ঠোঁটে ঢালে শুধু তাসবিহ রব বারবার
ঊষর মনের জমিনে ফোটে রহমের ফুল
মৌমাছি যেন চুষে মধুর পেয়ালা
হেঁটে হেঁটে গাহে গান সোবাহানাল্লাহ
দুরুদে দুরুদে ছড়ায় অচলা জাহান
প্রাণের গলিতে গলিতে জমে বেহেস্তী সুখ
ক্বলবে ক্বলবে রোপে অমরাবতীর বীজ
অশ্রু ভেজা চোখ কথা বলে রাতের প্রহরে
সোঁপে দেয় সব প্রাণ তাঁহার কাছে
হিংসা দ্বেষ ঝরে পড়ে রহমের বারাকায়
বিচূর্ণ হয়ে যায় ধীরে ধীরে অহম যতো
মোনাজাতে ফেটে পড়ে আকাশ জমিন
ক্ষমার আকুতি যেন দুঃস্বপ্নে আঘাত করে
নিয়ত জ্বলে ওঠে আশ্বাসের প্রদীপ।
বইয়ের গন্ধে
আহাম্মদ উল্লাহ
উঠানে মেলে দিলাম রোদে, বইয়ের গন্ধে মাখামাখি প্রজাপতির পাখা ;
মাটির সোঁদা গন্ধ - বইয়ের ভাঁজে; উঠানে মেলা বইয়ের পাতা।
বর্ণমালা ভাসে আজ বাতাসে তপ্ত রোদে।
কতদিন লুকিয়ে মেলেছি বই আরেক বইয়ের নিচে;
চোখের কোণে দুই বই-দুই স্বর আড়াল করেছি মিছে।
মা দিয়েছিল গাল-বকুনি-
“ছিঁড়ে ফেলবো, ফেলবো ডোবায়, কিনিস যদি আবার।”
ভাষা মিলে মোদের, মোরা দুই ভাই;
কথা বলি - গান গাই বেলা করি পার।
স্বপ্নের দিন জাগে বইয়ের পটে- দেশকাল সীমানা পেরিয়ে কল্পতরুর ডাল ;
ভেসে উঠে আজ রোদে বইয়ের দেহে স্মৃতি সমাচার।
আমার শহরে
ফারজানা ইয়াসমিন
আমার শহুরে বাতাসে বকুলের গন্ধ নেই ঠিক,
তবুও বৃষ্টি হলে সোঁদামাটির গন্ধ পাই বাতাসে।
আমার শহরে হিজলের আলোছায়া নেই ঠিক,
তবুও ছাদবাগানে রোদ এসে ছায়া ফেলে কংক্রিটের বুকে।
আমার শহরে ছাদে ওড়ে রঙিন ঘুড়ি মাঝে মাঝে ঠিক,
তবুও আমি রংতুলি দিয়ে সাদা কাগজে ছাপি
সবুজ মাঠে মুক্ত এলোকেশী ঘুড়ির দুরন্তপনার খবরের ছবি ।
আমার শহরে কুয়াশা জড়িয়ে শিউলি ফোটে না রোজ,
তবুও শীত আসে কুয়াশা নিয়ে ঘোমটা টানা বউয়ের বেশে।
আমার শহরে কাশফুল নেই জেগে নদীর বাঁকে,
তবুও সাদা মেঘ দিচ্ছে জানান শরৎ এসে গেছে।
আমার শহরে গোধূলি লগ্নে বাড়ি ফেরার থাকে না তাড়া ঠিক,
তবুও রাত নামে ল্যাম্পপোস্টের অপেক্ষায় খানিক বাদে।