যিলযাল
হাসান আলীম
এইতো কিছুক্ষণ আগে প্রচণ্ড ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল দেশ,
নরসিংদী, ঢাকা সহ পার্শ্ববর্তী এলাকা -
ভীষণ কেঁপে উঠল,
দুলে উঠল বিল্ডিং দোকান পাঠ,
যেন এইমাত্র ভেঙে পড়বে
মুখ থুবড়ে পড়ে মরে থাকবে সবকিছু -
তওবা করে ভীষণ কাঁপছি
যেন মৃত্যু পরোয়ানা প্রাপ্ত কোন আসামী।
আর কোন পাপ করবো না,
হে আল্লাহ তুমি আমাদের ক্ষমা করে দাও
কেয়ামত নেমে আসছে বুঝি মুহূর্তে!
এটাকি সেই মুহূর্ত? ভূমি কেঁপে উঠবে,
পাহাড় পর্বত, সমুদ্র ফেটে কি আগুন জ্বলে উঠবে?
মানুষেরা দিগ্বিদিক দৌড়াতে থাকবে
নিরাপদ আশ্রয়ের আশায়!
কিন্তু কোথায় নিরাপদ আশ্রয়!
আজ কি তাহলে কেয়ামত এসে গেছে?
প্রিয় পৃথিবী আপনজন সকলে মুহূর্তে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে!
আমরা সকলে থরথর করে কাঁপছি।
একটি মাছের পাশে
আবির হাসান
একটি মাছের পাশে এক অ্যাকুরিয়াম
আয়ু হাতে দাঁড়িয়ে থাকি
একটু জলের পিয়াসা মৃত্তিকা ও দৃশ্যের চোখে,
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দৃশ্য ও ঢেউয়ের স্বরবৃত্তের ভেতর
প্রতিটা ছটফট করা মিনতি,
জল ও চিরঅবগাহনের প্রার্থনাগুলো মানুষের
দৃষ্টির দরিয়ায় সাঁতার কাটে-
সাঁতার কাটতে কাটতে একদিন মুছে যায়
সমস্ত ভেসে থাকার স্মৃতি
মাছ ধীরে ধীরে মানুষ হয়ে ওঠে আর
মিনতিমুখর নোনাজল ঢেউয়ের কাছে
ছুঁড়ে দেয় এই আশায়,
হয়ত একদিন জলের কন্ঠস্বর মুছে দেবে
এক জীবনের সমস্ত জড়তা।
ভূপৃষ্ঠ বিচরণের চেয়ে
জানে আলম
আজ আমি শিশিরের সাথে কথা বলবো
গভীর নিবিড় ধ্যানের মতো।
তোমরা সবাই সরে যাও আমার নিকট থেকে
তোমাদের কথায় বিষের ছুরি
বিদ্ধ হয় আমার বুকে।
তোমাদের আচরণে কারবালা নেমে আসে আমার উপর
আজ আমি ফুলের সাথে কথা বলবো
আকাশে ফেরেস্তাদের পরস্পর কথা বলার মতো।
তোমরা এসো না আমার কাছে।
তোমাদের ভালোবাসা আমার কাছে আজ
জাক্কুম যন্ত্রণার মতো লাগে।
আমি আজ নিজের সাথে নিজে কথা বলবো
একনিষ্ঠ নামাজের মতো
তোমরা রেগে আগুন হয়ে যা খুশি তা করতে পারো আমাকে
এমনকি মৃত্যুদণ্ড ও দিতে পারো,
মনসুর হল্লাজের মতো।
ভুল বোঝে কিংবা ভুল বোঝার অবসান ঘটাতে।
আমি শরিয়া শাসনে স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি স্বাক্ষর দিতে প্রস্তুত।
আমিতো ভূপৃষ্ঠে বিচরণের চেয়ে
কাফনের কাপড় জড়িয়ে
মদিনার কোনো এক কন্দরে ঘুমিয়ে থাকতেই ভালোবাসি।
গাছের বন্দিত্ব
মুন্সি আব্দুল কাদির
আমার বাসার শোভা বর্ধনে টবে লাগাই গাছ
এই শোভাতে তাদের জীবন করে দেই সর্বনাশ।
বন্দি ঘরে তারা পায় না সূর্য থেকে তাপ
আস্তে আস্তে কমে যায় জীবনের উত্তাপ !
পানি দিতেও আমি ভুলে যাই কেমনে বাঁচবে গাছ
আস্তে আস্তে থেমে যেতে চায় জীবনের নিঃশ্বাস
কদিন পরেই চোখে পড়ে ডালপালা তার মরা
দিনে দিনে বাড়তে থাকে তাদের পাতা ঝরা
একটু দেখলে দেখা যায় তারা কান্না করছে বেশ
তাদের কান্নার শাস্তি আমার, লাগে অনেক ক্লেশ।
মুক্তির পথ
মোহাম্মদ নূরুল্লাহ
সমাধান হাঁতড়ে বেড়াও ভূগোল খগোলে!
সময় কি নেই তোমার?
দেখো না একটু কুরআন খুলে!
বিবাদমান সমস্যার পাবে সমধান।
পরতে পরতে রয়েছে অগণন বুরহান।
স্বপ্ন
সোহেল আব্দুল্লাহ্
কত বিচিত্র সুখে আমি জীবনের বেলা অবেলায়
হারিয়েছি দূর বহুদূরে অসীমের খোঁজে
মেঘের ভেলায় চড়ে নীলাকাশ পানে
স্বপ্নের মতো যেথা রাতের আসরে
চাঁদ ও তারার সাথে কত কথা হয়,
আমিও সদস্য হতে সেই আসরের
ছেড়ে যাই সব কিছু উপরের থেকে আরো উপর,
দিবসের আগুন ঝরানো ঝলসানো রোদে
ভেঙে যায় সব আশা আহত পাখির।
সবুজের সমারোহ অরণ্যের বিচিত্র জীবন,
কত ফুল পাখি প্রজাপতি অপরূপ ছবি
কল্পনার তুলি দিয়ে এ হৃদয়ে আঁকি,
তীব্র বাসনা যার অরণ্য গভীর,
চলি পুলকিত অনুভবে অজানার খোঁজে,
ওৎ পেতে বসে থাকা হায়েনার হিংস্র নখরে
ক্ষত-বিক্ষত হৃদয়ের
ফুল পাখি প্রজাপতি নিমেষে উধাও।
দেখে সাগরের নীল জলরাশি
ভাবি তার গভীরতা কি বিশাল,
ডলফিনের সাথী হয়ে ঢেউ ভেঙে চলি,
যাব দূর নির্জন দ্বীপে,
আসে হাঙ্গরের প্রচণ্ড আঘাত,
ডুবে যাই অথই সে জলরাশি তলে।
দীর্ঘ সফরের শেষে জীবনের এই পড়ন্ত বিকেলে
দিকহারা নাবিকের মতো আজও আমি অশান্ত সাগরে
ঝঞ্ঝা বিক্ষব্ধ ফণা তোলা ঢেউ গুনে গুনে
খুঁজে চলি বাসযোগ্য এক নিরাপদ আশ্রয়।
জানি দীর্ঘ আশার শেষ হবে একদিন,
হয়তোবা চলে যাব সেইক্ষণে
অনন্ত ওপারে
অনাবিল চির শান্তির,
বাস্তবতার এক স্বপ্নীল জগতে।
সীমাহীন সীমানায়
আর. কে. শাব্বীর আহমদ
নিঃশব্দ রাত।
আলোকিত নীলিমার
দুধের জোছনা নহরে
ভেসে চলছি
তোমার সীমানা খুঁজে খুঁজে।
হিমালয়ের তুষারচূড়া
সমুদ্রের অতল প্রেম
অরণ্যের সবুজ হাসি
সোনালীর ফসলের প্রান্তর
বাতাসে সরষের দোলাচল
পুব দিগন্তে অলোকের মুচকি হাসি
বালুচরে বালিহাঁসের কোলাহল
মৌমাছির মধুগুঞ্জরণ
শিউলি বকুলের বাসর সৌরভ
কদম কেতকীর শ্রাবণ মিতালী
কাশফুলের শুভ্র মমতা
বিরহী কোকিলের সুর লহরী।
আমায় উতলা করে তোলে
তোমার সান্নিধ্যের
সীমাহীন সীমানায়।
দূরত্ব
তোয়াবুর রহমান
আমাদের দুরত্ব টা অনেক খানি বেড়ে গেছে
আমার ভাবনার থেকে অনেক---দুরে
এমনটার কোন সম্ভাবনা ছিলো না তবুও হয়েছে
কারণ সময় এনে দাঁড় করিয়েছে রাজপথে।
তবে সময়ের কোন দোষ ছিলো না কোন কালেই
আর তুমি তো সময়ের করেছো সৎ ব্যবহার
পরিস্থিতি আমার সাথে করে বেঈমানি
তাই তো আজ আপন চিনেছি অতি সহজে।
এইতো সেদিনও পাশাপাশি বসেছি ঘুরেছি বহুপথ
হাসাহাসি আড্ডায় যেন আমি ছাড়া জমতো না
দেখ কল লিষ্টে তোমার নাম্বার ঝকঝকে প্রথমে
আজ আমি তোমার কাছে করুণার পাত্রই মাত্র।
তোমার চোখেই আমার পৃথিবী
মুঃ শফিকুল ইসলাম
তোমাকে দেখলেই মনে হয়
জোছনাভেজা রাত হঠাৎ নরম হয়ে আসে,
অকারণে বুকের ভেতর
ফুটে ওঠে কেমন অচেনা হাসি।
তোমার নাম উচ্চারিত হলে
হাওয়াও যেন ধীরে বয়ে যায়,
ফুলের পাপড়িতে জমে থাকা শিশির
নিচে নেমে আসে লাজুক হয়ে।
আমি জানি-
ভালোবাসা মানেই শুধু হাতে হাত ধরা নয়,
ভালোবাসা মানে
তোমার মন খারাপের ভাঁজে
নিঃশব্দে একটি হাসি আঁকিয়ে দেওয়া।
যেদিন তুমি কাঁদো,
আমার আকাশে নামে ভারী মেঘ,
যেদিন তুমি হাসো,
সূর্যটাও একটু বেশি আলো ঢালে।
তুমি আছো বলেই
রাতের অন্ধকার আর ভয় লাগে না,
তুমি আছো বলেই
স্বপ্নেরাও পথ হারায় না।
তুমিই সেই মানুষ-
যার চোখে তাকালে
আমার পুরো পৃথিবী
এক মুহূর্তে সুন্দর হয়ে যায়।
জুলাইয়ের আবাবিল
আব্দুল্লাহ-আল-মামুর
হে জুলাইয়ের আবাবিল
আকাশে আবার যাচ্ছে দেখা
শকুন ও লোভী চিল
অন্যায় জুলুম যদি আসে ফিরে
জুলাই-এর স্মৃতি ভুলে
রুখে দাও তাকে বজ্রনিনাদে
ন্যায়ের ঝাণ্ডা তুলে।