হে মায়াময়

সাজ্জাদ বিপ্লব

ফলবান বৃক্ষের মতো

আমাদের জ্ঞানবান বৃক্ষ করো

যাকে তুমি জ্ঞানবান সৃষ্টিশীল বৃক্ষ দাও

দাও সময়শাসিত প্রজ্ঞা

ভোরের মতো স্নিগ্ধ ও শান্ত বিনয়

তার প্রভূত কল্যাণ হয়

আমাদের যেন অকল্যাণ আর ক্ষতি না হয়

হে মায়াময়।

কাঁটা আছে বলেই ফুল সুন্দর

মুহাম্মদ রফিক ইসলাম

শপথ যখন স্বপ্ন ছোঁয়ার

পলক ধরে রাখতে হয় চোখে

প্রখর রোদ কিংবা বিরাট ধুলিঝড়েও

যদি লক্ষ্য থাকে অটুট

নিজের মতো করেই ভাবনার সমীকরণ চষতে হয়

কষতে হয় জটিল সমাধান, বীজ থেকে ফল...

বাদ যায় না কিছুই জীবনের চাষাবাদে

স্বাদ পরখ করে করেই বোঝে নিতে হয়

টক-মিষ্টি-ঝাল কত কিছু

প্রত্যাশা যখন লোভনীয় কখনো সহজ থাকে না পথ

পথটাকে সোজা করে ধরেই ফেলতে হয় পা

জীবনে কাঁটা আছে বলেই ফুল সুন্দর।

তোমাকে জানাই বিদায়

সাগর আহমেদ

সেই চৈত্রের দাবদাহে ফোটা এইটুকু ফুল

ফাল্গুনে নয়, বসন্তে নয়

তবু বিস্ময়ে করেছিলো আমায় নির্বাক,

পেরুলাম এক যুগাধিক বিশাল সময়ের আস্তরণ

গোলাপ কুঁড়ি ডানা মেললো

সৌন্দর্যে স্তব্ধ হলো হৃদয়ের সকল চোরা বাঁক।

তারপর ফুল হয়ে, ভুল হয়ে এঁকে যাই ভালোবাসা,

পরবাসে খুব ভালো থেকো এটাই শুদ্ধতম আশা।

দানবের কব্জায়

মুহাম্মদ আবুল হুসাইন

যখন পৃথিবী চলে যায় দানবের কব্জায়

তখন আইন আর আইন থাকে না

সত্যগুলো আর থাকে না সত্য

জাতিসংঘ কি থাকতে পারে জাতিসংঘের মত?

যখন পৃথিবী চলে যায় দানবের কব্জায়

তখন শয়তানির আর থাকে না আড়াল

ভণ্ডামির মুখোশগুলো খসে পড়ে যায়

বিবেকহীন মানুষগুলো হয় একচোখা দাজ্জাল

সভ্যতা-ভব্যতা তখন শরমে পালায়।

যখন পৃথিবী চলে যায় দানবের কব্জায় -

পৃথিবীতে শুরু হয় দানব নৃত্য

সভ্যতার যাদুঘর লুণ্ঠিত হয়, কম্পিত হয় চিত্ত

দানবের তাণ্ডবে লুটায় সত্যের মিনার।

যখন পৃথিবী চলে যায় দানবের কব্জায়

তখন আর কোন সাড়া-শব্দ থাকে না

বিবেকও বোবা হয়ে যায়

উদ্বাহু নৃত্য করে পাশব দানব

আতঙ্কে নীল হয়ে নিখিল মানব

যখন পৃথিবী চলে যায় দানবের কব্জায়

সময় থমকে দাঁড়ায় মানবতা গুমরে মরে

পৃথিবী বদ্ধভূমি হয়ে যায়

হাত-বাধা মানবতা অসহায় কাতরায়

পৃথিবী চলে যায় আদিম গুহায়

দানবতা থাকে শুধু মানবতা পালায়।

আমিও কোথাও

মিঠুন দত্ত

বৃষ্টি আসার আগ মুহূর্তটা―

আমাকে অনুবাদ করে যায়!

‎সবার ঘরে ফেরার তাগিদ

‎আমার তাগিদে আমি স্তম্ভের মতো দাঁড়িয়ে;

‎নাকের সদর দরজা খুলে দিয়ে―

‎সমস্ত শক্তি দিয়ে নিঃশ্বাস টানি।

‎উচ্চাঙ্গ সংগীতের দাদরা তালে মনবাবুকে

‎ছেড়ে দেই ইচ্ছের পৃথিবীতে।

‎আকাশে মেঘেদের শাসন;

‎শাসনের ঝাঁঝালো ভাষণে বাতাসের অস্থির ছোটাছুটি,

এলোপাথাড়ি দৌড়াদৌড়ি...

‎রোদের সাথে চলে অনুরাগী অভিমান।

‎যখন মেঘেরা হাঁউমাউ করে কেঁদে দেয়

‎আমিও কোথাও কেঁদে দেই।

মোহাম্মদ সা.

রওশন মতিন

হৃদয়-তরুতে মরুময় কত স্মৃতি,

আকাশের কোলে দোলে খন্ডিত চাঁদ,

ইশারায় জাগে কত অশরীরী জ্যোতি,

দু’হাতে সরায়ে তিমির-দন্ডিত রাত।

তামাম কলিজা জুড়ে আরশের নূরে

দেখে যাও, হেরা নয় নয় বহুদূরে,

ধ্যানের তুফানে আকুল দরিয়া তীরে

চমকায় নূর আরশের ছায়া ঘিরে।

তোমার পথের অসীম বেদনাধারা

হাজার কাবা হয়ে জ্বলে ধ্রুবতারা,

আরশে-জমীনে তোমার মহিমা ছবি,

তুমি নিখিলের প্রিয়, মহাসত্যের কবি।

আত্মা আলোকে ছিঁড়েছ আঁধার তুমি,

বেহেশতে লুটায় তোমার পায়ে চুমী,

এলো আসমানী ওহি-মানবতার মুক্তি সনদ,

তব সাফায়েত, নিখিলের প্রিয় মোহাম্মদ।

স্বপ্নভঙ্গ

শ্যামল বণিক অঞ্জন

একটা সময় স্বপ্নকাতর ছিলো জীবন

স্বপ্নবিলাসী বহুরূপী আকাক্সক্ষায় নিমগ্ন,

একদিন আমি স্বপ্ন দেখতাম ঘুড়ি নিয়ে-

অসীম নীলাকাশে উড়াবো রঙিন ঘুড়ি,

হাতের নাটাইয়ে সুঁতোয় ছাড়িয়ে দেবো সীমানা

আবার কাছে টেনে নেবো শখের ঘুড়িটাকে!

একদিন সেই স্বপ্নের সুঁতোই ছিড়েছে অসময়ে।

শৈশবে বুঁদ হয়ে থেকেছি খেলাধুলা আর দুরন্তপনায়

খেলার সাথী আর স্কুলে কাটানো মধুর সময়ের স্বপ্নে,

জীবনকে ঘিরে সীমাহীন স্বপ্নকাতর ছিলাম

পরিক্রমায় একদিন সেই স্বপ্নেরও অবসান হয়,

কৈশর স্বপ্নের আঙিনায় আবির্ভাব এক মায়াবিনীর

উবে যায় রুটিনমাফিক সকল কর্মযজ্ঞ।

পৃথিবীর সব রঙে সাজিয়ে নিলাম অদ্ভুত নেশায়

গতানুগতিক ভাঙনের কবলে আচ্ছাদিত ভূবন

সবকিছু নির্মম নিষ্ঠুর প্রহসনের খেলায় তছনছ।

পড়ন্ত বেলায় বৈরী সময়ে দাঁড়িয়ে আজ;

কেবল স্বপ্ন দেখে যাই নিরেট মানুষ হবার-

অতীত ভাঙনের খেলায় তটস্থ হই প্রতিমুহূর্তে।