বিপ্লবের নাম ছত্রিশ জুলাই
জাকির আবু জাফর
হে দেশ হে জন্মভূমি হে আমার নিশ্বাসের ভূগোল
তোমাকে দিতেই হবে আমাদের স্বপ্নমুগ্ধ মহান একটি সময়ের সম্মানীয় পতাকা
যা পৃথিবীর বুকের কাছে আমার মর্যাদার নতুন নিশান!
তোমাকে দিতেই হবে আরাধ্য একটি ভোর,
যে ভোরের মুখ আমার নতুন বিপ্লবের রঙ
যে রঙ আমার আত্মার আকাঙ্খা থেকে উদ্ভূত
আমার এ বিপ্লবের নাম- ছত্রিশ জুলাই
তুমি কি জানো ছত্রিশ জুলাই কি?
কেনো এটি বিশ্ব পঞ্জিকায় এক বিস্ময় দাবানল
যা দাউদাউ জগতের সকল স্বৈরাচারীর বুকে!
মনে নেই! আমাদের আবাবিলেরা গেয়ে উঠলো-
তুমি কে আমি কে, বাংলাদেশ বাংলাদেশ!
হ্যা তুমিই তো বাংলাদেশ,
তুমিই তো এক নতুন পন্থায় নতুন অভিযাত্রী!
নতুন দিনের এক অভ্রান্ত পথিক
আমরা তোমার বুকে রুয়ে দিলাম ছত্রিশ জুলাই
তুমি একে বিরাট বিশাল বৃক্ষ করে তোলো
যে বৃক্ষের ছায়ায় আশ্রয় নেবে তোমার স্বাধীনতা
তোমার সার্বভৌমত্ব এবং তোমার সকল অসহায় দুঃখী নাগরিক!
বৃষ্টির খামে স্মৃতির চিঠি
মুহাম্মদ রফিক ইসলাম
মেঘের দৃশ্যত কান্না কুড়িয়ে নিয়ে কেউ
বৃষ্টি নামে চালিয়ে দিল,
ভাইরালের যুগে এসে আমরাও থেমে নেই
নেমে যাই অদৃশ্য সেলিব্রিটি হাওয়ায়!
রাত দুপুরে টিনের চালে তবে কে হেঁটে যায়?
কার বুকে গোপন দুঃখ বেদনার ঝুমুর বাজে?
তথ্য-উপাত্তের পাশে যুক্তিকে বসিয়ে কখনও
ভাবা হয়নি। স্মৃতি নামা চোখে রাত্রির দুপুর,
যত্নে খুলে যাওয়া বিরহের খাম?
হৃৎপিণ্ডের ঘড়িটায় প্রিয় হারানোর মতো আগুন
আর বাইরে যখন-তখন শ্রাবণ অঝোর ধারা,
মেঘের কান্নাই যেন গ্রামীণ বধূর বিরহী চোখ
স্মৃতি নামা বেদনার দৃশ্যত কফিন।
বড় ভয়
মান্নান নূর
ভালোবাসার অভয়ারণ্য নেই
গাছের পাতায় শিশিরের সাথে
ঝুলে আছে আমাদের স্বপ্নগুলো,
বড় ভয়, সূর্য ওঠার সাথে নিঃশেষ হবার,
বড় ভয়, বাতাস এসে দোলাচলে
ফেলে দেয় যদি! কী নির্মম!
এখানে স্বপ্ন দেখাও নিরাপদ নয়,
স্বপ্ন দেখারও অভয়ারণ্য নেই।
মুছে দাও সকল গ্লানি
শেখ সুলতানা মীম
নিজেকে গড়ো সূর্যের মতো
যার তীব্র আলো, দীপ্ত শিখায়
অন্যায়, জুলুম, অত্যাচার
হবে ভস্ম, হবে ছারখার!
অন্ধকার আকাশে হাজার তারার ভিড়ে
যার স্নিগ্ধ আলোয় আলোকিত হয়
আঁধার পথ, দেখায় সত্যের দিশা।
চাঁদের ন্যায় গড়ে ওঠা হোক একমাত্র নেশা।
হয়ে ওঠো মেঘের মতো স্বচ্ছ,
বয়ে আনো শান্তি-সুখের দিন
বৃষ্টি হয়ে ভাসিয়ে দাও সব আবর্জনা,
মুছে দাও সকল গ্লানি, দুঃখ ভরা দিন।
সেতুবন্ধন
আনজানা ডালিয়া
শান্ত নদীগুলোর সেতু দিয়ে বন্ধন থাকে
দুপাড় ওই সেতু নিয়ে নিত্য স্বপ্ন আঁকে
সেতু দুপাড়’কে আপন করে গেঁথে রাখে।
আমার কোনো সেতু নেই
কোনো স্বপ্ন নেই
কোন বন্ধন নেই।
শুধু বয়ে চলার শক্তি আছে
গন্তব্য মনে হয় খুবই কাছে
সব আলো অন্ধকারে গড়িয়েছে।
চাওয়া-পাওয়া
দিল মোহাম্মদ
আমি তোমাকে চাই
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই; তোমাকে চাই
তার মানে এই নয় যে-
তুমি কখনও বেড়াতে যেতে পারবে না
ক্লান্ত হলে ঘুমাতে পারবে না
ইচ্ছে হলে হাসতে পারবে না, কাঁদতে পারবে না
তবে একটু বেশিদিন রয়ে গেলে, সয়ে; গে-লে না!
তুমি হাসো- এ আমার সুখ
তুমি কাঁদো - এ আমার দুখ
তবে পরমানুষের সঙ্গে আলাপচারিতায়
তোমার যেকোনো ধরনের হাসি-তামাশা
আমার হৃদয়ে ফাঁসির মতো অসহ্য দম আটকায়।
এখানেই আমি তেমার কাছে এক অসহ্য সাইকো
প্রেমী হিসেবে কামানুষ, সংসারী হিসেবে কামানুষ
সব সাধু ওই পরমানুষ!
আমার কাছে তুমি সময় চাও, অফুরন্ত সময়
তবে বেকার হওয়া খুব অসহ্য লাগে
সমাজের কাছে খুব নগণ্য লাগে জঘন্য-ভাবে
কোনোভাবে বেকার হওয়া যাবে না
অথচ তুমি সময় চাও!
অমুক, তমুককে অনেক সময় দেয়
বারবার ঘুরতে নিয়ে যায় দেশবিদেশে
শপিং-টপিং এ ভরিয়ে দেয়- দুহাত, দুমন!
আমি বেকার! কোনো কাজের না! অসহ্য!
কী পোড়া কপাল তোমার
সারাটা জীবন শেষ হয়ে গেলো- এই আমার জন্য!
সময়ের অংক মিলাতে গেলে-
আমি ভরণপোষণের অংক মিলাতে পারি না
আর ভরণপোষণের অংক মিলাতে গেলে-
আমি সময়ের অংক মিলাতে পারি না
এই জীবনে তোমার অংক বিষয়ে আমি বড্ড কাঁচা!
সবদিকে তুমি আমাকে সৎ থাকতে বলো
কিন্তু যোগ্য হতে বলো ওই অসতের মতো!
মাটির কফিন
ইব্রাহীম সাকী
আমি মরে গেলে
আমার লাশটা পৃথিবীকে দিয়ে দিয়ো।
আমার হাড়গোড় দিয়ো গাছের ডালপালাকে,
মাংস দিয়ো মাটিকে,
আর রক্ত? রক্ত দিয়ো নদীকে।
আমার হৃৎপিণ্ড দিয়ে বানিয়ো
আরেকটি প্রেমের তাজমহল।
মস্তিষ্ক সংরক্ষণে রেখো পৃথিবীর প্রাচীন
জাদুঘর—হার্মিটেজে।
আমি মরে গেলে
আমার দেহটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়ো।
শেষে পৃথিবীকে বন্দি করো মাটির কফিনে!
আর কফিনের গায়ে লিখে দিয়ো-
‘আমি প্রেমিক ছিলাম!’