ওমর বিশ্বাস

গত কয়েকদিন আকাশে মাঝেমধ্যে লালবাতি দেখা গেছে ঠিকই কিন্তু কোনো শেষ দেখা যায়নি। ওদের মোবাইলেও কোনো কিছু ঘটেনি। তবে যা ঘটেছে তা নিয়ে হুলুস্থূল পড়ে গেছে সারা শহরে। একদিন কয়েকজনকে খুুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। নাই তো নাই। সারারাত তারা উধাও। পরে তাদের পাওয়া গেছে দূরের একবাজারে। কেউ বলতে পারে না তারা এখানে কেন, কিভাবে এলো?

যারা উধাও হয়েছিল তারাও কিছু বলতে পারে না ভালো করে। তবে সবার কথা মিলালে যেটা দাঁড়ায় তা হলো, কিছু মানুষ টার্গেট করে তাদের ঘিরে ফেলে। কেউ একজন কাছে এসে হালকা করে একটা ধাক্কা দিলো। এসময় তারা যাকে টার্গেট করে তাকে এমনভাবে ঘিরে হাঁটতে থাকে যেন সব স্বাভাবিক। ওই ব্যক্তিও তাদের সাথে সাথে যেতে থাকে। ধাক্কা খাওয়ার সাথে সাথে তারা আর কিছু বলতে পারে না। একসময় তাদের আর সেন্স থাকে না।

এদের ধরে নিয়ে যেতে তারা অন্যপথ ব্যবহার করে। এরা প্রথমেই সোজা তাদের গন্তব্যে যায় না। ওরা যাচ্ছিল ওই বাজারের কাছ দিয়ে কয়েকজনকে নিয়ে। তাদের শরীর মানুষের চেয়ে বেশি ঠান্ডা। একপর্যায় বাজারে কাছাকাছি অপেক্ষা করতে থাকে নির্জন রাতের জন্য। সেদিন ওই এলাকায় কোনো একবাড়িতে এক অনুষ্ঠানের জন্য অনেক রাত পর্যন্ত লোকজন ছিল। তারা সেটা জানতো না, বুঝতেও পারেনি। লোকজনের চলাচল তাদের জন্য সমস্যা হয়। এর মধ্যে ঘটনাচক্রে একজনের শরীর খারাপ করলে সে ঢলে পড়ে। তাকে নিয়ে এলিয়েনরা ব্যস্ত হয়ে পড়লে সেখানে হুলুস্থূল পড়ে যায়। একে একে কিছু লোকজন সেখানে জড়ো হতে থাকলে তারা ওদেরকে রেখে সটকে পড়ে।

এটুকু পর্যন্ত মিলাতে পেরেছে আসিফরা। তারা যার কাছ থেকে যতটুকু কথা শুনেছে ততটুকু জোড়াতালি দিয়ে এটুকু দাঁড় করাতে পারল। কান কথা বাতাসের আগে ওড়ে। সারা শহরময় ছড়িয়ে পড়ে ছেলেধরা এসেছিল। বড় ধরনের কোনো অঘটন ঘটেনি Ñ এই ভেবে সবাই স্বস্তি পায়।

আসিফ নিজের ধারণা আরো শক্ত হয়। সন্দেহ বাড়ে। সে এখন অনেকটা নিশ্চিত তাকেও তারা এভাবে ধরে নিতে চেয়েছিল।

সকালে বৃষ্টি হয়েছে। বন্ধের দিন ছিল বলে সবাই বাসায় ছিল। সিফাত, তাজিন, রিফাত তাদের বাসায় মোবাইল সেট নিয়ে বসে আছে পরিকল্পনা মতো। সবাই দারুণ উত্তেজিত। কিন্তু কারোরটা কোনো কাজ করেনি। আসিফের জন্য ছিল নতুন চমক। তার মোবাইল সেটটাও কোনো কাজ করছিল না। কি মনে করে সে পরীক্ষা করার জন্য তারটা মোবাইলের সাথে রেখে অপরপ্রান্ত লোহায় সংযুক্ত করে দেয়। ভেজা গ্রিল ঝির ঝির করে ওঠে সাথে সাথে। মোবাইলের স্ক্রিন জ্বলে ওঠে।

আসিফের চোখে-মুখে বিস্ময়! সে একটা লাফ দিয়ে ওঠে খুশিতে। সে কী করবে ভেবে পায় না। একটু একটু কাঁপছে শরীরটা। সে আবার তারটা সরিয়ে নেয়। না এবার কোনোকিছু নাই। সে তারটা আবার জুড়ে দেয়। আবার ঝির ঝির করে, জ্বলে ওঠে স্ক্রিন। (চলবে)