ইসতিয়াক আহমেদ হৃদয়

লামিয়া ঢাকা শহরে থাকে তার মা-বাবার সাথে। সে ক্লাস ফোরে পড়ে। তার বাবা একজন ব্যাংকার। মা-বাবার সাথে তিনদিনের ছুটিতে লামিয়া দাদুর বাড়িতে বেড়াতে আসে। তার দাদুর বাড়ি গ্রামে। গ্রামের নাম পুন্ডুরিয়া। পাখি ডাকা সবুজ অরণ্যে ঘেরা গ্রাম। এই গ্রামকে লামিয়া খুব পছন্দ করে। গ্রামের বাড়ি আসতে সন্ধ্যা লেগেছিল। এখন হেমন্তকাল। খুব ভোরে যখন লামিয়ার ঘুম ভাঙল। তখন সে বাহিরে পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনতে পেল। আর সাথে হিমেল হাওয়ার আবেশ অনুভূত হচ্ছিলো। ঘুম থেকে উঠেই জানালা দিয়ে তাকালো লামিয়া। সূদুর বিস্তৃত ফসলের মাঠ। পাকা ধানক্ষেতের মাঠ হলুদ রঙে আচ্ছাদিত হয়ে আছে। তার দাদুবাড়িটি ফসলের মাঠের সাথে লাগানো। জানালা দিয়ে তাকালে সুবিশাল ফসলের মাঠ দেখা যায় অনেক দূর অবধি। বর্ষাকালে এখানে বসে কতো বৃষ্টি দেখেছে লামিয়া। রাতে জোনাকি পোকার আলো, ব্যাঙের ডাক, ঝিঁঝি পোকার শব্দ, মাটির গন্ধ সবকিছু তার কাছে রহস্যময়। লামিয়ার খুব ভালো লাগে এরকম গ্রামীণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে। ঢাকা শহরের জানালা দিয়ে এরকম অপরূপ স্নিগ্ধ সৌন্দর্য সে পায় না। ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখে তার মা আঙিনা ঝাড়ু দিচ্ছে। তার দাদু গরুকে খড় দিচ্ছে। বাবা চা খেতে বাজারে গেছে। সে বাহিরে এসে দাঁড়ালো কিছুক্ষণ। তারপর আইলের উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কিছুদূর অবধি গেল লামিয়া। তারপরই তার দাদু তাকে ডাকতে লাগলো। সে বাড়ি ফিরে এসে দেখলো, তার পা ভিজে গেছে শিশিরের জলে। দূর্বাঘাসের গন্ধ ছড়াতে লাগলো পা থেকে। এ এক দামি গন্ধ। লামিয়ার খুব দ্রুত দিন কেটে যায় গ্রামে এলেই। অথচ ঢাকা শহরের দিনগুলো তার খুব স্থবির লাগে। রাত্রিবেলা যখন শিয়াল ডাকে, ঐ দূরের ফসলের মাঠ থেকে। সেই ডাক হুবুহু স্পষ্ট শোনা যায়।

হুক্কা হুয়া হুয়া... ..

তখন লামিয়া তার দাদিকে জড়িয়ে ধরে বুকের খুব কাছে। এভাবেই গলা ধরে ঘুমিয়ে পড়ে লামিয়া। এই গ্রাম তার অনেক ভালো লাগে। একেক ঋতুতে একেক রকম দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায় তার দাদুর বাড়ি জানালা দিয়ে। কিন্তু তাদের বাসার জানালা খুললে রোজ একই দৃশ্য গাড়ির পেছনে গাড়ি শুধু। লামিয়ার ইচ্ছে করে গ্রামে থেকে যেতে। এখানে তার অনেক খেলার সাথী আছে যারা তার একদম আপন। তাদের ভেতর কোনো জটিলতা দেখতে পায় না । তাদের সহজ সরল মন লামিয়ার ভালো লাগে। লামিয়া একবার তার বাবাকে বলেছিলো, আমি এখানে পড়বো, আমাকে এখানে ভর্তি করিয়ে দাও। কিন্তু তার বাবা তাকে বলেছিলো, গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা হয় না ঠিকমতো। এখানে থাকলে তুমি ভালো মানুষ হতে পারবে না। এই কথা শুনে লামিয়ার খুব মন খারাপ হয়ে যায়।

তখন সে ভাবে যাদের সাথে সে খেলে তারা তো অনেক ভালো ব্যবহার করে তার সাথে। কই তারা তো খারাপ হয়ে যায় নি। মনে মনে এই কথায় ভাবে লামিয়া।

ছুটি শেষে লামিয়া যখন চলে যেতে লাগে তখন তার মনটা খুবই খারাপ হয়ে যায়। চোখে জল জমা হয়। এই গ্রামের প্রকৃতি যেমন সুন্দর তেমনি এই গ্রামের মানুষের সামাজিক মেলবন্ধন, একতা, ব্যবহার সবকিছুই তাকে আপন করে নিতে পারে।

দাদুরবাড়িতে অতিথি হয়ে আসতে চায় না লামিয়া। এই গ্রামেই সে অতিবাহিত করতে চায় নিজেকে। ঢাকা শহরে তার দম বন্ধ লাগে। কেননা সেখানে হেমন্তের কোনো গন্ধ নাই। সেখানে তার চোখের প্রশান্তি হয় না। তাই তো সে পুন্ডুরিয়া গ্রাম কে এতো ভালোবাসে।