শাহীন সুলতানা

অনেকদিন আগে এক ঘন সবুজ বনে একটা অহংকারী লাল পিঁপড়ে বাস করতো। পরিবারের সবাই পরিশ্রমী হলেও লাল পিঁপড়ে শুয়ে-বসে দিন কাটাতো। খাবার যোগাড় করতে করতে সবাই যখন হয়রান হয়ে ঘরে ফিরে আসতো অহংকারী পিঁপড়েটা তখন সবার খাবারের ছুতো খুঁজে খুঁজে বদনাম করতো। এটা ছিল তার প্রতিদিনের অভ্যাস।

একদিন হলো কি, একটি ছোট্ট টুনটুনি, নাম তার মৌটুন- উড়তে উড়তে পিঁপড়ের ঢিবির কাছে এসে পড়ল। নিজের বাসা চিনতে না পারায় বসে বসে কাঁদতে লাগলো সে। অহংকারী লাল পিঁপড়ে মৌটুন-এর কান্নাকে একদম সহ্য করতে পারলো না। চোখ গরম করে জিজ্ঞেস করল- কে তুমি? এতো জোরে জোরে এখানে বসে চিৎকার করছো কেন? বাচ্চা মৌটুন ভয় পেয়ে আরও জোরে কাঁদতে লাগলো।

যেই না জোরে কাঁদতে থাকলো অমনি কুট্টুস করে এক মহা কামড় বসিয়ে দিল মৌটুনের পায়। মৌটুন ব্যথায় কাতরাতে থাকলো। এদিকে মৌটুনকে খুঁজতে মা টুনটুনি ও বন্ধু খরগোশ এলো বনের মাথায়। মৌটুনকে খুঁজে পেতেই খুশিতে জড়িয়ে ধরলো তারা। খরগোশ মৌটুনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। কিন্তু বেঁধে গেল এক বিপত্তি। অহংকারী লাল পিঁপড়ে ছোট্ট মৌটুনকে কিছুতেই ছাড়তে রাজি হলো না। বললো- “এতোক্ষণ আমিই ওকে দেখেশুনে রেখেছি। আমাকে বখশিশ দাও। বখশিশ ছাড়া আমি কিছুতেই ওকে ছাড়ব না।”

বুড়ো কচ্ছপ যাচ্ছিল সে রাস্তা দিয়ে। কথা শুনে সে বললো, তুমি এতো দুষ্টু কেন লাল পিঁপড়ে ? খারাপ কথা ছাড়া তুমি কি কাউকে ভালো কথা বলতে পারো না?

কচ্ছপের কথা শুনে লাল পিঁপড়ে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো। বললো- “তুমি নিজেই তো অলসের রাজা বুড়ো কচ্ছপ! তোমার এক পা ওঠাতে ছ’মাস লাগে, তুমি দিচ্ছ জ্ঞান?” লাল পিঁপড়ের কথা শুনে কচ্ছপ খুব আঘাত পেল। এভাবে অপমান করে কেউ তাকে কথা বলেনি কখনো। তাই সে মন খারাপ করে বাড়ি ফিরে গেল।

উপায়ান্তর না দেখে খরগোশ কিছু ঘাসের ফুল আর ফলের টুকরো লাল পিঁপড়েকে দিল মৌটুনকে ছাড়ানোর জন্য। তারপর মৌটুন আর টুনটুনিকে সাথে নিয়ে দ্রুত বাড়ির রাস্তায় হাঁটতে লাগলো।

১. দুপুর না গড়াতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। দমকা বাতাসে গাছের ডাল ভাঙতে লাগলো মটমট করে। বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেল পিঁপড়ের বাসা। পরিশ্রমী পিঁপড়েরা তাড়াতাড়ি উঁচু গাছের গুঁড়ির ফোঁকরে আশ্রয় নিল। কিন্তু অহংকারী অলস পিঁপড়ে ভেসে গেল পানির স্রোতে।

কচ্ছপের ঘরের সামনে দিয়ে আধমরা অবস্থায় লাল পিঁপড়ে যখন ভেসে যাচ্ছিল তখন কচ্ছপের ভীষণ মায়া হলো। পা দিয়ে দ্রুত টেনে তুললো পিঠের উপর। তারপর সেবাশুশ্রূষা করে পিঁপড়েকে সুস্থ করে তুললো।

ফুলের রেণু, মধু আর কাঁকড়া খেতে দিল পিঁপড়েকে। প্রতিবেশী খরগোশ আর টুনটুনিও খাবার নিয়ে এলো লাল পিঁপড়ের জন্য। সবার আতিথেয়তায় লাল পিঁপড়ে খুব লজ্জা পেল। নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত হলো। তার চোখের কোণায় পানি।

বুড়ো কচ্ছপ বললো- কেঁদো না দাদু, আমরা সবাই তোমার আপনজন। সবাই সবার বন্ধু। একজনের বিপদে অন্যজন এগিয়ে আসাই ধর্ম। হিংসায় সম্পর্ক নষ্ট হয়। সেবা দিয়ে, মায়া দিয়ে, দয়া দিয়ে সবাইকে বাঁধতে হয়। ভালোবাসতে হয়। এসো আমার পিঠে! এদিকে টুনটুনি আর মৌটুনকেও খরগোশ নিলো পিঠের উপর। তারপর সবাই একসাথে আনন্দ করে নাচতে লাগলো।