ইয়াছিন ইবনে ফিরোজ

রহস্য গল্প

নিলয় আর তার বন্ধু আরিফ ছোট থেকেই একে অপরের সাথে নানা ধরনের জায়গায় ভ্রমণ করতে পছন্দ করত। তাদের এক দুঃসাহসিক পরিকল্পনা ছিল-একটি অজানা দ্বীপে গিয়ে রহস্য উদঘাটন করা। নিলয়ের মনে হঠাৎই একটা ধারণা এল, “কী জানি, যদি এমন কোনো দ্বীপ থাকে যেখানে আমরা কিছু নতুন শিখতে পারি!” আরিফ একদম প্রস্তুত ছিল।

তাদের যাত্রা শুরু হয় ছোট্ট নৌকায়। সমুদ্রের ঢেউয়ে নাচতে নাচতে তারা সামনে এগিয়ে চলল। তাদের কাছে এক পুরনো মানচিত্র ছিল, যা তারা শখ করে সংগ্রহ করেছিল। মানচিত্রে একটি অজানা দ্বীপের চিহ্ন ছিল, যেখানে কেউ কখনো গিয়ে ফেরেনি। এই দ্বীপের মধ্যে কিছু রহস্য লুকিয়ে থাকতে পারে, এমনটাই তারা শুনেছিল।

দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার পর অবশেষে তারা পৌঁছাল সেই দ্বীপে। এটি এক অদ্ভুত জায়গা, চারপাশে উঁচু উঁচু গাছ, গভীর বন আর অদ্ভুত ধরনের পাখির ডাক শোনা যাচ্ছিল। “এখানে কি আসলেই কেউ আগে এসেছে?” আরিফ বলল। নিলয় মাথা ঝাঁকাল, “অবশ্যই, কিন্তু এখানে কিছু একটা আছে, আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।”

তারা দ্বীপের মধ্যে ঢুকে পড়ল। মাঝখানে একটি ছোট জলাধার ছিল, যেখানে পানির তলদেশে চকচকে রঙের পাথর পড়ে ছিল। একদিকে ছিল এক বিশাল পাহাড়, যা দেখে মনে হচ্ছিল কেউ সেখানে অনেকদিন আগে উঠেছিল। তারা ঠিক করল, পাহাড়ে উঠতে হবে।

পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে গিয়ে তারা দেখতে পেল, সেখানে একটি গুহার মুখ। গুহার ভিতরে অদ্ভুত চিহ্ন ছিল, যা দেখে মনে হচ্ছিল এই দ্বীপে অনেক পুরনো সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল। “এটা কী? এতোদিন ধরে কেউ কি এখানে আসেনি?” আরিফ জিজ্ঞেস করল।

গুহার মধ্যে কিছু খোদাই করা লাইন ছিল, যা এক ধরনের রহস্যময় বার্তা দেয়। নিলয় ভাবল, “এটা যেন কোনো সংকেত। আসলেই কিছু লুকানো থাকতে পারে এখানে।” তারা আরও গভীরে প্রবেশ করল, কিন্তু গুহার ভেতর হঠাৎ করে অন্ধকার হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর গুহার ভেতরে একটা অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেল। নিলয় আর আরিফ ভয় পেয়ে গেল, কিন্তু তারা থামল না। তারা বুঝতে পারল, কিছু একটা তাদের পরীক্ষা নিচ্ছে।

গুহার এক কোণে তারা এক পুরনো সিন্দুক দেখতে পেল, কিন্তু সিন্দুকটি খোলার জন্য কী করতে হবে, তা জানত না তারা। তখনই তাদের মনে হল, সেই রহস্যময় চিহ্নগুলো যেন সিন্দুকের কোডের মতো। ধীরে ধীরে তারা কোডটি সঠিকভাবে মিলিয়ে দিল, আর সিন্দুকটি খুলে গেল। ভিতরে ছিল একটি পুরনো বই, যার পৃষ্ঠাগুলো প্রায় উড়িয়ে যাচ্ছিল। বইটির মধ্যে এক ধরনের শক্তি ছিল, যা নিলয় আর আরিফের মাথায় ঢুকতে শুরু করল। হঠাৎ তারা দেখতে পেল, তারা পথ হারিয়ে ফেলেছে। চারপাশে শুধুই বন আর পাহাড়। তাদের জন্য ফিরে যাওয়ার পথ একেবারে অদৃশ্য হয়ে গেছে। আশেপাশে কোথাও কোনো চিহ্ন ছিল না, আর তারা জানত না কোথায় যাবে। কিন্তু তারা হাল ছেড়ে দিল না। নিলয় বলল, “আমরা ঠিক পথ পাবো, একসাথে যদি চলি।” আরিফ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “হ্যাঁ, আমাদের মনে রাখা উচিত, হারানোর চেয়ে ফিরে পাওয়ার আনন্দ অনেক বেশি।”

তারা একসাথে পথচলা শুরু করল। গাছপালার মধ্যে থেকে তারা একটি পুরনো সেতু দেখতে পেল, যা তাদের পরিচিত উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। তারা বুঝতে পারল, আসলেই তাদের একসাথে চলার শক্তি ছিল। ফিরে আসার পর তারা সবার কাছে জানাল, তাদের অভিজ্ঞতা কতটা মূল্যবান ছিল। নিলয় আর আরিফ বুঝতে পারল, অজানা দ্বীপে হারিয়ে গিয়ে তারা শুধু নিজেদের খুঁজে পায়নি, বরং বন্ধুত্বের শক্তি এবং নিজের উপর বিশ্বাসের গুরুত্বও শিখেছে। তারা ঠিক করল, আরও অনেক অভিযান করবে, কিন্তু কোনো একদিন আবারও সেই দ্বীপে ফিরে যাবে-যতটুকু জানা যায়, তার চেয়ে অনেক বেশি অজানা এখনও তাদের সামনে অপেক্ষা করছে।