পল্লব শাহরিয়ার
রায়ান দাঁত ব্রাশ করতে একদম ভালোবাসত না। মা-বাবা যতই বলুন, সে কেবল মুখে পানি দিয়ে এদিক-ওদিক ঢুলত আর ভাবত, ‘এত কষ্ট করে দাঁত মাজতে হবে কেন? দাঁত তো এমনি এমনি পরিষ্কারই থাকে!’
প্রতিদিন সকালে মা ডাকতেন, রায়ান, দাঁত ব্রাশ করেছ? রায়ান তাড়াতাড়ি বলে দিত, হ্যাঁ মা! কিন্তু সত্যিটা ছিল, সে শুধু ব্রাশটা পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিত! আসলে ওর দাঁতের ওপর জমে থাকত গতকাল রাতের চকোলেট, চিপস আর ঠান্ডা পানীয়র সব চিহ্ন।
এভাবেই চলছিল, হঠাৎ একদিন রাতে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। রায়ান গভীর ঘুমে ছিল, তার ঘরের চারপাশে কেমন জানি শব্দ হতে লাগল।
“খড়কড়... খড়কড়... চ্যাঁৎ চ্যাঁৎ!”
রায়ান চোখ মেলে দেখে, তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটা বিশাল দাঁতের দৈত্য! তার দাঁতগুলো সব কালো, গায়ে নোংরা সব ছোপ আর মুখ থেকে একটা বাজে গন্ধ বের হচ্ছে। আর চোখগুলো যেন আগুনের মতো জ্বলছে।
দৈত্য বলল, “আমি গিনো, আমি গিনো! আমি হলাম ক্যাভিটির রাজা! যে বাচ্চারা দাঁত ব্রাশ করে না, তাদের দাঁতের গুহা আমার রাজ্য! তুমি তো আমার প্রিয় বন্ধু হয়েছ রায়ান! এবার তোমার দাঁতগুলো আমি নিয়ে যাব!”
রায়ান ভয় পেয়ে চিৎকার করতে গেল, কিন্তু ওমা! তার মুখ দিয়ে কোনো শব্দই বের হচ্ছে না। সে আয়নার সামনে দৌড়ে গিয়ে দেখে- তার সুন্দর সাদা দাঁতগুলোতে কালো দাগ পড়ে গেছে, কিছু কিছু যেন পড়ে যেতে চাইছে! সে এক দৌড়ে বাথরুমে গিয়ে ব্রাশ ধরল, কিন্তু অবাক কাণ্ড! টুথপেস্টের টিউবটা খালি! কোথাও কিছু নেই!
গিনো দৈত্য হো হো করে হাসতে লাগল, আর বলতে লাগলো এখন ব্রাশ করে কী হবে? সময় তো শেষ! এখন আমি তোমার দাঁতের রাজ্যে দখল নেব! আমার সৈন্যরা তোমার মুখে ক্যাম্প করবে!”
রায়ান ভয়ে ঘেমে ওঠে, চোখ বন্ধ করে জোরে চিৎকার দেয়
“মা-আ-আ-আ!”
তারপরই ধপ করে বিছানায় পড়ে যায়। ধড়ফড়িয়ে উঠে দেখে- সে তার নিজের ঘরেই আছে, জানালা দিয়ে আলো ঢুকছে। সবকিছু স্বাভাবিক। কিন্তু তার মুখে একটা অদ্ভুত স্বাদ, যেন রাত্রের দুঃস্বপ্ন কিছুটা থেকে গেছে। আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল রায়ান। তাকিয়ে দেখে, সত্যিই তার দাঁতগুলো আগের মতো ঝকঝকে নেই। একটু হলদেটে, ক্লান্ত।
সে আর কিছু না ভেবে টুথপেস্ট টিউব খুঁজে বের করল। নতুন টিউব। তারপর দাঁত ব্রাশ করল যত্ন করে, দুই মিনিট ধরে, একবার না, দুইবার। সেদিন সকাল থেকে রায়ান একটুও দেরি করে না ব্রাশ করতে। বরং মা কিছু বলার আগেই সে ব্রাশ করে নেয়। আর রাতে ঘুমানোর আগেও। দাঁত ব্রাশ করা শুধু পরিচ্ছন্নতার কাজ নয়, এটা এক ধরনের যুদ্ধ। এই যুদ্ধ দাঁতের শত্রুর বিরুদ্ধে। আর সে সেই যুদ্ধে কখনোই হারতে চায় না রায়ান।