রেজা কারিম
সানজিদার কান্না দেখে খোকা মামা আর সইতে পারলেন না। ঠোঁট বাঁকা করে যেভাবে কাঁদছে তাতে বিরক্ত হওয়া যায় না। বরং মায়া বহুগুণ বেড়ে যায়। ছোট্ট পুতুলের মতো মেয়েটি। মনে হয় যেন মেলা থেকে কিনে আনা হয়েছে। শোকেসে সাজিয়ে রাখা গেলে ভালো হতো। কিন্তু পুতুলের মতো হলেও সানজিদা তো আর পুতুল না। জলজ্যান্ত মানুষ। হাত-পা ছোঁড়ে। দৌড়াদৌড়ি করে। খুব চমৎকার মুচকি হাসে। আহা! হাসিটা যে কী মিষ্টি। মন চায় সারাক্ষণ ওর হাসি দেখতে। শুধু যে সুন্দর হাসতে পারে তা কিন্তু নয়। ভালো কাঁদতেও পারে।
নদীর ধারে একটা বড় ট্রলার এসেছে। মা এসে বলেছেন। তারপর থেকেই কান্না শুরু করেছে ট্রলার দেখার জন্য। কিন্তু মায়ের যে অনেক কাজ। রান্না করা, কাপড় ধোয়া, ঘরদোর পরিষ্কার করা ইত্যাদি। কিন্তু মায়ের শত কাজতো ছোট্ট সানজিদার মাথায় আসছে না। তার মাথায় এখন একটাই জিনিস। ট্রলার।
ট্রলার যে সে কখনো দেখেনি তা কিন্তু নয়। অনেকবার দেখেছে। কিন্তু কখনো তাদের ঘাটে থামেনি। আজ থেমেছে। সে থেমে থাকা ট্রলার দেখতে চায়। ট্রলার থেমে থাকলে কেমন দেখায়। তখন লোকেরা কী করে।
মামার কাঁধে চড়ে সানজিদা নদীর ঘাটে যায়। বিশাল বড় এক ট্রলার। এত বড় ট্রলার সে জীবনেও দেখেনি। সানজিদাতো ট্রলার দেখে রীতিমতো অবাক। সে কোনো কথা বলে না।
চুপ করে তাকিয়ে থাকে। মামা তাকে কাঁধ থেকে নিচে নামায়। সে আস্তে আস্তে হেঁটে সামনে যায়। একহাতে মামার আঙুল ধরে আছে। তাই মামাকেও এগোতে হয়। ট্রলারের কাছাকাছি গিয়ে সানজিদা মামার দিকে তাকায়।
মামা বলেন, কিছু বলবে?
সানজিদা বলে, মামা, আমি কি ট্রলার ছুঁয়ে দেখতে পারবো?
মামা অভয় দিলে সে ট্রলার ছুঁয়ে দেখে। তার মন আনন্দে নেচে ওঠে। চেহারা খুশিতে দীপ্ত হয়ে ওঠে। তার মনে হয়, সে আজ একটি বিশাল সফলতা অর্জন করেছে। যেন এটি তার দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত স্বপ্ন।