আল আমিন মুহাম্মাদ
ঈদুল আযহার দিনটা কাছে আসতেই যেন তাজিমের মনে জমা হতে থাকে একরাশ নতুন অনুভূতি। প্রতিবারের মতো এবারও তাদের বাড়িতে কুরবানির প্রস্তুতি চলছে গরু কেনা হয়েছে, গোশত ভাগ করার জন্য থলে বের করা হয়েছে। কিন্তু এবারের ঈদে তাজিম চায় একটু ভিন্ন কিছু করতে, এমন কিছু যা শুধু চমক নয়, হৃদয়ের কথা।
পড়াশোনায় যেমন সে সবার সেরা, তেমনি মনের দিক থেকেও সে আলাদা। ছোট্ট বয়সেই ভাবনার গভীরতা যেন বড়দের চোখে বিস্ময় জাগায়। তাই সে যখন ঈদের আগের রাতে বাবা-মার সামনে এসে দাঁড়াল, তারা জানে কিছু একটা বিশেষ কথা বলবে।
-বাবা, মা একটা কথা বলি?
-বল বাবা, তুই তো জানিস, তোর কথা মানেই আমাদের কথা, বলল বাবা।
তাজিম একটু নিচু গলায়, কিন্তু স্পষ্ট করে বলল,
-আমরা যাদের কুরবানির গোশত দিই, তারা তো গোশত পায় ঠিকই, কিন্তু অনেকের ঘরে আবার সেই গোশত রান্না করার কিছুই থাকে না। না তেল, না মসলা, না আলু, না চাল। গোশত দিয়ে কি করবে, যদি রান্নার উপায়ই না থাকে?
কথাটা শুনে বাবা-মা থমকে গেলেন। সত্যিই তো! এভাবে তো কখনো ভেবে দেখা হয়নি।
তাজিম আবার বলল,
-আমি চাই, এবার আমরা যাদের গোশত দেবো, তাদের একেকটি ব্যাগে কিছু তেল, মসলা, পোলাও চাল, ডাল আর কয়েকটা আলুও রাখি। যেন ওরাও ঈদের দিনে আমাদের মতো গোশত-পোলাও খেতে পারে।
বাবার চোখে জল। মা হেসে বললেন,
- তুই শুধু ভালো ছাত্র না বাবা, তুই একজন দয়ালু মানুষ হবি।
ঈদের সকাল। আকাশে রোদ ঝলমলে। কুরবানির কাজ শেষে, তাজিম নিজের হাতে বানিয়ে ফেলে অনেকগুলো ব্যাগ। প্রতিটা ব্যাগে গোশতের সঙ্গে ছিল এক মুঠো পোলাও চাল, একটু ডাল, এক বোতল তেল, হালকা মসলা, কিছু আলু, আর একটা ছোট্ট কাগজে লেখা
“আপনার ঈদটা হোক ভালোবাসায় ভরা।”
সে যখন সেগুলো বিতরণ করলো, সেগুলো পেয়ে অনেকের চোখে পানি চলে এলো। কেউ কেউ বিস্ময়ে বলল,
-এতবার গোশত পেয়েছি, কিন্তু রান্নার জিনিস কোনোদিন কেউ দেয়নি।
এক বৃদ্ধা কাঁপা হাতে ব্যাগটা নিয়ে বললেন,
-আল্লাহ তোকে বড় করুক বাবা। আজ তুই শুধু গোশত নয়, ঈদের হাসিটাও দিয়ে গেলে।
সন্ধ্যায়, ঈদের চাঁদের নরম আলোয় তাজিম বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। গ্রিলের ফাঁক দিয়ে দেখছে বস্তির শিশুরা হাসছে-খেলছে, আর বাতাসে গোশত রান্নার সুগন্ধ ভেসে আসছে।
তাজিম জানে, এবারের ঈদের সবচেয়ে বড় চমক সে দিয়েছিল ভালোবাসা দিয়ে, মমতা দিয়ে।