হাফিজ মুহাম্মদ

আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। টাপুর টুপুর বৃষ্টি পড়ছে। মা হাঁস ও দশটি ছানা আহ্লাদে মশগুল। কোথায় ডুব দিবে? কোথায় সাঁতার কাটবে? কিন্তু বসে থাকা চলবে না, এক্ষুনি বেরোতে হবে। হাঁসগুলোর মালিক ছিল এক কৃষক। তার বাড়ির পাশেই ছিল আড়িয়াল ডোবা। সেখানে ছুটল সবাই। বেশ সুন্দর দৃশ্য! চারদিকে বাঁকা জল থইথই করছে। হাঁসের ছানাগুলো খুশিতে আটখানা। সুখ কিন্তু ক্ষণিকের জন্য? এবার বলছি সে কথা।

ডোবার পাশে ছিল মস্তবড় জঙ্গল। সেখান থেকে চুপি চুপি দেখছে এক ধূর্ত শেয়াল। ভাবছে, কীভাবে মা হাঁস ও ছানাদের আক্রমণ করবে? পানিতে শিকার করা মোটেও সহজ নয়! শেয়াল একের পর এক ফন্দি করছে। মাঝে মাঝে মা হাঁস ডোবার উপর উঁকি দেয়। হঠাৎ মনে একবার সন্দেহ জাগল। ঝোপের আড়ালে কী জানি খচমচ করছে। এক পা, দুপা শক্ত করে এগোল। সর্বনাশ! এ কী কাণ্ড! দুষ্টু শেয়াল আঁড়ে আঁড়ে দেখছে। অমনি ডোবার পানিতে দিল ভোঁ দৌড়। মনে প্রচণ্ড ভয়। শরীর ছমছম করছে। ছানাগুলো তখনো দিব্যি সাঁতার কাটছে। মা হাঁস ছানাদের কিছু বুঝতে দিল না। ফুটফুটে ছানাদের প্রতি প্রচণ্ড মায়া হলো। কী করা যায়? ভেবেই পাচ্ছে না!

সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। এভাবে সন্ধ্যা ধেয়ে আসছে। মা হাঁস মনে মনে ভাবল, ডোবার উপরে উঠলে শেয়াল হামলা করবে। প্রাণ বাঁচানো দায় হবে। দরকার হলে আজ রাত পানির উপরই কাটিয়ে দিই। পরক্ষণেই সন্ধ্যা হলো। শেয়াল ছটফট করছে। এই বুঝি শিকারের স্বপ্ন ঘনিয়ে এলো! হয়তো এক্ষুনি উঠে আসবে হাঁসগুলো। নিজেকে প্রশ্ন করছে, ‘একটু সবুর? সৃষ্টিকর্তা সুবর্ণ সুযোগ দিয়েছে, হাতছাড়া করতে নেই! আশা করি, ভালো একটা ভোজ হবে।’

ক্রমাগত জিহ্বা নাড়ছে আর দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। এদিকে কৃষক তার হাঁসগুলোকে খুঁজতে হয়রান। এক সময় ডোবার কাছে পৌঁছাল। তখন আবছা অন্ধকার। কৃষকের গলার তই তই শব্দ শোনা যাচ্ছে। মা হাঁস তার মালিককে সাড়া দিল। ঝটপট ডোবা থেকে উঠে এলো এবং বাড়ির পথ ধরল। লোভী শেয়াল হতবাক! বুকের ভেতর ধক করে উঠল। দুচোখ ছানাবড়া। শরীর অবশ হয়ে আসছে। তবুও হাঁসগুলোর বাড়ি ফেরার দৃশ্য চেয়ে দেখছে। মনে প্রচণ্ড আফসোস! উপায় নেই, কী আর করবে? নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করল। কৃষকের জন্য সব ধূলিসাৎ হলো। অবশেষে বোকা শেয়াল চালাক হাঁসের বুদ্ধির কাছে পরাজয় স্বীকার করল।