খালিদ বিন ওয়ালিদ
মিথিলা সকালে ঘুম থেকে উঠল। উঠে দাঁত মেজে হাতমুখ ধুলো। নাস্তা খেয়ে বাবার ঘরে গেলো। আজ তার স্কুলে ছুটি। বাবা খবরের কাগজ পড়ছিলেন। মিথিলা বাবাকে বলল, বাবা, আমি তোমাকে একটা গল্প শোনাব। বাবা মুচকি হেসে বললেন, কিসের গল্প শোনাবে মা?
- কাল রাতে আমি একটা মজার স্বপ্ন দেখেছি, শুনবে?
-শুনব মা, এসো আমার পাশে বসে বলো।
মিথিলা শুরু করলÑÑ
আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমি পক্ষিরাজের পিঠে চেপে বসেছি। সে ডানা মেলে উড়তে শুরু করল। আমাদের খুব মজা লাগছিল। আমাদের দেশ ছেড়ে আমরা সাত সাগর পেরিয়ে এক সোনার দেশে পৌঁছালাম। সেখানে সবকিছু সোনার তৈরি। তবে চারদিকে অনেক মানুষের মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। আমি পক্ষিরাজকে জিজ্ঞেস করলাম, এই মূর্তিগুলো কে বানিয়েছে?
পক্ষিরাজ বলল, এগুলো কেউ বানায়নি। এক দৈত্য এসে এদের পাথর বানিয়ে রেখেছে। সে মাটির নিচে থাকে। একদিন এই রাজ্যের সবাইকে পাথর বানিয়ে ফেলবে, তারপর সব সোনা নিজের রাজ্যে নিয়ে যাবে।
-কোথায় নিয়ে যাবে?
- মাটির নিচের রাজ্যে।
আমি বললাম, তাহলে তো এদের বাঁচাতে হবে। পক্ষিরাজ ভয় পেয়ে বলল, না, তুমি কিছু কোরো না। দৈত্য তোমাকেও পাথর বানিয়ে রাখবে।
- তাকে মেরে ফেলার কোনো উপায় নেই?
-আছে। ওই পাহাড়ের গুহায় একটি মূর্তি আছে। যদি সেই মূর্তিটিকে আগুনে পোড়ানো যায়, তবে দৈত্য মারা যাবে।
-তাহলে চল আমরা গুহায় যাই।
-অনেকেই সেখানে গিয়ে মারা পড়েছে। আমার ভয় করছে।
-ভয় পেয়ো না, আমি তো আছি।
-আচ্ছা, তবে যদি আমার ভয় খুব বেড়ে যায়, আমি গুহায় ঢুকব না।
-আগে চলো পাহাড়ের দিকে।”
আমরা পাহাড়ের গুহায় পৌঁছালাম। দরজার সামনে দাঁড়াতেই সেটি গর্জন তুলে খুলে গেল। পক্ষিরাজ ডানা মেলে ভেতরে প্রবেশ করল, আর দরজা বন্ধ হয়ে গেল। পক্ষিরাজ ভয় পেয়ে কেঁদে উঠল।
-আজ আমাদের মরতে হবে। আমি তো তোমাকে বারণ করেছিলাম, শুনলে না।
আমি হেসে বললাম, চল মূর্তিটা খুঁজে বের করি। ভীতুর ডিম হয়ে কেঁদো না।
চারপাশ গা ছমছমে। কয়েকটা বাদুর ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে এলো। হঠাৎ এক বিকট গর্জন শোনা গেল। দৈত্য দরজার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। পক্ষিরাজ ভয়ে কাঁপছে। হঠাৎ আমরা আরেকটা দরজা দেখতে পেলাম। আমি কাছে যেতেই দুপাশে দুটি মশাল দেখতে পেলাম। একটাতে আগুন জ্বলছে, আরেকটা নিভে আছে।
পক্ষিরাজ বলল, - আমাদের আজ বাঁচানো যাবে না, আমার খুব ভয় করছে মিথিলা।
আমি বললাম, ভয় পেয়ো না। দরজা বন্ধ আছে, ভেতরে আসতে পারবে না।
-যদি ভেঙে ঢুকে পড়ে?
-তুমি সত্যিই ভীতু। আচ্ছা বলো তো, কোন মশালটা নেব?
-যেটাতে আগুন জ্বলছে সেটা নাও।
- না, এর আগে যারা এখানে এসেছে তারা সবাই জ্বলন্ত মশাল নিয়েছিল। তাই তারা মারা পড়েছে। আমি নিভে থাকা মশালটাই নেব।
-তোমার যা ভালো মনে হয় করো, শুধু আমার প্রাণ যেন না যায়।
আমি নিভে যাওয়া মশালটা হাতে নিলাম। সঙ্গে সঙ্গে গুহা কেঁপে উঠল। বাইরে দৈত্যের ভয়ংকর গর্জন শোনা যাচ্ছে। দরজা খুলে গেল। সামনে এক দীর্ঘ সিঁড়ি নেমে গেছে নিচের দিকে। আমি সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগলাম। অবশেষে এক বিশাল মূর্তি দেখতে পেলাম। মাথায় লাল রঙের শিং, চোখ কালো, ভীষণ ভয়ংকর। আমি নিভে থাকা মশালটা তার গায়ে ছুঁড়ে দিলাম। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ল। আবার এক বিকট শব্দ হলো। গুহার সব মশাল, হারিকেন একসাথে জ্বলে উঠল। আমরা দৌড়ে বাইরে এলাম। বাইরে দৈত্য আগুনে জ্বলছে, এদিক-ওদিক ছুটছে। হঠাৎই সে মেঘের ভেতর মিলিয়ে গেল।
রাজ্যের সবাই বন্দীদশা থেকে মুক্ত হয়ে আনন্দে চিৎকার করছে। আমি খুব খুশি হলাম। পক্ষিরাজ আমাকে আবার বাসায় পৌঁছেয় দিল।