সাদিয়া ফয়জুন

একটি পার্কে ছিল এক চেরি গাছ। বসন্ত আসতেই গাছটিতে অনেক সাদা সাদা ফুল ফুটল। এরপর একে একে লাল লাল চেরি দুলে উঠল ডালে ডালে। শিশুরা আনন্দে মেতে উঠল, তারা খেতে লাগল রসালো চেরি ফল।

কিছুদিন পর গাছটির গোড়ায় বাসা বাঁধল একদল ইঁদুর । শিকড়ের চারপাশে কেঁচো এসে তাদের ঘর বানালো। গাছের কাণ্ড বেয়ে ঘোরাঘুরি শুরু করল পিঁপড়েরা। আর ডালের উপরের দিকে বাসা বাঁধল মৌমাছি আর পাখিরা।

এতসব অতিথি একসঙ্গে দেখে একদিন বিরক্ত হয়ে উঠল চেরি গাছ। সে বলল,

- প্রিয় অতিথিরা, বলো তো, আর কতদিন থাকবে আমার এই শরীরে ?

মৌমাছি ভো ভো করে বলল,

- এ যে আমাদের বাড়ি, গাছ ভাই। আমরা এখন তোমার সঙ্গেই থাকব চিরকাল।

- না, না, তা তো হতে পারে না! - বলল চেরি গাছ, - তোমাদের গুনগুন শব্দে আমার মাথা ধরে যায়। ইঁদুররা মাটি খুঁড়ে ফেলে, আর কাঠবিড়ালিরা লাফিয়ে লাফিয়ে আমাকে বিরক্ত করে। পিঁপড়ে যখন হেঁটে যায় তখন আমার সুড়সুড়ি লাগে। এটা তো আমার বাড়ি!

তখন ইঁদুর আর কেঁচো একসঙ্গে বলল,

- প্রিয় চেরি গাছ, তোমার কাছে থাকতে আমাদের খুব ভালো লাগে । তবে আমরা কিন্তু শুধু থাকতে আসিনি, তোমাকে সাহায্যও করি। সারাদিন মাটি আলগা করে দিই, যাতে তোমার শিকড় সহজে মাটির আরও গভীরে যেতে পারে। এতে তুমি আরও মজবুত হয়ে যাবে। ঝড় আর বৃষ্টি তোমাকে কিছু করতে পারবে না।

উপরে থাকা মৌমাছিরা বলল,

- বলো তো, তোমার ফুল থেকে মধু কে নেয়? আমাদের ছাড়া কারও পক্ষেই তো এটা সম্ভব নয়!

পাখিরা বলল,

- আমাদের আনন্দের গান না থাকলে তোমার চারপাশটা একেবারে নীরব হয়ে যেত। আমরা তো তোমার মন ভালো রাখি!

তখন ইঁদুর আবার বলল,

- দেখো না, আমাদের মধ্যে কেউ কি আছে, যে কোনো কাজ ছাড়াই আছে?

চেরি গাছ চুপচাপ ভাবতে লাগল। এবার সে বুঝল, আসলে তার এই বন্ধুরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে তার উপকার করছে।

সে সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাল। তারপর আর একা থাকল না কখনো। তার বন্ধুরাই তাকে রক্ষা করল পোকামাকড় থেকে, পরিচ্ছন্ন রাখল মাটি, আর ভরিয়ে দিল ভালোবাসায়।