শেখ এ কে এম জাকারিয়া
ঘন সবুজ গাছপালায় ঘেরা এক ছোট্ট গ্রামে থাকত মিনি নামে এক টিয়া পাখি। মিনি শুধু দেখতে সুন্দরই ছিল না, তার মনটাও ছিল খোলা আকাশের মতো বিস্তৃত। সবসময় কিছু না কিছু শিখতে চাইত সে। দুষ্টুমিতে ছিল ওস্তাদ, তবে তার হৃদয় ছিল দয়া আর সাহসে ভরা।
গ্রামের পাশেই ছিল এক বিশাল পুরোনো অশ্বত্থ গাছ। একদিন হঠাৎ দেখা গেল, সেই গাছের মোটা ডালে একটি বড় গোখরো সাপ শুয়ে আছে। কালচে রঙের শরীর, চকচকে চোখ—সাপটিকে দেখে সবাই ভয়ে কাঁপতে লাগল। যদিও সাপটি নড়াচড়া করছিল না, তবুও তার উপস্থিতিতে গাছের পাখিরা উড়ে গেল, আর শিশুরা খেলা বন্ধ করে ঘরে ফিরে গেল।
গ্রামের মুরুব্বিরা বললেন, “এই গাছের নিচ দিয়ে আর কেউ যাবে না। যদি সাপটা রেগে যায়, তবে ভয়ংকর কিছু ঘটতে পারে!”
কিন্তু মিনি কিছুতেই ভয় পেল না। বরং সে ভাবল, “সাপটা এখানে এসেছে কেন? ও কি সত্যিই ভয়ংকর?”
পরদিন সকালে, সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়তেই মিনি উড়ে গিয়ে গাছের এক ডালে বসল, ঠিক সাপটার কাছাকাছি। সাপটি ধীরে ধীরে চোখ তুলে মিনির দিকে তাকাল। মিনি ভয় না পেয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি জঙ্গল ছেড়ে এখানে এসেছ কেন?”
সাপটি একটু অবাক হয়ে বলল,
“আমি ক্লান্ত। একটু বিশ্রাম নিতে এসেছি। কিন্তু সবাই আমাকে ভয় পায় কেন? আমি তো কাউকে কষ্ট দিতে চাই না।”
মিনি খুশি হয়ে বলল,
“তাহলে তুমি এমন জায়গায় থাকো, যেখানে কেউ ভয় পাবে না। এই গাছে পাখিরা বাসা বানায়, শিশুরা গাছের নিচে খেলাধুলা করে। তুমি যদি অন্য কোথাও যাও, সবাই নিশ্চিন্তে থাকবে।”
সাপটি কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর শান্ত গলায় বলল, “তুমি ঠিক বলেছ। আমি চাই না কেউ আমার জন্য ভয় পাক। আমি এখান থেকে চলে যাচ্ছি।” কথাগুলো বলেই সাপটি ধীরে ধীরে গাছ থেকে নেমে জঙ্গলের পথ ধরে চলতে লাগল। মিনি সাপটির দিকে অপলকে তাকিয়ে রইল। একসময় আর সাপটিকে দেখা গেল না।
গ্রামের মানুষরা এই দৃশ্য দেখে অবাক! তারা ভাবতে লাগল, এটা কী করে সম্ভব? যেখানে সাপ পাখির ডিম আর ছানা খাওয়ার জন্য উন্মুখ থাকে, সেখানে মিনি কী বলে সাপটিকে সরিয়ে দিল!
সাহস দেখে সবাই মিনির প্রশংসা করতে লাগল। তারা জানতে পারল—সাহসী মিনি একা তার বুদ্ধি আর মমতা দিয়ে সাপটিকে সরিয়ে দিয়েছে।
সেদিন থেকে মিনি শুধু গ্রামের সবচেয়ে চঞ্চল পাখিই নয়, বরং সবচেয়ে প্রিয় ও বুদ্ধিমান বন্ধুও হয়ে উঠল।
গ্রামের সবাই বুঝল—সত্যিকারের সাহস মানে ভয় দেখানো নয়, বরং ভালোবাসা আর বুদ্ধির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা।