DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

গল্প

ধা রা বা হি ক উ প ন্যা স

পিঁপড়া কলোনি

সামনে দুর্যোগ আসছে। মাটিতে করা বাসা নিরাপদ হবে না। খাদ্য ও প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে গাছের কোটরে আশ্রয় নিতে হবে। তারই প্রস্তুতি চলছে। অ্যান্ডিও গিয়ে হাত লাগালো বাকিদের সাথে। ঝড় আসার আগেই কাজ শেষ করতে পারলো ওরা।

asdad

খন্দকার নূর হোসাইন

সামনে দুর্যোগ আসছে। মাটিতে করা বাসা নিরাপদ হবে না। খাদ্য ও প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে গাছের কোটরে আশ্রয় নিতে হবে। তারই প্রস্তুতি চলছে। অ্যান্ডিও গিয়ে হাত লাগালো বাকিদের সাথে। ঝড় আসার আগেই কাজ শেষ করতে পারলো ওরা। আশ্রয় নিলো নতুন বাসায়। পরদিন সকাল থেকেই শুরু হলো ঝড় ও মুষলধারে বৃষ্টি। এখানে এসে খাবার সংগ্রহ করার সংগ্রাম আরো বেড়ে গেছে অ্যান্ডিদের। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে সবাই। এত কিছুর পরেও কলোনির কথা ভুলে যায়নি অ্যান্ডি। কলোনির খবরাখবর সংগ্রহ ও কলোনির পিঁপড়াদের সাথে যোগাযোগের কাজটি করে তরুণ পিঁপড়া ক্যাড। গতকাল সে দুজনকে পথ দেখিয়ে দ্বীপে নিয়ে এসেছে। ওরাও বয়সে তরুণ। বয়স্করা এতটা পথ আসতে পারেনি। পথে অনেকেই ফগের হাতে মারা পড়েছে।

বাইরে তুফান চলছে। এই ঝড়-বৃষ্টির দিনে বাইরে বেরুনো যাবে না। অন্য কোনো কাজও নেই। এই সুযোগে সবাইকে নিয়ে মিটিংয়ে বসলো অ্যান্ডি। আলোচনার বিষয়, ‘কলোনির বর্তমান অবস্থা ও এর থেকে পরিত্রাণের উপায়।’

উপস্থিত আছে ৪০ জন পিঁপড়া। তুলনামূলক একটু উঁচুস্থানে দাঁড়ালো অ্যান্ডি। আল্লাহর নাম নিয়ে কথা শুরু করলো, ‘কলোনি ছেড়ে গতকাল ক্রেস ও ডোবার এসেছো। আমরা প্রথমে তোমাদের কাছ থেকে কলোনির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাই। ডোবার, তুমি শুরু করো।’

ডোবারের মুখ কালো হয়ে গেল। চোখ দিয়ে ঝরে পড়লো অশ্রু।‘নতুন করে আর কী বলবো। সবকিছুই জানেন। কলোনির পরিস্থিতি এখন আরো খারাপ হয়েছে। ফগ কোনোকিছুর তোয়াক্কা করছে না। আমার পরিবারের সবাইকে খেয়ে ফেলেছে সে।’ কান্নায় ভেঙে পড়লো ডোবার। চোখ মুছলো অন্যরা। এখানকার সবাই-ই পরিবারের কাউকে না কাউকে হারিয়েছে। অ্যান্ডি ক্রেসকে কিছু বলার জন্য ইশারা করলো।ক্রেস বললো, ‘ফগ ও লিয়ার সমর্থকদের অত্যাচার দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। ক্ষমতার জন্য অন্ধ হয়ে গেছে সে।’

‘আমাদের সমর্থকদের কী অবস্থা?’

‘সবাই ঘরছাড়া। পালিয়ে বেড়াচ্ছে।’

‘সাধারণ পিঁপড়াদের চোখ খুলে গেছে। তাদের কাছে আমাদের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। লিতির সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। অ্যান্ডির সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল এটা অধিকাংশ পিঁপড়েরা বুঝতে পেরেছে। লিয়ার নিয়ন্ত্রিত খবরের কাগজের খবর অধিকাংশরাই এখন আর বিশ্বাস করে না। তবুও কিছু করতে সাহস পায় না তারা। চুপচাপ থাকে।’ ডোবার বললো।

‘তাদের সঠিক উপলব্ধিটা কাজে লাগাতে হবে। আমাদের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করতো ঐক্যের ওপর। লিয়া সেই ঐক্য নষ্ট করে দিয়েছে। আমাদের আবার সেই ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।’ অ্যান্ডি বললো।

শ্রোতাদের সারি থেকে জিয়ান উঠে দাঁড়ালো, ‘সাধারণ পিঁপড়েরা সঠিক উপলব্ধির জায়গায় পৌঁছে গেছে। সেটাকে সফলভাবে কাজে লাগানোর দায়িত্ব আপনার, অ্যান্ডি। আমরা আপনার নেতৃত্বে যে-কোনো ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত।’

জিয়ানের সাথে সুর মেলালো সবাই।

হাত উঁচু করে সবাইকে শান্ত করলো অ্যান্ডি। ‘আপনাদের সম্মিলিত সহযোগিতা আমাদের অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস করি। পিঁপড়ে কলোনিতে এককভাবে কোনোকিছু হয় না। তাই আমি আপনাদের পরামর্শ চাই। কারো পরামর্শ থাকলে দাঁড়িয়ে বলুন।’

দাঁড়িয়ে গেল মেগার, ‘আমার মনে হয়, আমরা কোনো সাপের কাছে সাহায্য চাইতে পারি। সাপ আমাদের শত্রু না। সে আমাদের সাহায্য করতে রাজি হলে আমরা সফল হবো।’

‘সাপ কেন আমাদের সহযোগিতা করবে? ফগকে খাওয়ার মতো এত ক্ষুদ্র স্বার্থে সে আমাদের সাহায্য করতে রাজি হবে বলে মনে হয় না। এছাড়া সাপ আমাদের কলোনিতে গেলে তার চলাচলে অনেক পিঁপড়ার মৃত্যু হতে পারে। অতীতে তাদের মৃত পূর্বপুরুষদের পিঁপড়েরা খেয়ে ফেলেছে। এটা নিয়েও সাপেরা আমাদের ওপর সন্তুষ্ট নয়। অন্যান্য সমস্যাও আছে।’

‘তাহলে কী করতে চাচ্ছেন?’ ক্যাড দাঁড়িয়ে বললো।

‘আর কারো কোনো পরামর্শ আছে?’

দীর্ঘ নীরবতা দর্শক সারিতে। আবারও উঠে দাঁড়ালো ক্যাড। ‘মহামান্য অ্যান্ডি, আরেকটি কথা বলতে ভুলে গেছি। তথ্যটা আপনার কাজে লাগতে পারে।’

অ্যান্ডি বলার জন্য হাত ইশারা করলো।

‘দুদিন আগে একটা মাকড়সা ধরে খেয়েছে ফগ। রোজ রোজ পিঁপড়া খায় তো, ওদিকে রুচি বদল করতে গিয়েছিল।’ নীরব হয়ে রইলো অ্যান্ডি। আস্তে আস্তে মুখে ফুটে উঠলো হাসি। ‘দারুণ তথ্য জানালে। এটা কাজে লাগবে আমাদের।’ ‘বুঝে ফেলেছি আমি,’ মেগার বললো, ‘শত্রুর শত্রু বন্ধু, এই নীতিকে কাজে লাগাতে চান আপনি?’

‘ঠিক ধরেছো। বুদ্ধিমান ছেলে।’

‘কিন্তু মাকড়সা আমাদের সাথে কাজ করতে রাজি হবে? ওদের সাথেও তো সম্পর্ক ভালো ছিল না কোনো কালে।’ ক্যাড বললো।‘হবে। আমাদের মতোই ফগ ওদের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে। মাথায় ঘিলু থাকলে এ কথা ঠিকই বুঝবে- ফগের পরবর্তী টার্গেট মাকড়সা। আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে।’ অ্যান্ডি তার পরিকল্পনাটা সবাইকে বুঝিয়ে বললো।

এ কাজের জন্য কলোনির পিঁপড়েদের সহযোগিতা দরকার হবে। সে বিষয়টি ক্যাড দেখভাল করবে। সিদ্ধান্ত হলো, ঝড়-বৃষ্টি থামলেই মাকড়সাদের সাথে কথা বলতে যাবে অ্যান্ডি। (চলবে)