মিজানুর রহমান

এবারের ঈদটা ভিন্নরকম আনন্দে কাটাবে ফাতিহা। রোজার শুরুতেই মা-বাবাকে বলে রেখেছে। বায়না ওর একটাই; ভিন্ন স্বাদ আর আনন্দে হবে এবারের ঈদ। ছোট্ট ফাতিহা ভালোমন্দের তেমন কিছুই বুঝে না! তবুও চায় মানুষকে ভালোবাসতে, মানুষের পাশে থাকতে, সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়াতে।

ফাতিহার বাবা জামাল সাহেব আদর মেখে মেয়েকে জিজ্ঞেস করল, এবারের ঈদ ভিন্নরকম আনন্দে করবে, এর মানে বুঝলাম না?

ফাতিহা ওর বাবার গালে চুমু দিয়ে হাসিমাখা মুখে বলল, বাবা! তুমি কি পথঘাটে গরীব অসহায় আর অনাথ শিশুদের দেখ না? জামাল সাহেব মাথা নেড়ে বললো, হ্যাঁ দেখি তো। ফাতিহা তখন বলল, তাঁদের বসবাস দেখলে আমার মনে ভীষণ কষ্ট লাগে। কান্না চলে আসে। আমি চাই পথের মাঝে বেড়ে ওঠা মানুষজনের সাথে এ বছরের ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করি। মায়ের হাতের রান্না করা মজাদার খাবার তাদের খাওয়ায়। নতুন জামাকাপড় কিনে দিই।

ফাতিহা তার বাবাকে স্মার্টফোনে একটা মানবিক ভিডিও দেখাল আর বলল, বাবা দেখ তো এই আংকেলটা গরীব অসহায়দের কত সুন্দর করে আদর করছে। খাবার, পানি ও পোশাক দিচ্ছে। আমরাও তো তাঁর মতো সাধ্য অনুযায়ী মানুষকে সাহায্য করতে পারি। জামাল সাহেব বলল হে মামুনি তোমার কথা একদম ঠিক। আমরাও গরিব- অসহায়, অনাথ, পথশিশুদের সাহায্য করব ইনশাআল্লাহ। ফাতিহা তার বাবার মুখে এমন সুন্দর কথা শুনে আনন্দে লাফাতে লাগলো।

পরের দিন ফাতিহা স্কুলে গিয়ে বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে তার ইচ্ছে পূরণের কথাগুলো শেয়ার করলো। তার বন্ধুবান্ধবরাও আনন্দ পেলো এবং এমন উৎসাহমূলক কাজের ব্যপার জানতে পেরে সবাই তাকে ধন্যবাদ জানাল।

ছোট্ট ফাতিহা প্রতিদিন ওর মা-বাবাকে জিজ্ঞেস করে ঈদের আর কতদিন বাকি আছে। কবে আমরা গরীব অসহায়দের মাঝে খাবার এবং ঈদের নতুন পোশাকগুলো বিতরণ করব? ওর আবেগমাখা প্রতিদিনের প্রশ্ন। ফাতিহার অপেক্ষা যেন শেষই হচ্ছে না! ফাতিহার বাবা বলল এই তো আগামী সোমবারে আমাদের রোজার ঈদ হবে, ইনশাআল্লাহ।

এক দু’দিন করে সময় ঘনিয়ে ঈদের রাত চলে এলো, ফাতিহার মায়ের হাতের পোলাও মাংস রান্না, লাচ্ছা সেমাই, পিঠা ও বাবার দেওয়া নতুন পোশাক নিয়ে ঈদের সকালে বিতরণ করল। ফাতিহার মনের আশা পূরণ হলো এবং অজানা এক শান্তি বুকে নিয়ে ঘরে ফিরল।