শাহীন পরদেশী

জরি ক্লাস ওয়ানে পড়ে। মায়ের সাথে রোজ স্কুলে যায়। স্কুল ছুটির আগেই আবার মা স্কুলে আসেন। কোনদিন আগে গেলে অপেক্ষা করেন। তবে একদিনও লেট হয় না। ছুটি হলে আবার মায়ের সাথে বাসায় ফেরে। জরি সব বিষয়েই সেরা। কোনও কমতি নেই। বন্ধুরা স্কুল পালালেও, জরি এসবে নেই। হোমওয়ার্কের কাজও নিয়মিত। কোনো ফাঁকি নেই। বিকেল হলে বন্ধুদের সাথেও খেলে। মায়ের সাথে ছুটির দিনে ঘুরতেও যায়। মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে। যেন খই ফুটছে মুখে। জরিকে সবাই খুবই আদর করে।

জরি একটু সুযোগ পেলেই মায়ের পাশে।

ওমা, বাসায় থাকলে তো মায়ের সাথেই থাকবে।

তা নয়, বলছি শোনো?

মায়ের কাজে হেল্প করে।

রান্না থেকে শুরু করে সব কাজেই।

জরির পরীক্ষা শুরু হয়েছে। খুব ভালোভাবে সব বিষয়ের উত্তর লিখেছে। সেরা পরিক্ষা হয়েছে। জরির মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনে মা খুব খুশি।

পরীক্ষা শেষ, স্কুল ছুটি। মা-বাবার সাথে ভ্রমণে গেলো জরি। তারপর মামার বাড়ি। মামাও ছুটি কাটাচ্ছেন। মজা আর মজা। ঠিক মজাতেই মায়ের ফোন। স্যারের ফোন এসেছে। স্কুল খুলেছে। মামা জরিকে বাসায় পৌঁছে দিলেন।

আজকে স্কুলে রেজাল্ট দিবে। মা মেয়ে গল্প করছে। জরি বলছে মা, মা আমি সেরা হবো দেখে নিও। মায়ের সাথে স্কুল গেলো জরি। আজকে বিশেষ একটা ক্লাস হবে। টিএনও এসেছেন। স্কুল পরিদর্শন করার জন্য। তারপর রেজাল্ট। মা বাসায় ফিরলেন। ক্লাস শেষে এক, দুই ও তিন রোলের জন্য টিএনও গিফ্ট দিবেন। এক রোল ঘোষণায় জরির নাম। খুব খুশি।

সেরা হওয়ার পুরস্কার নিয়ে দৌড়ে এলো।

স্কুল গেটের ছাউনিতে।

সবার মা-বাবা থাকলেও জরির মা নেই।

মনটা খুব খারাপ হলো।

বন্ধুদের মা-বাবা জরিকে কোলে নিলো। এক রোল হয়েছে শুনে। সবাই বলল, আরও মন দিয়ে পড়িও। তুমি বড় হলে ডাক্তার হবে। তোমার জন্য দু’আ রইলো মিষ্টি জরি। হুমম, আচ্ছা মাকে দেখছি না। মা কোথায়। তোমার মা বাসায় গেছেন। আবার আসবে বলেছে।

জরি মায়ের জন্য লেট করছে।

ছাউনিতে বসে আছে।

সবাই চলে যাচ্ছে।

দোকানিরাও চলে গেলেন।

সাইফুল আঙ্কেল জরিকে দেখে কাছে এলো।

পাশের বাসাতেই থাকে।

একাই বসে আছো কেনো মা?

জরির চোখের জল।

তুলতুলে গাল বেয়ে পড়ছে।

জড়িয়ে ধরলেন।

কি হয়েছে তোমার।

মা এখনো আসছে না।

ওককে বাপ এসো আমার সাথে। তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেই। বাসার গেট খোলা। আঙ্কেল আমি যেতে পারবো এখন। আচ্ছা মামুনি যাও।

ড্রয়িংয়ে এসে স্কুল ব্যাগটি রাখলো। রুমে ঢুকেই বলল, মা আমার এক রোল হয়েছে। মা খুব খুশি হলো। মায়ের কথাগুলো যেন কেমন লাগছে। মা শুয়েই আছে।

জরি মাকে জড়িয়ে ধরেই চিৎকার করে উঠলো।

মায়ের গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।

ট্যাবলেট খুঁজতে লাগলো।

আলমারিতে নাপা ট্যাবলেট খুঁজে পেলো।

মাকে খাইয়ে দিলো।

মা খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লো।

বাবাকে ফোন দিচ্ছে। বাবার ফোনটাও বন্ধ। কি করে, কি করে, মাথায় বুদ্ধি এলো। মা মাথায় পানি দেয়। আমার জ্বর হলে। কপালে পটি বেঁধে দেয়। সুতি কাপড় ভিজিয়ে। জরিও তাই করলো।

নিজে নিজেই বলছে ভয়ের কিছু নেই। আমার মা ভালো হবে। আবার দু’হাত তুলে বলছে, আল্লাহ মা আমার পৃথিবী।

কিছু হলে আমি মেনে নিতে পারবো না।

জীবনের প্রথম বন্ধু, খেলার সাথী, শিক্ষক আমার মা।

মা আমার সবকিছু।

মাকে সুস্থ করে দাও।

পিলিজ, পিলিজ।

গলাকাটা মুরগির মতো ছটফট করছে জরি।

মায়ের গালে মুখটা রেখে কান্না করছে।

চোখের পানি মায়ের গাল বেয়ে পড়ছে।

একটু পরেই মায়ের ঘুম ভাঙলো। মা দেখতে পেলো। জরি ভিষণ ভেঙে পড়েছে। মা কথা বলছে। আমি সুস্থ আছি। জরি চটকে উঠলো। কপালের পট্টি সরিয়ে হাত দিয়ে দেখলো। আগের মতো জ্বর নেই। একটুক আছে।

মা জরিকে জড়িয়ে ধরলেন।

কপালে চুমু খাচ্ছেন।

আমার আদরের ময়না।

এতো ভেঙে পড়লে কী হবে।

আমার কিচ্ছু হয়নি।

এই দেখো আমি সুস্থ।

তোমার এক রোল হয়েছে। আমি খুব খুব খুশি হয়েছি। তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।

জরি মায়ের কথা শুনে মিটিমিটি হাসছে। আর বলছে, মা তুমি আমার স্পেশাল সারপ্রাইজ। সবার সেরা।

মায়ের একটুক জ্বর ছিলো। জরির মিষ্টি কথায় জ্বর টুকুনো পালিয়ে গেলো। মা ও জরি খুনসুটিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। পৃথিবীর সব সুখগুলো কড়া নাড়ছে। মা ও মেয়ের মধুমাখা ভালোবাসায়।